আর্নেস্তো ভালভার্দে। বার্সা সমর্থকদের কাছে একইসাথে নিন্দিত ও নন্দিত একটি নাম। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বার্সার কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হন তিনি। এরপর দেখতে দেখতে কেটে গেছে আড়াই বছর। এ সময়টা তিনি ফুটবল থেকে দূরেই কাটিয়েছেন। অবশেষে, গত জুনের ৩০ তারিখে তার পুরনো ক্লাব অ্যাটলেটিকো বিলবাওয়ের নতুন কোচ হিসেবে ঘোষিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ফুটবল জগতে পুনরায় পদার্পন করেন তিনি। অবশ্য ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জন ইউরিয়ার্টে আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করলে ভালভার্দেকে কোচ হিসেবে ফিরিয়ে আনবেন। অন্যদিকে, তার প্রতিপক্ষ ইনাকি আরেচাবালাটা জানিয়েছিলেন, তিনি জয়লাভ করলে কোচ হিসেবে ফিরিয়ে আনবেন কোচদের গুরু মার্সেলো বিয়েলসাকে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জয়লাভ করেন জন ইউরিয়ার্টে এবং তার কথামতো ভালভার্দেকে বিলবাওয়ের নতুন কোচ হিসেবে ঘোষণা করেন।
কেন ভালভার্দে?
ভালভার্দে বিলবাওয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ কোচিং করানো কোচ। এর আগে তিনি দুই মেয়াদে বিলবাওয়ের কোচ ছিলেন। প্রথম মেয়াদের ব্যাপ্তিকাল ছিল ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল এবং দ্বিতীয় মেয়াদের ব্যাপ্তিকাল ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল। অনেকে হয়তো জানেন, বিলবাওয়ের হয়ে শুধু বাস্ক প্রদেশের খেলোয়াড়রাই খেলতে পারেন। এত নিয়মের মধ্যে থেকেও ভালভার্দের অধীনে ক্লাবটি অনেকবার ইউরোপের মহাদেশীয় প্রতিযোগিতাগুলোয় (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপা লিগ) খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। আবার, তার অধীনে কোনোবারই তারা লিগে ৮ম অবস্থানের নিচে থেকে শেষ করেনি। ক্লাবটির হয়ে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে ভালভার্দে বলেছিলেন,
“সিক্যুয়ালগুলো কখনো ভালো হয় না, গডফাদার টু বাদে।”
কিন্ত, ভালভার্দে ভুল ছিলেন। কারণ তার দ্বিতীয় মেয়াদেই তো এনরিকের ট্রেবলজয়ী বার্সাকে স্প্যানিশ সুপার কোপা তে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে বিলবাও দীর্ঘ ৩১ বছর পর নিজেদের প্রথম শিরোপা জয় উদযাপন করে।
বিলবাওয়ের হয়ে ভালভার্দের ট্যাকটিক্যাল অ্যাপ্রোচ
ক্লাবটির হয়ে নিজের ২য় মেয়াদে ভালভার্দে বেশিরভাগ ম্যাচেই প্রথাগত ৪-২-৩-১ ফর্মেশন ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। নিজের হাতে থাকা খেলোয়াড়দের থেকে সেরাটা পাওয়ার লক্ষ্যে ছক কষতেন তিনি, প্রয়োজনে ফর্মেশন পরিবর্তন করতেও দ্বিধাবোধ করতেন না। ২০১৩ সালে মার্সেলো বিয়েলসার বিদায়ের পর দলটিকে রক্ষণের দিক থেকে অধিকতর শক্তিশালী বানাতে তিনি ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলাতে শুরু করেন। প্রতি মৌসুমে তার এই সিস্টেম ব্যবহারের হার সুষমভাবে বেড়েছে।
