ফুটবলে গত দশকের সাফল্যমণ্ডিত কিছু ফ্রি ট্রান্সফার

নেইমারের বার্সেলোনা থেকে পিএসজি দলবদল। এরপরই ফুটবলের দলবদলের বাজারে একটা শোরগোল পরে গেল। খেলোয়াড়দের কেনাবেচার দর ঐ যে বাড়ল, এরপর কমার কোনো নামগন্ধ নেই। পিএসজি ২০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি খরচ করে কিনেছে এমবাপ্পেকে, যার মূল্য নেইমারের দামের কাছাকাছি। নেইমারের বিদায়ের পর বার্সা এনেছে দেমবেলে, কৌতিনহো ও গ্রিজমানকে, যাদের ট্রান্সফার ফি ১০০ মিলিয়ন ইউরোর কম ছিল না। বার্সেলোনার প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ আবার এক কাঠি সরেস। এক মৌসুমের ঝলক দেখেই ফেলিক্সের মতো তরুণকে কিনেছে প্রায় ১২০ মিলিয়ন অর্থ দিয়ে। 

এইরকম দলবদলের বাজারে বিনামূল্যে খেলোয়াড় পাবার হার বেশ কম। কিন্তু এরপরও এমন কিছু ফ্রি ট্রান্সফার হয়েছে, এবং তারা ক্লাবকে যেভাবে সাফল্য এনে দিয়েছে, তা একজন ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি অর্থ দিয়ে কেনা খেলোয়াড় এনে দিতে পারবে কি না, ঘোর সন্দেহ রয়েছে। আজ সেই গল্পই বলব।

স্লাতান ইব্রাহিমোভিচ

ইব্রাহিমোভিচ একজন দুর্দান্ত ফুটবল ভবঘুরের উদাহরণ। সুইডিশ এ স্ট্রাইকার কোথাও থিতু না হয়ে স্পেন থেকে ফ্রান্স, ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ড এরপর আমেরিকা হয়ে আবার ইতালি ঘুরেই চলছেন। বার্সেলোনা থেকে মিলানে এক বছর কাটানোর পর ২০১২ সালে তাকে কিনে নেয় পিএসজি। পিএসজির ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় নিজের নাম বসিয়ে, সম্ভাব্য সকল শিরোপা জিতে ২০১৬ সালে তিনি পাড়ি দেন ইংল্যান্ডে। বিনামূল্যে তাকে পেয়ে যায় তৎকালীন জোসে মরিনহোর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

বিনামুল্যে ইব্রাহিমোভিচকে কিনেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ©Matthew Ashton – AMA/Getty Images

ফ্রি ট্রান্সফারে আসা ইব্রাহিমোভিচের প্রতি সেভাবে আগ্রহ ছিল না। একজন ত্রিশোর্ধ্ব স্ট্রাইকার প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলের সাথে এসে হুট করে কত দ্রুতই বা মানিয়ে নিতে পারেন? কিন্তু ইব্রাহিমোভিচ চাইলে তো সম্ভবকে অসম্ভব করতে পারেন। সেই তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে তিনি প্রথম মৌসুমে মোট ১৭ গোল করলেন। নিয়মিতভাবে ঐ এক মৌসুমই তিনি ওল্ড ট্র‍্যাফোর্ডে ছিলেন। এরপর এমএলএস লিগের ক্লাব এলএ গ্যালাক্সিতে যোগ দেন তিনি। সেটাও ছিল ফ্রি ট্রান্সফার।

এলএ গ্যালাক্সিতে গিয়ে ইব্রাহিমোভিচ যেন নতুন শক্তিতে জেগে উঠলেন। ২০১৮ সালে ২৭ ম্যাচে ২২ গোল, গত বছর ৩১ ম্যাচে ৩১ গোল। তার গোলবন্যা যেন থামেই না। মূলত এমএলএস লিগে বর্তমানে বর্ষীয়ান কোন খেলোয়াড় যাওয়ার মানে, তিনি তার ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চলেছেন। কিন্তু ৩৮ বছর বয়সী ইব্রাহিমোভিচ যেন নতুন কিছু ভাবছেন। টানা দুই মৌসুম এমএলএস লিগ মাতিয়ে তিনি আবার ফিরেছেন ইতালিতে তার প্রাক্তন ক্লাবে, এসি মিলানে। সেখানে এসে তার দ্বিতীয় অভিষেকের গোলও পাওয়া হয়ে গেছে। 

