ফুটবলে অন্যতম একটি জনপ্রিয় ফরমেশন হলো ৪-৪-২। সেই বিংশ শতাব্দীর এই ট্যাকটিক্স আজও চলছে ফুটবল বিশ্বে বিভিন্নভাবে। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিক্টর মাসলোভ নামের ভদ্রলোক ফুটবলকে দেখিয়েছিলেন এক নতুন সম্ভাবনার দিক। তার দেখানো এই পথে হেঁটে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে উঠেছেন অনেকেই। কিন্তু অনেকেই আবার বেশ কিছু দুর্বলতায় দারুণভাবে ব্যর্থও হন এই ফরমেশনে। কিন্তু এই ফরমেশনটা কেন এত জনপ্রিয় হলো? কীভাবে কোচরা তাদের টিমকে এই ফরমেশনে অ্যাডাপ্ট করে বিশ্বজয় করেছেন? উত্তর রয়েছে এই ফরমেশনের ভিতরেই।
ফুটবলের একটি স্ট্যান্ডার্ড ফরমেশন হলো ৪-৪-২ । এই ফরমেশনে খেলা তুলনামূলকভাবে সহজ, কারণ এটি প্রতিটি খেলোয়াড়ে জন্য পরিস্কারভাবে স্পেসিফিক কিছু ইন্সট্রাকশন দিয়ে থাকে। ৪ জনের ডিফেন্স লাইন থাকায় সেখানে স্ট্রেন্থ বৃদ্ধি পায় অনেক। আর মিডফিল্ডে সংখ্যার আধিক্যের জন্য একাধিক পাসিং চ্যানেল খুলে গিয়ে প্রচুর পাসিং অপশন পাওয়া যায়। এতে বলটি নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান এবং সুযোগ তৈরি করাও সহজ হয়। এই চারজন মিডফিল্ডারের সামনে থাকে দুইজন স্ট্রাইকার। ৩-৪ জনের ডিফেন্সের বিপরীতে স্ট্রাইকার একজনের জায়গায় দুইজন হওয়ায় অফেন্সিভ প্রেশার তুলনামূলক বেশি থাকে।
টপ লেভেলের পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য এই ফরমেশনের বেসিক রিকোয়ারমেন্টগুলো অবশ্যই পরিপূর্ণ করতে হবে। সেগুলো হলো
-
শক্তপোক্ত ২ জন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। তারা আক্রমণ ঠেকানোর পাশাপাশি গেম রিড করবে এবং নিচ থেকে উপরে থাকা টিমমেটদের ডিরেকশন দেবে।
-
দুইজন অ্যাটাকিং ফুলব্যাক। অ্যাটাকিং অ্যাওয়ারনেস বেশি থাকায় একদম উপরের দুই স্ট্রাইকারকে প্রচুর বল সাপ্লাই দিতে পারবে।
-
কমপক্ষে দুইজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। তাদের একজনকে থাকতে হবে ডেস্ট্রয়ার রোলে। ট্রায়াঙ্গল পাসের মাধ্যমে তারা খেলাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
-
দুইজন স্ট্রাইকার, যাদের মধ্যে খুব ভাল কেমিস্ট্রি থাকা লাগবে। একজন যেন আরেকজনের জন্য জায়গা বানিয়ে গোলের সুযোগ করে দেয়।
এই ফরমেশনটির মূল শক্তির জায়গাগুলি কোথায়? মূলত এর ব্যালান্স। চারজনের দু’টি লাইন একই সাথে ডিফেন্স ও অ্যাটাকের কাজ করে। আবার অ্যাটাকে যাওয়ার সময় ৪ জন মিডফিল্ডারকে ওভারল্যাপ করে দুই ফুলব্যাক প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে নিজেদের শক্তিও বাড়িয়ে নেয়। কোনো দল যদি নিজেদের মধ্যে বল রাখার জন্য প্লেয়িং ফ্রম দ্য ব্যাক সিস্টেমে ছোট ছোট পাসে আগায়, তখন উপরে থাকা ৬ জন প্লেয়ার দিয়ে একসাথে তাদের প্রেস করে নিজেদের সীমানাতেই থাকতে বাধ্য করা যায়, আবার তাদের বাধ্য করা যায় লং বল খেলে বলের পজেশন হারাতে।
