Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হীরার ইতিহাস ও ‘পিনাট বাটার’ থেকে এর উদ্ভাবনের কিছু খুঁটিনাটি

ডায়মন্ড বা হীরাকে প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন সভ্যতা বা জাতিতে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। বর্তমানে এর কদর শুধুমাত্র উচ্চমূল্যের জন্য হলেও প্রাচীনকালে এর সাথে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ও জড়িত ছিল। যেমন- প্রাচীন রোমান এবং গ্রিকে এই হীরাকে দেবতাদের অশ্রু কিংবা পতনশীল কোনো তারা মনে করা হতো; একে তারা ভালোবাসার প্রতীকও মনে করতেন। অনেক প্রাচীন সভ্যতায় যোদ্ধাদেরকে হীরার তৈরী অলংকার পরানো হতো। কেননা, তাদের বিশ্বাস ছিল যে এই রত্নপাথর যোদ্ধাদের শক্তি ও সামর্থ্য বৃদ্ধি করবে।

ডায়মন্ডকে এপ্রিল মাসের জন্মপাথর ও ১০ম এবং ৬০তম বিবাহ বার্ষিকীর রত্নপাথর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শুধু তা-ই নয়, একে সবচাইতে বিশুদ্ধ রত্নপাথরও বলা হয়। ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ শতাব্দীতে ডায়মন্ড আবিষ্কৃত হয় এবং এই ‘Diamond’ নামটি গ্রিক শব্দ ‘আদামাস’ (Adamas) থেকে এসেছে যার অর্থ অপরাজেয়; মূলত এখানে অনন্তকালের ভালোবাসা বা Eternity of Love বোঝানোর জন্য উক্ত শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

হীরার ইতিহাস বলতে থাকলে আসলে তা কখনোই শেষ হবে না। এখন আপনাকে একটি অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করার মাধ্যমে মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। আপনি কখনও ‘পিনাট বাটার’ বা ‘চীনাবাদামের মাখন’ খেয়েছেন? এই প্রশ্ন কেন? আপনাকে যদি বলি, এই সাধারণ পিনাট বাটার দিয়েই আপনার স্বপ্নের এই রত্নপাথর তৈরি করা সম্ভব, তাহলে কি তা বিশ্বাস করতে পারবেন? শুনতে অনেকটা উদ্ভট ও হাস্যকর মনে হলেও বিষয়টি কিন্তু সত্য।
এ সম্পর্কে বলার আগে হীরার একটু পরিচিতি এবং তৈরির প্রক্রিয়া একটু বলি।

ডায়মন্ড; Image source: diamondsusa.org

ডায়মন্ড

ডায়মন্ড প্রধানত কার্বনের কঠিন অবস্থা। এটি অত্যন্ত মূল্যবান হওয়ার অন্যতম কারণ হল- এর তৈরির প্রক্রিয়া বেশ জটিল, কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ। প্রাকৃতিকভাবে, হীরা সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৮০০ কি.মি. কিংবা ৫০০ মাইল গভীরে ২২০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস (৪০০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট) তাপমাত্রা এবং সাধারণ চাপের তুলনায় ১.৩ মিলিয়ন গুণ অধিক চাপে কার্বনকে ক্রিস্টালাইজেশনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। ‘ন্যাচার জার্নাল’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় ভূবিজ্ঞানীদের মতে এক থেকে তিন বিলিয়ন বছর ধরে ভূ-পৃষ্ঠের গভীরে উক্ত প্রভাবকগুলোর সহায়তায় ডায়মন্ড তৈরি হয়েছে।

প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরী হীরা সংগ্রহ করাও কিন্তু সহজ কোনো কাজ নয়। এমতাবস্থায় আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে এত হীরার অলংকার বিশ্বজুড়ে কীভাবে তৈরি হচ্ছে? কীভাবে সংগ্রহ হচ্ছে এত হীরা? এত ব্যবহারেও এর সম্ভার ফুরাচ্ছে না কেন? এজন্য অবশ্যই কৃত্রিম পদ্ধতিতে ডায়মন্ড প্রস্তুতকারীদের ধন্যবাদ জানাতে হবে। সাধারণত দুটি প্রক্রিয়ায় ল্যাবরেটরিতে হীরা প্রস্তুত করা হয়।

