ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের পর্দা নামেনি এখনো। তাই পূর্বে অনুষ্ঠিত ১১টি আসরের ফাইনালের ১১ জন সেরাকে নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন। আরো বিশেষ করে যদি বলি, ফাইনালের ম্যাচসেরাদের নিয়েই খানিক ভিন্ন আঙ্গিকে আমরা আমাদের এই আলোচনা ফেঁদেছি।
ক্রিকেট খেলাটায় একটি দল যেহেতু ১১ জন নিয়ে গঠিত হয়, এদিকে আমাদের হাতেও আছে ১১ আসরেরর ১১ জন ম্যাচসেরা, সেহেতু আমরা একটা একাদশ দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি। কল্পনাপ্রসূত এসব আলোচনা কেবলা আনন্দ আর বিনোদনের জন্যেই। হয়তো ঠিক যুৎসই হবে না একাদশটা, অথবা থেকে যাবে খচখচানি। তারপরও আসুন দেখি কী দাঁড়ায়!
ও হ্যাঁ, একজন অধিনায়কও তো দরকার, তাই না? আমরা কোন পথে হাঁটবো? আগে অধিনায়ক নির্বাচন করে বাকি দশ জন সাজাবো, নাকি একাদশ সাজিয়ে তবেই বেছে নেবো অধিনায়ক? আচ্ছা, আগে বরং একাদশটাই সাজাই! আরো একটা ব্যাপার, আমরা সূচনা আসর থেকে ক্রিকেটার বাছাই আরম্ভ না করে বরং ওপেনার দিয়েই শুরু করি।
প্রাক-আলোচনা শেষ। এবার একাদশ গড়ার পালা। আসুন, শুরু করা যাক!
১.
বিস্ময়কর হলেও সত্যি, তখনও তার ছিল না কোনো বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরিয়নে আগের আসরে শ্রীলংকার বিপক্ষেই কাটা পড়েছিলেন ৯৯ রানে। সমস্ত রাগ আর শোধবোধের উপায় পেলেন বুঝি ব্রিজটাউনে, আসরের শেষ ম্যাচ। পরের বিশ্বকাপ আর পাবেন কি পাবেন না, তার কোনো নেই ঠিক। সেজন্যই হয়তো বিশ্বকাপে তার প্রথম ও একমাত্র সেঞ্চুরিটি তুলে নিতে ভুললেন না তিনি! আর সেটাও কি যেই সেই সেঞ্চুরি? ঘোর বর্ষার সূর্যের মতো আচমকা দেখা মেলে যেন তা!
১০৪ বলে ১৪৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে শ্রীলংকার শিরোপাস্বপ্নই ধ্বংস করলেন না শুধু, নিশ্চিত করলেন নিজের ও দলের হ্যাটট্রিক শিরোপা!
হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক, ধরেছেন ঠিক। ২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনাল, হলদে রঙে রাঙানোর মহানায়ক অ্যাডাম গিলক্রিস্টই হবেন আমাদের এই একাদশের উদ্বোধক। উইকেটের পেছনের দায়িত্বেও প্রশ্নাতীতভাবে এসে পড়েন তিনি। তবে এখানে খানিক জটিলতা আছে। আপাতত তিনি কেবলই উদ্বোধন করছেন, উইকেটের পেছনের ব্যাপারটা তোলা রইলো।
২.
এশিয়ার মঞ্চে অ-এশীয় ফাইনাল। কলকাতার নন্দন কানন সাক্ষী সে ইতিহাসের। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর শেষবেলার লড়াই। সেখানে তিনি যেন ভূমিকা নিলেন সাধকের। সংযম আর ধৈর্য্য দিয়ে সাজানো ১২৫ বলে ৭৫ রান দিয়ে ভিত দিলেন অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে। গিলক্রিস্টের সঙ্গে তাকে মানাবে কি মানাবে না, বা আধুনিক ক্রিকেট প্রজন্ম কতটা মেনে নেবে তাকে, সে প্রশ্নে কাজ নেই। আমরা বরং আমাদের একাদশের অপর ওপেনারের ভূমিকাটা তাকে দিয়ে দল নির্বাচনের কাজ চালিয়ে যাই।
১৯৮৭ বিশ্বকাপ ফাইনালের স্থপতি, অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শিরোপা জয়ের অন্যতম কারিগর- ডেভিড বুন। বুন, আপনাকে অভিনন্দন!
