১৯৮১ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। লড়াইয়ে দুই জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল। তখন ইউরোপে লিভারপুলের দাপট চলে, আর অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদের দীর্ঘকাল কোনো ইউরোপীয় সাফল্য নেই। লিভারপুল এর আগে ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ এ ফাইনাল জিতে পাঁচ বছরের মাঝে ৩য়বারের মতো ফাইনালে আসে, আর সেবার রিয়াল এসেছিল ইউরোপীয় ট্রফিখরা ঘোচাতে এক আন্ডারডগ হিসেবে।
কিন্তু পরাক্রমশালী লিভারপুলের সাথে আর পেরে উঠেনি। প্রায় তিন যুগ পর আবার দুই দলের দেখা। এবার রিয়াল মাদ্রিদ ইউরোপের প্রবল পরাক্রমশালী দল, গত পাঁচ বছরে চারটি ফাইনালই তাদের। আর লিভারপুলের সাম্প্রতিক ইতিহাসে শেষ ইউরোপিয়ান ট্রফি ১১ বছর আগে। ১৯৮১ সালে লিভারপুলের লিগে অবস্থা ছিল তথৈবচ, আর এবার রিয়ালের অবস্থা এমন। এবার লিভারপুল নিজেদের পুনরুদ্ধারে ব্যস্ত, আর রিয়াল নিজের ইতিহাস সমৃদ্ধকরণে; তখন অবস্থা ছিল ঠিক উল্টোটা। তিন যুগ পরে আবার একই সমীকরণে উল্টো অবস্থায় দুই দল। এবার কার ঘরে যাবে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই ট্রফি?
কেমন ছিল দুই দলের মৌসুম?
ঘরোয়া পারফর্মেন্স বিবেচনায় দুই দলের কারোরই বছরটা ভালো যায়নি। রিয়াল মাদ্রিদ লিগ শেষ করেছে শোচনীয়ভাবে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে লিগ রেস থেকে তারা ছিটকে গেছে লিগের অর্ধভাগের আগেই। অপ্রত্যাশিতভাবে বাদ পড়ে যায় কোপা দেল রে থেকে লেগানেসের সাথে নিজেদের মাঠে হেরে। একটাই পথ ছিলো মৌসুমটা বাঁচানোর- চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। আর সেই প্রতিযোগিতারই ফাইনালে রিয়াল। ফাইনালে আসার পথে বাদ দিতে হয়েছে পিএসজি, জুভেন্টাস ও বায়ার্নকে।
অন্যদিকে এবারের ইংলিশ লিগ শুরু থেকেই ছিল ম্যানসিটির, লিভারপুল সেভাবে কখনোই রেসে ছিল না। উল্টো বাজে ডিফেন্সের জন্য তাদের সমালোচনা ছিল নিত্যসঙ্গী। কিন্তু ভ্যান ডাইককে রেকর্ড অর্থ দিয়ে কেনার পর লিভারপুলের রক্ষণে আসে দারুণ পরিবর্তন। সেই সাথে সালাহ-মানে-ফিরমিনোর ত্রয়ী দিনকে দিন পরিণত হতে থাকে ত্রাসে। ফেভারিট ম্যানসিটিকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে আসার পথে লিভারপুল করেছে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গোল। মৌসুমের শুরুটা দুই দলের কারোরই ভাল না হলেও ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের এই ফাইনালে আজ তারাই। এবার দেখে নেয়া যাক পজিশন ভিত্তিক দুই দলের শক্তি ও দুর্বলতা।
রক্ষণ
