চ্যাম্পিয়নস লিগ ও কোপা লিবার্তেদোরোস জেতা খেলোয়াড়েরা

দিনকয়েক আগেই সুপারক্লাসিকোতে বোকা জুনিয়র্সকে হারিয়ে চথুর্থবারের মতো ল্যাটিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খ্যাত কোপা লিবার্তেদোরোস জিতলো আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেট। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতোই দক্ষিণ আমেরিকার সেরা ক্লাবগুলো নিয়ে প্রতিবছর এই টুর্নামেন্ট হয়ে আসছে। তাই দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাবগুলোর জন্য কোপা লিবার্তেদোরোসই হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যেমন উয়েফার অধীনে হয়ে থাকে, তেমনি কোপা লিবার্তেদোরোসও অনুষ্ঠিত হয় কনমেবলের অধীনে। তাই এই শিরোপা জয় মানে ক্যারিয়ার মুকুটে আরো একটি পালক যুক্ত হওয়া। তবে কিছু কিছু সৌভাগ্যবান খেলোয়াড় রয়েছেন যারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পাশাপাশি কোপা লিবার্তেদোরোসও জিতেছেন ক্যারিয়ারে। বলাবাহুল্য, তারা সবাই দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশেরই খেলোয়াড়। আরো সঠিকভাবে বললে সবাই ব্রাজিলিয়ান কিংবা আর্জেন্টাইন। আজ আমরা জানবো এমন কিছু খেলোয়াড় সম্পর্কেই

দিদা (ব্রাজিল)

ব্রাজিলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হিসেবে খ্যাত দিদার সুযোগ হয়েছে দুটি শিরোপাই ছুঁয়ে দেখার।

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দিদা খেলেছেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ক্রুজেইরোতে। সেই ক্রুজেইরোর হয়ে ১৯৯৭ সালে জিতেছেন ক্লাব ফুটবলে দক্ষিণ আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক কোপা লিবার্তেদোরোস। দুর্দান্ত গোলকিপিং করা দিদার দিকে চোখ যায় ইউরোপিয়ান বড় ক্লাবগুলোর। সেই সুবাদে ২০০০ সালে ইউরোপে পাড়ি জমান দিদা। যোগ দেন ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে। এসি মিলানের হয়েই দুই দুইটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেন দিদা। ২০০২-০৩ মৌসুমের পর ২০০৬-০৭ মৌসুমেও এই শিরোপা জেতেন তিনি।

দিদা; Image Source: Sky Sports

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম গোলরক্ষক হিসেবে বর্ষসেরা গোলরক্ষকের পুরষ্কার জেতেন দিদা। পাশাপাশি সর্বপ্রথম গোলরক্ষক হিসেবে ব্যালন ডি অরের ছোট তালিকায়ও নাম লেখান।

কাফু (ব্রাজিল)

২০০২ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কাফুও আছেন এই তালিকায়। ১৯৮৯ সালে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করা কাফুর প্রথম ক্লাব ছিলো সাও পাওলো। ছয় বছরে ৯৫টি ম্যাচ খেলে এই ব্রাজিলিয়ান ক্লাবের হয়ে কাফু গোল করেছেন ১১টি। সাও পাওলোর হয়েই টানা দুই বছরে দুটি কোপা লিবার্তেদোরোস জিতেন কাফু। ১৯৯২ সালের পর ১৯৯৩ সালেও কোপা লিবার্তেদোরোস ঘরে তোলে সাও পাওলো। ব্রাজিলিয়ান লিগে দুর্দান্ত পারফর্ম করায় ১৯৯৪ সালে কাফুকে দক্ষিণ আমেরিকার বর্ষসেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

কাফু; Image Source : The Times

অন্যদিকে ইউরোপে পাড়ি জমানোর পর ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ দিদার মতোই খেলেছেন এসি মিলানে। সেই এসি মিলানের হয়েই ২০০৬-০৭ মৌসুমে জেতেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।

জুয়ান পাবলো সরিন (আর্জেন্টিনা)

