১৯ আগস্ট, ২০০৭; প্রিমিয়ার লিগে অ্যানফিল্ডে লিভারপুল বনাম চেলসির প্রবল উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচ চলছে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে রেকর্ড পরিমাণ ট্রান্সফার ফি’র বিনিময়ে কিছুদিন আগে লিভারপুলে যোগ দিয়েছেন নতুন একজন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। এ ম্যাচটি অ্যানফিল্ডে তার প্রথম ম্যাচ হলেও লিভারপুলের হয়ে আগে মাত্র ২টি ম্যাচ তিনি খেলেছেন। কোনো গোল অবশ্য পাননি।
অলরেড সমর্থকেরা জানেন, নতুন কেনা সোনালি চুলের এ খেলোয়াড়ের প্রতিভার কমতি নেই, হয়ত প্রিমিয়ার লিগের রাফ এন্ড টাফ ফুটবলের সাথে খাপ খাওয়াতে তার কিছুটা সময় লাগবে। লিভারপুল বনাম চেলসি ম্যাচের তখন মাত্র ১৫ মিনিট পার হয়েছে। মধ্যমাঠ থেকে স্টিফেন জেরার্ড পাস দিলেন নতুন আসা স্ট্রাইকারকে। বল রিসিভ করেই ডিফেন্ডার তাল বেন হাইমকে ফাঁকি দিয়ে দুর্নিবার গতিতে ছুট লাগালেন গোলবারের দিকে। ঠাণ্ডা মাথার নিচু শটে গোল করে পিটার চেককে পরাস্ত করে থামিয়ে দিলেন তাকে নিয়ে সকল গুঞ্জন।
কী অসাধারণভাবে শুরু করলেন লিভারপুলের হয়ে তার নতুন যাত্রা! চোখে স্বপ্ন, অসাধারণ প্রতিভাধর সোনালি চুলের সেই ২৩ বছর বয়সী বালকের নাম ফার্নান্দো জোসে তোরেস সানজ, সমর্থকদের ভালোবাসার “এল নিনো”।
ফার্নান্দো তোরেসের জন্ম ১৯৮৪ সালের ২০ মার্চ, স্পেনের ফুয়েনেলব্রাদা শহরে। ফুটবলের হাতেখড়ি মাত্র পাঁচ বছর বয়সে। তার ফুটবলার হয়ে ওঠার পেছনের গল্প আর সকল খেলোয়াড়দের গল্পের মতো না। কোন খেলোয়াড় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয়, ফুটবলকে ভালোবাসতে শুরু করেছেন জাপানি ফুটবল সম্পর্কিত এক কার্টুন দেখে। অবশ্য তার বাবা-মা চাইতেন তোরেস ফুটবল খেলুক।
তার বড় ভাই ফুটবলের সংস্পর্শে আগে থেকেই ছিলেন, তিনি খেলতেন গোলরক্ষক হিসেবে। বড় ভাইকে দেখে তারও গোলকিপার হবার সাধ জাগে। বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার তাই খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন গোল করে নয়, গোল প্রতিরোধ করে। গোলরক্ষক হয়ে খেলা শুরু করার পর একবার গোল ঠেকাতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত মুখের কয়েকটি দাঁত হারিয়ে বসেন। দাঁত হারিয়ে তোরেস এতোটাই মেজাজ হারিয়ে বসলেন যে, সিদ্ধান্ত নিলেন খেলবেন না আর গোলরক্ষক হিসেবে। তাহলে কোন পজিশনে খেলবেন তিনি? নতুন সিদ্ধান্ত নিলেন, খেলবেন স্ট্রাইকার পজিশনে।
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ অধ্যায়
স্ট্রাইকার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার পর বিভিন্ন অপেশাদার দলে ভালোরকম গোল পাচ্ছিলেন তিনি। নিয়মিত গোল করার ফলে নজর কেড়ে নিতে সক্ষম হন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের স্কাউটের। সেখানেও নিয়মিত গোলধারা বজায় রাখেন। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে তিনি ছিলেন দীর্ঘ ১২ বছর। নিয়মিত ভালো পারফর্মেন্সের সুবাদে মাত্র ১৯ বছর বয়সে সৌভাগ্য হয়েছিলো অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের আর্মব্যান্ড ধারণের। মূলদলে ডাক খুব দ্রুত পেলেও ইনজুরির কারণে তিনি শুরুতেই মাঠে নামতে পারেননি। ২০০০-০১ সিজনে তিনি পুরোপুরিভাবে দলে যোগ দিতে সক্ষম হন।