৩.
তিনি ফাইনাল খেলেছিলেন ’৯৬’তেও, পরাজিত দলে ছিলেন। পরের আসরে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও অর্জনের খাতা সেভাবে ভরাট করতে পারেননি। স্টিভ ওয়াহ, শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রারা যেন কেড়ে নিয়েছিলেন সব আলো। তার পরের আসরে সব বুঝি মেটালেন সুদে-আসলে। প্রথমবারের মতো অধিনায়ক হয়ে বিশ্বমঞ্চে গিয়ে, অধিনায়কত্বের প্রথম ফাইনালেই চাপ-টাপ ভুলে ডেমিয়েন মার্টিনকে সাথে নিয়ে মাত্র ৩০ ওভারে জুড়লেন ২৩৪ রান, আর তিনি রইলেন অপরাজিত, তার রান ১২১ বলে ১৪০! তর্কসাপেক্ষে বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা ইনিংস।
কেবল সৌরভের তরুণ ‘টিম ইন্ডিয়া’ কে বাকরুদ্ধ করলেন না সেদিন, খুন করলেন শত কোটি মানুষের স্বপ্ন-আশা-ভালোবাসা।
২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালের নিষ্ঠুর-নির্দয় রিকি পন্টিংই থাকছেন নাম্বার থ্রি’র গুরুত্বপূর্ণ পজিশনটায়। দুই-দুইবার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কও তিনি। দলটার নেতৃত্বেও কি থাকবেন তিনি? দেখা যাক!
৪.
সময়ের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকা একজন তিনি। তিন-চার-পাঁচ, এমনকি খেলেছেন ছয়েও। আমাদের আজকের আলোচ্য মহাকাব্যটাও তিনে নেমে গড়া। তারপরও আমরা তাকে রাখছি চারে। নাম্বার থ্রি’তে দুর্দান্ত হলেও দারুণ ছিলেন চার নাম্বারেও। ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় খেলেছেন চারেই। তার ‘ম্যাজেস্টিক ম্যানচেস্টার’ ইনিংসটাও কিন্ত খেলেছিলেন চার নাম্বারে নেমেই।
আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন। সেবারও মোটামুটি নিশ্চিতই চ্যাম্পিয়নশীপ, বিশ্বজুড়ে সর্বত্র আধিপত্য তাদের। তারাই চ্যাম্পিয়ন হবেন এটাই সাধারণ, না হলেই বরং আশ্চর্য!
ফাইনালের চাপ বলেই কি না, উইন্ডিজ ৯৯ রানে হারিয়ে ফেলল ৪ উইকেট। দলপতিও ছেড়ে গেছেন তাকে। সবাই তাকে ‘রাজা’ বলে ডাকে, কিন্তু ও প্রান্তের কলিন্স কিং’কে সঙ্গী করে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে পুড়িয়ে মারলেন হতাশায়। কিং আউট হলেও অপরাজিত রইলেন তিনি। ১৫৭ বলে ১৩৮ রানের পাশাপাশি মোটামুটি টানা দ্বিতীয় শিরোপাও তখনই নিশ্চিত করে উচ্ছ্বসিত দর্শক করতালির ফোঁকর গলে সহাস্যে মাঠ ছাড়লেন তিনি।
১৯৭৯ বিশ্বকাপটাকে নিজের করে নেয়ার মহাকুশীলব স্যার আইজাক ভিভিয়ান অ্যালেক্সান্ডার রিচার্ডস, বা ভিভ ‘কিং’ রিচার্ডস, আমাদের একাদশে আপনাকে স্বাগতম!
৫.