এ দশকে মোট চারবার ক্লাব বদল করেছেন, যার ভেতর তিনটিই ফ্রি ট্রান্সফার ছিল। প্রবীণ বয়সে গিয়েও গোল করাকে ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলেছেন। একমাত্র স্লাতান ইব্রাহিমোভিচ বলেই হয়তো সম্ভব।

দানি আলভেজ 

ফুটবল ছিল তার নেশা, আর বার্সেলোনা ছিল তার ঘরবাড়ি। ব্রাজিল থেকে সোজা স্পেনে এসে ক্যারিয়ারের সব থেকে সাফল্যমণ্ডিত সময় পার করেছেন বার্সেলোনার হয়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা, কোপা দেল রে – এমন কোনো শিরোপা নেই, যা তিনি কাতালানদের হয়ে জেতেননি। 

ক্যারিয়ারজুড়ে ৪০টির বেশি শিরোপা জিতেছেন আলভেজ ©Matthias Hangst/Bongarts/Getty Images

২০১৫ সালে বার্সার হয়ে ট্রেবল জিতে তিনি বার্সা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সবাই ধরে নিয়েছিল, আলভেজের ক্যারিয়ারের শেষ এখানেই। কিন্তু তিনি অবাক করে ফ্রি ট্রান্সফারে যোগ দিলেন পিএসজিতে। সেখানে শিরোপা জিতে মাত্র এক বছর পর পাড়ি জমান ইতালিতে, জুভেন্টাসে। পিএসজি থেকে জুভেন্টাসও ছিল বিনামূল্যে দলবদল। বার্সেলোনা থেকে জুভেন্টাস ও পিএসজিতে যাবার পর কোনো ক্লাব তাকে অবমূল্যায়ন করেনি। প্রত্যেক দলের মূল একাদশে নিয়মিতই তাকে দেখা যেত। এমনকি জুভেন্টাসের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল খেলার পেছনেও তার বিশেষ কৃতিত্ব ছিল। 

বর্তমানে ৩৬ বছর বয়সেও তিনি থমকে যাননি। জুভেন্টাসে ছোট্ট অধ্যায় শেষে তিনি আবার ফিরে যান তার জন্মস্থান ব্রাজিলের সাও পাওলো ক্লাবে। বর্তমানে সেখানেই  নতুন উদ্যমে খেলা শুরু করে দিয়েছেন। ক্যারিয়ারজুড়ে ৪০টির বেশি শিরোপা জিতেছেন তিনি। শুধু বার্সেলোনা বা ব্রাজিলের ইতিহাসে নয়, বিশ্বেরই অন্যতম সেরা রাইটব্যাক হিসেবে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে আছে।

স্যান্তি ক্যাজোরলা 

স্পেন যখন প্রতিভাতে পরিপূর্ণ একটি দল নিয়ে বিশ্বকাপ-ইউরো জয় করে চলছেন, সে সময়ের অন্যতম উঠতি এক তরুণ ছিলেন স্যান্তি ক্যাজোরলা। ভিলারিয়ালের অ্যাকাডেমিতে ফুটবলের হাতেখড়ি হলেও ‘১১ সালে তাকে কিনে নেয় আরেক স্প্যানিশ ক্লাব মালাগা। মাত্র ১ বছর যেতে না যেতেই তাকে দলে ভেড়ায় আর্সেনাল। আর্সেনালের কোচ তখন আর্সেন ওয়েঙ্গার। তরুণ খেলোয়াড়ের প্রতি এমন যত্নবান কোচ গোটা ইউরোপে দ্বিতীয়টি নেই। তার দলে ক্যাজোরলা যাওয়া মানেই যেন আশীর্বাদ। 

শেষ বয়সেও ভিয়ারিয়ালের মধ্যমাঠের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় তিনি ©Fotopress/Getty Images

কিন্তু তার পতনের শুরু সে সময় থেকেই। আর্সেনালের মূল দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামার সুযোগ হয়েছিল ‘১৩-‘১৪ মৌসুমে। এরপর থেকে একের পর এক ইনজুরির কারণে প্রচণ্ডরকমের অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি । পুরো আর্সেনাল ক্যারিয়ারে ৬৬৪ দিন বা প্রায় দুই বছরই তিনি থেকেছেন মাঠের বাইরে। পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে ১১ বার। তারপরও ক্যাজোরলা ফিরে আসার যুদ্ধ করেই গেছেন। কিন্তু ইনজুরি তাকে পদে পদে পিছিয়ে দিয়েছে। ২০১৬ সালে তাকে সব থেকে ভয়ানক ইনজুরির মুখে পড়তে হয়। ঐ ইনজুরির পর শঙ্কা ছিল যে, তিনি আবার মাঠে নামা তো দূরের কথা, ঠিকভাবে হাঁটতে পারবেন কি না! 

