ভাইরাস; ল্যাটিন ভাষা হতে আগত শব্দটির অর্থই হচ্ছে ‘বিষ’। ভাইরাস সংক্রান্ত আলোচনাগুলো সাধারণত বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু বর্তমানে এই কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সকলের মাঝেই ভাইরাস নিয়ে আলোচনা চলে।
ভাইরাস আসলে কী জিনিস? এরা জীবনধারণ করে কীভাবে? বংশবিস্তার করে কীভাবে? প্রাণী কিংবা উদ্ভিদ প্রজাতির ক্ষতিই বা কীভাবে করে? ভাইরাসের শারীরিক অথবা জৈবিক দিক নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে নানাভাবে, কিন্তু প্রশ্ন যেমনই হোক, উত্তর একটাই। তা হলো, ‘ভাইরাসের সংখ্যাবৃদ্ধি প্রক্রিয়া’।
একটি ভাইরাসের জীবদ্দশায় আর কোনো কাজ নেই, সুযোগ পেলেই সে সংখ্যাবৃদ্ধি করার মাধ্যমে বংশধারা অব্যাহত রাখবে।
ভাইরাসকে প্রাণীর দলে ফেলা যায় না, আবার উদ্ভিদের দলেও ফেলা যায় না। তাহলে একে জড় পদার্থের মাঝে স্থান দেয়া যাক, সেই সুযোগও নেই এখানে। একটি ভাইরাস জীবিত প্রাণী কিংবা উদ্ভিদদেহের বাইরে সবখানে একটি জড় বস্তুর ন্যায় আচরণ করে থাকে, বছরের পর বছর বেঁচে থাকে কোনো পোষকদেহের আশায়। একবার কোনো পোষকদেহে প্রবেশ করতে পারলেই হলো, জীবন্ত হয়ে ওঠে।
জীবন্ত মানে এই না যে, জটিল সব জৈবিক কার্যাবলি প্রদর্শন করে, খাদ্য গ্রহণ করে, খাদ্য জারণ করে; এমন কিছু নয়। পোষকদেহে সদ্য জীবিত হয়ে ওঠা ভাইরাস সংখ্যাবৃদ্ধি করতে শুরু করে। আর এই সংখ্যাবৃদ্ধির জন্যই মাশুল গুণতে হয় পোষকদেহকে।
ভাইরাস একটি অকোষীয় রাসায়নিক পদার্থ মাত্র, এর কোনো কোষ নেই। পোষকদেহে জীব হিসেবে আচরণ করতে সক্ষম এই পদার্থটি মাত্র দুটো অংশ নিয়ে গঠিত। ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যধারী একটি নিউক্লিক এসিড আর একটি প্রোটিন আবরণ। নিউক্লিক এসিড দুই রকমের হতে পারে, শব্দগুলো আমাদের পরিচিত; ডিএনএ (DNA) এবং আরএনএ (RNA)। প্রাণী কিংবা উদ্ভিদদেহের কোষে উভয়ই বিদ্যমান, কিন্তু ভাইরাস এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ডিএনএ ও আরএনএ কখনো একসাথে অবস্থান করে না। একটি ভাইরাসে দুটোর মাঝে যেকোনো একটি থাকা সম্ভব। সেই হিসেবে ভাইরাসের শ্রেণীবিভাগও করা হয়ে থাকে। যেমন- করোনা ভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস, এর দেহে শুধু একটি একসূত্রক আরএনএ পাওয়া যাবে।
নিউক্লিক এসিডকে আবৃত করে রাখে প্রোটিন আবরণটি। তবে কিছু ভাইরাসের গঠনে লিপিড নির্মিত একটি বাড়তি আবরণ রয়েছে, সেই আলোচনায় যথাসময়ে আসা হবে।
ব্যাকটেরিয়ারও নিজস্ব একটি কোষ রয়েছে, কোষের ভেতরে যাবতীয় জৈবিক কার্যাবলী সম্পাদন হয়। কিন্তু ভাইরাস যেহেতু অকোষীয়, এর কোনো কোষ নেই বিধায় জৈবিক কার্যাবলীরও প্রয়োজন পড়ে না, সেহেতু খাদ্য গ্রহণ কিংবা জারণেরও কোনো প্রশ্ন আসে না।
ভাইরাসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আমাদের যে বিজ্ঞান, এর মূলভিত্তিই হলো ভাইরাসের সংখ্যাবৃদ্ধি তথা পোষকদেহের ক্ষতিসাধন। ভাইরাস যদি সংখ্যাবৃদ্ধি না করতো, আমাদের এ নিয়ে আর চিন্তা করতে হতো না। এই সংখ্যাবৃদ্ধি করতে গিয়েই একটি ভাইরাস তার পোষকদেহের ক্ষতি করতে শুরু করে।
একটি ব্যাপার পরিষ্কার করা প্রয়োজন। ভাইরাসের বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে বারবার সংখ্যাবৃদ্ধি শব্দটি উল্লেখ করা হচ্ছে। জীবিত উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীর ক্ষেত্রে যেমন প্রজনন শব্দটি ব্যবহৃত হয়, তেমনটি করা যাচ্ছে না। যেহেতু ভাইরাসের দৈহিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আমরা একে সম্পূর্ণ জীববৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কোনো দলে ফেলতে পারছি না, তাই ভাইরাসের বংশবৃদ্ধিতে সরাসরি প্রজনন শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, ভাইরাস একটি রাসায়নিক পদার্থ মাত্র, যার মাঝে নিজেকে সংখ্যায় বৃদ্ধি করার ক্ষমতা রয়েছে। এই সংখ্যাবৃদ্ধি প্রক্রিয়াটি সচরাচর যৌন কিংবা অযৌন সকল প্রকার প্রজনন পদ্ধতি হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
আর এই সংখ্যাবৃদ্ধি তথা বংশবিস্তারই হলো ভাইরাসের জীবনের একমাত্র কাজ কিংবা প্রধান উদ্দেশ্য; যেভাবেই দেখা হোক না কেন। একটি ভাইরাস দুভাবে সংখ্যাবৃদ্ধি করতে সক্ষম। একটি দ্রুত প্রক্রিয়া, অপরটি দীর্ঘপ্রক্রিয়া। দ্রুত প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় লাইটিক চক্র, আর দীর্ঘটির নাম লাইসোজেনিক চক্র।
লাইসোজেনিক চক্রে মূলত ভাইরাসের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ থাকে না, পোষকদেহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই চক্রটি নিয়ে তাই শেষ দিকে সামান্য আলোচনা করা হবে। একটি ভাইরাস সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটিয়ে সংক্রমণক্ষম ভাইরাস তৈরি করতে হলে লাইটিক চক্রটিই তার একমাত্র রাস্তা।
লাইটিক চক্রটি আলোচনার পূর্বে বাস্তব জীবনের একটি চিত্র তুলে ধরা যায়। ধরুন, একজন সহায়-সম্বলহীন মানুষ, তার কোনো আবাসস্থল, অর্থকড়ি কিছুই নেই। না খেয়ে তার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু সে জানে কীভাবে খাবার রান্না করতে হয়। কেবল প্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার আর সরঞ্জামাদির অভাব। সেই লোকটি একদিন কোনো এক বাসায় প্রবেশ করে সেই বাসায় মানুষদের রান্না করতে না দিয়ে কাঁচাবাজার আর সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে নিজের জন্য খাবার তৈরি করে ফেললো!
