‘ইনভিন্সিবল’ শব্দটার সঙ্গে অজিদের পরিচয়টা যে কাল-পরশুই প্রথম হলো, ব্যাপারটা ঠিক এমন নয়। সেই যে সেবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার খেলা বসলো বিলেতে, তাতে কোনো ম্যাচ না হেরেই তো ওয়ারউইক আর্মস্ট্রংয়ের দল নাম পেয়েছিল ‘অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়া’। বছর সাতাশ বাদে সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তি করেছিল ডন ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়া, স্যার ডন নামটার বদৌলতে দিগ্বিদিকে ‘ইনভিন্সিবল’রূপে এই দলটার নামই ছড়িয়েছিল বেশি। এ শতাব্দীর শুরুর দশকেও তো টানা ২১ একদিবসী ক্রিকেট ম্যাচ জয়ের পর রিকি পন্টিংয়ের দলকেও দেয়া হয়েছিল ‘ইনভিন্সিবল’ তকমা।
হঠাৎ করে যে কারণে এই ‘ইনভিন্সিবল’ বৃত্তান্ত নিয়ে পড়তে হলো, তা হচ্ছে দিনপাঁচেক আগেই টানা ২১ জয়ের রেকর্ডে পন্টিংরা পেয়ে গিয়েছেন সঙ্গী। সাথী পেয়ে কষ্টের বদলে অবশ্য গর্বই হবার কথা ২০০৩ সালের ওই দলের সদস্যদের, সঙ্গ দেয়া দলটির নামও যে অস্ট্রেলিয়াই।
না, অ্যারন ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া নয়, মেগ ল্যানিংয়ের ‘ইনভিন্সিবল’ অস্ট্রেলিয়া।
কেন বলছি ‘ইনভিন্সিবল’?
২৯ অক্টোবর ২০১৭ দিনটির আলাদা কোনো তাৎপর্য তখন যদি না-ও থেকে থাকে, আজ প্রায় দু’বছর বাদে তারিখটিকে তো রীতিমতো ‘রেড-লেটার ডে’ ঘোষণা করতে হচ্ছে। সেদিনই যে কফস হারবারে প্রমীলা অ্যাশেজের তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমে শেষবারের মতো কোনো ক্রিকেট ম্যাচ হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া।
মাঝের এই দুই বছরে অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে এসেছিল নিউ জিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা। ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলতে বিমানে চড়েছিল অজি নারীরাও। পার্থে নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটাররা একবার চলে এসেছিলেন পাঁচ রান দূরত্বে, লেস্টারে ইংল্যান্ডের দেয়া ১৭৮ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে নিজেরা ১৫০ রানেই হারিয়ে ফেলেছিলেন ৭ উইকেট। কিন্তু দিনশেষে জয়টা গিয়ে হাজির হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ঘরেই।
তা হাজির হবে না-ই বা কেন! সর্বশেষ প্রকাশিত র্যাঙ্কিংয়ে দেখা যাচ্ছে, সবার শীর্ষে থাকা অস্ট্রেলিয়ার রেটিং পয়েন্ট ১৬২, তালিকার দ্বিতীয়তে থাকা ভারতের সঙ্গে তাদের ব্যবধানটা ৪১ পয়েন্টের (ব্যবধানটা ঠিক কতটা বিশাল, যদি বুঝতে খানিকটা কষ্ট হয়, তালিকার নয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার রেটিং পয়েন্ট ৪৭, এই তথ্য নিশ্চিত করেই সাহায্য করবে)। ব্যাটারদের তালিকায় শীর্ষ নামটা মেগ ল্যানিংয়ের, এমনকি শুরুর দশজনের তিনজনই জাতে অস্ট্রেলীয়। বোলারদের তালিকাতেও শীর্ষ দশে রয়েছেন তিনজন অস্ট্রেলিয়ান। অলরাউন্ডার তালিকার শীর্ষে থাকা এলিসা পেরিও তো গায়ে চাপান অস্ট্রেলিয়ার জার্সিই।