কিন্তু কী এক দৈবশক্তিতে ক্যাজোরলা আবার ফিরলেন ফুটবলের কাছে। যে দলের হয়ে তার মাঠ মাতানোর কথা, সেই গানার্স থেকে বিদায় নিয়ে ফ্রি ট্রান্সফারে যোগ দিলেন শৈশবের ক্লাব ভিলারিয়ালে। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে ক্যাজোরলা মাঠ মাতাচ্ছেন। ফিরে পেয়েছেন সেই পুরনো ফর্ম, জাতীয় দলের পুরনো স্থান। কঠোর অধ্যবসায় আর হাল ছাড়তে না জানা ক্যাজোরলা এখন শেষ বয়সেও ভিলারিয়ালের মধ্যমাঠের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।

মিরান্দা

ডিয়েগো সিমিওনের অধীনে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের এমন দুর্দান্ত উত্থানের পেছনে অন্যতম বড় অবদান ছিল ব্রাজিলিয়ান লেফটব্যাক মিরান্দার। ২০১১ সালে সাও পাওলো থেকে বিনামূল্যে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে যোগ দেন তিনি। এরপর ডিয়েগো গডিনের সাথে ইউরোপের অন্যতম সেরা রক্ষণজুটি তৈরি করেন তিনি। অ্যাটলেটিকোর পোক্ত এ রক্ষণের কারণে তার ২০১৪ সালে স্প্যানিশ লা লিগা জিতেছিল, খেলার সুযোগ পেয়েছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালও।

সাও পাওলো থেকে বিনামূল্যে কিনেছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ©AFP/Getty Image

২০১১ থেকে ২০১৪ এই সময়ে মিরান্দা স্পেনে তার সেরা সময় পার করেছেন। ২০১৪ সালের পর থেকে তার ফর্ম কিছুটা নিম্নগামী হতে থাকে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদও পেয়ে যায় তার যোগ্য উত্তরসূরীকে। তাই মিরান্দা ২০১৬ সালে পাকাপাকিভাবে চলে যান মিলানে। সেখানেও তিনি খেলেছেন গত বছর পর্যন্ত। বর্তমানে ৩৫ বছর বয়সী এ ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার খেলছেন চীনের ক্লাব জিয়াংসু শুনিংয়ের হয়ে।

পল পগবা

পল পগবা ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে বেড়ে ওঠা অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র। কিন্তু সে সময়ে রেড ডেভিলদের মধ্যমাঠে অসংখ্য তারকাদের আনাগোনা। তাই মূল দলে পগবার সুযোগ তেমন হতো না। তার পরিণত ফুটবলার হয়ে ওঠাতে বেশ বিঘ্ন হচ্ছিল। তাই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সিদ্ধান্ত নেয় তাকে বিক্রি করে দেবার, পগবার চাওয়াওঁ তেমনটাই ছিল। ২০১২ সালে পগবা জুভেন্টাস পাড়ি জমান বিনামূল্যে। 

সময়ের সেরা এই মিডফিল্ডারও এখনও রেড ডেভিলদের হয়ে বেশ বিতর্কিত ©GIUSEPPE CACACE/AFP via Getty Images

পগবার প্রতিভার খবর যেন পুরো বিশ্ব জানত, শুধুমাত্র ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়া। ২০১৩ সালে পগবা যখন ‘গোল্ডেন বয়’ পুরস্কার জেতেন, তখন তাদের টনক নড়ে। তবুও তাকে তখনই ফেরত আনা সম্ভব ছিল না। জুভেন্টাসের হয়ে পগবা খেলেন চারটি মৌসুম, যেখানে প্রত্যেকবার জিতেছিলেন সিরি-আ। ২০১৫ সালে তাদের হয়ে খেলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালও।

২০১৬ সালের দিকে রেড ডেভিলদের সুদিন শেষ। মধ্যমাঠের অবস্থা আরও ভয়াবহ। তাই মিডফিল্ডে কিছুটা প্রাণ ফিরিয়ে আনতে তারা সিদ্ধান্ত নেয় পগবাকে কেনার। অ্যাকাডেমিতে গড়ে ওঠা খেলোয়াড়কে বিনামূল্যে বিক্রি করে ২০১৬ সালে আবার তারা কেনে প্রায় ১০৫ মিলিয়ন পরিমাণ ইউরো খরচ করে। যদিও মাঝে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখালেও পগবা তার জুভেন্টাসে থাকাকালীন সময়ের পারফরম্যান্স প্রিমিয়ার লিগে টেনে আনতে পারেননি। তাই সময়ের সেরা এই মিডফিল্ডার এখনও রেড ডেভিলদের হয়ে বেশ বিতর্কিত।