তাকে নিয়ে খুব বেশি ভণিতার দরকার নেই। পরিচয় করিয়ে দেয়ার আড়ম্বরও প্রয়োজন নেই তেমন একটা। বিশ্ব আসরের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল, বিষম চাপ মাথায় নিয়ে যখন ক্রিজে আসলেন, স্কোরবোর্ড তাকে জানাচ্ছে ৫০ রানে নেই ৩ উইকেট। লিলি-থমসন-গিলমোরে কাঁপছে উইন্ডিজ ব্যাটিং। সেই ভগ্নস্তুপ আর ভয়ের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে তিনি খেললেন ৮৫ বলে ১০২ রানের মাস্টারক্লাস! চাপ-তাপ ফুঁ মেরে উড়িয়ে দিয়ে সতীর্থদের বার্তা পৌঁছালেন, নির্ভীকতা আর নির্ভরতার।
পাঁচ নাম্বার পজিশনে তাকে ছাড়া দ্বিতীয় কেউ ভাবার প্রশ্নই উঠে না আসলে। ১৯৭৫ বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রথম ফাইনালের প্রথম ফাইনাল সেরা, স্যার ক্লাইভ লয়েড। ব্যাটিং অর্ডারের স্তম্ভ হিসেবে মোটা চশমার ঐ ভদ্রলোকের চেয়ে যোগ্য আর কে হবেন, বলতে পারেন?
৬.
তিনি সাধারণত চার নাম্বারেই খেলতেন। কিন্তু সঙ্গত কারণেই এখানে তাকে আমরা রাখছি ছয়ে। ভিভ আর তার মধ্যে কে খেলবে চারে, এই প্রসঙ্গ উঠলেই হয়তো সলজ্জ কন্ঠে তিনি বলে উঠবেন, ‘মহারাজ, আপনিই খেলুন! আমি ছয়েই মানিয়ে নেব।’
কথাবার্তায় বিনয় আর নম্রতার মূর্ত প্রতীক হলেও ব্যাট হাতে মোটেই ছিলেন না তা। কলকাতার নন্দনে স্ট্রোকচ্ছটায় লাখো জনতাকে একদম স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া তো বটেই, পুরো বিশ্বকেই হতবাক করে দিয়ে সোনারাঙা ট্রফিটা স্বদেশে নিয়ে গিয়েছিলেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে। ২৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিচলিত দলকে মহাবিজয়ের প্রশস্ত পথটির সন্ধানই শুধু দেননি, আলোকবর্তিকা হাতে পৌঁছে দিয়েছিলেন সাফল্যের উচ্ছ্বসিত প্রান্তরে। ফাইনালে কী করেননি তিনি? দু’টি ক্যাচ, তিনটি উইকেট, ১২৪ বলে অপরাজিত ১০৭! এমন অলরাউন্ড নৈপূণ্যের ফাইনালসেরা আর কেউ হয়েছিলেন কি?
১৯৯৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে লাহোরের গাদ্দাফী স্টেডিয়ামের সবচেয়ে উজ্জ্বল ক্রিকেট পুরুষোত্তম, প্রিয় অরবিন্দ ডি সিলভা! আমাদের একাদশটায় ছয় নাম্বারেই খেলুন না, প্লিজ!
৭.
আধুনিক ক্রিকেট আজকাল এই পর্যায়ে একজন ‘বিগ হিটার’ রাখতে চায়। সাথে এট্া নিশ্চিত করতে ইচ্ছুক, এই জায়গার পারফরমারটি দেবেন নির্ভরতাও। প্রয়োজনে ধরবেন দলের হাল। সে হিসেবে আমরা যাকে ছেড়ে দিচ্ছি ‘সাত’ নাম্বারের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, তিনি দারুণ এক পছন্দ। অবশ্য অরবিন্দের মতো তিনিও উপরে খেলতেই অভ্যস্ত। কিন্তু পন্টিং-ভিভ-লয়েডের ভিড়ে সেখানে জায়গা কই?
