ফুটবলের সবচেয়ে সম্মানজনক ব্যক্তিগত পুরষ্কার ব্যালন ডি’অর, যা প্রতি বছরের মতো এবারও আয়োজিত হয়েছে আজ। বরাবরের মতোই পুরুষ এবং নারী দু’জনকে দেওয়া হয়েছে বর্ষসেরার খেতাব। ছিল রোমাঞ্চ, স্বপ্ন, আর হতাশার মিশেল। মেসি-রোনালদো এবার অনেক আগেই চলে গিয়েছিলেন হিসেবের বাইরে, তাই দেখার ছিল এবারের মুকুট কার মাথায় ওঠে। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কেমন হলো ব্যালন ডি’অর-এর ৬৬তম এই আসর।
প্যারিসের থিয়েটার দ্যু শাটেলে’তে অনুষ্ঠিত এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়েছিল বাংলাদেশ সময় রাত ১২.৩০ মিনিটে। উপস্থাপনায় ছিলেন দিদিয়ের দ্রগবা এবং স্যান্ডি হেরিবার্ট। সাকুল্যে সাতটি পুরষ্কার দেওয়ার নিমিত্তে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তাবৎ বিশ্বের নামকরা সব সাবেক ও বর্তমান ফুটবলার। এই সাতটি ক্যাটেগরি নিম্নরূপ:
-
বর্ষসেরা ফুটবলার: ব্যালন ডি’অর (পুরুষ এবং নারী)
-
বর্ষসেরা গোলরক্ষক (পুরুষ): ইয়াশিন ট্রফি
-
বর্ষসেরা অনূর্ধ্ব-২১ খেলোয়াড়: কোপা ট্রফি
-
বর্ষসেরা স্ট্রাইকার: ম্যুলার ট্রফি
-
বর্ষসেরা ক্লাব: দ্য মেন্স ক্লাব অফ দ্য ইয়ার
-
বর্ষসেরা দাতব্য কার্যক্রম: সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড
এবারের ব্যালন ডি’অর-এর মূল মানদণ্ড ছিল তিনটি:
-
একক এবং সম্মিলিত পারফরম্যান্স
-
ফেয়ার প্লে এবং প্রতিভার সমন্বয়
-
সামগ্রিক ক্যারিয়ার পারফরম্যান্স
এক নজরে গত বছরের শিরোপাধারীদের তালিকা:
-
ব্যালন ডি’অর (পুরুষ): লিওনেল মেসি (পিএসজি/আর্জেন্টিনা)
-
ব্যালন ডি’অর (নারী): অ্যালেক্সিয়া পুতেলাস (বার্সেলোনা/স্পেইন)
-
ইয়াশিন ট্রফি: জিয়ানলুইজি ডোনারুমা (এসি মিলান/পিএসজি/ইতালি)
-
কোপা ট্রফি: পেদ্রি (বার্সেলোনা/স্পেইন)
-
স্ট্রাইকার অফ দ্য ইয়ার: রবার্ট লেভানডফস্কি (বায়ার্ন মিউনিখ/পোল্যান্ড)
-
ক্লাব অফ দ্য ইয়ার: চেলসি
যারা ছিলেন ২০২২ ব্যালন ডি’অর পুরষ্কারের সাতজনের ছোট্ট তালিকায়:
-
করিম বেনজেমা – রিয়াল মাদ্রিদ/ফ্রান্স
-
সাদিও মানে – লিভারপুল/সেনেগাল
-
কেভিন ডি ব্রুইনা – ম্যানচেস্টার সিটি/বেলজিয়াম
-
রবার্ট লেভানডফস্কি – বায়ার্ন মিউনিখ/পোল্যান্ড
-
মোহাম্মদ সালাহ – লিভারপুল/মিশর
-
কিলিয়ান এমবাপে – পিএসজি/ফ্রান্স
-
থিবো কোর্তোয়া – রিয়াল মাদ্রিদ/বেলজিয়াম
এবারের কোপা ট্রফি জিতলেন বার্সেলোনার স্প্যানিশ মিডফিল্ডার গাভি। গতবারও বার্সেলোনার আরেক স্প্যানিশ মিডফিল্ডার পেদ্রি জিতেছিলেন এই ট্রফি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছেন কামাভিঙ্গা এবং মুসিয়ালা।
যারা ছিলেন কোপা ট্রফি জয়ের দৌড়ে:
-
গাভি – বার্সেলোনা/স্পেইন
-
এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা – রিয়াল মাদ্রিদ/ফ্রান্স
-
জামাল মুসিয়ালা – বায়ার্ন মিউনিখ/জার্মানি
-
জুড বেলিংহাম – বরুশিয়া ডর্টমুন্ড/ইংল্যান্ড
-