আবার ডিফেন্স করার সময় চারজন ডিফেন্ডারের সাহায্যের জন্য নিচে নেমে আসে দুই সিএম। এই দুইজন যে দূর্গ তৈরি করে, তাতে প্রতিপক্ষ নিজেদের আরো বেশি খেলোয়াড়কে উপরে নিয়ে আসতে বাধ্য হয় এই ডিফেন্স ভাঙতে। এতে তাদের নিজেদের ডিফেন্সে বেশ কিছু ওপেন স্পেসের সৃষ্টি হয়। ফলে কুইক কাউন্টার অ্যাটাকে উলটো তাদেরই গোল খাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
স্ট্রং জোন থাকলে উইক জোনও থাকবে নিশ্চয়ই। এই ফরমেশনে অ্যাডাপ্ট করার জন্য সিএম দুইজনকে গতিশীল থাকতে হয় বলের সাথে। উইঙ্গার যদি ট্র্যাক-ব্যাক না করেন, তবে প্রতিপক্ষের ইনভার্টেড উইঙ্গার সহজেই ডিফেন্স লাইন ভাঙতে পারেন। আবার প্রতিপক্ষ যদি ৩টি সিএম নিয়ে নামে, তবে টু-ভার্সাস-থ্রি কন্ডিশনে মিডফিল্ড হারাবে। তাদের যে ট্রায়াঙ্গল পাসের তৈরি হবে, সেটা ঠেকাতে দুইজনকেই জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। তো এর ফলে ডিফেন্স লাইনের সামনে বড় একটা স্পেস তৈরি হয়ে যাবে। আবার এইভাবে দুটি ফ্ল্যাটলাইন রাখায় প্রতিপক্ষের অর্ধেও প্রচুর জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।
প্লেয়ারদের কিছু আলাদা রোলও থাকবে। যেমন ডিফেন্স লাইনকে নিচে থেকে ভালভাবে ডিরেকশন দেওয়ার দায়িত্ব থাকবে গোলরক্ষকের। নাহলে ফোর-ম্যান-ব্যাক সিস্টেমে একজন বল হারালে সেটা রিকভারি প্রায় অসম্ভব। বল-প্লেয়িং গোলকিপার হতে হবে যার পাসিং এবং বল হোল্ড করে বাকিদের জায়গায় ফিরে আসার সময় করে দেবে। বেশিরভাগ সময় এখানে প্লেয়িং ফ্রম দ্য ব্যাক খেলা হয়। তবে সাথে দুই সিবি আর ফুলব্যাকের পাস নিয়ে ভাল বোঝাপড়াও থাকা জরুরী, যাতে ব্যাক পাস পেলে তাতে কনফিউশনের সৃষ্টি না হয়।
দুইটি ফিজিক্যালি স্ট্রং সেন্টারব্যাকের কাজ থাকবে প্রতিপক্ষের খেলা রিড করা আর অ্যাটাক অ্যানালাইসিস করা। এতে তাদের অ্যাটাকগুলি পেনাল্টি বক্সের সীমানায় আসার আগেই নষ্ট করে দিতে হবে। দুই ফুলব্যাককে সাথে নিয়ে একসাথে লাইন করতে হবে যাতে কোনো স্পেস তৈরি হয়ে না যায়। অফসাইড ট্র্যাপটাও এইভাবেই বানাতে হবে। দুই ফুলব্যাককে গাইড করে অপজিশনের উইঙ্গারকে ট্র্যাপে ফেলবে তারাই। অ্যাটাকে তাদের কোনো কাজ থাকবে না। কিন্তু এরিয়াল অ্যাডভান্টেজ নিতে সেটপিসের সময় প্রতিপক্ষের বক্সে তারাই থাকবে মূল ফোকাসে।
