জিপিটি শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। জিপিটির পূর্ণ নাম হচ্ছে জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইন্ড ট্রান্সফর্মার্স (Generative Pre-trained Transformers)। এটি মূলত নিউরাল নেটওয়ার্ক মডেলের একটি পরিবার যা ট্রান্সফর্মার আর্কিটেকচার ব্যবহার করে থাকে এবং এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) পাওয়ারিং জেনারেটিভ এআই, যার ব্যবহার আমরা চ্যাটজিপিটিতে দেখতে পারি। জিপিটি মানুষের মতো পড়তে পারে, এবং ছবি, সঙ্গীত এবং আরও অনেক কিছু তৈরি করতে পারে।
এছাড়াও কথোপকথনমূলক পদ্ধতিতে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। তবে এই জিপিটির অনেকগুলো ভার্সন আছে (১, ২, ৩, ৩.৫, ৪) যার পূর্বের থেকে পরের ভার্সন বেশি উন্নত। যেমন- জিপিটি ৩ থেকে জিপিটি ৩.৫ বেশি উন্নত, ঠিক তেমনই জিপিটি ৩.৫ থেকে জিপিটি ৪ বেশি উন্নত। আজকের লেখার আলোচ্য বিষয়বস্তু জিপিটি ৩ এবং জিপিটি ৪ এর মধ্যে তফাতকে ঘিরেই।
ক্ষমতা
জিপিটি থ্রি হচ্ছে তৃতীয় জেনারেশনের জিপিটি। অপরদিকে জিপিটি ফোর হচ্ছে চতুর্থ জেনারেশনের জিপিটি। জিপিটি থ্রিতে ১৭৫ বিলিয়ন প্যারামিটার রয়েছে, যেখানে জিপিটি ফোর ১০০ ট্রিলিয়ন প্যারামিটারের অধিকারী। এই প্যারামিটার কম-বেশির কারণেই এদের কাজের দক্ষতায় ভিন্নতা রয়েছে। জিপিটি ফোর তুলনামূলকভাবে বেশি জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে দ্রুত এবং প্রায় নির্ভুলভাবে।
কর্মদক্ষতা
দুই ধরনের জিপিটির মধ্যে জিপিটি থ্রি প্রশ্নের জবাব দিতে পারে, ভাষা অনুবাদ করতে পারে, এবং কোনো লেখার সারমর্ম তুলে ধরতে পারে। অপরদিকে জিপিটি ফোর এআই মডেল বিভিন্ন তথ্য, ছবি, এমনকি গানও তৈরি করতে পারে। তাই জিপিটি থ্রির তুলনায় জিপিটি ফোর বেশি দক্ষ এবং শক্তিশালী। এর মূল কারণ হচ্ছে এই প্যারামিটারের পরিমাণের ভিন্নতা।
বাস্তব কাজে প্রয়োগ
দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে জিপিটির ব্যবহার বেড়েই চলছে। জিপিটি থ্রি চ্যাটবট, ভার্চুয়াল সহকারী তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো ক্ষেত্রে গবেষণার জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে।
অপরদিকে জিপিটি ফোরের ব্যবহার আরও উন্নত কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এটি চ্যাটবট এবং ভার্চুয়াল সহকারীর মতো বিদ্যমান ক্ষেত্রে কাজের দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করেছে। এমনকি জিপিটি ফোর জিপিটি থ্রির সীমাবদ্ধতা দূর করে দিয়েছে অনেকটাই।
ব্যবসায় যেভাবে জিপিটি ফোরের ব্যবহার সুফল আনবে
ব্যবসার কাজে ইতোমধ্যেই জিপিটির ব্যবহার সুফল বয়ে আনছে। তবে জিপিটি থ্রির তুলনায় জিপিটি ফোর সফলতা আনার পথ বেশি সহজতর করে তুলেছে। যেমন-
১) স্বয়ংক্রিয় কাস্টমার সাপোর্ট
জিপিটি ফোর মানুষের ভাষা বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারে। ফলে যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর চটজলদি দিয়ে থাকে এবং একদম নির্ভুলভাবেই দেয়।
২) জালিয়াতি শনাক্তকরণ
জিপিটি ফোরের দারুণ বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা যেকোনো ধরনের জালিয়াতি প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে, গ্রাহকের ডেটা সুরক্ষিত করার সময় ডেটা বিশ্লেষণ করে। জিপিটি ফোর এমন কিছু প্যাটার্ন শনাক্ত করতে পারে যা সম্ভাব্য জালিয়াতির কার্যকলাপ নির্দেশ করে, যেমন- কেনাকাটা কিংবা অস্বাভাবিক অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস।
৩) কাস্টমার প্রেফারেন্স তৈরি
জিপিটি ফোর কাস্টমারদের তাদের পূর্বের কেনাকাটা, ব্রাউজিং হিস্ট্রি এবং পছন্দের উপর ভিত্তি করে সঠিক পণ্যের পরামর্শ দিতে পারে।
৪) সাইবার নিরাপত্তা
জিপিটি থ্রির তুলনায় জিপিটি ফোর সাইবার আক্রমণ থেকে গ্রাহকের ডেটা বেশি সুরক্ষিত রাখতে পারে। রিয়েল-টাইমে নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিক পর্যবেক্ষণ করে ও প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য হুমকিগুলো দ্রুত শনাক্ত করে। ফলে ক্ষতি প্রতিরোধ করা যায়।
জিপিটি থ্রি এবং ফোর উভয়ই শক্তিশালী এআই অ্যালগরিদম, যা আমাদের জীবনযাপন এবং কাজ করার পদ্ধতিতে ইতোমধ্যে আমূল পরিবর্তন এনেছে, আমাদের কাজকে করেছে সহজতর।