সেবার প্রায় নিচের দিকেই খেলেছিলেন তিনি। ছয়েই বেশি, কখনো সাতেও। সেদিন কি মনে করে উঠে এলেন পাঁচে। সহস্র আশায় ভরা শত কোটি চোখ তার দিকে তাকিয়ে, মুম্বাইয়ের ওয়েংখেড়ের ঠাসা জনতা চিৎকার করছে তার হয়ে, অথচ আশ্চর্য নির্বিকার তিনি! ধ্যানী ঋষির মতো যেন নিমগ্ন ধ্যানে তিনি। কুলাসেকারাকে দর্শক সারিতে আছড়ে ফেলে ব্যাটটাকে কেবল ঘুরিয়ে আনেন খানিক সিনেম্যাটিক ভঙ্গিমায়। ব্যস, শেষ তার উদযাপন। ৭৯ বলে ৯১ রানের ঐতিহাসিক সে যাত্রার এমন সুখময় অর্জনেও তার নেই কোনো বাড়াবাড়ি।
ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিকেট সন্তান, মহেন্দ্র সিং ধোনি। ২৮ বছর পর কেবল একটা শিরোপাই কেবল এনে দেননি, ভারতীয় ক্রিকেটের গতিপথও অনেকটা দিয়েছেন বদলে।
৮.
এই পজিশনের চয়েসটা ইন্টারেস্টিং। আট নাম্বারে তার ভূমিকাটা কী, সে এক ধাঁধা। কিন্তু এই একাদশ নির্বাচন করতে গিয়ে আমরা নিরুপায়। ১১ আসরের বেশি অনুষ্ঠিত না হওয়ায় আমাদের কাছে নেই দ্বিতীয় কোনো পছন্দ, রাখতেই হচ্ছে তাকে। আবার তাকে দিতে পারছি না ১ থেকে ৭ নাম্বারের কোনো স্থান। তার নিরীহ মিডিয়াম পেসেই কুপোকাত হয়েছিল প্রবল প্রতাপ উইন্ডিজের লেজ। লো-স্কোরিং সেই ম্যাচে তিন নাম্বারে ব্যাটিংয়ে নেমে করেছিলেন ৮০ বলে ২৬, ওদিকে ৭ ওভারে ১২ রান দিয়ে উইকেট ৩টি। এতেই হয়ে গেছেন ম্যাচসেরা, ফাইনাল সেরা। ক্রিকেট নামক খেলাটার বাঁক বদলে দেয়া কারিগর।
১৯৮৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল বিজয়ে কপিল দেবের মহাসারথি মহিন্দর অমরনাথ; আট নাম্বারে থাকছেন তিনি অনেকটা অনন্যোপায় হয়ে!
৯.
তাকে বলা হয় ‘সুইং অব সুলতান’। ১৯৯২ বিশ্বকাপের তার উইকেট তিনটি দেখলে কারণটা জানা হয়ে যাবে আপনার। ব্যাটসম্যানকে রীতিমতো অসহায় বানিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তিনি। বোথাম-ল্যাম্ব-লুইস কারোরই কিছু করার ছিল না। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে তাকে তুলনা করা হতো কিংবদন্তি বাঁহাতি অলরাউন্ডার অ্যালান ডেভিডসনের সঙ্গে। সেবারের চূড়ান্ত মঞ্চে কি দারুণ প্রমাণে সেই তুলনার সত্যতা ঘোষণা করলেন তিনি! শেষদিকে ব্যাটিংয়ে তুললেন ঝড় (১৮ বলে ৩৩), পরে বোলিংয়ে নিলেন ৩ উইকেট।
তার অমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সুবাদে পাকিস্তান প্রথম বিশ্বট্রফি পেলেও টানা দ্বিতীয়বার, সব মিলিয়ে তৃতীয়বারের মতো শূন্য হস্তে ফাইনাল থেকে ফিরল ক্রিকেটের পিতৃভূমি ইংল্যান্ড। সেই শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা, আর যে সেমিফাইনাল পর্যন্তই পৌঁছতে পারেনি তারা!
