‘তামিমের ব্যাট হাসলে হাসে পুরো বাংলাদেশ’, দিনে দিনে এই উক্তিটি যেন তামিমের নামের পাশে আরও পাকাপোক্ত হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে, নিজেকে যেন ততই পরিণত একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়ে তুলছেন। দলের সিনিয়র প্লেয়ারদের মধ্যে অন্যতম এই বাঁহাতি ওপেনার দেশসেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন অনেক আগেই। অভিজ্ঞতা ও কঠোর পরিশ্রমের আদলে প্রতিটি খেলায় তার নৈপুণ্য ও ধারাবাহিকতা তাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে এসেছে, তবে লক্ষ্য আরও অনেকটাই দূরে।
তামিমের ছোটবেলা
দেশসেরা এই ব্যাটসম্যান ১৯৮৯ সালের ২০ মার্চ চট্টগ্রামের বিখ্যাত খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ণ নাম ‘মোহাম্মদ তামিম ইকবাল খান’। ছোট থেকেই দুরন্ত প্রকৃতির এ ছেলেটি পড়ালেখায় খুব বেশি ভালো ছিলেন না, কারণটা এই ক্রিকেট। মূলত খুব ছোট্ট থেকেই তিনি ক্রিকেটের সাথে বেশ পরিচিত। তার বাবা ইকবাল খান ছিলেন সত্তর-আশি দশকের নামীদামী একজন খেলোয়াড়। তিনি একাধারে ক্রিকেট এবং ফুটবল দুটোর সাথেই সম্পৃক্ত ছিলেন। অন্যদিকে, তামিমের চাচা আকরাম খান বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বড় ভাই নাফিস ইকবালও বাংলাদেশ জাতীয় দলের একজন সাবেক ক্রিকেটার। মোটকথা, তাদের পুরো পরিবারই বাংলাদেশ ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সূচনা
ব্যাট-বলের সাথেই বেড়ে ওঠা এই তামিম ইকবাল ২০০৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পান। সেখান থেকেই তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সূচনা হয়। বিভাগীয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অসাধারণ পারফরম্যান্সের সুবাদে সেই বছরই তিনি অনুর্ধ্ব-১৯ দলের আফ্রো-এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টে ডাক পান।
দলে সুযোগ পেয়ে তিনি ১৮, ৪২, ৬০ এবং ৬১ রানে অপরাজিত থেকে দারুণ একটি টুর্নামেন্ট শেষ করেন। সেই একই বছরের শেষদিকে ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা অনুর্ধ্ব-১৯ দল ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসে। ঐ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৭৩টি বল মোকাবেলা করে ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কা হাঁকিয়ে ১১২ রানের একটি বিধ্বংসী ইনিংস উপহার দেন, যা তাকে আলোচনায় আনতে বাধ্য করেছে। অনুর্ধ্ব-১৯ দলে অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ জাতীয় দলে ডাক পান তামিম ইকবাল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক
-
ওয়ানডে অভিষেক
২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের মাটিতে ‘হারারে স্পোর্টস ক্লাব’ স্টেডিয়ামে সিরিজের চতুর্থ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশের জাতীয় দলের ৮৩তম সদস্য হিসেবে তামিম ইকবালের অভিষেক হয়। এই ম্যাচের মাধ্যমেই তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সূচনা হয়। এই ম্যাচে তিনি সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি, ৮ বলে মাত্র ৫ রান করে অ্যান্থনি আয়ারল্যান্ডের বলে গ্রে ব্রেন্টের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। যদিও এ ম্যাচটি বাংলাদেশ ১৪ রানে জয়লাভ করেছিলো।
-
টি-টুয়েন্টি অভিষেক