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও কোপা লিবার্তেদোরোস জয়ের সাফল্য পেয়ে যান সোরিন। তা-ও আবার একই বছরে।

লেফট ব্যাক এবং লেফট মিড দুই জায়গাতেই স্বাচ্ছন্দ্যে খেলা জুয়ান পাবলো সরিন ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেটের হয়ে। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে কোপা লিবার্তেদোরোস শিরোপা ঘরে তোলে রিভার প্লেট। আর সেই দলের একজন সদস্য ছিলেন সরিন।

জুয়ান পাবলো সরিন; Image Source : Sky Sports

শিরোপা জেতার কিছুদিনের মধ্যেই রিভার প্লেট ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি জমান সরিন। যোগ দেন ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসে। এই জুভেন্টাসের হয়েই সেই বছরে জেতেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। আর তাতে একই বছরে বগলদাবা করেন দুটি সম্মানজনক শিরোপার মেডেল।

রোকো জুনিয়র (ব্রাজিল)

দিদা ও কাফুর মতোই ইউরোপিয়ান জায়ান্ট এসি মিলানের হয়ে খেলেছেন এই ব্রাজিলিয়ান সেন্টার ব্যাক। রক্ষণভাগে খেলা রোকো জুনিয়র খেলতে পারতেন সেন্টার ব্যাক ও ফুল ব্যাক দুই পজিশনেই। ২০০২-০৩ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা এসি মিলান দলের সদস্য ছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান।

রোকো জুনিয়র; Image Source: The False Nine

উয়েফা জেতার আগেই অবশ্য কোপা লিবার্তেদোরোস জিতেছেন তিনি। ক্যারিয়ারে একটা বড় সময় রোকো জুনিয়র কাটিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমেইরাসে। পালমেইরাসের হয়ে খেলেছেন ১৯২টি ম্যাচ। তবে ক্লাবটির হয়ে রোকো জুনিয়রের সবচেয়ে বড় সুখস্মৃতি ১৯৯৯ সালে কোপা লিবার্তোদোরোস জয়।

কার্লোস তেভেজ (আর্জেন্টিনা)

দিনকয়েক আগেই রিভার প্লেটের বিপক্ষে কোপা লিবার্তোদোরোস ফাইনালে হেরে যায় আর্জেন্টাইন ক্লাব বোকা জুনিয়র্স। এই ম্যাচটিতে খেলেছেন কার্লোস তেভেজও। তবে তিনি ছিলেন বিজেতা দলের। ক্যারিয়ারে অবশ্য কোপা লিবার্তেদোরোস শিরোপা জেতা হয়ে গেছে তেভেজের। তা-ও আবার এই বোকা জুনিয়র্সের হয়েই।

কার্লোস তেভেজ; Image Source: Mirror

বোকা জুনিয়র্সের একাডেমিতেই ফুটবলের হাতেখড়ি কার্লোস তেভেজের। ২০০১ সালে সেখান থেকে মূল দলে জায়গা পাওয়ার ২ বছরের মাথায় ২০০৩ সালে জেতেন কোপা লিবার্তোদোরোস শিরোপা।

দুর্দান্ত খেলা তেভেজকে কয়েক বছরের মাথায় পাড়ি জমাতে হয় ইউরোপে। ওয়েস্ট হামের হয়ে খেলে তেভেজ চলে আসেন ওল্ড ট্রাফোর্ডে। ফার্গুসনের অধীনে তেভেজ রোনালোদো এবং রুনির সাথে গড়ে তোলেন ভয়ঙ্কর ত্রয়ী। তাদের হাত ধরেই ২০০৭-০৮ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ঘরে তোলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

ওয়াল্টার স্যামুয়েল (আর্জেন্টিনা)

বোকা জুনিয়র্সের হয়ে খেলার সময়ই সবার নজর কাড়েন ওয়াল্টার স্যামুয়েল। নিজের প্রজন্মের কয়েকজন সেরা রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন ছিলেন এই আর্জেন্টাইন।

