হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাওয়া এদেশের ক্রিকেট গত ২০ বছরে খুব কমই সুযোগ পেয়েছে নিজেকে মেলে ধরার, গর্বের স্থানে নিয়ে যাওয়ার। যে কয়বার সেটা সম্ভব হয়েছে, সেগুলোর পিছনের গল্পটা জুড়ে ছিল হয়তো ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়া দুর্দান্ত কোনো স্পেল কিংবা মহাকাব্যিক কোনো পার্টনারশিপ। আজকের লেখাটি মূলত ইতিহাসের দ্বার উন্মোচন করে দেয়া আমাদের সেই কালজয়ী পার্টনারশিপগুলো নিয়ে। দুই পর্বের এই আয়োজনে আজ শেষ পর্ব।
৪. ওয়েলিংটন, ২০১৭
ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ। পুরো বিশ্বে আইকনিক স্টেডিয়ামের তালিকা করলে অবধারিতভাবে এই স্টেডিয়ামটিকে প্রথমদিকেই রাখতে হবে। পাহাড়বেষ্টিত সেই স্টেডিয়ামটিতে খেলা দেখতে যাওয়া যে কারোরই চোখ আটকে থাকবে চারপাশের মনঃমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোতে। ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি যখন এই মাঠটিতেই বাংলাদেশ দল নিউ জিল্যান্ডের সাথে টেস্ট খেলতে নামলো, চারপাশের নৈসর্গিক সেই স্বর্গীয় দৃশ্য অবলোকন করার শান্তি কিছুক্ষণের মধ্যেই মহাশূন্যে বিলীন হয়ে গেল। কোনোরকমে ১৬০ রান হতে না হতেই যে বাংলাদেশ দলের প্রথম ৪ উইকেট নেই! দুঃস্বপ্নের পায়ে লাগাম পড়িয়ে দেয়ার শুরুটাও অবশ্য সেখান থেকেই। এবার দায়িত্বটা নিয়েছিলেন সাকিব-মুশফিক।
ঐতিহ্যগতভাবেই বেসিন রিজার্ভের উইকেট সবসময়ই ছিল পেসারদের রাজ্য, আর সেই রাজ্যটিকে স্বর্গরাজ্যে পরিণত করার জন্য এদিন বোল্ট-সাউদির সাথে তৈরি ছিলেন ওয়াগনার। একদিকে ওই দু’জনের বিষাক্ত সুইং, আর অন্যদিকে ওয়াগনারের ভয়ংকর বাউন্স। বাংলাদেশকে মহাবিপর্যয় উপহার দিতে সেদিন সব প্রস্তুতিই সেরে নিয়েছিল নিউ জিল্যান্ডের বিধ্বংসী বোলিং লাইনআপ। সফলও হচ্ছিল শুরুর দিকে। কিন্তু একটা সময় সব আক্রমণ বাধা পেতে শুরু করলো। যেন প্রতিরোধ দুর্গের সামনে অসহায় সৈনিকের একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না!
ক্রিজে তখন সাকিব-মুশফিক। দলকে উদ্ধার করতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কত পার্টনারশিপই তো গড়েছেন, কিন্তু এদিনের তৈরি করা প্রতিরোধ বুহ্যটা কি অন্য সবগুলোকে ছাপিয়ে যাচ্ছে না? উত্তরটা “হ্যাঁ” বলেই আজকে ইতিহাসের পাতায় সেই পার্টনারশিপ নিয়ে ঘাটতে গেলে অবাক হতে হয়, কী করে সম্ভব হয়েছিল সেটি!