ওয়ানডেতে অভিষেকের পর ১ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সালে কেনিয়ার মাটিতে চতুর্দলীয় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ১৭ নাম্বার সদস্য হিসেবে অভিষেক হয় তামিম ইকবালের। কেনিয়া জাতীয় দলের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তামিম ১২ বলে ১১ রান করে পিটার ওনগোন্দোর বলে কলিন্স ওবাইয়ার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান। অবশ্য নাজিমউদ্দিনের অসাধারণ এক ইনিংসের উপর ভর করে বাংলাদেশ ঐ ম্যাচে ৫ উইকেটে জয় লাভ করে।
-
টেস্ট অভিষেক
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়ার প্রায় বছরখানেক পরই ০৪ জানুয়ারি ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ৫০তম সদস্য হিসেবে এই বাঁহাতি ওপেনার ব্যাটসম্যানের অভিষেক হয়।
অভিষেক ম্যাচেই তামিম ইকবাল দুটি অসাধারণ ইনিংসের উপহার দিয়ে নিজের জাত চেনাতে সক্ষম হন। প্রথম ইনিংসে ৮৮ বল মোকাবিলা করে ৯টি চারের মাধ্যমে ৫৩ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৮ বল মোকাবেলা করে ১২টি চার ও ১টি ছক্কার সুবাদে ৮৪ রান করেন। তামিমের অসাধারণ ব্যাটিং পারফরম্যান্সের বিপরীতে আরেক ওপেনার জুনায়েদ ইমরোজ সিদ্দিকী ব্যতীত আর কোনো ব্যাটসম্যানই তেমন সুবিধা করতে পারেননি। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে পরাজিত হয়।
ব্যক্তিগত অর্জন
২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি অভিষেক হওয়া তামিম ইকবাল বিশ্বকাপের আগে চার ম্যাচে খুব ভালো কিছু দেখাতে না পারলেও নির্বাচকরা তার উপর যথেষ্ট পরিমাণ ভরসা রেখেই মার্চে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপ আসরে তাকে দলে রেখেছিলেন। তিনিও সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে মাত্র ১৮ বছর বয়সে জহির খানদের মতো বিশ্বসেরা বোলারদেরকে চোখ রাঙিয়ে দাপটের সাথে ব্যাট হাঁকান। পোর্ট অফ স্পেনে সেই ম্যাচে তামিম ইকবাল ৫৫ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকিয়ে ৫১ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন, যা ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি জয় ছিনিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো। বাংলাদেশের সাথে হেরে যাওয়াতে ভারত গ্রুপপর্বেই বিশ্বকাপ আসর থেকে ছিটকে পড়ে।
-
ওয়ানডে ক্যারিয়ার
বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে তামিম ইকবালকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় দলে তার অবস্থান পাকাপোক্ত হয়ে যাওয়া বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় অভিষেকের এক বছর পরই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৬ বলে ১৫টি চার ও ১টি ছক্কার সুবাদে ১২৯ রান করে ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের দেখা পান তিনি।
গত ১১ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে কাটিয়ে দেওয়া এই ড্যাশিং ওপেনার তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ১৮৩টি ম্যাচে ৩৬.২৫ গড় ও ৭৮.২২ স্ট্রাইকরেটে ৬৩০৭ রান সংগ্রহ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ১১টি শতক ও ৪২টি অর্ধশতকের ইনিংস। তার ক্যারিয়ারসর্বোচ্চ ১৩৮ বলে ১৫৪ রানের অনবদ্য ইনিংসের উপর ভর করেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোনো ওয়ানডে ম্যাচে তিন শতাধিক রান তাড়া করে ম্যাচ জেতে। দেশসেরা এই ওপেনার তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সর্বমোট ১৪ বার ম্যাচসেরা এবং ৪ বার সিরিজসেরা নির্বাচিত হয়েছেন।
-
টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ার