১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনাল-নায়ক, বিশ্বক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ সুইংশিল্পী ওয়াসিম আকরাম। আমাদের একাদশটার আরেক উজ্জ্বলতম মহাতারকা।
১০.
নানাবিধ ঘটন-অঘটন পেরিয়ে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া। হিউজের মৃত্যু, পুনর্গঠন প্রক্রিয়া, একসাথে অনেক প্রতিভার অবসর… সব মিলিয়ে খুব একটা গোছালো অবস্থায় ছিল না হলদে রঙের অনুসারীরা। মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্ব, স্বাগতিক প্রেরণা আর ঐ হিউজি – বিশ্বকাপ অভিযাত্রার অনুপ্রেরণা ছিল এসবই। সবক’টাকে একসুরে গেঁথে বিশ্বমঞ্চে পুরো বদলে গেল অস্ট্রেলিয়া। একের পর এক বাঁধা উতরে ফাইনালেও উড়িয়ে দিল আসরের সবচেয়ে আনন্দদায়ী দল, বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক এবং প্রতিবেশী নিউ জিল্যান্ডকেও।
যে ক’টা ফাইনাল জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, কেবল প্রথমবার যা একটু লড়াই করেছিল প্রতিপক্ষ। বাকি প্রত্যেকটিকে স্রেফ ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ব্যতিক্রম ছিল না সেবারও, ম্যাচের তৃতীয় বলে ম্যাককালামের স্ট্যাম্প উপড়ে শুরু স্টার্কের।
৩৯ রানে ৩ উইকেট হারানো কিউই পাখি’র দল টেলর-এলিয়টের জুটিতে দিশা পেয়েছে মাত্র, এই সময় এল আঘাত। পঞ্চম বোলার হিসেবে বোলিং দৃশ্যপটে এসেছিলেন তিনি, বা তাকে এনেছিলেন অধিনায়ক। সেই তিনিই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিলেন এক ওভারেই। একই ওভারে ফেরালেন রস টেলর আর কোরি অ্যান্ডারসনকে। তিনি দারুণ ছন্দে ছিলেন তখন, বোলিংয়ে ও ব্যাটিংয়ে। শেষ দিকে নেমে প্রায়ই তুলতেন ঝড়, কিন্তু সে ফাইনালে কেবল বল হাতেই চিৎপটাং করে দিলেন নিউ জিল্যান্ডের স্বপ্ন। সেমিফাইনালের ‘কিউই মহানায়ক’ গ্র্যান্ট এলিয়ট সেমি’র ফর্মটা অকল্যান্ড থেকে মেলবোর্নেও টেনে এনেছিলেন। কিন্তু ৮২ বলে ৮৩ করা এলিয়টের বিদায়ঘন্টা বাজিয়ে নিউ জিল্যান্ডের স্বপ্নের দৌঁড় আর এলিয়টের স্বপ্নযাত্রা, দুটোরই যবনিকাপাত ঘটালেন তিনি। ৯ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ১ মেইডেনসহ ৩ উইকেট, ফাইনালের সেরা হওয়ার জন্য এটুকুই ছিল যথেষ্ট।
২০১৫ বিশ্বকাপ ফাইনালের অস্ট্রেলিয়া ‘পেন্টা’জয়ের স্বপ্নপুরুষ জেমস ফকনার থাকছেন আমাদের একাদশে ওয়াসিম আকরামের নতুন বলের সঙ্গী, দ্বিতীয় পেসার হিসেবে।
১১.
আমরা দারুণ কিছু ব্যাটসম্যান পেয়েছি, অলরাউন্ডার পেয়েছি, পেসারও পেয়ে গেছি। একজন জেনুইন স্পিনারই কেবল বাকি। এই জায়গাটা বরাদ্দ তার জন্য।
আসরের শুরুতে উজ্জ্বল ছিলেন না খুব একটা। তবু অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ আস্থার ছায়া সরাননি। তার প্রতিদান দিতেও ভুললেন না তিনি। সেমিফাইনালে গিবসকে বোকা বানানো সেই ডেলিভারির পর ফাইনালটাকে করে নিলেন একদম নিজের। ৯ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট, তার অসাধারণত্বের কতটা প্রকাশ পাচ্ছে এই পরিসংখ্যানে?
