এইতো কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়াকে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিলো শ্রীলঙ্কা। কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা এবং মাহেলা জয়াবর্ধনের অবসর পরবর্তী শ্রীলঙ্কা দল তখন নিজেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হারিয়ে খুঁজছেন। তখনকার তুলনায় বর্তমান শ্রীলঙ্কা দল বেশ পরিণত। কুশাল মেন্ডিস, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাদের লম্বা ইনিংস খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে। গুনারত্নে, ডিকওয়ালাদের প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে আনার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তরুণ হলেও কয়েক বছরে নিজেদের ঠিকই গুছিয়ে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তাদের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ জিততে হলে নিজেদের সেরা খেলাটা খেলেই জিততে হবে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে তাদের মাটিতে তাদেরকে হারানো বেশ কঠিন। এর জন্য প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস।
একদিকে বাংলাদেশ নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচ খেলছে। আরেকদিকে ৫ম দিনের পিচে হেরাথের বল, সাময়িক চাপে ছিলো বাংলাদেশ। আর তখনি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন তামিম ইকবাল খান। সৌম্য সরকার এবং ইমরুল কায়েস পরপর দুই বলে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ার পর ধীরেসুস্থে ব্যাটিং করে রানের চাকা এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন তামিম। মধ্যাহ্ন বিরতির পর তুড়ি মেরে সবরকম সমীকরণ উড়িয়ে দিয়ে নিজের মতো করে খেলে করেন ৮২ রান। যা এই ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
এরকম আরো অনেক ম্যাচে তামিম ইকবাল ভয়কে জয় করে পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের কাজ সহজ করে দিয়েছেন। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্ট উদাহরণস্বরূপ ধরা যায়। নিউজিল্যান্ডের পেস বান্ধব উইকেটে ব্যাট করা একটু কষ্টকর, তাই দলের অনেক ব্যাটসম্যানই চাপা ভয়ে ছিল। কিন্তু তামিম ইকবাল ক্রিজে এসেই উল্টো নিউজিল্যান্ডের বোলারদের উপর চড়াও হন, মাত্র ৫০ বলে ১১ চারের মারে করেন ৫৬ রান। এরপর সাকিব-মুশফিক ক্রিজে এসে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন।
গতবছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১০৪ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০ রান করে বাংলাদেশকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দিয়েছিলেন ড্যাশিং এই ওপেনার। চলুন আজ তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছু জানা যাক। তামিম ইকবাল ২০-শে মার্চ ১৯৮৯ সালে সম্ভ্রান্ত “খান” পরিবার জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিকভাবে ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ছিল তার। চাচা আকরাম খান এবং বড় ভাই নাফিস ইকবাল বেশকিছু দিন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
অনুপ্রেরণা হয়তো তাদের কাছ থেকেই পেয়েছেন। তারা বাবা ইকবাল খানও ছেলেকে বড় ক্রিকেটার বানাতে চেয়েছেন। ছেলের সুবিধার্থে ছোটো টুর্নামেন্টের আয়োজন করতেন। তার বড় ভাই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তামিম খুবই প্রতিভাবান। তার বয়স যখন ১২ কিম্বা ১৩, তখন এক টুর্নামেন্টে তামিমের দলের সামনে ১৫০ রানের লক্ষ্য ছিলো। বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, তামিম একাই করে ১৪৮ রান।
চাচা আকরাম খান ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেটে খেলেছেন। বড় ভাই নাফিস ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ২০০৪ সালে। আর এদিকে ২০০৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তামিম ইকবাল চিটাগাং বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়ে যান।
