উন্মুক্ত করে দেওয়ার ৫ দিনের মাথায় ১০ লাখের বেশি মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছিল চ্যাটজিপিটিতে, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটির সিইও সুন্দর পিচাই গুগলের ভেতরকার ব্যবস্থাপনায় ‘কোড রেড’ জারি করেন। বলা যায়, চ্যাটজিপিটির জবাবে এবার গুগল নিয়ে এসেছে তাদের নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চ্যাটবট ‘বার্ড’ (Bard)।
২০২২ এর ডিসেম্বরের এক গুগল মিটিংয়ের সংবাদে প্রকাশিত হয় যে, বার্ড আরো আগে থেকেই ওপেনএআই এর চ্যাটবটটির সাথে পাল্লা দিতে সক্ষম ছিল, কিন্তু ব্যবসায়িক সুনামের কথা মাথায় রেখে বার্ডকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়নি। কিন্তু চ্যাটজিপিটির ক্রমাগত উত্থানে আর হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকছে না গুগল, গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সীমিতসংখ্যক পরীক্ষকের জন্য বার্ড উন্মুক্ত দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন গুগলের এই ভয়? উত্তর সংক্ষেপে এরকম: বেশিরভাগ মানুষ সাধারণত গুগলেই সার্চ করে তথ্যের জন্য। যত বেশি সার্চ করা হবে, ততই গুগল তা থেকে আয় করবে। কিন্তু চ্যাটজিপিটি আসার পর মানুষ এখন সার্চ করা বাদ দিয়ে চ্যাটবটেই নির্দেশনা প্রদান করে, আর চ্যাটবটটি ইন্টারনেটে থাকা রিসোর্স থেকে তথ্য নিয়ে সেই অনুযায়ী লিখে দেয়। ফলে প্রত্যেকটি আলাদা সার্চে যে আয় গুগলের থাকে, সেটি অনেকাংশেই কমে যায়। একেই বলা যায় বার্ড উন্মুক্ত করে দেওয়ার পেছনের অন্যতম কারণ।
বার্ড নতুন কী নিয়ে আসছে? অন্য চ্যাটবটগুলো নির্দেশনার উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, উত্তরগুলোও হয় বেশ লিনিয়ার বা সরলরৈখিক। কিন্তু বার্ড হতে যাচ্ছে ফ্রি ফ্লোয়িং, অর্থাৎ মানুষ সাধারণভাবে আড্ডা বা স্বাভাবিক আলাপচারিতায় যেভাবে একটি বিষয় থেকে আরেকটি বিষয়ে সরে যায়, বার্ডও সেভাবেই কাজ করবে। কোনো বিষয়ে বার্ডকে প্রশ্ন করলে পাওয়া যাবে বহুমাত্রিক উত্তর; লেখালেখি, গবেষণা, কিংবা আলোচনার জগতে যা খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
সম্প্রতি চ্যাটজিপিটির উপরে এসেছে পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার অভিযোগ, যেখানে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে নিয়ে ইতিবাচক কবিতা লিখলেও কনজারভেটিভ সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে ইতিবাচক কবিতা লিখতে অস্বীকৃতি জানায় চ্যাটবটটি। গুগল বলছে, বার্ড হবে পক্ষপাতবিহীন, বিতর্কিত উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনাও বহুলাংশেই কমে যাবে বলে আশা করা যায়।
বার্ড উন্মুক্ত করা হলে টেকজগতে একটি বড়সড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে, পরিবর্তনের সম্ভাবনা গুগলেও। সেই পরিবর্তন কীরকম হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।