সাকিবের হার না মানা মানসিকতা ততদিনে বিশ্বক্রিকেটে পরিচিত একটি দৃশ্য। সেই মানসিকতার সর্বোচ্চ স্বাক্ষর রাখার জন্য এদিন সাকিব হয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ‘দেয়াল’। প্রথম দফায় সামলেছেন বোল্ট-সাউদিদের সুইং, এরপর ওয়াগনার হাজির হলেন ভয়ংকর বাউন্সারের পসরা নিয়ে। মুখের সমান বাউন্সারগুলো ওভার দ্য উইকেটে অতটা কাজে দিচ্ছে না বলে একটা সময় রাউন্ড দ্য উইকেটে এলেন ওয়াগনার। এবার সেগুলো ঠিক মুখ বরাবর ধেয়ে আসছে। শুরুতে বাউন্সারগুলো দেখেশুনে ছেড়ে দিচ্ছিলেন সাকিব, চলে যেতে দিচ্ছিলেন কিপারের হাতে।
কিন্তু এভাবে বোলারকে প্রাধান্য বিস্তার করে ফেলতে দিলে তিনি আর সাকিব কেন? তিনি দাঁড়ালেন। কব্জির শক্তিশালী মোচড়ে বারুদে সেসব বাউন্সারের বিরুদ্ধে খেলতে থাকলেন একের পর এক পুল আর হুক। সুযোগ পেলে সব থেকে প্রিয় কাট শটটিও খেলতে ভুল করেননি। বেসিন রিজার্ভের সৌন্দর্য্য আবার ফিরতে শুরু করলো, যেন ভর করলো সাকিবের ব্যাটিংয়ের উপর। ইতিহাসের পূর্ণতা দিয়ে সাকিব সেদিন খেলেছিলেন ২৭৬ বলে ২১৭ রানের অনবদ্য এক ইনিংস।
অপর প্রান্তে সাকিব সেদিন পেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিমকে। বোলারদের উপর শাসনই যদি সেদিন সাকিবের ব্যাটিংয়ের শেষ কথা হয়, মুশফিকুর রহিম খেলেছিলেন ধৈর্য্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে। ব্যাটিংয়ে ব্যাকরণের নিয়ম মেনে খেলেছেন দর্শনীয় সব শট। চোখে মায়াঞ্জন বুলিয়ে দেয়া সে শটগুলোর পেছনের গল্পে থাকবে চাপকে জয় করা এক মহানায়কের কীর্তি, ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে যিনি সেদিন বেসিন রিজার্ভ মাতিয়েছিলেন। তার এই ধীরস্থিরতা কখনো বোলারকে তার উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে দেয়নি, বরঞ্চ হতাশ করেছে। কিউইদের সকল পরিকল্পনাকে বৃথা করে দিয়ে তিনি সেদিন খেলেছিলেন ১৫৯ রানের ইনিংস। সাকিবকে সাথে নিয়ে গড়েছিলেন ৩৫৯ রানের এমন এক পার্টনারশিপ, যেটির মাহাত্ম্য হয়তো মহাকাব্যিকতাকেও ছাড়িয়ে যায়।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এটিই কোনো সফরকারী দলের সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ এবং এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসেও সর্বোচ্চ। ম্যাচের ফলাফল বাংলাদেশের পক্ষে আসেনি বলেই এই পার্টনারশিপটিকে চারে রাখা, নয়তো এটাই সর্বাগ্রে স্থান পাওয়ার যোগ্য ছিল। রেকর্ডের খেরোখাতায় চিরকালীন একটা দাগ রেখে যাওয়া সেই পার্টনারশিপটি আজও মানুষের মনে শিহরণ জাগায়। নীরবে ঘোষণা করে, হোঁচট খেয়ে আবার চলতে শেখা এই বাংলাদেশ দল এখন কতটা পরিণত!
৫. মিরপুর, ২০১৭
অ্যাডিলেড, কার্ডিফ কিংবা ওয়েলিংটন। পেস বোলারদের স্বর্গরাজ্যে ভয়ংকর সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এবার বাংলাদেশ দলের সামনে স্পিন বিষে নীল হওয়ার পালা।
২০১৭ সালের আগস্ট মাস। ছয় বছর পর অস্ট্রেলিয়া দল আবার বাংলাদেশে এসেছে আতিথেয়তা গ্রহণ করার জন্য। শুধু টেস্টের কথা চিন্তা করলে, প্রায় ১১ বছর পর দুই দল আবার এই ফরম্যাটে একে অপরের প্রতিপক্ষ। স্পিনিং উইকেট তৈরি করে ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড দলকে হারিয়ে দেয়ার ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত বাংলাদেশ, এবারও চিন্তা করছে সেরকমই কিছু করার। ২৭ আগস্ট ম্যাচ শুরুর দিন সকাল থেকেই বলের ঘূর্ণন দেখে নিশ্চিত হওয়া গেল, এবারের তৈরি করা উইকেটটি যেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচের উইকেটেরই প্রতিচ্ছবি।
তবে অস্ট্রেলিয়াও প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে। ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন নাথান লায়ন, অ্যাশটন অ্যাগার তৈরি ছিলেন তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে। আর বিপদের মুখে পার্টনারশিপ ব্রেকার হিসেবে ম্যাক্সওয়েল তো ছিলেনই। এত সব প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা কেমন হয়েছিল সেদিন? উত্তরটা লুকিয়ে আছে প্রথম ইনিংসে সাকিব-তামিমের গড়া ১৫৫ রানের পার্টনারশিপে।