একটি ভাইরাসও ঠিক একইভাবে পোষকদেহের কোষকে ব্যবহার করে থাকে। ভাইরাস নিজে অকোষীয়, বংশবিস্তারের জন্য যেসমস্ত জৈবিক কার্যাবলীর প্রয়োজন, সেগুলো সম্পাদনের পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি নেই। কিন্তু কীভাবে কী করলে সংখ্যাবৃদ্ধি করা সম্ভব, তা ভাইরাসটি জানে। সব প্রক্রিয়া লেখা আছে সেই অতিক্ষুদ্র নিউক্লিক এসিডটিতে। তাই ভাইরাসটি একটি সুনির্দিষ্ট পোষক-কোষ বেছে নিয়ে এর মাঝে নিউক্লিক এসিডটি প্রবেশ করিয়ে দেয়।
কোষমাত্রই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় সিদ্ধহস্ত, একটি কোষ থেকে দুটি কোষে পরিণত হবার সমস্ত সরঞ্জাম রয়েছে কোষের ভেতরেই, কীভাবে করতে হবে সেই তথ্যও রয়েছে পোষক-কোষের নিজস্ব নিউক্লিক এসিডে। (যেমনটি বলা হয়েছে উপরোল্লিখিত উদাহরণটিতে; অসহায় মানুষটি যে বাসায় প্রবেশ করেছিল, বাসার মানুষগুলোও কিন্তু জানতো কীভাবে খাদ্য রান্না করতে হবে, মানুষটি তাদেরকে কাজ করতে না দিয়ে নিজেই রান্না করে নেয় খাবার।) একইভাবে কিছু রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভাইরাসের অনুপ্রবেশকৃত নিউক্লিক এসিডটি পোষক-কোষের নিজস্ব নিউক্লিক এসিডকে অকেজো করে দেয়। তারপর নিজস্ব ক্ষমতাবলে কোষস্থ পলিমারেজ এনজাইম ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের নিউক্লিক এসিডটিকে কপি করতে শুরু করে। একদিকে নিউক্লিক এসিডের সংখ্যাবৃদ্ধি করে, অপরদিকে কোষস্থ অঙ্গাণু রাইবোজোম ব্যবহারের মাধ্যমে সেসব নিউক্লিক এসিডের তথ্যানুযায়ী প্রোটিন আবরণীটির বিভিন্ন খন্ড তৈরি করে নেয়।
সেই খন্ডগুলো নির্দিষ্ট নিয়মে একসাথে জুড়ে দিয়ে একটি করে নিউক্লিক এসিডকে আবদ্ধ করার মাধ্যমেই তৈরি হয়ে যায় নতুন একটি ভাইরাস। এভাবেই লাইটিক চক্রের মাধ্যমে একটি পোষক-কোষে অনেকগুলো ভাইরাস তৈরি হয়। এই ভাইরাসগুলো পোষক-কোষ থেকে বেরিয়ে আসে, নতুন কোনো পোষক-কোষে আক্রমণের জন্য, কিংবা অন্য কোনো পোষকদেহে প্রবেশের জন্য আগের দেহ থেকেও বেরিয়ে আসে নানাভাবে। এটিই হলো ভাইরাসের সংক্রমণ, যা রোধ করার জন্যেই আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা বর্তমান এই সংকটময় সময়ে।
একটি ভাইরাস পোষককোষে প্রবেশ করে সংখ্যাবৃদ্ধি করলো, তারপর সুন্দর করে বেরিয়ে এলো; সবই বোঝা গেলো, কিন্তু এরপর পোষক-কোষটির কী পরিণতি হয়! এরও সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছে বিজ্ঞানের, তবে তা ব্যাখ্যার পূর্বে একটি উদাহরণের প্রয়োজন। ধরুন, শূন্যে টান টান করে রাখা একটি কাগজের উপর আপনি বল প্রয়োগ করলেন, কাগজটি ছিঁড়ে আপনার হাত কিংবা আঙুল কাগজ ভেদ করে অপরপাশে চলে যাবে। একই কাজটি আপনি কোনো পলিথিন ব্যাগ নিয়ে করুন, পলিথিনটি যে শুধু ছিঁড়ে যাবে, তা নয়, সামান্য ছেঁড়া অংশ আপনার হাতের সাথে লেগে অপরপাশে খুলে পড়ে যেতে পারে।