শেষ তিন বছরের পরিসংখ্যান ঘেঁটেও দেখা যাচ্ছে, বাকি দলগুলোর সঙ্গে ব্যাটিং বলুন কিংবা বোলিং, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ব্যবধানটা যেন সৌরবর্ষের। এ সময় ব্যাট হাতে প্রতি উইকেটে অজি ব্যাটাররা রান তুলেছেন ৪৪.৫৮ গড়ে, ওভারপ্রতি রান তুলবার হারটা ৫.৬২। তাদের ঠিক পরেই থাকা ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে সংখ্যাগুলো হয়ে যাচ্ছে ৩১.০১ আর ৫.০১। ব্যবধানটা এতটাই বিশাল, চাইলে অনায়াসেই একটা সূর্য এঁকে ফেলা যায় দুই দলের মধ্যিখানে।
বোলিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যবধানটা অতটা বিশাল না হলেও কাছাকাছিই। তারাই একমাত্র দল, যাদের বোলারদের ইকোনমিটা চার ছোঁয়নি তিন বছরের ব্যাপ্তিতে; বোলিং গড়েও বাকিদের চাইতে এগিয়ে আছে কমপক্ষে ২০ শতাংশের তফাতে।
এমনকি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের শূন্য রানে ফেরত পাঠাবার আগে প্রতিপক্ষের অপেক্ষা করতে হয়েছে গড়ে তিন ম্যাচ করে, নিজেরা সে স্বাদ পেয়েছে গড়ে প্রায় প্রতি ম্যাচেই।
প্রমীলা ক্রিকেটের নাড়ি-নক্ষত্রের খোঁজখবর রাখা মানুষগুলো অস্ট্রেলিয়ার এই আধিপত্যের খবরটায় নতুন কিছু পাবেন বলে মনে হয় না। টানা জয়ের পরের দু’টি রেকর্ডও তো অস্ট্রেলিয়ারই গড়া। আজ অবধি প্রমীলা ক্রিকেট যে ১৮টি বৈশ্বিক আসর দেখেছে, তার ১১টিরই সমাপ্তিদৃশ্য হয়ে রয়েছে অজি নারীদের জয়োল্লাস।
অজি মেয়েদের এই বিশাল কৃতিত্বকে কেবল প্রমীলা ক্রিকেটেই আটকে না রেখে তাই তুলনা চলছে বাদবাকি ক্রিকেটের সঙ্গে। ২০০৩-এর সেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একই পাল্লায় তুলে মেপে দেখা হচ্ছে, কোন দলটি সেরা? দেখা যাচ্ছে, কর্তৃত্বের দিক থেকে বেশ খানিকটা ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই জয়ী হচ্ছে প্রমীলা দলটি।
মাঝের ২১ ম্যাচে অজিরা ৩০০ পেরিয়েছে ৬ বার, তাদের বিপক্ষে প্রতিপক্ষ ২৫০-এর ঘরই পেরিয়েছে মাত্র একবার। বিপরীতে, ২০০৩-এর দলটি ৩০০ পেরিয়েছিল চারবার, ২৫০ পেরোনোর সংখ্যাটি সাজুয্যই রাখছে আজকের অপরাজিতাদের সঙ্গে। তখনকার ক্রিকেটের চাইতে আজকের ক্রিকেট আক্রমণাত্মক হয়েছে বলে দলীয় ৩০০ রানের মাইলফলককে খাটো করবারও উপায় নেই। ওভারপ্রতি রান তোলা আর রান দেয়ার অনুপাত করে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান দলটি এগিয়ে থাকছে ০.২০ ব্যবধানে (১.৪৪ আর ১.২৪)।
বর্তমান দলটির পিষে ফেলা নীতির আরেকপ্রস্থ প্রমাণ পাওয়া যায় জয়ের ব্যবধানে। মেগ ল্যানিংরা অন্তত ১১ বার জয় পেয়েছেন ১৫০ রান কিংবা ৭ উইকেটের বেশি ব্যবধানে। রিকি পন্টিং এমন আসমান-জমিন ব্যবধানে জয় পেয়েছিল মাত্র ২ বার।
এরপরও যদি এই দলকে ‘ইনভিন্সিবল’ না বলি, তবে অভিধানে শব্দটি রয়েছে কীজন্যে মশাই!
কেমন করে হলো এই অস্ট্রেলিয়া?