রবার্ট লেভান্ডস্কি

জার্মান ফুটবল লিগে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের কোনো খেলোয়াড় নাম করতে পারলেই কোনো না কোনো এক সময়ে সে বায়ার্ন মিউনিখের দলে চলে আসবে। এ যেন এই দুই জার্মান দলের প্রচ্ছন্ন কোনো এক অলিখিত নিয়ম। এবং হচ্ছেও তাই; লেভান্ডস্কি, ম্যাট হুমেলস, মারিও গোৎজে… কোনো খেলোয়াড়কে বাদ রাখেনি বাভারিয়ানরা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাদের একটা ট্রান্সফার এই দশকের সেরা। লেভান্ডস্কির মতো খুনে স্ট্রাইকার বাভারিয়ানরা পেয়েছিল একদম বিনামূল্যে! 

ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে আসার পরও লেভান্ডডস্কির যেমন গোল-ক্ষুধা কমেনি ©Thorsten Wagner/Bongarts/Getty Images

২০১০ সালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে আসে এ পোলিশ স্ট্রাইকার। তার গোল করার দক্ষতা এড়িয়ে যায়নি বাভারিয়ানদের কাছ থেকে। যেকোনো মূল্যে তাকে পেতে হবে সংকল্প করে তারা ২০১৩ সালেই আগেভাগে চুক্তি করে ফেলে, ২০১৪ সালে ডর্টমুন্ডের সাথে চুক্তি শেষ হবার পর লেভান্ডস্কি যোগ দেবেন বায়ার্ন মিউনিখে।

২০১৪ সালে আসার পর বাভারিয়ানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় লেভান্ডডস্কি। প্রত্যেক মৌসুমে ২০টির বেশি গোল তার থাকবেই। পোলিশ এ স্ট্রাইকার বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে বুন্দেসলিগা জিতেছেন ৫ বার। গোল্ডেন বুটের পুরস্কার জুটেছে ৪ বার। বর্তমানে ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে আসার পরও লেভান্ডস্কির যেমন গোলক্ষুধা কমেনি, বাভারিয়ানদের লেভান্ডস্কি নির্ভরতা আজও অক্ষুণ্ণ। 

আন্দ্রে পিরলো

২০১১ সালে এসি মিলান থেকে আন্দ্রে পিরলো যখন জুভেন্টাস দলে ফ্রি ট্রান্সফারে নাম লেখান, তখন বুফনের বক্তব্য ছিল,

‘যখন আন্দ্রে আমাকে জানিয়েছিল যে, সে আমাদের ক্লাবে যোগ দিতে যাচ্ছে, আমি চূড়ান্ত রকমের বিস্মিত হয়েছিলাম। তার মতো একজন খেলোয়াড় যে দলে যোগ দিতে যাচ্ছে, সেটা ফ্রি ট্রান্সফার হোক আর না হোক, সেটা অবশ্যই শতাব্দীর সেরা ট্রান্সফার হবার কথা।’

জুভেন্টাসের হয়ে পিরলো ©Getty Image

টানা ১০ বছর এসি মিলানে কাটানো পিরলো ৩২ বছর বয়সে যোগ দেন জুভেন্টাসে। সেখানে তিনি ছিলেন ৪ বছর। বর্ষীয়ান এ মিডফিল্ডার তখন সেখানে জুটি বেঁধেছিলেন উঠতি তারকা পগবার সাথে। জুভেন্টাসও টানা সাফল্য পেয়েছিল। টানা চারটি লিগ শিরোপা ও ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল খেলা তো কম কিছু না। ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের পরই  ইতালির এ তারকা ফুটবল থেকে অবসর নেন। কিন্তু এসি মিলান যেমন পিরলোর ১০টি মৌসুম শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্বরণ করে, ৪টি বছরের জন্য জুভেন্টাসের কাছেও তিনি একজন সেরা মিডফিল্ডারের থেকেও বেশি কিছু।