ভাইরাসের ক্ষেত্রেও দুটোর যেকোনো একটি ঘটে থাকে। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছিলো, কিছু ভাইরাসে প্রোটিন আবরণের বাইরেও একটি বাড়তি লিপিড আবরণ রয়েছে। এই লিপিড আবরণটি ভাইরাসের নিজস্ব সম্পত্তি নয়, এর উৎস হলো একটি পোষকদেহের কোষ। এই বাড়তি আবরণবিহীন ভাইরাসকে সাধারণত নগ্ন ভাইরাস বলা হয়, আর বাড়তি আবরণীযুক্ত ভাইরাসকে লিপোভাইরাস কিংবা এনভেলপড ভাইরাস বলা হয়।
নগ্ন ভাইরাস যখন সংখ্যাবৃদ্ধি শেষে পোষককোষ থেকে বেরিয়ে আসে, কাগজটি যেভাবে ছিঁড়ে গিয়েছিলো, ঠিক একইভাবে কোষের আবরণী ঝিল্লীটি ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। আর লিপোভাইরাসগুলো বেরিয়ে আসে পলিথিনের ঘটনার মতো করে, পোষককোষটির আবরণী ঝিল্লীর সামান্য লিপিড অংশ নিজের চারদিকে মুড়ে নিয়ে বেরিয়ে আসে।
লাইসোজেনিক চক্রটি মূলত দীর্ঘ এবং লাইটিক চক্রের উপরেই নির্ভরশীল। আমাদের সেই অসহায় মানুষটির কথা চিন্তা করুন দেখি। মানুষটি এবার কোনো বাসায় প্রবেশ করে সেই বাসার মানুষদের সাথে একটা চুক্তি করলো যে, তারা যে খাবার রান্না করবে, তার কিছু অংশ তাকেও দিতে হবে। এভাবে করে সবাই খেতে পাবে।
একটি লাইসোজেনিক চক্রে, ভাইরাসের নিউক্লিক এসিডটি পোষক-কোষের নিউক্লিক এসিডকে অকেজো না করে এর সাথে যুক্ত হয়ে যায়। একটি কোষ স্বভাবমতোই কোষ বিভাজন করবে, কোষ বিভাজন করতে গিয়ে নিজের নিউক্লিক এসিডটির কপি করার সাথে সাথে যুক্ত থাকা ভাইরাসের নিউক্লিক এসিডটিরও কপি করে ফেলবে। এভাবেই পোষক-কোষটি যত নতুন কোষ তৈরি করবে, নতুন নতুন ভাইরাল নিউক্লিক এসিড তৈরি হতে থাকবে। বছরের পর বছর চলে গেলেও ভাইরাসের কোনো ক্ষতি হবে না। চিরচেনা এইচআইভি ভাইরাসের কথাই ভাবুন, একজন মানুষে প্রবেশের সাথে সাথেই কিন্তু এইডসের লক্ষণ দেখা দেয় না, বছরের পর বছর কেটে যায়, হয়তো অনেক বছর লাইসোজেনিক অবস্থায় কাটানো শেষে একসময় এইডসের লক্ষণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
লাইসোজেনিক চক্র বন্ধ করে ভাইরাসটি আবারো সেই লাইটিক চক্রের মতো আচরণ করতে শুরু করবে, সংখ্যাবৃদ্ধি প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে, পোষক-কোষ একে একে ধ্বংস হতে শুরু করবে।
এই লাইটিক চক্র আর লাইসোজেনিক চক্রের মাধ্যমেই একটি ভাইরাস বেঁচে থাকে, বংশবিস্তার করে। পোষকদেহের বাইরে ভাইরাসটি নিতান্তই একটি জড় পদার্থ, কোনো কাজ নেই, মরার মতো করে পড়ে থাকে সবখানে কোনো পোষকদেহে প্রবেশের আশায়।
