আপনার ফোন কখনো হারায়নি? কিন্তু তাতে কী! বর্তমানে স্মার্টফোন হারিয়ে ফেলা খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে গিয়েছে। হারিয়ে না গেলেও হুট করে ফোন নষ্টও হয়ে যেতে পারে। সবমিলিয়ে ফোন ছাড়া আমাদের জীবন যখন প্রায় অচলই বলা চলে, তখন হুট করে ফোন হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে আগে থেকে সাবধানতা অবম্বন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ফোন হারিয়ে যাক, চুরি হোক বা নষ্ট হয়ে যাক- চলুন জেনে নিই এমন কোনো পরিস্থিতির জন্য আগে থেকেই কীভাবে প্রস্তুত থাকবেন।
সাধারণ সতর্কতার ক্ষেত্রে যা যা করবেন
স্মার্টফোন দুটোভাবে নষ্ট হতে পারে। প্রথমত, বাহ্যিকভাবে। আর দ্বিতীয়ত, সফটওয়্যার সংক্রান্ত কোনো সমস্যায়। প্রথমেই তাই ফোনের হার্ডওয়্যারকে সুরক্ষিত রাখতে ভালো একটি কেইস ব্যবহার করুন, যেটা হাত থেকে পড়ে গেলেও ফোনকে সুরক্ষিত রাখবে। এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক ফোনের সফটওয়্যার, অর্থ্যাৎ তথ্যগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে কী কী ব্যবস্থা নিতে পারেন আপনি।
স্ক্রিন লক করুন
হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া ফোন থেকে তথ্য অন্যের হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই ফোনে আপনার চেহারা ও আঙুলের মাধ্যমে লক করে রাখুন। ফেসিয়াল বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিকগনিশন চালু থাকলেও অবশ্য পাশাপাশি ভালো মানের পাসওয়ার্ড দিন। এতে আপনার ফোন অন্তত প্রাথমিকভাবে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে।
লোকেশন ফিচার ব্যবহার করুন
অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোনে লোকেশন ফিচার চালু রাখুন। অ্যাপের লোকেশন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বন্ধ রাখলেও ফোনের লোকেশন ফিচার অন করুন। কারণ এটি শুধু ম্যাপ দেখতেই নয়, আরো নানারকম কাজে সাহায্য করবে আপনাকে। আপনার ফোন হারিয়ে গেলেও কোথায় হারিয়েছে সেটা খুঁজে বের করা সহজ হবে।
ফোন আইডেন্টিফিকেশন নম্বরের কপি রাখুন
ফোন হারিয়ে গেলে সেটা খুঁজে বের করার জন্য যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় সেটা হলো ফোন আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, অর্থাৎ- সিরিয়াল নম্বর ও ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি নম্বর। যদি ফোন হারিয়েই যায় সেক্ষেত্রে পুলিশ রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে এটি কাজে লাগবে। তাই নম্বরটির কপি নিজের কাছে আলাদাভাবে রাখুন। সেটিংসে গেলে বা *#06# ডায়াল করে খুব সহজেই এই নম্বর বের করতে পারবেন আপনি।
ওয়ারেন্টি পড়ে দেখুন এবং ইনস্যুরেন্স নিন
সব ফোন কোম্পানি ইনস্যুরেন্স সেবা না দিলেও কিছুক্ষেত্রে বাড়তি টাকা খরচের মাধ্যমে এটি পেতে পারেন আপনি। এই ইনস্যুরেন্স শুধু আপনাকে ফোন কাজ না করলে সেটা ঠিক করারই সুযোগ করে দেবে না, একইসাথে হারিয়ে যাওয়া ফোনের ব্যাপারেও কিছু সুবিধা দেবে। কী কী সুবিধা পাবেন আপনি ফোন কেনার মাধ্যমে সেটা বোঝার জন্য ওয়ারেন্টি ভালোভাবে পড়ে নেওয়াটাও জরুরি। তাই ফোন কেনার আগে এই ব্যাপারগুলো মাথায় রাখুন।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু রাখুন
আপনার ফোন ও ফোনে থাকা অ্যাপগুলোর টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু রাখুন। এতে করে কেউ যদি ফোন চালানোর চেষ্টা করে তাহলে আপনি আপনার ইমেইল, এসএমএস সবকিছুতেই নোটিফিকেশন পাবেন। এমনকি ফোন নষ্ট হয়ে গেলেও ব্যাক আপ ইমেল বা এসএমএস-এর মাধ্যমে ফোনের তথ্য ফিরে পেতে পারবেন আপনি।
ব্যাকআপ রাখুন
ফোনে অনেক অনেক তথ্য থাকে আমাদের, যেটা ফোন হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ফোনের সব তথ্য ক্লাউড স্টোরেজে রেখে দিন। একবার আপনার ফোনের সাথে ক্লাউড স্টোরেজ কানেক্ট হয়ে গেলে এরপর নিজ থেকেই সবগুলো তথ্য ফোনের বাইরেও জমা হয়ে যাবে।
অ্যাপল, গুগল, স্যামসাং ডিভাইসের মাধ্যমে সাধারণ তথ্য ছাড়াও ফোনের ক্ষুদেবার্তা, ফোন নম্বর, কল হিস্ট্রি ইত্যাদি সবকিছুই আপনি অনুমতি দিলে জমা হয়ে যাবে আপনার কাঙ্ক্ষিত স্থানে। যদি ছবি জমিয়ে রাখার প্রয়োজন হয় আপনার, সেক্ষেত্রে গুগল ফটোজ, আইক্লাউড ফটোজ বা ড্রপবক্সের মতো স্থানগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
ফোন খুঁজে নিন
আপনার ফোন যদি চুরি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অ্যাপল, গুগল বা স্যামসাং ডিভাইস থেকে ‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ পেইজে যান এবং ফোন খুঁজে বের করুন। যদি আপনার ফোন চালু থাকে তাহলে সেটা কোথায় আছে জেনে নিতে পারবেন আপনি। ইচ্ছা হলে ফোনের নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ নিষ্ক্রিয়ও করে দিতে পারবেন।
নষ্ট ফোনের জন্য ব্যবস্থা নিন
নানারকম দুর্ঘটনায় ফোন নষ্ট হয়ে যেতেই পারে। সেক্ষেত্রে ডিভাইসের নির্দিষ্ট কোম্পানি ফোনে পানি গেলে বা কোনো ক্ষতি হলে কী পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেছে তা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। সাধারণত এসব ব্যাপার ও নির্দেশনা ডিভাইসের সাথে থাকা কাগজেই লেখা থাকে। সেগুলো দেখে নিয়ে সেই মতো কাজ করুন।
প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে ফোন ছাড়া আমরা যেন আমাদেরকে কল্পনাই করতে পারি না। প্রতিদিনের পথচলায় অনেক বেশি নির্ভর করি আমরা ফোনের উপরে। তাই দৈনন্দিন জীবনের এই সঙ্গীকে সামলে রাখার, নিজের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করার জন্য উপরের ব্যাপারগুলো তো মেনে চলাই যায়, তাই না?