আর্জেন্টাইন ক্লাব নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও কয়েক বছরের মাথায় স্যামুয়েল পাড়ি জমান বোকা জুনিয়র্সে। বোকা জুনিয়র্সের হয়ে নিজের শেষ বছরে ২০০০ সালে কোপা লিবার্তেদোরোস জিতেন তিনি। ঐ বছরেই পাড়ি জমান রোমাতে। সেখান থেকে রিয়াল মাদ্রিদে খেললেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জেতেন ইন্টার মিলানের হয়ে। ২০০৯-১০ মৌসুমে ট্রেবল জেতা ইন্টার মিলান দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ওয়াল্টার স্যামুয়েল।

ওয়াল্টার স্যামুয়েল; Image Source: big soccer

রোনালদিনহো (ব্রাজিল)

ফুটবল মাঠের জাদুকর হিসেবে খ্যাত রোনালদিনহো নিজের ক্যারিয়ারে জিতেছেন দুটি শিরোপাই। তবে অন্যদের মতো আগে কোপা লিবার্তেদোরোস না জিতে আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছেন রোনালদিনহো।

২০০৫-০৬ মৌসুমে বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের মূল কারিগর ছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়। নিজের ক্যারিশমায় সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোর পাশাপাশি ব্যালন ডি অর এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কারও জিতে নেন তিনি। বার্সেলোনার পরে ইউরোপের আরও কিছু ক্লাবে খেলে শেষে তিনি পাড়ি জমান ব্রাজিলে।

রোনালদিনহো; Image Source: Title Magazine

সেখানে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব এটলেটিকো মিনেইরোতে যোগ দেন রোনালদিনহো। অবশেষে ২০১৩ সালে এটলেটিকো মিনেইরোর হয়ে কোপা লিবার্তেদোরোসও জিতে নেন এই ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা।

নেইমার (ব্রাজিল)

ক্যারিয়ার শুরু থেকেই ব্রাজিলিয়ান পোস্টার বয়ে পরিণত হওয়া নেইমারও ক্যারিয়ারে জিতেছেন এই দুটি শিরোপা। ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা নেইমার ক্যারিয়ার শুরু থেকেই মাঠে ছিলেন দুর্দান্ত। সান্তোসের হয়ে ১০২ ম্যাচ খেলে ৫৪ গোল করেন তিনি। পাশাপাশি ২০১১ সালে সান্তোসকে জেতান কোপা লিবার্তেদোরোস।

নেইমার; Image Source: Goal.com

পরবর্তীতে সান্তোস ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি জমানোর সময় বার্সেলোনাকে বেছে নেন নেইমার। বার্সেলোনায় মেসি ও সুয়ারেজের সাথে তিনি গড়ে তোলেন ভয়ঙ্কর ত্রয়ী। আর এই তিনজনের নৈপূণ্যেই ২০১৪-১৫ মৌসুমে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ঘরে তোলে বার্সেলোনা।

দানিলো (ব্রাজিল)

উঠতি প্রতিভাবান তারকা হিসেবে নিজেকে প্রথমদিকে চেনালোও ইউরোপে এসে খেই হারিয়ে ফেলেন এই ব্রাজিলিয়ান রাইট ব্যাক। তবে দানিলোও অন্যান্যদের মতো জিতেছেন দুটি শিরোপাই।

দানিলো; Image Source: Daily Express

২০১১ সালে সান্তোসের কোপা লিবার্তেদোরোস জয়ে নেইমারের সাথে দানিলোও ছিলেন সেই দলের সদস্য। ২০১৫ সালে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার জন্য ইউরোপে পাড়ি জমান দানিলো। সেখান টানা দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বাদ পান তিনি। ২০১৫-১৬ এর পর ২০১৬-১৭ মৌসুমেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেন দানিলো। রিয়াল মাদ্রিদ টানা তিনবার এই শিরোপা জিতলেও শেষবারে রিয়াল মাদ্রিদে ছিলেন না তিনি। ২০১৭ সালে দানিলো যোগ দেন পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটিতে।

Feature Image : beIN Sports

Reference : References are hyperlinked in the article.

Description : This article is about the footballer who won both champions league and copa libertadoros.

Related Articles

Exit mobile version