দুই সেন্টারব্যাকের দুই পাশে থাকা দুই ফুলব্যাককে হতে হবে প্রচণ্ড গতিসম্পন্ন। ফিজিক্যালি ফিট, ভাল পাসিং অ্যাবিলিটি, কিংবা ক্রসিংয়ের মতো গুণগুলো থাকা আবশ্যক। দুই সিবিকে ডিফেন্সিভ সাপোর্টের পাশাপাশি উইং থেকে আসা ক্রসগুলো ইন্টারসেপ্ট করাও গুরুত্বপূর্ণ। সেটপিসের সময় সেন্টারব্যাকদের ঠিক পিছনে এই ফুলব্যাকরাই থাকবে মূলত ডিফেন্সে। তবে এছাড়া বাকি অন্য সময়গুলোতে তাদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হবে সামনে যাওয়ার।
দুই সিএমের মধ্যে একজন হতে হবে ডিফেন্সিভ আর অন্যজন অফেন্সিভ। তবে দুইজনই বক্স-টু-বক্স খেলায় পারদর্শী হলেই ভালো, সেক্ষেত্রে অ্যাটাক আর ডিফেন্সের ব্যালান্স বজায় থাকে। কোনো অ্যাটাক ডিফেন্ডারের কাছে যাওয়ার আগেই তা নষ্ট করা কিংবা দুই সেন্টারব্যাকের মধ্যকার স্পেস কমিয়ে আনার মতো ব্যাপারগুলো খেয়াল রাখাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিপক্ষের উইঙ্গারকে মিডফিল্ড দিয়ে ঢুকার সুযোগ বন্ধ করবেন তারাই। প্লেয়িং ফ্রম দ্য ব্যাক হলে দুইজনকেই যথেষ্ট ফ্রি-স্পেসে থাকতে হবে, যাতে তার টিমমেটরা সহজেই পাসিং অপশন হিসেবে তাদের খুঁজে পায়। এই ফরমেশনে সবচেয়ে ক্রুশাল রোলটাই থাকে তাদের। দলের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে তাদের টেকনিকাল স্কিলটা দরকার পড়ে। হঠাৎ করেই আক্রমণ হলে খেই হারিয়ে না ফেলে বল রিকভার করে সেখান থেকে অপর অর্ধে বল পাঠিয়ে দলকে খেলায় ধরে রাখতে হয় তাদেরকেই।
এই দলের উইঙ্গারদের হতে হবে ভালো ড্রিবলার। প্রচণ্ড স্পিডের সাথে তারা চেষ্টা করবে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স লাইন ভেদ করে বল নিয়ে যাওয়ার। উইঙ্গারদের কাজ একেক কোচের সাথে একেক রকম হবে। প্রতিপক্ষের ফুলব্যাক এড়িয়ে তারা বক্সে ক্রস ফেলবে, আবার কাট ইনসাইড করে শট নেবে, আবার স্ট্রাইকারের সাথে সুন্দর কম্বিনেশন করে অ্যাটাকে যাবে – এভাবেই তারা বহুমুখী দায়িত্ব পালন করে থাকে। তারা আবার অন্য প্লেয়ারদের জন্য ভালো সুযোগও করে দিতে পারে; যেমন, ওয়াইড পজিশনে থেকে তাদের সিএমকে সামনে একটু বেশি রুম দেওয়া, আবার ভেতরে চেপে গিয়ে ফুলব্যাককে ওভারল্যাপের সুযোগ করে দেওয়া। তারা তাদের গতিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সের পেছনে দৌড় দেবে, সেখানে নিচে থেকে তাদের থ্রু বল সাপ্লাই দেবে। উইঙ্গাররা অ্যাটাকে যাওয়ার সময় তাদের ফুলব্যাককে সাথে রেখে প্রতিপক্ষের ফুলব্যাকের সামনে ওয়ান-ভার্সাস-টু পরিস্থিতি তৈরি করে কনফিউশন তৈরি করে অ্যাটাকে যেতে পারে।
