বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী হওয়া স্বত্তেও, কেন সমস্ত অর্থনৈতিক উদ্যোগে ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এমন কম, সে প্রশ্নটা বারবারই সামনে আসে। নারী কি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পিছিয়ে? না। দেশের সমস্ত কাজের জন্য নারী কি শারীরিকভাবে অক্ষম? না। তাহলে কেন তাদের অংশগ্রহণের মাত্রাটা কেন সমাজের অন্য অংশের তুলনায় এত অল্প? এর উত্তরটা গভীরভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক।
একটি সমাজ যখন তার একটি অংশের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সে অংশটির সামাজিক অংশগ্রহণ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ‘মিনা’ কার্টুনে আমরা অনেকেই দেখেছি, কীভাবে ছেলে ও মেয়ে শিশুর মধ্যে একদম ছোটবেলা থেকে পারিবারিকভাবে বৈষম্যের সূচনা হয়। গ্রাম কিংবা শহর, উভয় জায়গাতেই এর চল রয়েছে। পরিবারের মাঝে বেড়ে ওঠার পর যখন সমাজে তাদের পথচলা শুরু হয়, তখনও এই নারী পরিচয়টি পদে পদে তাকে নানারকম বাধার সম্মুখীন করে। কখনও তাকে শিকার হতে হয় শারীরিক নিপীড়নের, কখনও তাকে নিজের সব স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে ফিরে যেতে হয় চার দেয়ালের মাঝে।
অবস্থার কি পরিবর্তন হচ্ছে ধীরে ধীরে? এটা সত্যিই আনন্দের যে, হ্যাঁ হচ্ছে। তবে এর গতি এখনও অনেক ধীর। কিন্তু আশার বাণী যত দূর থেকে শোনা যাক না কেন, সে বাণীর সুর তো মহত্তম! তাই আমাদের দেশ হয়তো এখন ধীরে ধীরে আশায় বুক বাঁধছে, কারণ, তার একটি অংশ আবারও আসতে শুরু করেছে সমাজের মূল শক্তির জায়গায়, আদায় করছে স্বাভাবিক পথচলার অধিকার। বলছি, উদ্যোক্তা হবার কথা।
একজন উদ্যোক্তা একটি সমাজের পরিবর্তনের বড় নিয়ামক। যখন মানুষ নিজের চিন্তা-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে, নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে একটি উদ্যোগ শুরু করে এবং একে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়, তখন সে অবচেতনভাবেই গোটা দেশকে নিয়ে যায় সমৃদ্ধির পথে। একটি উদ্যোগ শুরুতে একজন মানুষের স্বপ্ন থেকে একসময় হয়ে দাঁড়ায় হাজারও মানুষের স্বপ্ন পূরণের মাধ্যম। আমাদের দেশে এই মুহূর্তে তরুণরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী এই উদ্যোগ বিষয়টি নিয়েই। আর নারীরা যখন ধীরে ধীরে এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন হচ্ছে, কাজে নামছে, তখন সত্যিই এই উদ্যোগই হয়ে উঠছে গোটা সামাজিক ব্যবস্থার এক নতুন পরিবর্তনের দিশা।
সেই ‘মিনা’ কার্টুনের কথাই বলি আবার। পরিবারের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন মেটাতে গিয়ে মিনা আর রাজু যখন শহরে গরুর দুধ বিক্রির উদ্যোগ নেয়, তখন তাদের সামনেও আসে নানান রকমের অযাচিত বাধা-বিপত্তি। কিন্তু তারা বুদ্ধি আর সাহসের জোরেই সেসব কাটিয়ে উঠে আর সফল হয়। আমাদের দেশে এই মুহূর্তে নারী উদ্যোক্তাদের পরিস্থিতি ঠিক এমনটাই। তাদের এখন সবচেয়ে বড় শক্তি হলো সাহস। এই সাহস দিয়েই তারা সমাজে শত শত বছর ধরে চলে আসা পিছুটান আর সংস্কারকে পেছনে ফেলতে পারছেন, সফলতার পথে এগোতে পারছেন। আর আজকের দিনে নারীদের এই সাহসিকতায় আরেকটু শক্তি দিতে নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করছে Sheba.xyz।
দেশের প্রথম অনলাইন সার্ভিস মার্কেট হিসেবে Sheba.xyz নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে, যেখানে উদ্যোক্তা আর সেবাগ্রহীতারা একত্রিত হতে পারেন একই জায়গাই। যে যার প্রয়োজন মতো কাজ কিংবা কর্মী পাবেন এখান থেকে। নানা ধরনের কাজের জন্য ক্ষুদ্র আর মাঝারি উদ্যোক্তারা রেজিস্ট্রেশন করে যুক্ত হতে পারেন এই প্ল্যাটফর্মে। এই গোটা ব্যাপারটাই দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য লাভজনক হচ্ছে বিশেষভাবে।
এখানে যেহেতু কাজ দেওয়া এবং নেওয়া দুটোই প্রাথমিকভাবে অনলাইনে সম্পন্ন হয়, তাই সেবাদাতা এবং গ্রহীতা দুই পক্ষই একে-অপরকে দেখে নিতে পারেন কাজের আগেই, তাই নিরপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তাটা দূর হয় অনেকখানি। আর নারীরা যেহেতু বাসায় গিয়েই সার্ভিস দিয়ে আসতে পারেন, তাই তাদেরকে বড় করে শো-রুম কিংবা অফিস স্থাপনের চিন্তায় যেতে হয় না উদ্যোগের শুরুতেই। সেইসাথে Sheba.xyz নিয়মিত আয়োজন করে থাকে বিশেষ প্রশিক্ষণের। যার মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তারা সহজে কাটিয়ে উঠতে পারেন তাদের সমস্যাগুলো, নিজেদের করে তুলতে পারেন পরিপূর্ণ পেশাদারী সার্ভিস প্রোভাইডার। ‘সেবা অপরাজিতা’র মতো বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে Sheba.xyz আলাদা গুরুত্বের সাথে কাজ করছে নারীদের নিয়ে। আর এর সুফলও পাচ্ছেন এই নারীরা। পরিশ্রম আর নিষ্ঠার সাথে কাজ করে একই প্ল্যাটফর্মের পুরুষ উদ্যোক্তাদের মতোই সমানতালে লড়ে যাচ্ছেন তারা।
এই এটুকুই দরকার মূলত। দরকার পায়ের নিচে একটু মাটি, শুধু ওখানে দাঁড়াতে পারলেই বাকিটা আমাদের নারীরা নিজেরাই করে নিতে পারবেন। ইতিহাসে নারীদের প্রতি অন্যায়-নিগ্রহের যত ঘটনা আছে, তার তুলনায় নারীর প্রতি সম্মান-মমত্ববোধের গল্প অনেক কম। সেই কমতিটুকু পূরণের কাজেই যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে Sheba.xyz। তাদের এই প্রচেষ্টা সফল হোক, তাদের এই অনন্য পথচলা বিস্তৃত হোক আরও অনেক দূর।