২১ মে, ২০০১ সালে ভিসেন্তে কালদেরন স্টেডিয়ামে লেগানেসের বিপক্ষে প্রথম অভিষেক হয় তার। লা লিগাতে প্রথম গোলের দেখা পান এক সপ্তাহ পর। কিন্তু সেসব ছিলো সেকেন্ড ডিভিশনে। পরের বছর লা লিগাতে অ্যাটলেটিকো ফিরে আসলেও তোরেস সেভাবে ভালো পারফর্মেন্স করতে পারেন নি। পরের সিজনে বেশ উন্নতি করেন তোরেস। যার ফলে ২০০২-০৩ সিজনে ২৯ ম্যাচে ১৩ গোল করা তোরেস নজরে পড়ে যান চেলসি সভাপতি আব্রাহামোভিচের। তবে চেলসির সেসব গল্প যথা সময়ে বলা হবে।
এভাবে প্রতি সিজনে নজরকাড়া পারফর্মেন্সে যেমন চেলসির নজরে তোরেসকে ফেলে দেয়, তেমনি এনে দেয় ২০০৬ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে ১৭৪ ম্যাচে ৭৫ গোল করেছেন তিনি। ২০০৭ সালে লিভারপুল থেকে ডাক আসলে তা তোরেস উপেক্ষা করতে পারেননি। ২০০৫ সালে রাফায়েল বেনিতেজ তখন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন জিতে নিজেকে সেরা কোচের কাতারে নিয়ে গেছেন। স্বদেশী প্লেয়ার তোরেসকে আনতে তিনি ছিলেন খুবই আগ্রহী, বলতে গেলে সেসময় তিনি কোমর বেঁধেই নেমেছিলেন।
ফার্নান্দো তোরেসকে আনতে রাফায়েল বেনিতেজ লুইস গার্সিয়াকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে পাঠান, তেমনি জিব্রেল সিসে ও ক্রেইগ বেলামিকে বিক্রি করে দেন তোরেসকে দলে জায়গা করে দিতে। তোরেসকে লিভারপুল কিনলো ২৭ মিলিয়ন ইউরোতে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদও প্রস্তুত ছিলো। তোরেসের বিকল্প হিসেবে তারা দলে ভেড়ালো ডিয়েগো ফোরলানকে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাথে ১২ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে তোরেস ইংল্যান্ডে আসলেন লিভারপুলের প্রথম পছন্দের স্টাইকার হিসেবে। অ্যাটলেটিকোর সাথে তোরেসের প্রথম সম্পর্কের গল্প এখানেই শেষ।
লিভারপুল অধ্যায়
একটা সময় ধারণা করা হতো, ইংল্যান্ডের বাইরে কোনো খেলোয়াড় ইংল্যান্ডের গতি ও শক্তির ফুটবলের সাথে সঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারবে না। এ ধারণা পাল্টে দিয়েছিলেন আর্সেন ওয়েঙ্গার। তিনি যেমন রাফ এন্ড টাফ ফুটবলের ধারা পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, তেমনি প্রমাণ করেছিলেন ইংল্যান্ডের ফুটবলের সাথে বাইরের খেলোয়াড়ও ঠিকভাবে মানিয়ে নিতে সক্ষম। পরবর্তীতে ক্লদ মেকেলেলে, দিদিয়ে দ্রগবা, লুইস সুয়ারেজ, সের্হিও আগুয়েরো, রবিন ভ্যান পার্সি বা মোহাম্মদ সালাহ তা প্রমাণ করেন। অবশ্যই এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য আরেকটি নাম ফার্নান্দো তোরেস।
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে থাকাকালীন তোরেস কখনো এক সিজনে ২০ গোলের বেশি গোল কখনো করেননি। অথচ ইংল্যান্ডে এসে অলরেডদের হয়ে প্রথম সিজনে করেন রেকর্ড ৩৩ গোল, যা আগে কোনো বিদেশি খেলোয়াড় ইংল্যান্ডে এসে করতে পারেনি। তোরেস লিভারপুলের হয়ে প্রথম গোল পান চেলসির বিপক্ষে। ভাগ্যবিধাতার কী লীলাখেলা, লিভারপুলের আগে যে চেলসি তাকে পাবার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছে, ফার্নান্দো তোরেস প্রিমিয়ার লিগে তার প্রথম গোলের উল্লাস করেন তাদের বিপরীতে গোল করে।
