Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মশা বৃত্তান্ত

মশা এমন এক প্রাণী, যাকে সম্ভবত আমরা সকলেই ঘৃণার চোখে দেখি, তাই না? ঘৃণা না করলেও অন্তত মশা দেখে বিরক্ত হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। আমরা এত কষ্ট করে খেয়েদেয়ে রক্ত বানাই শরীরে, আর সেই রক্তই কিনা অবলীলায় শুষে নিচ্ছে এই পুচকে প্রাণী! বিরক্ত বা ঘৃণা হওয়ারই তো কথা।

আচ্ছা, মশাকে কেন রক্তই খেতে হয়? রক্ত খেতে এসে তাকে কেন গান শোনাতে হয়? চলুন মশা সম্পর্কে কিছু জানা যাক এই লেখায়। 

ধরনভেদে মশা

প্রাণীজগতের সবচেয়ে বড় পর্ব আর্থ্রোপোডার মাছি বর্গের অন্তর্ভুক্ত প্রাণী মশা। সারাবিশ্বে মশার সাড়ে ৩ হাজারের বেশি জাত রয়েছে। দেশভেদে অবশ্য সংখ্যাটা শ’পাঁচেকের বেশি নয়। যুক্তরাষ্ট্রে দুই শতাধিক প্রজাতি রয়েছে মশার। বাংলাদেশে সংখ্যাটা একটু কম, প্রায় ১২৩ প্রজাতির। তবে সব মশাই যে ক্ষতিকর, এমনটা কিন্তু না। বাংলাদেশেই যেমন ১২৩টির মধ্যে শুধু ২২ প্রজাতির মশা রোগ ছড়ায়। এরা যে শুধু মানুষের রক্তই পান করে এমনও নয়। ধরন, বৈশিষ্ট্য কিংবা স্বভাবভেদে অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্তেও ভাগ বসায় মশা। এমনকি মাছের রক্তেও ভাগ বসানোর মতো মশার প্রজাতি রয়েছে।  

মশার নানা জাত; Image Source: Star pest control

মশাদের মধ্যে শুধু স্ত্রী মশারাই জীবের রক্ত পান করে। কারণ, তাদের ডিম পাড়া ও বংশবিস্তারের জন্য বাড়তি প্রোটিন দরকার হয়, যা রক্ত থেকে পায় এরা। পুরুষ মশারা বেঁচে থাকে উদ্ভিদের বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভর করে। ফুলের রস, মধু কিংবা গাছের কাণ্ড থেকে বিভিন্ন প্রকারের রস শোষণের মাধ্যমে তারা জীবন অতিবাহিত করে।  

ছোট্ট দেহে এত্ত অংশ! 

প্রাপ্ত বয়স্ক একটি মশার প্রধানত ৩টি অংশ থাকে। মাথা, বক্ষ ও পেট।

ক. মাথা 

মাথায় বিভিন্ন অংশ থাকে যেগুলোর সাহায্যে মশা খাবার গ্রহণ, দেখা এবং গন্ধ পায়। 

১. এন্টেনা: এন্টেনার মাধ্যমে মশা কোনো ব্যক্তির নিঃশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড চিহ্নিত করতে পারে। একইসাথে বাতাসের তারতম্যও ধরতে সক্ষম এই অঙ্গ।

২. চোখ: অন্যান্য প্রাণীর মতো মশাদের বড় বড় দুটি চোখ রয়েছে, যার সাহায্যে তারা সামনে থাকা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর চলাফেরা চিহ্নিত করতে পারে। 

৩. পাল্প: এই অঙ্গটি দুটি এন্টেনার মাঝে থাকে। এর সাহায্যে মশা গন্ধ শুঁকতে পারে।

৪. হাতিশুঁড়: সব মশাতেই এই অঙ্গ থাকলেও স্ত্রী মশাতেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে দেখা যায় একে। কারণ এর সাহায্যেই মশা কোনো ব্যক্তি বা প্রাণীর ত্বক ছিদ্র করে এবং রক্ত ​​বের করে। পুরুষ মশার হাতিশুঁড়টি ত্বক ছিদ্র করার মতো শক্তিশালী নয়। 