ভাইরাসের ব্যাপারে বলতে গিয়ে এর একটি বিশেষ আচরণের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তা হলো ভাইরাসের পোষকদেহ কিংবা পোষক-কোষ নির্বাচনে সুনির্দিষ্টতা। সকল ভাইরাসের মাঝেই এই আচরণটি মারাত্মকভাবে সুনির্দিষ্ট। একটি উদ্ভিদ ভাইরাস হুট করে এসে কোনো প্রাণীতে কিংবা অবুঝ প্রাণীতে রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাস হুট করে মানুষের দেহে রোগ তৈরি করে না। আবার অন্যভাবে বলা যায়, সাধারণ সর্দি-কাশির রাইনো ভাইরাস শ্বসনতন্ত্র বাদ দিয়ে অন্য কোনো অঙ্গে আক্রমণ করবে না, এর কেবল শ্বসনতন্ত্রে আক্রমণ করার সুযোগ রয়েছে।
এই ব্যাপারটি বোঝা খানিকটা জটিল, একটি পোষককোষকে নিজেদের বাসার সাথে তুলনা করুন, আমরা নিশ্চয় সবাইকে বাসায় প্রবেশ করতে দিই না, অপরিচিত হলেও যৌক্তিক প্রয়োজনবোধে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। পোষককোষের আবরণীর বাইরে কিছু রিসেপ্টর প্রোটিন থাকে; যা কোষের ভেতর কোনো পদার্থের প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। রাইনো ভাইরাস কেবল আমাদের শ্বসনতন্ত্রের কোষগুলোর রিসেপ্টরে যুক্ত হয়ে প্রবেশ করতে সক্ষম, সঠিক নিয়মে প্রবেশ করতেই হবে তাকে, পোষক-কোষের কোনোরূপ ক্ষতি হলে নিজের উদ্দেশ্যসাধন হবে না। এই কারণেই উদ্ভিদ ও প্রাণীভেদে কিংবা কোনো নির্দিষ্ট পোষকদেহে অঙ্গভেদে ভাইরাসের পরিচয় সুনির্দিষ্ট।
এখানে আরো একটি প্রশ্ন ওঠে যে, তাহলে আগে বানরে, বাঁদুড়ে কিংবা অন্য কোনো অবুঝ প্রাণীতে আক্রমণ করা ভাইরাস মানুষে আক্রমণ করা ধরেছে কীভাবে! আমাদের এই জীব-জড়ের মাঝামাঝিতে থাকা অকোষীয় রাসায়নিক পদার্থটি আবার মিউটেশন নামক একটি অনন্য প্রক্রিয়ায় সিদ্ধহস্ত। সেই আলোচনা করতে শুরু করলে আজকের মূল বিষয় অন্যদিকে চলে যাবে।
ভাইরাসের ইতিহাস এই পৃথিবীর বুকে নতুন নয়, সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই ভাইরাস অবস্থান করে আছে। কিন্তু ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পারাটা মানবজাতির জন্য নতুন। খুব বেশি দিন হয়নি, মানুষ ভাইরাসের অস্তিত্ব টের পেয়েছে। সাধারণ মাইক্রোস্কোপের নিচেও এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, ভাইরাস এতটাই ক্ষুদ্র যে একে দেখতে হলে আপনার প্রয়োজন হবে একটি ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের। তাই ভাইরাসকে আণুবীক্ষণিক নয়, বরং অতি-আণুবীক্ষণিক হিসেবে ডাকা হয়।
এই অতি-আণুবীক্ষণিক অকোষীয় পদার্থটির ব্যাপারে এখনো জানার আছে অনেক কিছু, বিজ্ঞানের প্রসারণের সাথে সাথে মানুষ হয়তো ভাইরাসের আরো অজানা সব আচরণ উন্মোচন করবে।