২০০৭ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হওয়া টি-২০তে তামিম ইকবাল খুব বেশি সফল হতে পারেননি। শুধু তিনিই নন, পুরো বাংলাদেশ দলই যেন এই ফরমেটে অনেকটা নিষ্প্রভ। তারপরও মোট ৭২টি ম্যাচে তিনি ২৩.৬৫ গড়ে ১১৭.০৬ স্ট্রাইকরেটে ১৫৮৫ রান সংগ্রহ করেন, এখন পর্যন্ত ৬টি অর্ধশতক ও একটি শতকের দেখা পেয়েছেন তিনি। তার একমাত্র শতকটি ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে, যেখানে ১০টি চার ও ৫টি ছক্কার সুবাদে মাত্র ৬৩ বলে ১০৩ রানে করে অপরাজিত থাকেন তিনি।
-
টেস্ট ক্যারিয়ার
বর্ণিল অভিষেক থেকে শুরু, আজ অবধি খেলেই চলেছেন দাপটের সাথে। টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনি অদ্যাবধি ৫৬ ম্যাচে ৩৭.৮৪ গড় ও ৫৫.৩২ স্ট্রাইকরেটে মোট ৪০৪৯ রান সংগ্রহ করেছেন, যার মধ্যে ৮টি শতক ও ২৫টি অর্ধশতক রয়েছে। টেস্ট ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ২০৬ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, তার এই অসাধারণ ইনিংসের উপর ভর করেই সেই ম্যাচটিতে পাকিস্তানের সাথে ড্র করতে পেরেছিলো বাংলাদেশ। এমনকি সেই ম্যাচে তামিমই ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন।
দেশের হয়ে রেকর্ড সমূহ
ওপেনার হিসেবে দেশের হয়ে ব্যাটিংয়ের প্রায় সব রেকর্ডই নিজের করে নিয়েছেন। তিন ফরম্যাটেই তামিম ইকবাল দেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এ যাবৎ মোট ৩১১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১১৯৯৬ রান করেছেন, যা বাংলাদেশ জাতীয় দলের যেকোনো ব্যাটসম্যানের থেকে বেশি। দেশের হয়ে তিন ফরম্যাটে মোট ২০টি শতক হাঁকিয়ে সর্বোচ্চ শতক হাঁকানো ব্যাটসম্যানও তিনি। এমনকি তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সর্বোচ্চসংখ্যক চার ও ছক্কা হাঁকানো ব্যাটসম্যানও তিনিই।
আন্তর্জাতিক রেকর্ড সমূহ
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দাপুটে ভঙ্গিমায় ব্যাটিং করতে থাকা তামিম ইকবাল এখন বেশি পরিপক্ব। যতই দিন যাচ্ছে, তার ব্যাটের তীক্ষ্ণতা যেন ততই বাড়ছে। একের পর এক রেকর্ডের খাতায় নাম তুলছেন তিনি। ইতোমধ্যেই দেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানে পরিণত হওয়া তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এখন বেশ আলোচিত একজন ব্যাটসম্যান।
২০১০ সাল তামিমের টেস্ট ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সফলতম একটি বছর। ঐ বছর তিনি ৭ ম্যাচে ৫৯.৭৮ গড়ে মোট ৮৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন, সেই সুবাদেই বছরশেষে দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পান তিনি।
বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ৬,০০০ রান পূর্ণ করা তামিম ইকবাল বিশ্ব ক্রিকেটের ৫৫তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এ মাইলফলক স্পর্শ করেন। ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে নির্দিষ্ট একটি ভেন্যুতে সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের তালিকায় ইনজামাম-উল হক, সনাৎ জয়সুরিয়ার মতো প্লেয়ারদের পেছনে ফেলে তামিম ইকবাল ইতোমধ্যেই শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছেন।
ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন
অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে অসাধারণ ব্যাটিং পারফরম্যান্সের কারণে মাত্র ১৮ বছর বয়সে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া তামিম ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবেই পরিচিত লাভ করেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচেই ভারতের বোলারদের উপর ভয়ডরহীন ব্যাটিং করে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন, তারপর থেকে তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের বছরই ক্যারিয়ারের প্রথম শতক ও ৩৭ টি ম্যাচে ব্যক্তিগত ১০০০ রান পূর্ণ করেন তিনি।