নুনো মেন্ডেজ – স্পোর্টিং সিপি/পিএসজি/পর্তুগাল
ব্যালন ডি’অরে এবার দেওয়া হয়েছে ‘সক্রেটিস ট্রফি’, যা মূলত ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার সক্রেটিসের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। তিনি কেবলই একজন ফুটবলার ছিলেন না, বরং ছিলেন একজন অ্যাক্টিভিস্ট এবং গণতন্ত্রের প্রতি নিবেদিত প্রাণ। ২০২২ ব্যালন ডি’অরে প্রথম ফুটবলার হিসেবে এই পুরষ্কার জিতেছেন লিভারপুলের সাদিও মানে।
এরপর জার্মান লেজেন্ড স্ট্রাইকার জার্ড ম্যুলারের নামানুসারে প্রচলিত পুরষ্কার ‘ম্যুলার ট্রফি’, যেখানে বর্ষসেরা স্ট্রাইকারের খেতাব জিতে নিলেন রবার্ট লেভানডফস্কি। বার্সেলোনার ঘরে উঠল আরো একটি পুরষ্কার।
গতবারের মতো এবারও নারী ফুটবলে ব্যালন ডি’অর জিতে নিয়েছেন বার্সেলোনার মিডফিল্ডার অ্যালেক্সিয়া পুতেলাস। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন বেথ মিড এবং স্যাম কের।
২০২২ ব্যালন ডি’অরে ইয়াশিন ট্রফি জিতে নিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। এই জয়ে তিনি পিছনে ফেলেছেন যথাক্রমে অ্যালিসন (লিভারপুল/ব্রাজিল), এডারসন (ম্যানচেস্টার সিটি/ব্রাজিল), এদুয়ার্দো মেন্ডি (চেলসি/সেনেগাল), এবং মাইক মেনিয়ঁ (এসি মিলান/ফ্রান্স)-কে।
লিভারপুল এবং রিয়াল মাদ্রিদকে পেছনে ফেলে এবারের ‘ক্লাব অফ দ্য ইয়ার’ পদক জিতে নিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি, যা লুইস ফিগো’র হাত থেকে ক্লাবটির পক্ষ থেকে গ্রহণ করেছেন কেভিন ডি ব্রুইনা এবং এডারসন।
সব শেষে আয়োজনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ: পুরুষ ফুটবলের বর্ষসেরা। এই পুরষ্কার তুলে দিতে মঞ্চে ডাকা হয়েছিল সর্বশেষ ফ্রেঞ্চ খেলোয়াড় হিসেবে এই পুরষ্কার জেতা লেজেন্ড জিনেদিন জিদানকে। পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়ার আগে দিদিয়ের দ্রগবা কিছুক্ষণের জন্য ফিরে গেলেন পুরনো দিনে, স্মৃতিচারণে উষ্ণ এক পরিবেশের সৃষ্টি করলেন।
তবে এবার শেষ আকর্ষণের পালা। আগে থেকেই খানিকটা আঁচ করা যাচ্ছিল, সেটাকেই সত্যি প্রমাণ করে ৬৬তম ব্যালন ডি’অর আসরে এই পুরষ্কার জিতে নিলেন করিম বেনজেমা।
৪৬ ম্যাচে ৪৪ গোল ঠিক বোঝাতে পারছে না, ঠিক কতটা পাগলাটে রকমের দুর্দান্ত এক মৌসুম পার করেছেন করিম বেনজেমা গতবার। সেটারই পুরষ্কার মিলল আজ প্যারিসের থিয়েটার দ্যু শাটেলে’তে। প্রথমবারের মতো ফ্রান্সের এই খেলোয়াড় জিতে নিলেন ব্যালন ডি’অর। প্যারিসে উঠল “করিম! করিম! করিম!” স্তূতিধ্বনি। মাত্র পঞ্চমবারের মতো কোনো ফরাসি ফুটবলার জিতলেন ব্যালন ডি’অর। কার্লো আনচেলত্তি বললেন,
“বয়সের সাথে সাথে ও যেন আরো দুর্দান্ত হয়ে উঠছে।”
জানিয়ে রাখা ভালো, ১৯৫৬ সালে এই খেতাব জেতা স্ট্যানলি মাথুসের পর করিম বেনজেমাই সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বয়সে (৩৪) এই খেতাব প্রথমবারের মতো জিতলেন।