একদম সামনে যে দুই স্ট্রাইকার থাকবে, তারা তাদের মুভমেন্ট দিয়ে ডিফেন্সের ব্যালেন্স নষ্ট করে দেবে। তাদের শারীরিকভাবেও হতে হবে শক্তিশালী, যাতে বক্সে বল হোল্ড করে একজন তার স্ট্রাইকিং পার্টনারকে ঠিক পজিশনে যেতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া যায়। একজন যাতে আরেকজনের সামনে পড়ে না যায়, সেটাও খেয়াল রাখতে হয়। অনেক সময় দুই স্ট্রাইকারের একজন একটু নিচে নেমে ৪-৪-১-১ ফরমেশন তৈরি করতে পারেন, এতে নাম্বার টেনের জন্য তৈরি শূন্যস্থান থেকে উপরে তার সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে বল সাপ্লাই করবে। এদের বলা হয় সেকেন্ড স্ট্রাইকার। অবশ্য অনেক দল এত কিছু না ভেবে সরাসরি দুইজন টার্গেট ম্যান খেলায়, যাতে তাদের কোনো একজনের কাছে বল গেলেই সরাসরি গোলের সুযোগ তৈরি হয়। বক্সে একই সাথে দুই টার্গেটম্যান থাকায় ডিফেন্ডারদের পক্ষে তাদের সামলানো একটু বেশিই কষ্ট হয় ।
৪-৪-২ ডায়ামন্ড ফরমেশন হলো এই সিস্টেমেরই মোডিফাইড দ্বিতীয় জনপ্রিয় ফরমেশন। এই সিস্টেমে কোনো উইঙ্গার না থাকায় ফুলব্যাকরা উপরে ওঠার স্বাধীনতা একটু বেশি পেয়ে যায়। ফ্ল্যাট ফরমেশনে একসাথে দুই ফুলব্যাক উপরের উঠার অনুমতি পায় না। কিন্তু ডায়মন্ড শেপে দুই সিবিকে সাহায্য করার জন্য বাড়তি একটা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার থাকে। এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের সামনে হোল্ডিং রোলে থাকে দুইজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। তাদের কাজ থাকে তাদের দারুণ পাসিং অ্যাবিলিটি দিয়ে সামনে কোনো খেলোয়াড়কে বলের জোগান দেওয়া। তাদের নিচে একজন ডিএম সাপোর্ট দেওয়ায় তারা সামান্য উপরে উঠে অ্যাটাকেও যেতে পারে।
এই দুইজনের সামনে থাকেন একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। তার কোনো ডিফেন্সিভ ডিউটি থাকে না, ট্র্যাক ব্যাকও করার দায়িত্ব থাকে না। নিজের দারুণ ভিশন দিয়ে সামনে কোনো প্লেয়ার ফ্রি-স্পেসে দৌড় দিলে তাকে বলের জোগান দেওয়াটাই তার কাজ। ম্যাচের বেশিরভাগ গোলের সুযোগ তৈরি হয় তাকে দিয়েই। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ জেতা ফ্রান্স দলের মিডফিল্ডটা ঠিক এমনই ছিল।
আবার যদি এই ডায়ামন্ড শেপকে আরো অ্যাটাকিং শেপে আনার দরকার হয়, তখন দুই ফুলব্যাককে উপরে তুলে দিয়ে তাদের সাথে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে একই লাইনে আনতে হয়। তখন ফরমেশনটির চেহারা দাঁড়ায় ২-৩-৩-২। আবার আরো বেশি অ্যাটাকিং খেলার সময় ডিএম আরো নিচে নেমে থ্রি-ম্যান ডিফেন্স তৈরি করে সম্পূর্ণ নতুন ফরমেশনে নিয়ে যায়, ৩-৪-১-২। এই ডায়মন্ড সিস্টেমে ৪-৪-২ ফ্ল্যাটের চাইতে প্লেয়াররা একটু বেশি অ্যাটাকিং হয়, ফলে প্রতিপক্ষ আক্রমণে উঠলে তারা ডিফেন্সের চাইতে বেশ কিছু জায়গায় নিজেদের খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। ফুলব্যাকদের একদম সময়মতো নিচে নেমে এসে ডিফেন্সের খালি জায়গাগুলো সংকীর্ণ করে দিতে হয়। ডিফেন্সে বোঝাপড়া এবং যথাযথ যোগাযোগ এজন্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এর আরেকটি রূপ হলো ২-৪-৪। এই ফরমেশনে দল অলআউট অ্যাটাকে খেলতে চায়। এই অবস্থায় দুই ফুলব্যাকের রোল পাল্টে তারা হয়ে যায় উইংব্যাক। আর দুই সাইডের ওয়াইড মিডফিল্ডাররা দুই স্ট্রাইকারের দুই পাশে গিয়ে পুরোদস্তুর উইঙ্গার হয়ে যায়। এই ফরমেশনের সুবিধা হলো, প্রতিপক্ষের অংশের পুরোটা জুড়ে প্রভাব বিস্তার করা যায়। কিন্তু কুইক কাউন্টারের বিপরীতে এই ফরমেশনকে খুব অসহায়ভাবে আত্মসমর্পন করে ফেলতে হয়। তাই খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া কোনো দল এই ফরমেশনে যায় না।
৪-৪-২ ফর্মেশনকে কিছুটা পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে বর্তমানে অনেক কোচই ভিন্ন কিছু ফরমেশনে খেলান, যার মধ্যে ৪-২-২-২, ৪-১-৩-২, ৪-৩-১-২, ৪-২-৪ অন্যতম।
৪-৪-২ ফরমেশন অনেক দলই বেছে নিলেও সবাই কিন্তু সফল হতে পারেনি। যারা হয়েছে, তাদের মধ্যে উদাহরণ হিসেবে আনা যায় আরিগো সাচ্চির লেজেন্ডারি এসি মিলান দলটিকে। আবার এই শতাব্দীর শুরুর দিকের কার্লো আনচেলত্তির এসি মিলান দলটাও এই ফরমেশনে সফলতা পেয়েছে। তাদের ৪-৪-২ ডায়ামন্ড ফরমেশনে প্রতিপক্ষ মাঠের মাঝখান দিয়ে অ্যাটাকে উঠতেই পারেনি। প্রায় কাছাকাছি সিস্টেমে খেলেছে হোসে মরিনহোর পোর্তোও।
আর্সেন ওয়েঙ্গার তার আর্সেনালকে ৪-৪-১-১ সিস্টেমে খেলিয়ে করে ফেলেছিলেন ‘ইনভিন্সিবল’। এরপর ২০১৫-১৬ মৌসুমে লেস্টার সিটির সেই বিখ্যাত প্রিমিয়ার লিগ জয়ের মৌসুমেও ক্লদিও রানিয়েরি এই ফরমেশন অবলম্বন করেন। এইরকম আরো বেশ কিছু উদাহরণ রয়ে গেছে। এছাড়া ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ড দলটিও ছিল এই ফরমেশনে খেলা। সেখানে কোচ আলফ রামসি কিছুটা পরিমার্জন করে দলকে খেলিয়েছিলেন ৪-১-৩-২ শেপে।
এই ফরমেশন নানারকমভাবেই একজন কোচ ব্যবহার করতে পারেন, সেই স্বাধীনতা এই ফরমেশনে আছে যথেষ্টই। কোচের সেজন্য দেখতে হয় তার হাতে কেমন অপশন আছে, কোন কোন পজিশনে খেলানোর মতো ভালো কোন কোন খেলোয়াড় দলে আছেন। কোচ পর্যালোচনা করবেন খেলোয়াড়দের শক্তিমত্তা আর দুর্বলতা, সেই অনুযায়ী খেলোয়াড়দের ঠিকঠাক পজিশনে সেট করবেন। যেমন, মিডফিল্ডারদের তুলনায় যদি উইঙ্গার ভালো না হন, সেক্ষেত্রে তাকে ফ্ল্যাট ফরমেশন থেকে দলকে অন্য ফরমেশনে শিফট করতে হয়।
দিনশেষে ফুটবল একটা দলীয় খেলাই। আপনাকে যেকোনো ফরমেশন ঠিকভাবে মাঠে কাজ করানোর জন্য অবশ্যই খেলোয়াড়দের থেকে ভালো পারফরম্যান্সটাই বের করে আনতে হবে। আর সর্বোচ্চটা বের করে নিয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করতে পারলে এই খেলোয়াড়রাই মাঠে তাদের কারিশমা আর পরিশ্রম দিয়ে ফরমেশনটিকে সফল করে তুলতে পারে।