ফুটবলে যদি “নন-ননসেন্স প্লেয়ার” নামে কোনো খেলোয়াড়কে আখ্যায়িত করা যায়, ফার্নান্দো তোরেস তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। লিভারপুলে গোল করার সহজ একটি সুযোগ পেয়েও তোরেস কাজে লাগাতে পারেননি, সেটা কখনো হয়নি। যার দরুন লিভারপুল সমর্থকেরা “He gets the ball and scores again” নামক একটি জনপ্রিয় গান সবসময় গাইত।
অসামান্য ড্রিবল করার সামর্থ্য তার ছিলো না, চমকে দেবার মতো শারীরিক সক্ষমতাও তার ছিলো না। তবে মোক্ষম সময়ে সঠিক স্থানে চলে যাবার মতো দক্ষতা তার ছিলো, যে কারণে তিনি পেয়েছিলেন সেরা স্ট্রাইকারের খেতাব। দারুণ সেন্স অফ হিউমার আর প্রবল গতিতে দৌড়ানোর দক্ষতার কারণে স্টিফেন জেরার্ডের সাথে তোরেসের বনিবনা হতো দারুণ।
বর্তমান ফুটবলে স্ট্রাইকারদের কড়া মার্কিংয়ে আটকে রাখার কৌশল খুব বেশি ব্যবহার হয়। ব্যতিক্রম ছিলেন তোরেস। মার্কার ডিফেন্ডারদের নাজেহাল বানিয়ে ছাড়তেন তুখোড় গতিতে দৌড়াদৌড়ি করে। তাকে বাক্সবন্দী করার কৌশল তেমন জানা ছিলো না কোনো কোচের।
এ জুটিকে থামাতে হিমশিম খেতে হয়েছে নেমানিয়া ভিদিচ বা ফ্যাবিও ক্যানাভারোর মতো সেন্ট্রাল-ব্যাক ডিফেন্ডাররা। ওল্ড ট্রাফোর্ডে নেমানিয়া ভিদিচ এই তোরেসকে আটকাতে গিয়ে একবার খেলেন লাল কার্ড। তোরেসের জোড়া গোলে অলরেডরা জিতলো ০-৪ গোলে। চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদকে নাকানিচুবানি খাইয়ে আসলো লিভারপুল। এরকম বড় দলের বিপক্ষে বড় জয়ের অন্যতম হাতিয়ার ছিলো জেরার্ড আর তোরেস। কোনো কোচ মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও ভেবে বের করতে পারেননি কিভাবে মাঝমাঠে থাকা জেরার্ড আর প্রতিপক্ষের ডিবক্সে থাকা তোরেসের টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ বন্ধ করা যায়।
ফার্নান্দো তোরেস অ্যানফিল্ডে রাজার হালে তিন বছর রাজত্ব করেছেন। তবে রাজার রাজত্বেও সমস্যা হানা দেয়। লিভারপুল থাকাকালীন অনেকটা সময় তাকে লড়তে হয়েছে ইনজুরির সাথে। বেঞ্চে বসে থেকে তিনি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন, তেমনি ছিলো শিরোপা না জেতার হতাশা। অলরেড সমর্থকদের সকল ভালোবাসা উপেক্ষা করে নতুন প্রত্যাশায় তোরেস পাড়ি জমান চেলসিতে। দীর্ঘ ৮ বছরের প্রচেষ্টার পর চেলসি রেকর্ড পরিমাণ ট্রান্সফার ফি দিয়ে তাকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়।
চেলসি অধ্যায়
ফ্ল্যাশব্যাক করে ২০০২-০৩ সালে ফিরে যাওয়া যাক। তোরেস তখন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে দারুণ একটি মৌসুম পার করছেন। চেলসির মালিকানা তখন কিনে নিয়েছে এক রাশিয়ান ধনকুবের, নাম রোমান আব্রামোভিচ। তিনি এসেই কাঁড়িকাঁড়ি অর্থ ব্যবহার করে চেলসি দল ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করলেন। আরিয়েন রোবেন, ক্লদ মেকেলেলে, পিটার চেক, দিদিয়ে দ্রগবা, গ্লেন জনসনের পাশাপাশি স্পেন মাতানো স্প্যানিশ স্টাইকার ফার্নান্দো তোরেসও তার নজরে পড়েছিলো।
তোরেসকে পেতে আব্রামোভিচ সরাসরি ২৮ মিলিয়ন পাউন্ডের বিরাট অঙ্কের প্রস্তাব দিলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ বোর্ডকে। কিন্তু সেবার অ্যাটলেটিকো তাদের সেরা রত্নটি বিক্রি করে দিতে রাজি ছিলো না বলে লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। তোরেসকে না পেয়ে সেবার আব্রামোভিচ সেবার কেনেন হার্নান ক্রেসপোকে। ২০০৬ সালে আবারো তোরেসকে নিতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি। সেবারও খালি হাতে তাকে ফিরতে হয়। তোরেস তো আসলেনই না, উল্টো পরের বছর তাদের প্রতিপক্ষ দল লিভারপুলে নাম লেখালেন।