যদি মৌসুমের শুরুতে লিভারপুলের রক্ষণ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হতো, তবে অনেকেই একটা অবজ্ঞার হাসি দিতেন। নড়বড়ে লিভারপুল ডিফেন্স হাস্যকর সব গোল হজম করতো। গোলকিপার মিনোলেট প্রচুর ভুল করতেন। জানুয়ারিতে ভ্যান ডাইক আসার পর লিভারপুল রক্ষণ এক নেতা খোঁজে পায়। রক্ষণভাগ গোছাতে একজন নেতা লাগে, ভ্যান ডাইক সেই কাজটা করলেন। গোলবারে কারিয়ুস হলেন নিয়মিত। লিভারপুলে যখন কারিয়ুস আসেন তখন বুন্দেসলীগার এক উদীয়মান প্রতিভা হয়েই আসেন। শুরুটা অত ভাল না হলেও এখন তিনিই দলের প্রথম পছন্দের। ভ্যান ডাইক আসায় পার্টনার লভরেন আগের চেয়ে একটু বেশিই গোছালো। এই দুজনই হবেন লিভারপুলের সেন্টার ব্যাক। লেফট ব্যাক হিসেবে শুরু করবেন এবারের চমক রবার্টসন। খুব অল্প দামে কেনা এই তরুণ লেফটব্যাকও মার্সেলোর মতোই আক্রমণে দারুণ। সাথে রাইটব্যাকে থাকছেন আর্নল্ড। আর্নল্ডকে আধুনিক ঘরানার উইং ব্যাক বলা যায়। মজার ব্যাপার হলো, লিভারপুলের ফুলব্যাক দুজনের খেলার ধরনই রিয়ালের দুই ফুলব্যাকের অনুরূপ ধরনের।
রিয়ালের রক্ষণভাগ খুব সহজেই বলে দেয়া যায়। সেন্টারব্যাকে থাকছেন রামোস-ভারানে। গত তিনবার জয়ের দুবারই এই দুজন শুরু থেকে খেলেছেন। তাই তাদের অভিজ্ঞতাকে মাথায় রাখতেই হবে। রাইটব্যাকে থাকবেন কারভাহাল আর লেফটব্যাকে মার্সেলো। দুজনই প্রচুর উপরে উঠে খেলেন, তাই মূল লড়াই এই দুজনের উপরই অনেকটা নির্ভর করবে। কারণ দুই উইংয়ে সালাহ-মানেকে যত ভালভাবে আটকাতে পারবে রিয়ালের দুই উইংব্যাক, রিয়ালের জয়ের সম্ভাবনা ততই বাড়বে।
রিয়াল ও লিভারপুল দুই দলের রক্ষণের খেলোয়াড়দের খেলার ধরণের সাদৃশ্য থাকলেও রিয়াল রক্ষণের অভিজ্ঞতা ও মান তাদের রক্ষণকেই এগিয়ে রাখবে।
মাঝমাঠ
মৌসুমের শুরুর তুলনায় যদি লিভারপুলের রক্ষণ উন্নতি করে থাকে তবে অবনতি হয়েছে মাঝমাঠের। একসময় ক্লপের হাতে মাঝমাঠ বেছে নেয়ার জন্য দারুণসব বিকল্প ছিল- কৌতিনহো, লালানা, উইনালডাম, মিলনার, এমরি চান, হেন্ডারসন ও চেম্বারলিন। কৌতিনহো বার্সায় যোগ দেন; চান, লালানা ও চেম্বারলিন পড়েন ইঞ্জুরিতে। চান ও লালানা ফিরলেও পুরো ম্যাচ খেলার অবস্থায় নেই, চেম্বারলিন পুরো মৌসুম মাঠের বাইরে। চেম্বারলিন ছিলেন নিজের জীবনের সেরা ফর্মে, চান ছিলেন ক্লপের ভরসার প্রতীক। গোল করা বা বানানোতেও বেশ ছিলেন। এই চান ফাইনালে খেলবেন না বললেই চলে। বলাই যায়, লিভারপুলের মাঝমাঠ নিয়ে এখন রিয়ালের যা চিন্তা, কৌতিনহো সহ পূর্ণশক্তির থাকলে তা আরো বাড়ত। খেলার তালিকায় আছেন ৩২ বছরের মিলনার, যার অ্যাসিস্ট সংখ্যা এবার সবচেয়ে বেশি। মাঝমাঠ হবে মোটামুটি এমন- উইনালডাম-হেন্ডারসন-মিলনার। চোখধাঁধানো কিছু করবে না এই মাঝমাঠ। তাদের লক্ষ্যই হবে সালাহ-ফিরমিনো-মানেদের স্বাধীনতা দেয়া আর রিয়ালের মাঝমাঠকে অকেজো করে দেয়া।