ক্রিকেট লেখক জ্যারড কিম্বার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আশ্রয় খুঁজতে চাচ্ছেন ইতিহাসে। বারেবারেই যে অপরাজিত একেকটি দলের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, তার তরিকা নাকি একই আছে। সর্বশেষ ‘ইনভিন্সিবল’ অস্ট্রেলিয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে যেমন তিনি বলছেন, গ্লেন ম্যাকগ্রা-শেন ওয়ার্ন-অ্যাডাম গিলক্রিস্ট… অপরাজেয় হবার আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ার পুরুষ দল একসঙ্গে পেয়েছিল এমনই সব ম্যাচ উইনার; নিজেদের দিনে যারা একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারতেন অস্ট্রেলিয়ার দিকে। শেন ওয়ার্ন তো ১৯৯৯ বিশ্বকাপই নিয়ে এসেছিলেন ক্যাঙারুর দেশে।
কিন্তু দিনশেষে তারাও তো মানুষ, তাদেরও তো পড়তি-ফর্মের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো! এমনকি ২০০৩ বিশ্বকাপ-যাত্রার ব্রাহ্মমুহূর্তে তো শেন ওয়ার্নকেও হারিয়ে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। তবুও যে সেবার অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে আটকানো যায়নি অস্ট্রেলিয়াকে, তার কারণ, জয়ের জন্যে স্রেফ এই তিন-চারজন ম্যাচ উইনারের দিকেই তাকিয়ে না থেকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া গোটা দলটাকেই বানিয়ে ফেলেছিল ম্যাচ-উইনারদের সরাইখানা। প্রতিভা রয়েছে, স্রেফ প্রয়োগ করতে পারছে না, এমন সব ক্রিকেটারদের ব্যাপারে স্ব-উদ্যোগী হয়ে তারা গড়ে নিয়েছিল দুর্দান্ত সব ম্যাচ-উইনার, বাকি বিশ্বে যেসব ক্রিকেটাদের পরিণতি হয়তো বা হতো অঙ্কুরেই ঝরে পড়া।
একবার ম্যাথু হেইডেনের কথা স্মরণে এনে দেখুন, ক্রিজে তার রাজকীয় চালচলন আর হেঁটে এসে ফাস্ট বোলারদের গ্যালারিতে আছড়ে ফেলবার কথাই বোধকরি মনে পড়বে সর্বাগ্রে। অথচ ক্যারিয়ারের প্রথম ছয় বছর আর ১৩ টেস্ট শেষে তার গড় ছিল কি না মোটে ২৪! এমনকি ওয়ানডে দলের বাইরেও তো ছিলেন ৬ বছর। সেখান থেকে তিনি যে টেস্ট খেলেছিলেন আরও ৯০টি, টেস্ট ব্যাটিং গড় ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৫০-য়ের কোটা, সেজন্যে তো হেইডেনের সঙ্গে সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট কর্তাদেরও সমান কৃতিত্ব প্রাপ্য। যে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ দিয়ে হেইডেনের ঘুরে দাঁড়াবার শুরু, ৩ টেস্টে ৬ ইনিংস খেলে রান করেছিলেন ৫৪৯, তার জন্যে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাকে আগেভাগেই পাঠিয়ে দিয়েছিল এশিয়ায়। কী করে ভারতের উইকেটে খেলতে হবে, তা যেন রপ্ত করে ফেলতে পারেন এশিয়ায় কিছুদিন কাটিয়ে, সেটাই ছিল উদ্দেশ্য।
ম্যাথু হেইডেন তো উদাহরণমাত্র, চাইলে ক্রিকেটারদের এমন গড়েপড়ে নেবার আরও অনেক গল্পই খুঁজে বের করা যাবে ইতিহাস ঘেঁটে। রবিশঙ্কর মৈত্রীর ওই কথাটাকে যেন আপ্ত মেনেই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দপ্তরে ঢোকেন এর কর্তারা,
“প্রতিভার জাত লাগে না কিন্তু পাত লাগে। প্রতিপালন লালন ছাড়া সকল প্রতিভা কুসুমেই বিনষ্ট হয়ে যায়।”
এবারে আসা যাক প্রমীলা দলের কথায়। যে ম্যাচ জিতে অস্ট্রেলিয়া পুরুষ আর নারী দল হয়ে গেল সমানে সমান, সে ম্যাচে দলটির নিয়মিত অধিনায়ক মেগ ল্যানিং ছিলেন না। অধিনায়ক বলছি বলে ল্যানিংকে শুধুই অধিনায়ক ভাববেন না যেন, তিনি দলটির সেরা ব্যাটারও। তিনি কতটা ভালো ব্যাটার, তা বোঝাতে এই তথ্যটিই বোধহয় যথেষ্ট: প্রমীলা ক্রিকেটের ইতিহাসে শতক সংখ্যায় তিনি ৪ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে প্রথম। তার সঙ্গে সঙ্গে দলের বাইরে ছিলেন এলিসা পেরিও, অস্ট্রেলিয়ার সেরা ক্রিকেটার তো বটেই, সর্বকালের সেরা নারী ক্রিকেটার তিনিই কি না, ইদানীং আলোচনা চলছে তা নিয়েই। তবুও র্যাঙ্কিংয়ের পঞ্চম দল নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া জয়ের ব্যবধানটা ২৩২ রানের।