সেদিন সকালের সেশনে সবাই যখন বাংলাদেশের ব্যাটিং বনাম অজি স্পিন-দ্বৈরথ দেখার প্রতীক্ষায় ছিল, রুদ্রমূর্তি নিয়ে হাজির প্যাট কামিন্স। ১০ রানের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম তিন উইকেট নেই, তিনটিই কামিন্সের কল্যাণে। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে তামিম তখনও উইকেটে। সঙ্গী হিসেবে পেলেন সাকিব আল হাসানকে। শুরু হতে থাকল স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে তামিম-সাকিবের রান সংগ্রহ।
ব্যাটসম্যানশিপে পরিণতিবোধ আনতে তামিম তখন ধীরস্থির ব্যাটিংয়েরই নামান্তর। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে সেঞ্চুরি করা তামিম আর এই তামিম একেবারেই ভিন্ন দুই চরিত্র। প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টা ব্যাটিং করে আউট হওয়ার আগে করেছেন ১৪৪ বলে ৭১ রান। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক সেঞ্চুরিই তো উপহার দিয়েছেন তামিম ইকবাল, কিন্তু তার ওই লড়াই করে পাওয়া রানগুলো এখনো এদেশের ক্রিকেটে অমূল্য ৭১টি রান হিসেবেই বিবেচিত হয়। অন্য প্রান্তে সাকিব খেলেছেন সহজাত ইনিংস, ৬৩.১৫ স্ট্রাইকরেটে ১৩৩ বলে করেছেন ৮৪ রান। ভিত গড়ে দিয়েছেন ইতিহাসের নতুন অধ্যায় সূচনার।
৩০ আগস্ট, ২০১৭। বাংলাদেশ সময় তখন দুপুর ১টা বেজে ৩৫ মিনিট। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলকে বাঁচাতে ইনজুরি নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে যাওয়া হ্যাজলউড তখন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে তাইজুলের করা ডেলিভারিটা হঠাৎই টার্ন করে ভিতরের দিকে ঢুকে গেল। কিছু বুঝে উঠতে না পেরে হ্যাজলউড সেটি ঠেকালেন পা দিয়ে! ফলশ্রুতিতে, যা হওয়ার তাই হলো। এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আম্পায়ারের সাড়া দেয়ার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল বুনো উল্লাস। অজিদের চিরকালীন দম্ভ তখন মাটিচাপা দেওয়া হয়ে গেছে!
মিরপুর চিরস্মরণীয় হয়ে থাকলো ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়ের একটি হিসেবে। স্বর্ণালী অক্ষরে লিখা সেই অধ্যায়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা এখনো সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে, জয়ের বন্দরে পৌঁছার জন্য প্রথম ইনিংসে সাকিব-তামিমের পার্টনারশিপটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
৬. গল, ২০১৩
২০০৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর, ভয়াবহ এক সুনামিতে ভারত মহাসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামটির অবস্থা তখন শোচনীয়। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ, শোচনীয় ছিল ওই একই স্টেডিয়ামেই প্রায় ৯ বছর পর খেলতে নামা বাংলাদেশ দলের অবস্থাও। ওই টেস্ট ম্যাচটিতে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে গড়া রান-পাহাড় টপকানোর স্বপ্ন দূরবর্তী কোনো এক দ্বীপে জলাঞ্জলি দিয়ে বাংলাদেশ দল চিন্তা করছে ফলোঅন এড়ানোর। ঠিক সেই মুহূর্তে কথা বলতে শুরু করলো একসময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টারবয়’ খ্যাত আশরাফুলের ব্যাট।
সেই সিরিজের পর আশরাফুলের উপর ঘটে যাওয়া ঝড়টা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন কি না, কে জানে! হয়তো বাংলাদেশ দলে তার শেষটাও দেখে ফেলেছিলেন। আর তাই হয়তো খুব করে চেয়েছিলেন শেষটা রাঙিয়ে দিতে। একা একা লড়াই করে কত লজ্জার হাত থেকেই তো বাংলাদেশ দলকে একটা সময় উদ্ধার করেছেন, অথচ সত্যিটা হলো, মানুষ শেষটাই সবচেয়ে বেশি মনে রাখে। তাই হয়তো নিজের অজান্তেই উজাড় করে দিয়েছিলেন সর্বস্ব।
সামনে ছিল প্রিয় প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ১৭০ রানে চার উইকেট হারিয়ে দিশেহারা বাংলাদেশ দলকে টেনে তোলার যে দায়িত্ব নিয়ে ক্রিজে নেমেছিলেন, সেটি খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন করে খেলেছেন ৪১৭ বলে ১৯০ রানের এক ইনিংস। উইকেটে কাটিয়েছেন প্রায় ৭ ঘণ্টা। মুরালি-পরবর্তী শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে যার হাতে ছিলো মুরালির শূন্যস্থান পূরণের দায়িত্ব, সেই রঙ্গনা হেরাথের নাভিশ্বাস তুলে দিয়ে নিয়েছেন ধৈর্য্যের চরমতম পরীক্ষা, যেমনটা তিনি মুরালির ক্ষেত্রেও করতেন। ম্যাচের চতুর্থ দিন সকালে গতদিনের অপরাজিত থাকা ১৮৯ রানের সঙ্গে মাত্র এক রান যোগ করতেই আউট হয়ে সমর্থকদের মনে আক্ষেপের যে সুর তিনি তুলে দিয়েছিলেন, কে জানতো এই আক্ষেপই তার পুরো ক্যারিয়ারের প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে!
