Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সরীসৃপদের জন্য বিপদসংকেত: কী এবং কেন?

জীবজগতে দুই ধরনের প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী এবং অপরটি হচ্ছে উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণীর উদাহরণ হচ্ছে- সরীসৃপ এবং উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী হচ্ছে- পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী ইত্যাদি। উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণীগুলোর সুবিধা হচ্ছে এরা যেকোনো পরিবেশে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারে। অন্যদিকে শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণীগুলো সব পরিবেশে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারে না। শীতের মধ্যে দেখা যায় যে সরীসৃপরা হাইবারনেশন বা শীতনিদ্রায় চলে যায়। কারণ শীতকাল এদের বেঁচে থাকার জন্য এবং স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড করার জন্য অনুকূল নয়। বিভিন্ন গবেষণাপত্র এবং বইতে পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের কে বলা হয়ে থাকে Endotherms এবং সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীদেরকে বলা হয় Ectotherms

শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণীগুলো সব পরিবেশে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারে না; Image Source: Scientific American

পরিবেশ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং জলবায়ুর যে পরিবর্তন হচ্ছে এতে প্রাণীকুল কতটুকু খাপ খাইয়ে নিতে পারবে সেটি একটি প্রশ্নের বিষয়। তবে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে যে জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করে বেঁচে থাকায় এগিয়ে থাকবে উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণীগুলো। কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীতে যত পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যে পাখি এবং স্তন্যপায়ীদের অভিযোজন ক্ষমতা ছিল সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণীদের তুলনায় বেশী। তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সাথে পাখি এবং স্তন্যপায়ীরা তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে নিয়েছে এবং এই দুই শ্রেণীর প্রাণীরই সফল অপবর্তন ঘটেছে।

এই গবেষণাপত্রে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, যদি জলবায়ুর পরিবর্তন আরও তীব্র হয়ে পড়ে, তখন সরীসৃপ জাতের প্রাণীগুলোর বিলুপ্তির হার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে; Image Source: mail and guardian

এই বছর Nature Ecology and Evolution এ একটি গবেষণাপত্র বের হয় যার শিরোনাম হচ্ছে ‘The Impact of Endothermy on the Climatic Niche Evolution and the Distribution of Vertebrate Diversity’। এই গবেষণাপত্রে অনেকগুলো মেরুদণ্ডী প্রাণীর বিভিন্ন বিষয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণীর প্রাণীরা পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে নিজেদের কে কতটুকু সার্থকভাবে মানিয়ে নিতে পারে সেটা দেখা। প্রায় ১১,০০০ মেরুদণ্ডী প্রাণী এবং এখন থেকে প্রায় ২৭০ বিলিয়ন বছর পর্যন্ত মেরুদণ্ডী যে যে প্রাণীর ফসিল পাওয়া গিয়েছে তাদের উপাত্ত সংগ্রহ করে এই বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণীরা বিভিন্ন আবহাওয়াতে টিকে থাকতে সক্ষম। এই শ্রেণীর প্রাণীগুলোর বিচরণ অনেক বিস্তৃত। অপরদিকে শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণীদের বিচরণ এবং বিভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা কম। এক্ষেত্রে তারা সফল নয়। এই গবেষণাপত্রে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, যদি জলবায়ুর পরিবর্তন আরও তীব্র হয়ে পড়ে, তখন সরীসৃপ জাতের প্রাণীগুলোর বিলুপ্তির হার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

শীতকালে এই প্রাণীগুলোকে তাদের কাজের মাত্রা কমিয়ে দিতে হয়, কারণ বাইরের শীতল পরিবেশ খাদ্য খুঁজতে, বসবাসের জায়গা খুঁজতে অথবা সঙ্গী খুঁজে নিতে বাঁধা দেয়; Image Source: freepngimg.com

বিভিন্ন কারণে উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণী প্রকৃতিতে টিকে থাকার দিক দিয়ে সফল। পাখি কিংবা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের নিজেদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার এক আশ্চর্য ক্ষমতা আছে। বাইরের পরিবেশ যেমনই হোক না কেন তারা নিজেদের মত করে বেঁচে থাকতে পারে। শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণীদের বেলায় এই স্বাধীনতা নেই। এই প্রাণীগুলোকে বাইরের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে হলে নিজেদের স্ব-বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করতে হয়। শীতকালে এই প্রাণীগুলোকে তাদের কাজের মাত্রা কমিয়ে দিতে হয়, কারণ বাইরের শীতল পরিবেশ খাদ্য খুঁজতে, কিংবা বসবাসের জায়গা খুঁজতে অথবা সঙ্গী খুঁজে নিতে এদের বাঁধা দেয়। উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণীদের মতো এরা এই পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে না, যে কারণে জীবজগতের যে নিয়ম “Survival for the fittest” সেখানে তারা টিকে থাকতে পারছে না।