২০০৫ সালে আফ্রো-এশিয়া কাপ অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে তামিম ইকবাল প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। একইসাথে সাকিব আল হাসান, মেহেরাব হোসেন জুনিয়র, মার্শাল আইয়ুব, সোহরাওয়ার্ধী শুভ এবং মুশফিকুর রহিমদের অভিষেক ঘটে। অনুর্ধ্ব-১৯ দলেরও অধিনায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম।
তামিম ইকবাল ঐ টুর্নামেন্টে ১৮, ৪২, ৬০, এবং ৬১* রান করেছিলেন প্রথম ৪ ম্যাচে। ঐ বছরের শেষ মাসে ইংল্যান্ড অনুর্ধ্ব-১৯ দল এবং শ্রীলঙ্কা অনুর্ধ্ব-১৯ দল ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে, ঐ সিরিজের পারফরমেন্স দিয়ে আলোচনায় আসেন তামিম ইকবাল। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৭৩ বলে ১৩ চার ৬টি ছয় হাঁকিয়ে খেলেন ১১২ রানের ঝড়ো ইনিংস।
২০০৬ সালের অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলার পর বাংলাদেশ জাতীয় দলে ডাক পান তামিম ইকবাল। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তামিম ইকবালের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে ওডি’আই ক্রিকেট দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। মূলত আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য তামিমকে যাচাই করা হচ্ছিলো। নিজের দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে ৩২ বলে ৩ চার এবং ২ ছয়ের সাহায্যে ৩০ রান করে বিশ্বকাপের মূল দলে সুযোগ পেয়ে যান।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ভয়ডরহীন এক ইনিংস খেলে সবাইকে অবাক করে দেন তামিম ইকবাল। মাত্র ১৮ বছর বয়সে জহির খানদের চোখ রাঙিয়ে মোকাবেলা করেন তামিম। পোর্ট অফ স্পিনে মাত্র ৫৩ বলে ৫১ রান করে বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দিয়ে যান তিনি।
এরপর তামিমকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্যে পরিণত হন। ঐ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে অঘটনের শিকার হওয়া বাংলাদেশ পরের বছরেই তাদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওডি’আই সিরিজ আয়োজন করে। ঐ সিরিজের শেষ ম্যাচে তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম শতক তুলে নেন। নিজের ১৯তম জন্মদিনের একদিন পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৬ বলে করেন ১২৯ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় বছরেই তামিম ইকবাল ২৬টি ওডি’আই ম্যাচে করেন ৮০৭ রান।
২০০৮ সালে তামিমের বাংলাদেশের হয়ে সাদা পোশাকে অভিষেক ঘটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ডুনেডিনে। অভিষেক টেস্টে তামিম ৫৩ এবং ৮৪ রান করেছিলেন। পরের বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংস্টন টেস্টে ২৪৩ বলে ১২৮ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন। বাংলাদেশের জন্য সেটি ছিল বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মূল দল না থাকলেও জয়টি বাংলাদেশের কাছে ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তামিম ইকবাল ২০০৯ সাল এবং ২০১০ সাল স্বপ্নের মতো কাটান। বুলাওয়েতে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের দেওয়া ৩১৩ রানে লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে জয় এনে দিয়েছিল তামিম ইকবাল। চার্লস কোভেন্ট্রির ১৯৪* রানের ইনিংসের সুবাদে জিম্বাবুয়ে ৩১২ রান সংগ্রহ করেন।
