সম্প্রতি করোনাভাইরাস শুধু যে মানুষের স্বাস্থ্যের উপরই আঘাত হেনেছে, তা নয়। সাধারণ মানুষের চলাফেরা ও আমদানী-রপ্তানীতে বিধি-নিষেধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এসেছে এক বিশাল স্থবিরতা, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন খাতে। দেশি-বিদেশী অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অফিসের কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধের পথে। আর্থিক সংকটের এই ক্রান্তিকালে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন কমাতে বাধ্য হয়েছে তো বটেই, এমনকি কর্মী ছাঁটাইও করতে হয়েছে।
কিন্তু অগমেডিক্স দেখাচ্ছে ঠিক এর উল্টো চিত্র। তারা কর্মী তো ছাটাই করেইনি, উল্টো অধিক সংখ্যক কর্মী নিয়োগ দিয়েছে করোনার এই সময়ে। এখানেই থেমে থাকেনি তারা; ঘরে বসে কাজের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যাতায়াতের সুব্যবস্থা, এমনকি প্রয়োজনমত আবাসস্থলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। চলুন, দেখে আসি করোনার এই কঠিন সময়ে কীভাবে ‘উল্টোযাত্রা’য় চলেছে অগমেডিক্স।
অগমেডিক্স নিয়ে আগে ছোট্ট করে বলে নেওয়া যাক। প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তারদের নিয়ে। সেখানকার রোগীদের চিকিৎসার সকল তথ্য সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক হওয়াতে একদিকে ডাক্তারদের কাজের চাপ যেমন বেড়ে যায়, তেমনি চলে আসে ক্লান্তি ও একঘেঁয়েমি, রোগীর সেবাও হয় ব্যাহত। তথ্য সংরক্ষণের জন্য স্থানীয়ভাবে কোনো সহকারী ভাড়া করাও বেশ ব্যয়বহুল হওয়াতে অনেক ডাক্তার সেই পথে যেতে চান না। তাদের এই সমস্যার সমাধানেই এগিয়ে এসেছে অগমেডিক্স।
অগমেডিক্সের সাথে সংযুক্ত ডাক্তাররা গুগল গ্লাস পরে রোগী দেখেন ও চিকিৎসা দেন। গুগল গ্লাস থেকে নিজস্ব সফটওয়ারের মাধ্যমে ভিডিও ও অডিও সরাসরি ট্রান্সমিট হয় একজন মেডিক্যাল ডকুমেন্টেশন স্পেশালিস্ট বা স্ক্রাইবের কাছে, যিনি অবস্থান করতে পারেন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে। ডাক্তার ও রোগীর কথোপকথন রিপোর্ট আকারে লিখে নেন সেই ডকুমেন্টেশন স্পেশালিস্ট। কোনো কথা বুঝতে সমস্যা হলে রোগী দেখা শেষে ডাক্তারের সাথে তার যোগাযোগের সুযোগও রয়েছে। এই রিপোর্ট পরবর্তীতে রিভিউয়ের জন্য পাঠানো হয় ইলেক্ট্রনিক হেলথ রেকর্ড বা EHR সিস্টেমে। একজন ডাক্তার চাইলে নিজেও একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন সেই রেকর্ডে, এবং প্রয়োজনে তা শুধরেও দিতে পারেন।
বলছিলাম অগমেডিক্সের ‘উল্টোযাত্রা’র কথা। করোনাকালে অগমেডিক্স কোনো কর্মীকে ছাঁটাই তো করেইনি, উল্টো ২০২০-’২১ এই দু’বছরে আরো নতুন ৪৮১ জন কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মেডিক্যাল ডকুমেন্টেশন স্পেশালিস্টসহ অন্যান্য বিভাগে। স্বাস্থ্যখাতে কাজ করায় অগমেডিক্সে সবসময়ই দরকার হয় দক্ষ ডকুমেন্টেশন স্পেশালিস্ট-এর। দক্ষ জনবলের প্রয়োজন কখনোই ফুরোয় না। অগমেডিক্সের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, মহামারীর সময়েও নতুন নিয়োগের পেছনে রয়েছে তাদের সদিচ্ছা, দারুণ অফিস কালচার আর চমৎকার কাজের পরিবেশের প্রভাব। যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তারদের ঘড়ি মেনে কাজ করতে হয় বলে ডকুমেন্টেশন স্পেশালিস্টসদের অনেকেরই কাজের শুরু হয় সন্ধ্যা থেকে, শেষ হয় মাঝরাতে কিংবা ভোরে। তাদের নিরাপত্তার দিক মাথায় রেখে তাই পুরো অফিসেই রয়েছে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার সুবিধা। কোনো ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই কাজ করতে পারেন- যেকোনো সময়, যেকোনো শিফটে। উন্নত জিম সুবিধা রয়েছে অগমেডিক্সের অফিসে, তাই একঘেঁয়েমি কাটিয়ে উঠতে চাইলেই জিমে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন এর কর্মীরা।
শুধু সিসি টিভি ক্যামেরা আর জিম দিয়েই বসে নেই অগমেডিক্স। সাধারণভাবেই যেসব সুবিধা প্রতিষ্ঠানটির লোকজন পান, তা নামে ‘সাধারণ’ হলেও অন্যান্য যেকোনো চাকরির চেয়ে বেশ এগিয়েই। সপ্তাহে ৫ দিন অফিস করার সুযোগ, রাতের শিফটে কাজ করা কর্মীদের নিজস্ব গাড়িতে করে একদম বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আসা তো আছেই, সেই সাথে অফিসেই ব্যবস্থা করা হয় দুপুর/রাতের খাবারের, থাকে হালকা নাস্তাও। অগমেডিক্সের প্রত্যেক কর্মী তার নিজের ও নিজের পরিবারের জন্য (স্ত্রী ও দুই সন্তান) স্বাস্থ্য ও জীবন বীমার সুবিধা পান। আর টানা ৩ বছর ধরে মেডিক্যাল ডকুমেন্টেশন স্পেশালিস্টস পদে কাজ করা কর্মীরা পান এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত বোনাস। এমনকি কর্মক্ষেত্রের গ্রেডের উপর ভিত্তি করে কোম্পানির স্টক এপ্রিসিয়েশন রাইট পাওয়ার সুযোগও আছে অগমেডিক্সে।
করোনার এই সময়ে এসব সুযোগ-সুবিধার কোনোটিই বন্ধ হয়নি বা কমানো হয়নি, বরং আগের চেয়ে বেশি সুবিধা এখন পান অগমেডিক্সের কর্মীরা। করোনা-পূর্ববর্তী সময়ে সাধারণত শুধুমাত্র রাতের শিফটের কর্মীদেরই যাতায়াত সুবিধা দেওয়া হতো। কিন্তু করোনাকালে দিন-রাত সকল শিফটের কর্মীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অগমেডিক্সের নিজস্ব পরিবহন বাসা থেকে নিয়ে আসা ও বাসার সামনে নামিয়ে দেয়া হয় উভয় শিফটের কর্মীদের। তারপরও আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে অনেক ডিপার্টমেন্টের কর্মীরাই পেয়েছেন ঘরে বসেই কাজ করার সুবিধা, অফিসে আসার প্রয়োজন পড়েনি অনেকেরই। আর যাদের অফিসে আসতেই হবে, তাদের সুরক্ষা যাতে সর্বোচ্চভাবে নিশ্চিত করা যায়, সেই উদ্দেশ্যে নিজস্ব যাতায়াত ব্যবস্থার পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে আবাসন সুবিধাও। যেসব কর্মী মেস বা বোর্ডিংয়ে থাকেন, অর্থাৎ নিজস্ব বাসায় থাকতে পারেননি, তাদের জন্য অগমেডিক্স ব্যবস্থা করেছে নিজস্ব আবাসনেরও। কোভিডে আক্রান্ত কর্মীদেরও জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ঘরে বসে কাজের সুবিধা তো তারা এমনিই পেয়েছেন, সেই সাথে দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় ছুটিও, যতদিন না তারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের কাজ পুরোপুরি অনলাইনে হওয়ার কারণে কর্মীদের ছুটি, বীমা, বেতন- যেকোনো সমস্যার সমাধানই এখন করা যাচ্ছে অনলাইনেই, তাই তাদের আলাদা করে অফিসে আসা-যাওয়া নিয়েও ভাবতে হচ্ছে না। মহামারীর সময়ে পাল্টে গেছে নিয়োগ পদ্ধতিও। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যাতে আর না ছড়ায়, সেদিকে খেয়াল রেখে নতুন কর্মী নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াই (লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, নিয়োগপত্র সবই) চলেছে অনলাইনে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি হলেও বর্তমানে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি কাজ করছেন অগমেডিক্সে। তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রায় ৯০ ভাগের কাজই হয়েছে দেশীয় ইঞ্জিনিয়ারদের হাত ধরে। অপারেশনস, রিক্রুটমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং আইটি অ্যান্ড সাপোর্ট টিমেও প্রচুর বাংলাদেশি কাজ করছেন, নিয়োগও দেওয়া হচ্ছে নতুন অনেককে। কিন্তু আফসোস অন্য জায়গায়। মেডিক্যাল ডকুমেন্টেশনের কাজে সবচেয়ে বেশি জনবল প্রয়োজন হওয়ার পরও বাংলাদেশ থেকে চাহিদা মোতাবেক দক্ষ মেডিক্যাল ডকুমেন্টেশন স্পেশালিস্ট নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না, যার প্রধান কারণ ইংরেজিতে অদক্ষতা।
এই পদে কাজ করতে যেসব গুণাবলি দরকার, তার মধ্যে স্বচ্ছন্দে আমেরিকান ইংরেজি বোঝা ও লেখার ব্যাপারটি সবচেয়ে বড় হওয়ার কারণে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট হওয়া সত্ত্বেও লুফে নিতে পারছেন না আকর্ষণীয় বেতন ও সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ এই কাজ। তাই যদি কারো থাকে ইংরেজি শোনা, বোঝা ও সেই সাথে টাইপিংয়ে দারুণ দক্ষতা, তাহলে যে বিষয় নিয়েই পড়ালেখা করুন না কেন, অগমেডিক্সে চাকরির সুযোগ আপনার সবসময়ই আছে। দেরি না করে আজই তাদের ওয়েবসাইটের ক্যারিয়ার পেজটি ঘুরে আসুন। বলা তো যায় না, স্বাস্থ্যখাতের নতুন দিগন্তের পথচলার নেতৃত্ব দিতে পারেন আপনিই!