অভিষেকের পর থেকেই দাপটের সাথে খেলতে থাকা তামিম ইকবাল হঠাৎ করেই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে তার সহজাত ছন্দ হারিয়ে ফেলেন, পুরো বাংলাদেশ দলও যেন খেই হারিয়ে ফেললো। ফলে সেবার ব্যর্থ একটি বিশ্বকাপ আসর পার করেছিলো বাংলাদেশ। পরের বছর ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়া কাপে দলে থাকাটা একরকম অনিশ্চিত হয়ে পড়ে অফ ফর্মে থাকা এই ড্যাশিং ওপেনারের। পরে কিছুটা চাপে পড়েই তাকে দলে রাখা হয়।
ব্যাপক সমালোচনায় থাকা তামিম ইকবাল সেবার গর্জে উঠেছিলেন। সমালোচকদের কড়া জবাব দিয়ে এশিয়া কাপে একাধারে চার ম্যাচে যথাক্রমে ৬৪, ৭০, ৫৯ ও ৬০ রানের দুর্দান্ত চারটি ইনিংস উপহার দেন, যার উপর ভর করে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ ফাইনাল খেলে।
এশিয়া কাপের পর তামিম ইকবাল আবারও কিছুটা অধারাবাহিক হয়ে পড়া তামিম আবারও সমালোচিত হন। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের দেওয়া ৩১৮ রানের লক্ষ্য অতিক্রম করার পথে ৯৫ রানের ইনিংসটি ছাড়া তামিমের বলার মতো তেমন কোনো পারফরম্যান্স ছিলো না। তবে বিশ্বকাপের পর সমালোচকদের তোপের মুখে থাকা তামিম ইকবাল আবারও গর্জে উঠেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজে তার ১৩২, ১১৬ ও ৬৪ রানের অনবদ্য তিনটি ইনিংস পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। পরে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে জয় পাওয়া দুটি সিরিজেও তার দুরন্ত ব্যাটিং অব্যাহত ছিলো। সেই বছরেই টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি।
বদলে যাওয়া তামিম
‘বুম বুম তামিম’।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মুখে মুখে এমনটা শোনা যেত প্রায়ই। বিশ্বের সেরা সব বোলারদের চোখ রাঙিয়ে শাসন করেছেন নির্দ্বিধায়। কিন্তু সমস্যা একটাই, আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় খেলতে গিয়ে তামিম তার ইনিংস খুব বেশি দীর্ঘ করতে পারতেন না। নিজেকে বদলের ফেলার প্রয়াসেই হয়তো বারবার ছন্দ হারিয়েছেন তিনি। তবু চাইলেই কি বদলে ফেলা যায় নিজের প্রতিভার অস্তিত্ব?
তিনি পেরেছেন, খুব ভালোভাবেই পেরেছেন নিজেকে বদলে নিতে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকেই ‘পরিণত’ তামিম ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এক অপ্রতিরোধ্য রূপে। তামিমের ব্যাট হাসলেই এখন হাসে বাংলাদেশ। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং স্টাইল বদলে এখন প্রতিটি ইনিংস দীর্ঘ করার পণ করেই মাঠে নামেন তিনি। যেখানে যে পরিস্থিতিতে খেলেছেন, সেখানেই সফলতা ধরে রেখেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যাটিংয়ের প্রায় সিংহভাগ রেকর্ডের মালিকই এই বদলে যাওয়া তামিম ইকবালের।
এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে তার অক্লান্ত পরিশ্রম, ইচ্ছাশক্তি ও প্রবল আত্মবিশ্বাসের সমন্বয়ে। বাংলাদেশের অভূতপুর্ব এই উচ্চতায় পৌঁছানোর পেছনে তামিম ইকবালের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে এখানেই শেষ নয়, সবুজ-লাল জার্সিটা গায়ে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। দলকে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে দিতে যে তামিমের বিকল্প আজও নেই!
Featured Image Source: dnaindia.com