তিনি ম্যাজিশিয়ান, স্পিন জাদুকর, স্পিনের রাজা, লেগ স্পিন শিল্পের সবচেয়ে সফল ছাত্র ও সুদক্ষ শিল্পী। ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় পড়ে থাকলেও তখনো জানতেন না, বিশ্বকাপ আর খেলা হবে না তার। ভাগ্যিস, সেবারই মঞ্চের সমস্ত আলো টেনে নিয়েছিলেন নিজের দিকে। নইলে অমন একজন ছাড়া এই একাদশটা কি ফ্যাঁকাসেই না হত!
১৯৯৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের মহানায়ক, স্টিভ ওয়াহ’র আস্থাভাজন অস্ত্র শেন ওয়ার্নই সামলাবেন এই একাদশের স্পিন ডিপার্টমেন্ট। কিংবদন্তি, আপনাকে স্বাগতম!
প্রেস কনফারেন্স
আমাদের একাদশ নির্বাচন শেষ। এবার আমরা ঘোষণা করবো অধিনায়ক, আর আলোচনা করবো দলটার ভারসাম্য। তিন-তিনজন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আছেন এখানে, ধোনি-লয়েড-পন্টিং। আছেন ওয়াসিম-ভিভের মতো সফল অধিনায়কও। ওয়ার্ন-গিলক্রিস্টের মতো খুব বেশি ব্যবহৃত না হওয়া ক্রিকেটমস্তিষ্কও মজুদ। তাহলে আমরা দলপতি হিসেবে বাছাই করছি কাকে?
আমাদের পছন্দ ক্লাইভ লয়েড, ক্যাপ্টেন কিং। ক্যারিবিয়ানের নানা মতের মানুষগুলোকে এক মতে আনার মহান কারিগর। ক্রিকেটবিশ্বকে অনিন্দ্য সুন্দর একটা সময় উপহার দেয়ার মহান কুশীলব। আমরা অধিনায়কের জায়গাটায় তাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনাই করতে পারি না।
এই দলের উইকেটের পেছনটা মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্য ছেড়ে দিতে চাই আমরা। হ্যাঁ, গিলক্রিস্ট থাকা সত্ত্বেও। এইক্ষেত্রে কাজ করছে দু’টি ব্যাপার:
-
ফিল্ডার হিসেবে ধোনির তুলনায় গিলক্রিস্টের এগিয়ে থাকা।
-
উইকেটের পেছন থেকে ধোনির পুরো গেমটা পড়তে পারার অসাধারণ ক্ষমতা।
জেনুইন পেসার একজনই, ওয়াসিম আকরাম। জেমস ফকনার সে অর্থে পেসার নন, সিমার। অমরনাথও অনেকটা তেমনই। স্পিন জাদুকরের নেতৃত্বে স্পিন ডিপার্টমেন্টে থাকছেন ডি সিলভা ও স্যার ভিভ। ব্যাটিংটা যেমন চোখ ঠিকরে দেয়, বোলিংটা দেয় না তেমন, নেহায়েতই সাদামাটা। তারপরও যেই দলে ওয়ার্ন-ওয়াসিম আছেন, আছেন ফকনার-অমরনাথ, ডি সিলভা-ভিভ, সেই বোলিং লাইনআপ দুর্বল ভাবারও উপায় নেই।
মোটামুটি এই হচ্ছে দল। বিশ্বমঞ্চের সেরাদের নিয়ে গড়া। এই বিশ্বকাপ শেষে এই স্কোয়াডে আমাদের নতুন সংযোজন কী হতে পারে? ব্যাটসম্যান না বোলার? বোলারের কিঞ্চিৎ অভাব অনুভূত হওয়ায়, আমরা চাই একজন বোলারই আসুক। আপনি কাকে চান?