উপরের গ্রাফ দুটোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, বিলবাওয়ের হয়ে নিজের শেষ দুই মৌসুমে তিনি যথাক্রমে ৭৭% ও ৮৩% ম্যাচে ৪-২-৩-১ ফর্মেশন ব্যবহার করেন।
৪-২-৩-১ ভালভার্দের পছন্দ হওয়ার কারণ এই সিস্টেমে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী সহজেই মানিয়ে নেওয়া যায়। হোল্ডিং মিডফিল্ডার দু’জন খেলার ৪টি স্তরের প্রতিটিতেই দলকে ভারসাম্য প্রদান করে। কোচের পছন্দানুযায়ী তিনি দু’জনকে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা দিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের রক্ষণে ভূমিকা কমিয়ে আনতে হোল্ডিং মিডফিল্ডার দু’জনকেই রক্ষণাত্মকভাবে খেলাতে পারেন অথবা একজনকে ডিপ-লায়িং প্লেমেকার ও অপরজনকে বল উইনার হিসেবে কাজে লাগাতে পারেন।
মাঠের প্রশস্ত অঞ্চলগুলোয় ৪-২-৩-১ ফর্মেশন আক্রমণ ও রক্ষণ উভয়দিকেই বেশ কার্যকর। কারণ, প্রতিটি প্রশস্ত চ্যানেলে দু’জন খেলোয়াড় থাকে এবং বল দখলে থাকাকালীন কোচের ব্যবহৃত ট্যাকটিক্স অনুযায়ী প্রতিপক্ষের অর্ধে দলকে তা প্রতিপক্ষের কাছে করে তোলে আনপ্রেডিক্টেবল; যেহেতু সেন্টার ফরোয়ার্ড দু’জন উইংগার ও একজন নাম্বার টেনের সহযোগিতা পান।
ভালভার্দে ৪-২-৩-১ ফর্মেশন কাজে লাগান, কারণ তিনি যেভাবে তার দলকে খেলাতে চাইতেন তার জন্য এই ফর্মেশন উপযুক্ত ছিল। বল পায়ে তাদের নির্দিষ্ট কোনো খেলার ধরন ছিল না। কখনও তাদের খেলার ধরন ছিল ডিরেক্ট, আবার কখনও তারা খেলত ধীরগতিতে বিল্ডআপ করে।
বিলবাওয়ের হয়ে ওইসময় খেলা খেলোয়াড়েরা নমনীয় হওয়ায় খেলার এই ধরন বিলবাওয়ের জন্য নিখুঁত ছিল। সামনে থাকা আদুরিজ টার্গেটম্যানের মতো আচরণ করতেন এবং প্রতিপক্ষের অর্ধে ছিলেন দলের মধ্যমণি। আক্রমণভাগের বাকি খেলোয়াড়েরা তার দ্বারা উপকৃত হতো। ইকার মুনিয়াইন ও বেনাট উরকিয়াগার মতো খেলোয়াড়েরা বল পায়ে নিতে এবং কি পাস ও প্রগ্রেসিভ প্লে’র দ্বারা বিপক্ষ দলকে তুলোধুনো করতে পছন্দ করতেন। ইনাকি উইলিয়ামস এসময় ব্রেকথ্রু পান, তিনি কাউন্টার অ্যাটাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। তিনি ইন বিহাইন্ডে ফাঁকা জায়গা আক্রমণ এবং ড্রিবল করে বল নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতেন।
আক্রমণ
২য় মেয়াদে সান ম্যামেসের হাল ধরার পর ভালভার্দে বল পায়ে রাখার সময়টায় দলের উৎপাদনশীলতা বাড়ান। ১ম মৌসুমে তার শিষ্যরা বিয়েলসার অধীনে খেলাকালীন সময়ের তুলনায় বল দখল তুলনামূলক কম রাখলেও প্রতি ৯০ মিনিটে অন টার্গেটে শটের সংখ্যা বেড়েছিল। লক্ষ্য ছিল অযথা বল পায়ে না রেখে উদ্দেশ্যমূলকভাবে খেলা।
ভালভার্দের ট্যাকটিক্স মাঠের কোনো অংশ কিংবা নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলকেন্দ্রিক ছিল না। যদিও মাঠের প্রশস্ত অঞ্চলগুলো দিয়ে আক্রমণ বেশি হচ্ছিল এবং ক্রসের পরিমাণও আগের তুলনায় বেড়ে গিয়েছিল তবুও প্রশস্ত অঞ্চল নাকি মাঠের মাঝ অংশ – কোন বরাবর আক্রমণ করা হবে, তা নির্ভর করত ম্যাচের পরিস্থিতি এবং প্রতিপক্ষের উপর।