রিয়ালের মূল শক্তিই তার মাঝমাঠ। ক্রুস-ক্যাসেমিরো-মড্রিচ জুটি টানা দুই ফাইনালে খেলেছে। শুধু দুই ফাইনাল না, তারাই রিয়ালের মূল পছন্দের ত্রয়ী। ক্যাসেমিরোর কাজ প্রতিপক্ষের আক্রমণে বাঁধা দেয়া, মড্রিচ প্লেমেকার আর ক্রুস খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করেন। বেঞ্চ থেকে নামার জন্য থাকবেন কোভাচিচ। সত্যি কথা বলতে, লিভারপুল মাঝমাঠে এই কোভাচিচ সহজেই যে কারো বদলে জায়গা নিতে পারবেন। সমূহ সম্ভাবনা ইস্কোর শুরু থেকে খেলা। জুভেন্টাসের সাথে ইস্কো গতবারের ফাইনালে অনবদ্য এক খেলা দিয়েছিলেন, যার ফলে বল দখলে রেখে রিয়াল সহজেই জুভেন্টাসকে কাবু করতে পেরেছিল। জিদান চাইলে ম্যাচের অবস্থা বুঝে ৪-৪-২ তে লুকাস ভাজকেজ ও আসেনসিওকে নামাতে পারেন। এককথায়, মাঝমাঠে রিয়ালের অনেক বেশি অপশন। ক্রুস আর মড্রিচ যদি বল নিজেদের দখলে রাখতে পারেন, তাহলে লিভারপুলের আক্রমণভাগ বল পাবে কম। তাদের মূল শক্তি যত কম বল পাবে, ততই রিয়ালের জেতার চান্স বেশি। ক্যাসেমিরোকে থাকতে হবে নিজের সেরা ফর্মে। অতীতের দুই ফাইনালে অ্যাটলেটিকোর কোকে বা জুভেন্টাসের ডিবালাকে ক্যাসেমিরো দারুণভাবে মুঠোবন্দী করে রেখেছিলেন। এবারেও সালাহ বা মানের কাওকে তালুবন্দী করার ভার পড়বে তার উপর।
মাঝমাঠ বিবেচনায় রিয়াল লিভারপুলের চেয়ে অনেক এগিয়ে। রিয়াল মাঝমাঠ তার পুরো শক্তিতে খেলা নিয়ন্ত্রণ করলে জেতাটা সহজ হয়ে যাবে রিয়ালের জন্য।
আক্রমণভাগ
লিভারপুলের আসল শক্তিই তার আক্রমণভাগ। সম্প্রতি রোনালদো বলেছেন, লিভারপুলের আক্রমণত্রয়ী তাকে কয়েক বছর আগের রিয়ালের কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন সেই বিখ্যাত বেল-বেনজেমা-রোনালদো ত্রয়ীর কথা। সালাহ-মানে-ফিরমিনো ত্রয়ী আছে তাদের জীবনের সেরা ফর্মে। কৌতিনহো যাওয়ার পর সবাই যখন ভেবেছিল লিভারপুল ধাক্কা খাবে, তখন এই ত্রয়ীই অভাব বুঝতে দেয়নি। ফিরমিনো নিজেকে নিয়ে গেছে অন্যমাত্রায়। কৌতিনহোর সৃজনশীল কাজের অনেকটাই তিনি করেন এখন। সবচেয়ে বড় কথা, এই ত্রয়ী দারুণ স্বার্থহীন। নিজের গোল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তার চেয়ে ভাল জায়গায় দাঁড়ানো খেলোয়াড়কে বল ঠেলে দেয়। সালাহ এই ত্রয়ীর মূল রত্ন হলেও এদের কারোর চেয়ে কারোর ভূমিকা কম না।
রিয়াল আক্রমণভাগ মূলত রোনালদো কেন্দ্রিক। আর হবে না-ই বা কেন? সেমিফাইনাল অবধি তুলে আনার সিংহভাগ গোলই তো তার। বেনজেমা সারা মৌসুম ভুগেছেন গোল খরায়, তবুও বায়ার্নের সাথে জোড়া গোলে দলকে তুলেছেন ফাইনালে। বেল প্রায় সারা মৌসুম ছিলেন ইনজুরিতে আক্রান্ত, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আগের সেই ধার ফিরে পেয়েছেন। খেলার সেই গতি, সেই টার্ন আবার তার খেলায় দেখা যাচ্ছে। মৌসুম গড়ানোর সাথে সাথে ইস্কোও নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। বদলি হিসেবে নেমে আসেনসিও প্রায়ই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছেন। জিদানের স্বাভাবিকভাবেই দল নির্বাচন নিয়ে ভাবনা, এটাকে মধুর সমস্যা বলা যায়!