২০০৪ এর সুনামির পর গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামটির যেমন সংস্কার হয়েছিল, ওই ম্যাচে তেমনি সংস্কার হয়েছিল বাংলাদেশ ইনিংসটিরও। সেই সংস্কারের একজন নায়ক আশরাফুলকে নিয়ে তো বলাই হলো। অপরজন ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তাকে যে মাঝে মাঝে বাংলাদেশ দলের অক্সিজেন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেটির অন্যতম সফল প্রদর্শনী হয়েছিল আশরাফুলের সাথে তার ২৬৭ রানের পার্টনারশিপে। দেখেশুনে খেলে করেছিলেন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। তার ৩২১ বলে ঠিক ২০০ রান এবং শেষদিকে নাসিরের সেঞ্চুরির কল্যাণে বাংলাদেশ পেয়েছিল প্রথমবারের মতো টেস্টে ৬০০ রান করার স্বাদ।
পাদটীকা
গত শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া বাংলাদেশ দলের জন্য ১৯৯৯ বিশ্বকাপটা ছিল মূলত একটি পরিচয়পর্ব, পাকিস্তান আর স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে যে কাজটা তারা খুব ভালোভাবেই করেছিল। কিন্তু তারপর থেকেই শুরু হলো হোঁচট খাওয়া, একের পর এক লজ্জার সাগরে ডুব দেওয়া।
সেই বিশ্বকাপের প্রায় দুই দশক পর আজ পিছন ফিরে তাকিয়ে বাংলাদেশ দলের অবস্থান বিবেচনা করলে হতাশই হতে হয়। শিক্ষানবীশ হিসেবে খেলতে গিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে যে বড় একটা সময় পার করে দিয়েছে দলটি! মাঝে মাঝে প্রশ্নও উঠেছে, বাংলাদেশ কি সত্যিই টেস্ট খেলার যোগ্য? দেরিতে হলেও একটা সময় উত্তর দিতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল; গড়ে তুলেছিলো গলের মহাকাব্য, খুলনা হাজির হয়েছিলো সক্ষমতার সংজ্ঞাকে নতুন করে চিনিয়ে দিতে, আত্মবিশ্বাস নামক জ্বালানী সংগ্রহ করতে অ্যাডিলেডে তৈরি হয়েছিল রূপকথা, ওয়েলিংটন দেখেছিল বুক চিতিয়ে লড়াই করা, চাপকে জয় করার সাক্ষী হিসেবে কার্ডিফ স্থান পেয়েছিল ইতিহাসের পাতায়। আর সর্বশেষ মিরপুরে, বাঘের হুংকারে ভূপাতিত হয়েছিল অজি ক্রিকেটের চিরকালীন দম্ভ।
কণ্টকাকীর্ণ ২০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পার করে দেয়া বাংলাদেশ দল এখন শাসন করে খেলতে শিখে গেছে। উন্নতির অগ্রযাত্রা ধরে রেখে আজ থেকে ২০ বছর পর হয়তো সাকিব-তামিমদের উত্তরসূরির হাতে শোভা পাবে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আর সে বিশ্বকাপের শেষ পুরষ্কার বিতরণীতে বাংলাদেশ দলের তৎকালীন অধিনায়কের হাতে বিশ্বকাপটা তুলে দেয়ার দৃশ্য দেখতে দেখতে, ষাট বছরের কোনো প্রৌঢ়ের হয়তো মনে পড়বে গল, অ্যাডিলেড, মিরপুর, খুলনা, কার্ডিফ কিংবা ওয়েলিংটনের কথা। চোখের কোণে স্মৃতি হয়ে জ্বলজ্বল করবে অগ্রযাত্রার সেই চল্লিশটি বছর, যার প্রতিটি ধাপে পাথেয় রূপে পাশে ছিল অমর হয়ে যাওয়া মহাকাব্যিক সেই পার্টনারশিপগুলো!