২০১৩-১৪ মৌসুম থেকে ২০১৬-১৭ মৌসুম পর্যন্ত একাধারে ম্যাচপ্রতি ক্রসের সংখ্যা ও লং পাসের সংখ্যার দিক দিয়ে বিলবাও ছিল একদম উপরের সারিতে। আবার, ম্যাচপ্রতি শর্ট পাসের সংখ্যার দিক দিয়েও বিলবাও ছিল মাঝামাঝি অবস্থানে যা নির্দেশ করে বল পায়ে থাকাকালীন তাদের খেলার মিশ্র ধরন। ভালভার্দের অধীনে ৪ মৌসুমে ক্লাবটির বল দখলে রাখার পরিমাণ যথাক্রমে ৫৩%, ৫০.৮%, ৪৯.৩% এবং ৫১.১%। নিচে ২০১৬-১৭ মৌসুমে লা লিগায় বল দখলে রাখার তুলনামূলক চার্ট দেখানো হলো:
বিল্ডআপের সময় বাস্ক ক্লাবটি ৪-২-৩-১ থেকে ৩-৪-১-২ অথবা মাঝেমধ্যে পরিস্থিতি অনুযায়ী ৩-২-৩-২ ফর্মেশনে পরিবর্তিত হতো। নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে মাত্র একজন ফুলব্যাক উপরে উঠে বিস্তৃতি প্রদান করছেন কারণ তার দিককার বিপক্ষ দলের উইংগার আক্রমণরেখায় সেন্টার ফরোয়ার্ডের সাথে যোগ দিয়েছে। বল দখলে রাখা খেলোয়াড়টি রাইট ফুলব্যাক, যিনি নিজ দলের সেন্টারব্যাক দু’জনের সাথে মিলে ব্যাক-থ্রি গঠন করেছেন। সামনে থাকা রাইট উইংগার প্রতিপক্ষকে প্রসারিত করার লক্ষ্যে ডানদিকে যতটুকু সম্ভব টাচলাইন ঘেঁষে থাকার চেষ্টা করেছেন।
আবার, দুই ফুলব্যাক উপরে উঠলে দু’জন হোল্ডিং মিডফিল্ডারদের মধ্যে একজন সেন্টারব্যাকদের মাঝে নেমে ব্যাক-থ্রি গঠন করতেন। উইংগারদের মধ্যে একজন টাচলাইন উইংগার, অপরজন ইনসাইড ফরোয়ার্ড এর মতো আচরণ করতেন। টাচলাইন উইংগারের পেছনে থাকা ফুলব্যাক মাঠের মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে খেলায় কেন্দ্রীয়ভাবে সহযোগিতা করতেন।
ডিফেন্সিভ থার্ড থেকে মিডল থার্ডে খেলার সময় বিলবাও বল দখলে রাখার চেষ্টা করত। এর পেছনে কারণ হিসেবে ছিল প্রতিপক্ষকে প্রেস করতে ডাকা যাতে করে প্রতিপক্ষের ফেলে আসা ফাঁকা জায়গা আক্রমণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। নিচের ছবিতে দেখুন, মিডল থার্ডে খেলা চলাকালে বিলবাও রিয়াল মাদ্রিদকে মাঠের এক পাশে টেনে এনে তাদের ডিফেন্সিভ ফর্মেশন নষ্ট করে দিয়েছে। এতে করে মাদ্রিদের অর্ধে বিশাল ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয়। এরকম পরিস্থিতিতে ভালভার্দের অধীনে বিলবাও ডিরেক্ট খেলা খেলতো।
ডিরেক্ট খেলা এবং প্রতিপক্ষের অর্ধে ফাঁকা জায়গা আক্রমণ খেলোয়াড়দের শক্তিমত্তার অনুকূলে ছিল। ইকার মুনিয়াইন, ইনাকি উইলিয়ামস ও রাউল গার্সিয়ারা ৪-২-৩-১ এর আক্রমণভাগের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। এই তিনজনের মধ্যে সকলে ফাঁকা জায়গা আক্রমণ করে প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেদ করতে ছিলেন দক্ষ। ইকার মুনিয়াইন ও ইনাকি উইলিয়ামস দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং ওয়ান-ভার্সেস-ওয়ান ড্রিবলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। সেন্টারব্যাক ইয়েরে ও লাপোর্তে এবং প্লেমেকার বেনাটের পাসিং রেঞ্জ ভালো হওয়ায় তারা মুনিয়াইন ও উইলিয়ামসের মুভমেন্ট সাপোর্ট করতে পারতেন।
বার্সেলোনার সাথে এই উদাহরণটি দেখলে বুঝা যায় বিলবাও ডিরেক্টভাবে প্রতিপক্ষের অর্ধে কীভাবে খেলতো।