উপরের চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, পাখি বা স্তন্যপায়ী (Endotherm) প্রাণীদের বিস্তীর্ণতা এবং ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা সরীসৃপ বা উভচর প্রাণীদের (Ectotherm) তুলনায় বেশী অর্থাৎ যেকোনো পরিবেশে তাদের টিকে থাকার ক্ষমতা বেশী; Image Source: Rolland et al. (Nature – 2018) [১]

উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণীরা তাদের বাচ্চাদেরকে গরম জায়গায় রাখার মতো ব্যবস্থা করতে পারে, যেটা তাদের বড় করার জন্য জরুরী। কিন্তু সরীসৃপদের ক্ষেত্রে এরকম স্বাধীনতা নেই। তাদেরকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট আবহাওয়া এবং পরিবেশের উপর নির্ভর করতে হয় এবং সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আজ থেকে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন বছর আগে যখন বৈশ্বিক ঠাণ্ডা যুগ ছিল তখন সরীসৃপদের শীতনিদ্রা এবং নিজস্ব কাজের থেকে বিরতিকালীন সময়ে পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য সুবিধা হয় চারদিকে ছড়িয়ে যাওয়া। বলতে গেলে উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণীদের আধিপত্য বিস্তার করতে সাহায্য করেছে শীতল রক্তের প্রাণীরা। কিন্তু পরিবেশের সাথে খাপ না খাওয়ার জন্য এই বৈশ্বিক উষ্ণতার যুগেও তাদের বিলুপ্তির হার বেড়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। কারণ জলবায়ুর এই পরিবর্তনের কারণে সরীসৃপরা যে পরিবেশে এবং যে ধরনের আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সুপরিচিত সেই পরিবর্তনের হার দিন দিন অনিয়মিত হয়ে পড়ছে।

সান্তাক্রুজে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক ScienceErosion of Lizard Diversity by Climate Change and Altered Thermal Niches একটি গবেষণাপত্র বের করেন। সেখানে তিনি বর্তমান জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে লিজার্ডের বিলুপ্তির হার এবং ভবিষ্যতে এর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা নিয়ে কাজ করেছেন। সেখানে দেখানো হয়েছে, ২০৮০ সালের মধ্যে গড়ে পৃথিবীর বিশ শতাংশ লিজার্ড শুধুমাত্র জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিছু কিছু জায়গায় এর হার চল্লিশ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। আবার গত শতাব্দীর ১৯৭৫ সাল নাগাদ চার শতাংশ লিজার্ড বিলুপ্ত হয়েও গিয়েছে।

একটা বিষয় মাথায় আসতে পারে, সাপ কিংবা টিকটিকি জাতীয় প্রাণীদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন একটি ভালো খবর, কারণ যেহেতু তারা শীতকালে নিজেদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না, তাই গরম পরিবেশ তাদের জন্য ভালোই হবে। এর ফলে তারা তাদের বংশবৃদ্ধি বাড়াতে পারবে। কিন্তু এখানেও একটি সমস্যা আছে। এই ধরনের সরীসৃপদের তাপমাত্রা সহ্যের ক্ষমতার একটি সীমা আছে। যদি তাপমাত্রা অনেক বেশী পরিমাণে বেড়ে যায় এবং প্রকৃতির বিভিন্ন পরিবর্তনের মাত্রা এবং হার অনিয়মিত হয়ে পড়ে, তখন এই প্রাণীদের জন্য সেটা অস্বস্তিকর হয়ে পড়বে। এর প্রধান কারণ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, অন্যান্য প্রাণীদের মতো সরীসৃপরা তাদের বসবাসের জায়গা বিস্তৃত করতে পারে না।

ফিচার ইমেজ: Uk.businessinsider.com (টুয়াটারা- বর্তমান সময়ে ডাইনোসরের বংশধরের একমাত্র সদস্য)

তথ্যসূত্র
[১] Rolland, J., Silvestro, D., Schluter, D., Guisan, A., Broennimann, O. and Salamin, N. (2018). The Impact of Endothermy on the Climatic Niche Evolution and the Distribution of Vertebrate Diversity, Nature Ecology and Evolution, 2, pages: 459–464

Related Articles