তবে যা-ই হোক, রিয়াল আক্রমণভাগ এই মৌসুমে লিভারপুলের মতো মোটেই অতটা ভয়ঙ্কর না, আক্রমণভাগ বিবেচনায় লিভারপুলই এগিয়ে।
খেলার ধরণ
দুই দলেরই যা খেলার ধরণ, তাতে ফাইনালে আপনি বিরক্ত হবেন না নিশ্চিত। লিভারপুলের খেলার স্টাইল হলো ‘গেগেনপ্রেসিং’। মানে পায়ে বল না থাকলে বা বল হারালে সাথে সাথে প্রচন্ড প্রেস করো সবাই মিলে। এতে প্রতিপক্ষ অপ্রস্তুত থাকায় বল হারায়। আবার প্রতিপক্ষ রক্ষণে মনোযোগী থাকে না বিধায় প্রতিআক্রমণে অনেক ফায়দা পাওয়া যায়। সমস্যা হলো, এভাবে খেলায় ৬০ মিনিটের পরই লিভারপুল খেলায় গতি হারিয়ে ফেলে। প্রতিপক্ষ তখনই ফায়দা নিতে চায়।
রিয়াল মাদ্রিদের খেলা পজিশনভিত্তিক। আসলে জিদান ম্যাচভিত্তিক খেলার ধাঁচ বদলান। এখন দেখার বিষয়, জিদান পজিশনভিত্তিক খেলাবেন নাকি হাইপ্রেসিং কাউন্টার এটাক? লিভারপুল আক্রমণাত্মক ত্রয়ীর কাছে বলের যোগান কম নিশ্চিত করতে বল দখলে রেখে খেলাতে পারেন, যেহেতু লিভারপুলের মাঝমাঠ নিজেরা বল দখলে রাখতে দক্ষ না। এতে সমস্যা হলো, লিভারপুলের গেগেনপ্রেসিং এ বল হারালে ঝামেলা। আর যদি হাইপ্রেসিং কাউন্টার এ খেলান, তবে বেল খেলবেন আর তখন কৌশলই থাকবে লিভারপুলের আনকোড়া ফুলব্যাকদের গতিতে পরাস্ত করা। জিদানের কোন কৌশল পছন্দ তার উপরই নির্ভর করবে ইস্কো না বেল কে খেলবেন।
ফিরমিনো: দ্য সাইলেন্ট কিলার
লিভারপুলের আক্রমণত্রয়ীর মধ্যে সবচেয়ে কম দক্ষ খেলোয়াড় এই ফিরমিনো। তারপরেও তিনিই এই ত্রয়ীর মূল প্রাণ কেন? নিচের ছবিটা দেখুন।
একজন স্ট্রাইকার হয়েও ফিরমিনো নেমে এসেছেন অনেকটা নিচে। সেই সাথে তাকে মার্কিংয়ে থাকা প্রতিপক্ষের সেন্টার ব্যাকও নিচে নেমে এসেছেন। এসে দেখেন তার সামনে দুটো পথ খোলা। এক, ফিরমিনোকে মার্ক করা, তাহলে উপরে উঠতে থাকা পাশের খেলোয়াড় মানে অনেক জায়গা পেয়ে যাবেন। দুই, পাশে দৌড়তে থাকা মানেকে মার্ক করা, তাহলে ফিরমিনো জায়গা পাবেন প্রচুর। এভাবে মাথা খাটিয়ে ফিরমিনো ম্যাচের পর ম্যাচ সালাহ-মানেদের জায়গা করে দেন। এরপরেও এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ২০ এর বেশি গোলে তার অবদান (১০ গোল, ১১ এসিস্ট)। ফিরমিনোকে আটকাতে পারলে এই ত্রয়ীকে নিষ্প্রভ রাখার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ব্যাটেল অব M
এই ম্যাচের আসল লড়াই মার্সেলো ও মোঃ সালাহর মধ্যে। শুধু সালাহকে আটকাতে ম্যানইউর কোচ মরিনহো নিয়েছিলেন বিশেষ প্ল্যান, মানে হলো ফর্মে থাকা সালাহকে আটকাতে আপনাকে সতর্ক থাকা লাগে। আর মার্সেলো ডিফেন্সে বেশ অমনোযোগী। আক্রমণে মার্সেলো যে কারোর চেয়ে ভালো, কিন্তু প্রায়ই উপরে উঠে আর নিচে নামতে পারেন না সময়মতো। সালাহর মতো গতিশীল ফরোয়ার্ড এমন সুযোগ বারবার হাতছাড়া করবেন না। অতীতে মার্সেলো মেসি, রোবেনদের ভালোভাবেই কয়েকবার আটকেছেন। যদি সালাহকে মার্সেলো আটকে দিতে পারেন, তাহলে মূল লড়াইয়েও লিভারপুল পিছিয়ে যাবে অনেকটাই।
ছোটছোট যে জিনিসগুলোও বড় হয়ে দাঁড়াতে পারে