জেমস মিলনার

জেমস মিলনার যখন ফ্রি ট্রান্সফারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে লিভারপুলে এসেছিলেন, তখন সেটা চোখ ধাঁধানোর মতো কোনো গুরুত্বপূর্ণ দলবদল হয়ত ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে মিলনার পরিণত হয়েছেন ক্লপ-বাহিনীর এক অপরিহার্য খেলোয়াড়ে। 

জেমস মিলনার ©liverpoolfc

মিলনার হয়তো সাদিও মানে বা সালাহর মতো কোনো গতিশীল খেলোয়াড় নন। কেভিন ডি ব্রুইন বা ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের মতো মধ্যমাঠে সুন্দর ফুটবল খেলার দক্ষতাও হয়তো নেই তার। কিন্তু এরপরও তিনি ক্লপের একাদশের অন্যতম মুখ। এর প্রধান কারণ, তার বহুমুখী দক্ষতা। ক্লপ মাঠের যেকোনো পজিশনে মিলনারকে ব্যবহার করতে পারেন। লেফট-মিডফিল্ডার বা লেফটব্যাক, অথবা একজন পুরোদস্তুর সেন্ট্রাল-মিডফিল্ডার… কোনো পজিশনেই মিলনার হতাশ করেননি। খুব বেশি ফুটবলের কারুকাজ মিলনার পারেন না বটে, তবে ক্লপের ট্যাকটিক্সে মধ্যমাঠ থেকে কারুকাজের বিশেষ প্রয়োজনও নেই। লং পাস, থ্রু বল ও ক্রস এই তিনটিতে পটু হওয়া মানেই হচ্ছে আক্রমণে থাকা সালাহ ও মানের বলের যোগান, যা মিলনার শুরু থেকেই করে আসছেন।

অ্যাসিস্ট ও পেনাল্টিতে মিলনারের সুনাম আছে। কিন্তু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বিনামূল্যে লিভারপুলে আসলেও তিনি নিজেকে শূন্য থেকে শিখরে তুলেছেন।

জল মাতিপ

শালকে থেকে আসা অপরিচিত এ ডিফেন্ডারকে নিয়ে প্রথমে তেমন হইচই হয়নি। কারণ মাতিপ যখন লিভারপুলে আসেন, তখন তাদের রক্ষণের করুণ অবস্থা। প্রয়োজন ছিল একজন সুপারস্টার ডিফেন্ডারের। কিন্তু ক্লাব বিনামূল্যে দলে ভেড়াল একজন সাধারণ মানের ডিফেন্ডারকে। কিন্তু এরপর যখন ভার্জিল ভ্যান ডাইককে রেকর্ড পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে অ্যানফিল্ডে উড়িয়ে আনে অলরেডরা, তখন মাতিপ পরিণত হলেন ভ্যান ডাইকের যোগ্য সঙ্গী হিসেবে। যদিও ভ্যান ডাইকের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের নিচে মাতিপের কৃতিত্ব চাপা পড়ে গেছে। 

ভ্যান ডাইকের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের নিচে মাতিপের কৃতিত্ব চাপা পড়ে গেছে ©liverpoolfc

গত বছর চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে অন্যতম বড় ভুমিকা ছিল রক্ষণের। অথচ রক্ষণ সমস্যাই সবসময় ভুগিয়েছে লিভারপুলকে। রক্ষণে ভ্যান ডাইক সবসময় একটু বেশি ‘ফ্রি রোল’-এ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সেখানে মাতিপ একদম মাটি কামড়ে রক্ষণে পড়ে থাকার মতো ডিফেন্ডার। প্রতিপক্ষ বল নিয়ে তার ডি-বক্সে ঢুকলে তা ঠেকানোই তার একমাত্র কাজ। আর ‘ক্লিয়ারেন্স’-এর এই কাজটা খুব দারুণভাবে পারেন তিনি। এজন্য গত বছরের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মোট ১৪ বার প্রতিপক্ষকে গোল সুযোগ তৈরিতে বাঁধা দিয়েছেন তিনি!

যদিও কাউন্টার অ্যাটাকে মাতিপের সমস্যা আছে, ফর্মে না থাকলে অতিরিক্ত বাজে খেলেন, তবুও বিনামূল্যে দলে আসা একজন ডিফেন্ডার যখন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে ভূমিকা রাখেন, তখন তার কাছ থেকে আর বেশি কী আশা করা যেতে পারে?

This article is in Bangla language. It is about some popular and impressive free player transfer in the last decade.

Feature Image Source: Matthew Ashton - AMA/Getty Images

Related Articles

Exit mobile version