লিভারপুলে থাকতে তিনি ছিলেন বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন। নিজের ক্যারিয়ারকে আরো উজ্জ্বল করে শিরোপা জেতার আশায় চেলসিতে এসেছিলেন তিনি। রেকর্ড পরিমাণ ট্রান্সফার ফি দিয়ে তোরেস চেলসিতে এসে যেভাবে নিজের পতন দেখলেন তা যেমন তিনি আশা করেননি, তেমন দ্রুততর পতনের পর পুনরায় উত্থানও তার ক্যারিয়ারে আর হয়নি।
চেলসির ট্যাকটিসের সাথে মানিয়ে নিতে পারলেন না। ল্যাম্পার্ড বা দ্রগবাদের সাথে তার বনিবনা হলো না। চেলসিতে অনেক প্রতিভাবান মুখ থাকলেও কেউ হতে পারলো না তোরেসের স্টিফেন জেরার্ড। লিভারপুলে থাকতে যে স্ট্রাইকারকে বিভীষিকা বলা হতো, ডিবক্সে কোনো সহজ গোলের সুযোগ মিস করা যার কাছে অসম্ভব ছিলো, সেই তোরেস চেলসিতে হাস্যকর সব গোল মিস করতে লাগলেন। ইনজুরির আঘাত তো ছিলোই, চেলসির হয়ে তোরেস যেন নিজের ছায়ার ভেতর থেকে বের হতে পারলেন না।
চার বছর চেলসিতে ছিলেন তোরেস। ১১০ ম্যাচে মাত্র ২০ গোলই বলে দেয় তোরেস কিভাবে তার সেরা স্থান হারিয়েছেন। লিভারপুল ছেড়েছিলেন শিরোপা জেতার জন্য। শিরোপা তিনি চেলসির হয়ে ঠিকই জিতেছিলেন। কিন্তু সেসবের পেছনে যে তোরেসের কোনো প্রত্যক্ষ অবদান ছিলো না।
ক্যাম্প ন্যু-তে বার্সেলোনাকে স্তব্ধ করে দেওয়া সেই ম্যাচের স্মৃতি বাদে আর কোন সুখস্মৃতি তোরেস খুঁজে পাবেন? চেলসির হতাশাকাব্যের পর মিলান থেকে লোনে পুনরায় শৈশবের ক্লাবে ফেরা এবং এক সিজন পরে অ্যাটলেটিকোতে স্থায়ী হওয়ার পরে শেষ মুহূর্তে তিনি কিছুটা ভালো সময় কাটিয়েছিলেন। সেলেসাও জাদুকর রোনালদিনহো গাউচো তার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছিলেন অবহেলার ছলে। তোরেস তা কিন্তু করেন নি, নতুন স্বপ্নের লক্ষ্যেই পাড়ি জমিয়েছিলেন চেলসিতে। তিনি তো জানতেন না তার প্রতিভা ক্ষণজন্মা।
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে গত বছরটা একরকমভাবে কেটে গেলেও চলতি মৌসুমে তোরেসের পারফর্মেন্স ছিলো ভীষণ হতাশাজনক। ৩৪ ম্যাচে মাত্র ৭ গোল করা তোরেস গ্রিজমান, কস্তা, গ্যামেরিওদের ভিড়ে তেমন সুবিধা করতে পারেননি।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, এ মৌসুম শেষেই ক্লাব ছাড়বেন, গন্তব্য অজানা। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দেওয়া, বাতাসে ভেসে আসা বলের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর আর ডিবক্সের বাইরে থেকে আচমকা বুলেট শট ছিলো তোরেসের ট্রেডমার্ক। আচমকা ঝরে না পড়লে হয়তো তিনি বর্তমানে থাকতেন মেসি-রোনালদোর কাতারে, হতে পারতেন তাদের সেরা প্রতিপক্ষ। শুধুমাত্র একটি ক্লাব বদলের সিদ্ধান্তের ফলে উড়তে থাকা তোরেস চোখের পলকে যেন সব হারিয়ে ফেললেন।
অনেকে হয়তো ফার্নান্দো তোরেসকে স্মরণে রাখবে চেলসি ফ্লপ হিসেবে, তবে লিভারপুলে কাটানো তার দুর্দান্ত সময়কে চেলসির ব্যর্থ সময় দিয়ে যে কখনো চাপা দেওয়া যাবে না। লিভারপুল ছেড়ে যাবার কারণে তোরেসকে অনেক লিভারপুল সমর্থক এখনও ঘৃণার চোখে দেখে। ঘৃণা, অভিমান থাকলেও লিভারপুলে তিন বছরের রোমাঞ্চকর তোরেস অধ্যায় ভুলে যাওয়ার সাধ্য কারও আছে?