বার্সার ডিফেন্সিভ থার্ডের প্রত্যেক অঞ্চলে বিলবাওয়ের একটি করে খেলোয়াড় রয়েছে। ফুলব্যাক দু’জন প্রশস্ত চ্যানেল ও উইংগাররা উভয়ই হাফ-স্পেস দখল করে আছেন এবং সেন্টার ফরোয়ার্ডের পেছন থেকে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার রান নিচ্ছেন, যা বার্সার দুই সেন্টারব্যাকের মাঝখানে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি করেছে।
রক্ষণ
ভালভার্দে আক্রমণ করতে পছন্দ করলেও রক্ষণের চেয়ে আক্রমণকে অধিকতর প্রাধান্য দিতেন না। এই সময়ে তার ট্যাকটিক্সে রক্ষণ বড় ভূমিকা রাখত। বল দখলে না থাকাকালীন তার দল রক্ষণাত্মকভাবে সুগঠিত ছিল এবং সেই রক্ষণ ভাঙা প্রতিপক্ষের জন্য ছিল দুরূহ। তার অধীনে বিলবাও ৪ মৌসুমের ৩টিতেই লা লিগায় শট কনসিড এবং ট্যাকলের পরিমাণের দিক থেকে সেরা তিনে ছিল। বল প্রতিপক্ষের পায়ে থাকাকালীন তারা চড়াও হলেও সংগঠন ছিল তাদের সাফল্যের চাবিকাঠি।
তাদের এই রক্ষণ ব্যবস্থা ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়, কারণ বিলবাও ৪৩ গোল কনসিড করে লা লিগায় ২০১৬-১৭ মৌসুম ৫ম সেরা রক্ষণ হিসেবে শেষ করে। আবার, লিগে তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত গোলের পরিমাণের দিক দিয়ে তারা ৪র্থ সেরা দল ছিল।
ভালভার্দের রক্ষণ ব্যবস্থা হাইপ্রেসিং ও কম্প্যাক্ট ফর্মেশন ধরে রাখা – এই দুইয়ের সংমিশ্রণে গঠিত। যখন বিপক্ষ দলের অর্ধে সেই দলের একজনের পায়ে বল থাকে ভালভার্দে তখন হাই ম্যান-টু-ম্যান প্রেসিং সিস্টেম ব্যবহার করেন। এতে করে বিপক্ষ দলের জন্য প্লে আউট ফ্রম ডিফেন্স সম্ভব হয়ে ওঠে না, সম্ভব হলেও কমপক্ষে বিলবাও তাদের প্রেস করে যেখানে নিয়ে গেছে মাঠের সেই অংশগুলো বরাবর স্বাভাবিক খেলা বিপক্ষ দল খেলতে পারে না।
তখন প্রতিপক্ষের কাছে কুইক পাস এবং ডিরেক্ট খেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না, যা শেষ পর্যন্ত তাদের বল হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ভালভার্দের অধীনে তাদের ম্যান-টু-ম্যান প্রেসিং মার্সেলো বিয়েলসার অধীনে তাদের ম্যান-টু-ম্যান প্রেসিংয়ের মতো তীব্র ছিল না। প্রতিপক্ষ মাঠের মাঝ বরাবর খেলা শুরু করলে ভালভার্দের বিলবাও ম্যান-টু-ম্যান প্রেসিং বন্ধ করে ৪-৪-২ ফর্মেশন ধরে রাখত। নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে মিডফিল্ড ও রক্ষণে ৪ জন করে থেকে দুইয়ের মাঝ বরাবর বিলবাও কত কম ফাঁকা জায়গা রেখেছে। এরপর ফরোয়ার্ডরা ধীরে ধীরে বিপক্ষ দলকে মাঠের প্রশস্ত অঞ্চলগুলোয় যেতে বাধ্য করে যেখানে তারা আরও চড়াওভাবে প্রেস করবে।
মাঠের একদম মাঝ বরাবর খেলা থেকে বিপক্ষ দলকে আটকানোর জন্য তারা কম্প্যাক্ট ফর্মেশন বজায় রাখত। এটা প্রতিপক্ষকে আরও সৃষ্টিশীল হতে বাধ্য করে এবং বল হারানোর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
ভালভার্দের চ্যালেঞ্জ
বাস্ক ক্লাবটির নতুন কোচ হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর ভালভার্দে প্রেসে বলেন,
