ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০১৯ শেষে এখন শুরু হয়েছে সাদা পোশাকের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। যার শুরুটাও বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ইংল্যান্ডের মাটিতে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজ দিয়ে। বরাবরই অ্যাশেজ নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে আগ্রহের শেষ থাকে না। তবে এই সিরিজটা যেন একটু বেশিই কিছু। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান সিরিজের প্রথম ম্যাচের শেষে যখন এটি লেখা হচ্ছে, ততক্ষণে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে অজিরা। অস্ট্রেলিয়া নিজেদের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ২৮৪ রান ও ৪৮৭/৭ (ডিঃ) করেছে। অন্যদিকে, ইংল্যান্ড নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৭৪ রান তুললেও শেষদিনে ৩৯৮ রানের লক্ষ্য জয় করতে নেমে মাত্র ১৪৬ রান তুলতে না তুলতেই গুটিয়ে গেছে।
সবকিছু মিলিয়ে মাত্রই বিশ্বকাপ জয় করা ইংল্যান্ডের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শুরুটা ভালো হলো না মোটেও। অবশ্য এটা সত্যি যে, অস্ট্রেলিয়ার ভালো খেলার পিছনে ইংল্যান্ডের মাঠ ও মাঠের বাইরের অনেক কিছুই বারুদ হিসেবে কাজ করেছে। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই হেরে গিয়ে ছিটকে পড়েছিল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তাই একেবারে আলাদা ফরম্যাট হলেও নতুন এই ফরম্যাটেই প্রতিপক্ষকে হারাতে মরিয়া অস্ট্রেলিয়া।
যদিও ইংলিশ উইকেট অন্যান্য কন্ডিশনের চেয়ে আলাদা, অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। তারপরও অজিরা বেন স্টোকস, জেমস অ্যান্ডারসন, স্ট্রুয়ার্ট ব্রডদের খুব ভালো সামলেছেন, বলা যায় না। কেবল স্টিভেন স্মিথ প্রথম ইনিংসে খেলেছেন ১৪৪ রানের অসামান্য ইনিংস। অন্যদিকে, অজিদের ব্যাটিং প্রতিরোধ একাই গুড়িয়ে দিয়েছেন ব্রড, তুলে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসেও অস্ট্রেলিয়াকে বাঁচিয়েছেন দলের সাবেক অধিনায়ক স্মিথ। এ দফা খেলেছেন ১৪২ রানের ইনিংস। তার এমন লড়াকু ব্যাটিংয়ে দারুণ এগিয়ে চলেছে অস্ট্রেলিয়া, পরে নাথান লায়ন-প্যাট কামিন্সে ভর করে জিতে নিয়েছে অ্যাশেজের প্রথম ম্যাচটিও। অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা যে মনে রাখার মতোই হচ্ছে, তা বলাই যায়।
সেই ধারাবাহিকতায় এই সিরিজ নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হয়েছেন অস্ট্রেলিয়া দলের ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। দলের পরিকল্পনা, প্রতিপক্ষ আর ইংলিশ কন্ডিশন নিয়ে জানিয়েছেন অনেক কথা। রোর বাংলার পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারটিই তুলে ধরা হলো:
২০০১ সাল থেকে শুরু। এখন পর্যন্ত অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া…
এবার দলে আমরা খুব ভালো কিছু ক্রিকেটার পেয়েছি। বোলিংয়েও আমাদের ভালো কিছু অপশন আছে, ব্যাটিংয়ে ভালো রান আসছে আরও আগে থেকেই। ডিউক বলে ওভাবে আমাদের খেলা হয়নি, তো দেখা যাক সামনে কী হয়। তবে হ্যাঁ, এই বল দিয়ে আমরা ঘরের মাঠে খানিকটা অনুশীলন করছি। শেফিল্ড শিল্ডে ক্রিকেটাররা এই বলের সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। তো, সব মিলিয়ে আমরা প্রস্তুতিটা ভালোমতোই নিয়েছি।
অবশ্য ঘরের মাঠে ২০১৭-১৮ মৌসুমে আপনারা ইংল্যান্ডকে ৪-০ তে সিরিজ হারিয়েছিলেন। চলতি সিরিজে কি সেই সাফল্যের কথা মাথায় রেখে মনস্তাত্ত্বিকভাবে এগিয়ে থাকার সুবিধা নিতে পারছেন আপনারা?