কৃত্রিম ও প্রাকৃতিকভাবে তৈরী ডায়মন্ডের চিত্র ; Image source: static1.squarespace.com

১) উচ্চ চাপ, উচ্চ তাপমাত্রা

প্রথম প্রক্রিয়াটির নাম- উচ্চ চাপ, উচ্চ তাপমাত্রা (High Pressure, High Temperature- HPHT)। এই পদ্ধতিতে গ্রাফাইটকে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাপ ও তাপমাত্রা বাড়ানোর কাজও করে থাকে, যা এইচপিএইচটি মেশিনে ডায়মন্ড তৈরিতে সাহায্য করে। উক্ত কাজে অনেক বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। তবে এই রকমের হীরা প্রাকৃতিক হীরার মতো এত বিশুদ্ধ নয়; কেননা এতে একটি ধাতব দ্রবণ গ্রাফাইটের সাথে ভেজাল হিসেবে মেশানো হয়।

উচ্চ চাপ, উচ্চ তাপমাত্রা প্রক্রিয়া ; Image source: substech.com

২) কেমিক্যাল ভ্যাপোর ডিপোজিশন

ডায়মন্ড তৈরির আরেকটি প্রক্রিয়া হল- (Chemical Vapor Deposition)। উক্ত প্রণালীতে প্রাকৃতিক হীরার থেকেও বেশি বিশুদ্ধ হীরা তৈরি সম্ভব। প্রস্তুতকারীরা একটি চাপহীন পাত্রে কার্বনসহ গ্যাস ও মাইক্রোওয়েভ রশ্মি দেন। এখানে মাইক্রোওয়েভ গ্যাসের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। উপযুক্ত শর্ত সাপেক্ষে এবং প্রভাবকের সহায়তায় কার্বন অণুগুলো বিশ্লেষিত হয়ে শত শত হীরা প্রস্তুত করে থাকে।

কেমিক্যাল ভ্যাপোর ডিপোজিশন; Image source: tvu.com

উল্লেখ্য যে, উক্ত প্রক্রিয়া দুটিও বেশ ব্যয়বহুল। উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রা ব্যবহার না করে কোনো সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন এবং আমাদের ভূ-অভ্যন্তরের অবস্থা জানার তাগিদে জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ বেরিউথ-এর গবেষক ও বৈজ্ঞানিক ড্যান ফ্রস্ট (Dan Frost) একটি উদ্ভট প্রক্রিয়া বের করে দেখিয়েছেন। আমরা জানি যে, হীরা মূলত কার্বন বা কার্বনের একটি রূপ গ্রাফাইটের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। ফ্রস্ট সেই একই কথা মনে রেখেছেন; তবে সে কার্বনের মূল উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন ‘পিনাট বাটার’।

ড্যান ফ্রস্ট; Image source: bgi.uni-bayreuth.com

বিবিসি ফিউচারে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের এই অদ্ভুত পদ্ধতিটি বুঝিয়ে বলেন। প্রথমে তিনি ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে হাজার হাজার কিলোমিটার নিচের আবরণের বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করেন। ফ্রস্ট বলেন, “যদি আমরা বুঝতে চাই এ পৃথিবী কীভাবে গঠিত হয়েছে, তাহলে জানতে হবে এই বিশ্ব কী কী দিয়ে গঠিত।”

অনেক ভূবিজ্ঞানীই মনে করেন, গ্রহাণুপুঞ্জের উল্কাপিণ্ডে যে উপাদান ব্যবহৃত হয়, তা দিয়েই ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্তর তৈরি হয়েছে। উল্কা যখন পৃথিবীতে পতিত হয়, তা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা বের করেন যে এসকল উল্কায় সিলিকনের পরিমাণ অনেক বেশি। কিন্তু ভূপৃষ্ঠে পাওয়া সিলিকনের পরিমাণ উল্কার তুলনায় অনেক কম। তাহলে বাকি সিলিকন কোথায় যায়, তা ভাবার একটি বিষয়।