মানেটা যা দাঁড়াচ্ছে, এই অস্ট্রেলিয়া জয়ের জন্যে এক-দু’জন ম্যাচ উইনারদের ওপরেই ভরসা করে নেই, এই অস্ট্রেলিয়া ২০০৩-এর স্মৃতি ফিরিয়ে এনে গোটা দলটাকেই ভর্তি করে ফেলেছে ম্যাচ উইনারে। ২০১৭ থেকে অ্যালিসা হিলি রান করেছেন ৫১.২৬ গড়ে ১,৩০৮, সঙ্গে স্ট্রাইকরেটটাও ১১০ ছুঁইছুঁই। অথচ এর আগের ছয় বছরে তার ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ১৩! মেগ ল্যানিং-এলিসা পেরিরা মধ্য-বিশে দ্যুতি তো ছড়াচ্ছেনই, অ্যালিসা হিলিরাও নিজেদের আবিষ্কার করেছেন নতুন করে, একই সাথে দলে নতুন আসা অ্যাশলি গার্ডনার, সোফি মলিনিউ, অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডরাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সমুদ্রে নেমেই জলকেলি করছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। এত বেশিসংখ্যক মানসম্পন্ন ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়া তৈরি করে ফেলেছে যে অস্ট্রেলিয়ার একাদশে জায়গা খুঁজে ফেরাদের নিয়ে বানানো একাদশও চাইলে নামিয়ে দেয়া যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, অনায়াসে।
কিন্তু, এত এত ক্রিকেটার উঠে আসবার রহস্যটা কোথায় লুকিয়ে? বিশ্লেষকদের মতে, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এবং সংস্কৃতিগত ব্যাপার-স্যাপার; সবকিছুই কাজ করছে অস্ট্রেলিয়ায় প্রমীলা ক্রিকেটারদের এই বাম্পার ফলনের পেছনে। ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়াই প্রথমবারের মতোন প্রমীলা ক্রিকেটারদের নিয়ে এসেছিল পেশাদার চুক্তির আওতায়, ২০১৫-১৬ মৌসুমে শুরু করেছিল নারী বিগ ব্যাশ লিগ। এর বাইরেও ঘরোয়া ক্রিকেটের মানোন্নয়নে গুরুত্বারোপ করে তৈরি করেছে আটটি আধা-পেশাদার দল, যা সৃষ্টি করেছে দুর্দান্ত প্রতিযোগিতামূলক আবহ। নারী ক্রিকেটাররা সাফল্য এনে দিচ্ছেন দেখে স্পন্সরও মিলেছে বেশ, ফলে বেতন বেড়েছে ক্রিকেটারদের। অস্ট্রেলিয়ান দর্শকেরাও প্রমীলা ক্রিকেটকে গ্রহণ করে নিয়েছে সাদরে, এমসিজিতে ৮৫,০০০ হাজার মানুষ বসে মেয়েদের বিশ্ব টি-টোয়েন্টির ফাইনাল দেখেছেন এই ফেব্রুয়ারিতেই।
কিন্তু…
নারী ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার এই একাধিপত্যবাদ প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, বাকি ক্রিকেট-খেলুড়ে দেশগুলো তাহলে কি করছে? প্রমীলা ক্রিকেটারদের পেশাদার চুক্তির আওতায় সর্বপ্রথম ইসিবিই এনেছিল, সর্বশেষ বিশ্ব টি-টোয়েন্টি কিছু দারুণ ম্যাচ উপহারও দিয়েছিল। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা কতদিন বজায় থাকবে, আদৌ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পাল্লা দেবার মতো দল তারা কোনোদিন হবে কি না, জিজ্ঞাস্যগুলো তো সেখানেই।
এর আগে ২০১৬ সালেও তো বিশ্ব টি-টোয়েন্টি জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আশা জাগিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হবার, কিন্তু এরপর থেকে ব্যাটে-বলে তাদের পারফরম্যান্স কেবল নিচেই নেমেছে। ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কোনো পেশাদার চুক্তি ছাড়াই কী করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়েরা বিশ্ব জয় করেছিল, তাই তো এখন বিস্ময় জাগায়! কিম গার্থ, যিনি কি না বিবেচিত হতেন সময়ের সেরা আইরিশ প্রমীলা ক্রিকেটাররূপে, ভালো একটা ক্যারিয়ারের আশায় তিনিও দেশান্তরী হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলবেন বলে। একই কথা প্রযোজ্য কির্স্টি গর্ডন কিংবা লেই ক্যাস্পারেকের জন্যেও, ইংল্যান্ড আর নিউ জিল্যান্ডের হয়ে খেলবেন মনস্থ করবার আগে দু’জনই খেলতেন স্কটল্যান্ডের হয়ে।
‘ইনভিন্সিবল’, শব্দটি তাই অস্ট্রেলিয়ার মনে জন্ম দিচ্ছে মিশ্র এক অনুভূতি। রাজ্যের অর্থব্যয়, বহুমুখী পরিকল্পনা, প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘরোয়া ক্রিকেট, এতসংখ্যক ক্রিকেটারের পরিচর্যা করে লাভটা কী হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সমানে সমান কোনো প্রতিযোগী যদি না-ই মেলে!