আমার মনে হয়, যখন কোনো দলকে আপনি পরাজিত করবেন, সেই দলের বিপক্ষে পুনরায় খেলতে গেলে জয়ের ধারাবাহিকতা মানসিকভাবে এগিয়ে দেবে। আবার একই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে, ইংলিশ কন্ডিশন বরাবরই অন্যরকম। এখানে বল অনেক বেশি সুইং করে। উইকেটে পেস বোলারদের জন্য বরাবরই বাড়তি কিছু থাকে, সেটা গতি বলেন আর সুইং বলেন।
অস্ট্রেলিয়া, তথা আপনারা মাত্র শেষ হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরাজিত হয়েছিলেন। চলতি সিরিজে খেলতে গিয়ে কি সেটা আপনাদের মধ্যে কাজ করে?
অবশ্যই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। আমরা সেমিফাইনালে হারতে কখনোই পছন্দ করি না, আবার সেই ম্যাচের একই ভেন্যুতে এখন আমরা খেলছি, এটাই আসলে আমাদের মধ্যে খেলতে নেমে কাজ করে।
এই মুহূর্তে ইংল্যান্ড বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। কিন্তু এটা অবশ্য আলাদা একটা ফরম্যাট, তাই না?
হ্যাঁ, এটা একেবারেই ভিন্ন ফরম্যাটের ক্রিকেট। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না, মাত্র বিশ্বকাপ জিতেছে বলেই তাদের মানসিক শক্তির পরিমাণ তুঙ্গে। তাছাড়া এটা তাদের ঘরের মাঠ বলে তারা আমাদেরকে যেকোনো মূল্যে হারাতে চাইবে। তারা আমাদের হারের কাটা ঘায়ে আরও একটু নুনের ছিটা দিতে চাইবে বলেই মনে হয়। এতে করে বিশ্বকাপে তাদের বিপক্ষে সেমিফাইনালে হারের পর অ্যাশেজেও জয়ের স্বাদ নেওয়া হবে ইংল্যান্ডের। আমরা টের পাচ্ছি, ইংল্যান্ড আমাদের উপর কতটা চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র মাঠের পারফরম্যান্সেই নয়, মাঠের বাইরের পারফরম্যান্সেও।
আপনি কি ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার বেন স্টোকসকে ‘বিগ ফ্যাক্টর’ মনে করছেন?
দেখুন, বেন (স্টোকস) একজন ওয়ার্ল্ড ক্লাস ক্রিকেটার। সে যেকোনো কিছু করতে পারে। ও যার মধ্যে থেকে এসেছে, যেভাবে কামব্যাক করেছে, লড়াই করেছে, তা আসলেই অনেক বড় ব্যাপার। এই মুহূর্তে আমার কাছে বেন স্টোকসকে পারফরম্যান্সের দিক থেকে আরও বেশি ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছে। সে অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন মাঠের পারফরম্যান্সে আরও অনেক কিছু অর্জন করতে চায়।
আপনি কি মনে করেন না যে, জেমস অ্যান্ডারসন এবং স্ট্রুয়ার্ট ব্রড তাদের অতীতের স্বর্ণালী সময় পার করে এসেছে?
তারা বিশ্বমানের বোলার, দু’জনেই। তাদের মধ্যে দারুণ প্রতিযোগিতা আছে। আমি মনে করি, এই ধরণের কন্ডিশনে তাদের বিপক্ষে খেলা খুব, খুব কঠিন।
সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই আপনার সাথে জেসন রয়কে সাথে তুলনা করে থাকে…
সে যদি সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে পারে, তাহলে খুব ভালো করবে। অনেকে বলে থাকে, আমি কখনোই টেস্টে ঠিক ‘টেস্ট ক্রিকেট’ খেলিনি। কিন্তু দিনশেষে এটাই সত্যি যে, আপনি যদি আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়ে খেলেন, তাহলে রক্ষণাত্মক খেলা এমনিতেই আসবে। আমি জানি, আমরা যেখানে খেলছি, সেই কন্ডিশন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। আপনাকে ব্যাট করতে নেমে কৌশলের আশ্রয় নিতেই হবে। কোন জায়গা থেকে রান বের করা যায়, সেই গ্যাপ খুঁজতে হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে। কভার ড্রাইভগুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, অন্যথায় আপনার সাজঘরে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। মোদ্দাকথা, আপনাকে খুব, খুব সাবধান থাকতে হবে। কারণ, এখানকার উইকেটই এরকম।
এই সিরিজ নিয়ে আপনি কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন?
শুরুতে আমি একটা রান নিতে চাই। তারপর সময় নিয়ে ব্যাট করা। এই ফরম্যাটে আমি জানি, আমি কতটা কী করতে পারি। যখন আমি ব্যাট করি, তখন নিজের দলকে ভালো একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই। তো, ব্যাট হাতে আমি উইকেটে নিজের সামর্থ্যের সবটুকুই ঢেলে দিতে চাইবো। আপাতত নিজের ব্যাটিং নিয়ে এটুকুই ভাবছি।