“অ্যাথলেটিককে কোচিং করানো সবসময় সম্মানের ব্যাপার। এই ক্লাবটি আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এবং আমি জানি শুধু বিলবাও কেন, গোটা বিশ্বের অনেকগুলো স্থানে এই ক্লাবটি কতটা গুরুত্ব বহন করে। আমি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি কারণ আমি বিশ্বাস করি এটা এমন একটি চ্যালেঞ্জ যা রোমাঞ্চকর ও যথেষ্ট কঠিন, যা কিনা এই কাজটিকে উপভোগ্য করে তুলবে। আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমর্থকরা যেন দলটিকে নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে এবং দলটিকে একান্তই আপন মনে করতে পারে তা নিশ্চিত করা। ক্লাবটির একটি ভালো দল রয়েছে যাদের নিয়ে আমরা কাজ করতে যাচ্ছি।”
গত মৌসুমে দলটি লা লিগায় পয়েন্ট টেবিলে ৮ম হয়ে শেষ করায় ইউরোপের মহাদেশীয় কোনো প্রতিযোগিতায় খেলার যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। তাই, নতুন মৌসুমে ভালভার্দের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিলবাওকে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করানো। এছাড়াও, কোপা দেল রে’তে ভালো পারফর্ম করা হবে তার জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ।
ভালভার্দেতেই আসবে সাফল্য?
বিলবাওয়ের হয়ে নিজের শেষ মৌসুমের আগের মৌসুমে ভালভার্দে দলটিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলানোর যোগ্যতা অর্জন করিয়েছিলেন। কিন্ত তিনি বার্সায় আসার পর থেকে দলটি মিড টেবিলে থাকতেও হিমশিম খেয়েছে। গত মৌসুমে মার্সেলিনোর অধীনে বিলবাও ৮ম হয়ে লিগ শেষ করে, যা লিগে গত ৫ বছরে দলটির সেরা অবস্থান ছিল। তবে ভক্ত-সমর্থকরা এর চেয়েও বেশি কিছু চান। চাওয়া উচিতও।
গোলকিপার হিসেবে তাদের রয়েছে স্পেন জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ উনাই সিমন। রক্ষণে থাকা ইয়েরে আলভারেজ, অস্কার ডে মার্কস ও মিকেল বালেনজিয়াগা দের সামর্থ রয়েছে লা লিগার সেরা রক্ষণগুলোর একটিতে পরিণত হওয়ার। আক্রমণভাগে দিনদিন পরিণত হচ্ছেন ২২ বছর বয়সী ওইহান স্যানকেট। এছাড়া, উনাই ভেনকেডর, নিকো উইলিয়ামস, ওইয়ের জারাগা, মিকেল ভেসগা, অ্যালেক্স বেরেনগুয়ের, ইউরি বারচিচে, ইনিয়ো লেকউই এবং মিডফিল্ডে গত মৌসুমে পুনরুত্থান ঘটা ইকার মুনিয়াইন দের থেকে সেরাটা বের করে আনার সামর্থ রয়েছে ভালভার্দের, তার পূর্বসূরী মার্সেলিনো যেটা পারেননি।
ভালভার্দের একটি গুণ তিনি নিপাট ভদ্রলোক, তার ভেতর বিন্দুমাত্র অহংকার নেই। বর্তমানে বিলবাওয়ের সবাইকে একত্রিত করার জন্য এরকম ব্যক্তিত্বের কোচই দরকার।
এমন না যে বার্সার কোচের পদ ছাড়ার পর তিনি আর কোনো বড় ক্লাব থেকে কোচ হওয়ার প্রস্তাব পাননি। পেয়েছিলেন, কিন্ত সেগুলো তিনি নাকচ করে দেন। হয় সেগুলো তাকে রোমাঞ্চিত করেনি, নাহয় সেগুলো তার কাছে সঠিক চাকরি মনে হয়নি। তবে, যখন বিলবাও তাকে ডেকেছে তখন সেই আবেদন তিনি নাকচ করেন কীভাবে? কারণ ক্লাবটি ও তার মধ্যকার সম্পর্কটা যে অনেক গভীর। তাই, বিলবাওয়ের সমর্থকরা আরেকবার ভালভার্দের উপর আস্থা রেখে আশায় বুক বাঁধতেই পারেন।