ডায়মন্ড স্ট্যাবিলাইজেশন জোন; Image source: geology.com

সে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেও নিশ্চিত হন যে ভূ-ত্বকে উল্কার মতো এত বেশি সিলিকন থাকে না। তার ধারণা, হয়তো বা ভূ-অভ্যন্তরে এমন কোনো স্তর আছে, যেখানে এই সিলিকন জমা হয় কিংবা আগে কোনো সিলিকন সংবলিত ভূ-স্তর ছিল যা কোনোভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। তার মতে, সমুদ্রের নিচে হয়ত এরকম কোনো সিলিকন আস্তরণ থাকতে পারে। সে লোহাকে হীরা তৈরির প্রধান উপাদান মনে করেন এবং এই স্তরকে তা উৎপাদনের উপযুক্ত পরিবেশ। তার বক্তব্য অনুসারে, সমুদ্রের নিচের কোনো ভূ-স্তর থেকে বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড বের হয়ে ভূ-অভ্যন্তরে বিভিন্ন লৌহখণ্ডের সাথে বিশ্লেষিত হয়ে ডায়মন্ড সৃষ্টি করে এবং উক্ত পদ্ধতিতে অক্সিজেন বের হয়ে যায়, হীরায় শুধু কার্বনই রয়ে যায়। এসকল যুক্তির সাপেক্ষে তিনি কার্বন সংবলিত একটি উপকরণ বেছে নেন। তবে তা অন্য কিছু নয়, বরং স্যান্ডউইচে ব্যবহৃত খুব সাধারণ একটি খাদ্যদ্রব্য ‘পিনাট বাটার’।

ড্যান ফ্রস্ট উপযুক্ত প্রভাবকের সহায়তায় দুটি ডায়মন্ডের মাঝে এই পিনাট বাটার দিয়ে দেখেন যা মূলত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যদ্রব্য। ফলে প্রচুর পরিমাণ হাইড্রোজেন নির্গত হয়, যা ছোটখাটো একটি বিস্ফোরণ ঘটায়; তবে মূল উদ্দেশ্য কিন্তু ঠিকই অর্জিত হয়। হ্যাঁ! হীরা সৃষ্টি হয়। যদিও ফ্রস্টের এই নতুন পদ্ধতি সস্তায় হীরা তৈরিতে সহায়ক হয়নি ও বাকি দুটি পদ্ধতির তুলনায় বেশ একটা ভালো কোনো ফলও দেয়নি। এটি সময়সাপেক্ষও বটে। ফ্রস্ট বলেন, “আমরা যদি এই প্রক্রিয়ায় দুই বা তিন মিলিমিটারের একটি হীরা তৈরি করতে চাই, তাহলে কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।” তিন মিলিমিটারের হীরার মানে মাত্র ০.২৫ ক্যারেটের একটি রত্নপাথর। তবে এই অনুসন্ধান আমাদের পায়ের নিচের ভূ-অভ্যন্তর কেমন বা কী ধরনের উপাদান দিয়ে তা গঠিত, সে সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রদান করছে। যা পরবর্তীতে হীরা তৈরির জন্য সম্পূর্ণ উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার পাশাপাশি এ বিশ্ব সৃষ্টির বিভিন্ন তথ্যও উন্মোচন করতে পারবে।

নতুন এই পদ্ধতি সম্পর্কে আপনার কী মতামত? ডায়মন্ড তৈরির ক্ষেত্রে ‘পিনাট বাটার’ এর মতো খাদ্যদ্রব্যের ব্যবহার বিশেষ কোনো ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে? ড্যান ফ্রস্টের নতুন এই এক্সপেরিমেন্ট কি পাল্টে দিতে যাচ্ছে ভূ-গর্ভের প্রচলিত ধারণা?

ফিচার ইমেজ : popularscience.com

Related Articles