খ. বক্ষ 

মশার বক্ষ উপরের দিকে মাথার সাথে সংযুক্ত। আর নিচের দিকে পাখা ও পায়ের সাথে যুক্ত।   

১. গলরজ্জু: উড়ন্ত অবস্থায় স্টিয়ারিংয়ের জন্য ব্যবহৃত একটি ছোট পাখার মতো অঙ্গ। 

২. ডানা: ওড়ার জন্য দুটি ডানা রয়েছে মশার। 

৩. পা: অন্যান্য পতঙ্গের মতো মশারও ছয়টি পা রয়েছে। 

৪. উরুর হাড়: এটি পায়ের উপরের অংশ। 

৫. টিবিয়া: এটি পায়ের মধ্য-অংশ। 

৬. টার্সাস: এটি পায়ের নিচের অংশ। এর সাহায্যে মশা দাঁড়িয়ে থাকতে এবং পানির উপর হাঁটতে পারে।  

মশার বিভিন্ন অংশ; Image Source: CDC

গ. পেট 

মশার পেট বক্ষের সাথে সংযুক্ত। এটি একইসাথে পাকস্থলি, প্রজনন ব্যবস্থা এবং শ্বাসযন্ত্রের অংশ হিসেবে কাজ করে।

১. জেনিটালিয়া: মশার যৌনাঙ্গ এটি। স্ত্রী মশাদের এই অঙ্গের মাধ্যমে ডিম নির্গত হয়। 

মানুষের রক্তের নেশা কেন মশাদের? 

মশা কেন মানুষের রক্তের পেছনে ছোটে? গেল বছর (২০২০) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী এই প্রশ্নের উত্তর পেতে এক গবেষণা করেছেন। তারা আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের প্রায় ২৭টি ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে এডিস এজিপ্টি জাতের মশার ডিম সংগ্রহ করেন। এরপর এগুলোকে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ল্যাব বক্সে ছেড়ে দেওয়া হয়।

Image Source: timesofindia

গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে বলতে গিয়ে গবেষক দলটির সদস্য অধ্যাপক নোহ রোজ জানান, সব অঞ্চলের মশার রক্তের নেশা নেই। যে অঞ্চলে খরা বা উত্তাপ বেশি সে অঞ্চলে প্রজননের জন্য আর্দ্রতার প্রয়োজন মেটাতে রক্তের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে মশা। একপ্রকার নিরুপায় হয়েই তাদের এই পথ বেছে নিতে হয় বলে মত এই গবেষকের।

মশা কেন কানের কাছে গান গায়?  

মশা তার ছোট্ট দুই ডানা সেকেন্ডে প্রায় আড়াই শতাধিক বার ঝাপ্টায়। এই ডানা ঝাপ্টানোর শব্দই আমাদের কাছে মশার গান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মশা আকারে খুব ছোট বলে শুধু আমাদের কানের কাছে এলেই সেই শব্দ আমরা শুনতে পাই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মশাদের কাছে কেন মানুষের কান এত প্রিয়? কেন তারা আমাদের কানের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করে?

গবেষণা বলছে, এর প্রধান কারণ গন্ধ। আমাদের দেহের সবচেয়ে নোংরা জায়গা হিসেবে কানকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, বিশেষত কানের ভেতরের জায়গা। কানের  ছিদ্র সবসময় খোলা থাকায় সহজেই এর ভেতরে ধূলো-ময়লা প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন যদি এই ময়লা পরিষ্কার না করা হয় তাহলে সেটি ময়লা আকারে জমতে থাকে। এই ময়লাকে বলা হয় ওয়াক্স বা ‘খইল’।  

খইল থেকে একধরনের গন্ধ নির্গত হয়, যা মশার খুবই প্রিয়। এজন্যই মশাকে কানের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যায় বেশি।  