অভিজ্ঞতা: প্রথমেই বলতে হয় অভিজ্ঞতার কথা। লিভারপুল একাদশের কোনো খেলোয়াড়ের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলারই কোনো অভিজ্ঞতা নেই আর রিয়ালের এই দল গত পাঁচ বছরে চারটি ফাইনাল খেলছে। শুধু কি তা-ই? এই দলের ২১ বছর বয়সী এক আসেনসিওই জিদানের অধীনে আটটি ফাইনাল ম্যাচ খেলেছেন! ক্লপও এটাই বলেছিলেন, রিয়াল জানে কিভাবে ফাইনালের দিনে কী করতে হয়। এই ধরুন, ফাইনালের আগের রাতে ঘুম। যতটা উত্তেজনা রিয়ালের থাকবে, তার অনেকগুণ বেশি থাকবে লিভারপুলের।
বিকল্প: অভিজ্ঞতার পরেই আসে বিকল্প। লিভারপুলের প্রথম একাদশ রিয়ালের সাথে লড়াই করতে যথেষ্ট, কিন্তু কেউ ইনজুরিতে পড়লে? লিভারপুলে যখন বলার মতো কোনো বিকল্প খেলোয়াড়ই নেই, তখন রিয়াল বেঞ্চ থেকে কোভাচিচ, আসেনসিও, ইস্কো, বেল, লুকাস, নাচোর মতো বিশ্বমানের খেলোয়াড় নামাতে পারবে। তাই প্ল্যান-এ ব্যর্থ হলে অসুবিধা লিভারপুলেরই বেশি।
আত্মতুষ্টি: গত চার বছরে তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা দল আর বহুকাল পরে ফাইনালে ওঠা দলের মধ্যে কার মরিয়া ভাব বেশি থাকবে? স্বাভাবিকই লিভারপুলের। রিয়ালকে আত্মতুষ্টিতে পেয়ে বসতেও পারে। কিন্তু ঘরোয়া মৌসুমে এবার এতটাই সঙ্গিন ছিল রিয়াল যে, এই ম্যাচটাই তাদের এবারের মৌসুম বাঁচানোর ম্যাচ। তাই তাত্ত্বিকভাবে রিয়ালকে আত্মতুষ্টিতে পেয়ে বসার কথা থাকলেও তা না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।
বড় ম্যাচ খেলার অভ্যাস: এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মোকাবিলা করেছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, টটেনহ্যাম, পিএসজি, জুভেন্টাস, বায়ার্নের মতো দলকে। সেই তুলনায় লিভারপুলের বাঁধা ছিল বলতে গেলে কেবল ম্যানসিটি। লিভারপুল কোচ ক্লপ সেটাই বলেছেন, “আপনি বলেন যে, রিয়ালের বায়ার্নের সাথে জয় ছিল ভাগ্য, জুভের সাথে জয় ছিল ভাগ্য। ভেবে দেখেছেন, চার সুযোগে রিয়াল করলো দুই গোল আর বায়ার্ন আট সুযোগে এক গোল? রিয়াল গত পাঁচবারে চারবার ফাইনালে, এটাও ভাগ্য? আসলে বড় ম্যাচ খেলে তারা অভ্যস্ত ও অভিজ্ঞ।”
কেমন হতে পারে দুই দলের একাদশ
লিভারপুল (৪-৩-৩)
কারিয়ুস
আর্নল্ড-ডাইক-লভরেন-রবার্টসন
উইনালডাম-হেন্ডারসন-মিলনার
সালাহ-ফিরমিনো-মানে
রিয়াল মাদ্রিদ (৪-৩-৩)
নাভাস
কারভাহাল-রামোস-ভারানে-মার্সেলো
মড্রিচ-ক্যাসেমিরো-ক্রুস
বেল-বেনজেমা-রোনালদো
তবে জিদান পজেশনভিত্তিক খেলার কৌশল নিলে বেলের বদলে ইস্কো খেলতে পারেন।
বিশ্বকাপ উন্মাদনা শুরু হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো পুরো মাত্রা পায়নি। কারণ এখনো ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার আসরের ফাইনাল খেলা বাকি। ২৬ তারিখ রাতের এই ম্যাচেই নির্ধারিত হবে রিয়ালের টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে নাকি ইউরোপিয়ান মঞ্চে লিভারপুলের পুনরুত্থান হবে?
ফিচার ছবিসত্ত্ব: Sokkaa