তবে এটিই কিন্তু একমাত্র কারণ নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আরেকটি কারণ হতে পারে আমাদের শরীর থেকে নিঃশ্বাসের সাথে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড। বিজ্ঞানীদের ধারণা, আমাদের শরীর থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড, আমাদের শরীরের উষ্ণতা এবং আর্দ্রতার মাধ্যমে মশা আমাদের চিহ্নিত করে থাকে। তখন মশাকে আমাদের নাক ও মুখের আশেপাশে বেশি ঘুরতে দেখা যায়।  

মানুষ ভেদে মশার আকর্ষণ ভিন্নতা

মশা যে সব মানুষকেই কামড়ায় এমন কিন্তু না। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকা বলছে, মানুষের মধ্যে নারীদের চেয়ে পুরুষের রক্তের প্রতিই বেশি আগ্রহী মশারা। গবেষকরা বলছেন, পুরুষের বিশালাকার শারীরিক গড়নের জন্যই মশাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন তারা। কারণ, স্থূলকায় পুরুষের শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকে এবং তাদের নিঃশ্বাসের সাথে কার্বন ডাইঅক্সাইডও বেশি নির্গত হয়।  

Image Source: science bee

অন্যদিকে, আরেকদল গবেষক বলছেন, নারীদের মধ্যে সন্তানসম্ভবা নারীদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় মশারা। কারণ হিসেবে পুরুষদের ক্ষেত্রে বলা কারণগুলো অর্থাৎ নিঃশ্বাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের আধিক্য ও দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথা বলছেন গবেষকরা। সন্তানসম্ভবা নারীদের অন্যান্য নারীদের তুলনায় নিঃশ্বাসের সাথে ২১ শতাংশ বেশি হারে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়। 

নিউ ইয়র্কের অ্যালার্জি ও অ্যাজমা কেয়ার বিষয়ক চিকিৎসক ক্লিফোর্ড ডব্লিউ ব্যাসেট বলছেন, কার্বন ডাইঅক্সাইডের পাশাপাশি মানুষের শরীরে থাকা ল্যাকটিক এসিডেও আকৃষ্ট হয় মশা। এই ধরনের কেমিকেলগুলো প্রায় ৩০ মিটার দূরে থেকেই চিহ্নিত করতে পারে প্রাণীগুলো।   

যেসব মানুষ ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করে থাকেন তাদের প্রতিও বিশেষ আকর্ষণ বোধ করে মশা। কারণ সেই ল্যাকটিক এসিডই। শারীরিক পরিশ্রমের পর স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ল্যাকটিক এসিড নির্গত করে আমাদের শরীরের মাংসপেশিগুলো। আর এই উপাদানের ঘ্রাণ পেয়েই ছুটে আসে মশার দল।  

মশাদের আকর্ষণের গিনিপিগ হওয়ার আরেকটি কারণ রক্তের গ্রুপ। আপনার রক্তের গ্রুপ যদি ‘ও পজিটিভ’ হয়ে থাকে, তাহলে আপনি মশাদের অত্যন্ত প্রিয় খাবার! গবেষকরা বলছেন, মশার কামড় খাওয়ার হার এই গ্রুপের ক্ষেত্রে প্রায় ৮৩ শতাংশ।  

একটি মশা কতদিন বাঁচে?  

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর দেওয়া তথ্য বলছে, প্রাপ্তবয়স্ক একটি মশা প্রজাতি, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা এবং অন্যান্য কারণের উপর নির্ভর করে দুই-চার সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে যদি না সে তার আগেই আপনার হাতে মারা পড়ে। 

মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্ত্রী মশা সাধারণত পুরুষ মশার চেয়ে বেশি দিন বাঁচে। স্ত্রী মশারাই কিন্তু রক্তের জন্য আমার আপনার আশেপাশে ঘুরঘুর করে। তাই তাদের মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি। কিন্তু তারাই বেশিদিন বাঁচে! 

 

This Bengali article discusses about mosquitoes, their biology and some interesting facts about them. References have been hyperlinked inside.

Feature Image: Wallpaper Access

Related Articles