জবাবে তামিম ইকবাল ১৩৮ বলে ৭টি চার এবং ৬টি ছয় হাঁকিয়ে ১৫৪ রান করেন। তামিমের অনবদ্য ইনিংসের সুবাদে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ৩০০ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে। এখন পর্যন্ত ২০১০ সাল টেস্ট ক্যারিয়ারে তামিম ইকবালের সবচেয়ে সফল মৌসুম। বছরের শুরুটা করেন প্রথম টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে ওডি’আই শতক হাঁকিয়ে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যখন শতক হাঁকান তখন জিম্বাবুয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নির্বাসনে ছিল। মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম ইকবাল ১২০ বলে ১৩ চার এবং ৩ ছয়ে ১২৫ রান করেন। তামিমের ১২৫ রানের ইনিংসের সত্ত্বেও বাংলাদেশ ঐদিন মাত্র ২২৮ রানে গুটিয়ে যায়। ম্যাচ শেষে অনেকে ব্যঙ্গ করে বাকি ১০ জনের বদল তামিমকে দুইবার ব্যাট করতে দিতে বলেছে।
তামিম ইকবাল ঐ সফরের পুরোটা সময় ইংলিশ বোলারদের বিপক্ষে চড়াও ছিলেন। টেস্ট সিরিজে ৮৬, ১৪, ৮৫ এবং ৫২ রান করেন। প্রতি ইনিংসেই তামিম ওডি’আই স্টাইলে ব্যাট করেন ইংলিশ বোলারদের বিপক্ষে। হোম সিরিজ শেষে বাংলাদেশ অ্যাওয়ে সিরিজ খেলতে এক মাস পরেই ইংল্যান্ড সফরে যায়। সেখানেও তামিম ইকবাল ইংল্যান্ড বোলারদের বিপক্ষে নিয়মিত চার ছক্কা হাঁকাচ্ছিলেন। লর্ডস টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬২ বলে ৫২ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯৩ বলে শতক হাঁকান তামিম ইকবাল। লর্ডসের অনার্স বোর্ডে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসাবে নাম লেখান ১০০ বলে ১০৩ রান করে।
ইংল্যান্ডের তারকা ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসেন ম্যাচ চলাকালীন সময়ে তামিমকে ক্ষিপ্ত করার জন্য বলেন, পারলে ম্যানচেস্টারে শতক হাঁকিয়ে দেখাও। ম্যানচেস্টারের পিচ পেস বান্ধব, যেখানে ম্যাচের শুরুতেই বোলারদের উপর চড়াও হওয়া বিপদজনক। কিন্তু তামিম ইকবাল ম্যানচেস্টার টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ১১৪ বলে ১০৮ রান করে দেখিয়ে দেন, ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করলেও তিনি কতটা ধারাবাহিক।
তামিম ইকবাল ২০১০ সালে টেস্ট ক্রিকেটে ৫৯.৭৮ ব্যাটিং গড়ে করেছিলেন ৮৫৭ রান। ভারতের বিপক্ষে ১৫১ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন ঐ বছরেই। অসাধারণ বছর কাটানোর পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসাবে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছিলেন বছর শেষেই।
অভিষেকের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাটে রান পেতে থাকা তামিম ইকবাল প্রথম সমালোচনার মুখে পড়েন ২০১১ সালের বিশ্বকাপের। সাকিবের অধিনায়কত্বের পদ হারানোর পাশাপাশি তামিম ইকবালও সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পান। তামিমের ব্যাটিংয়েও এর প্রভাব পড়েছিলো, কিন্তু মাত্র একবছর পরেই ঘরের মাটিতে এশিয়া কাপে বোর্ড প্রেসিডেন্ট তামিমকে দল থেকে বাদ দিতে চান। পরে চাপের মুখে তাকে দলে রাখতে বাধ্য হন টিম ম্যানেজমেন্ট।
সবসময় ব্যাট হাতে জবাব দেওয়া তামিম ইকবাল সেবারও ব্যাট হাতে জবাব দিয়েছেন। এশিয়া কাপে তারা টানা ৪ অর্ধশতকের ইনিংসের সুবাদে বাংলাদেশ পৌঁছেছিল ফাইনাল পর্যন্ত।
এরপরের কয়েক বছর তামিম ইকবাল আশানুরূপ পারফরমেন্স করতে পারেনি। এক ম্যাচে ভালো করলে তো পরের ম্যাচে রান পেতেন না, চারদিকে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। ২০১৫ বিশ্বকাপে তামিমকে দলে দেখতে চায়নি অনেকেই। কিন্তু কোচ এবং অধিনায়ক তামিমের পাশে ছিলেন, তারা তামিমকে ম্যাচ উইনার হিসাবেই দলে রেখেছিলেন। এবং তাদের পূর্ণ বিশ্বাস ছিল তামিম রানে ফিরবে। তামিম ইকবাল বিশ্বাসের মর্যাদা দেন স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ রানের ইনিংস খেলে। তার ইনিংসের সুবাদে বাংলাদেশ ঐদিন স্কটল্যান্ডের দেওয়া ৩১৮ রানের লক্ষ্য অতিক্রম করেন সহজেই। বিশ্বকাপের পরেও তামিম দর্শকদের তোপের মুখে পড়েন, সে সময়ে তার পাশে থেকে উৎসাহ দেওয়ার মানুষের সংখ্যা কমই ছিল।
কিন্তু তামিম ইকবাল মুখে কোনো কথা না বলে জবাবটা দিয়েছেন ব্যাটেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওডি’আই সিরিজে যথাক্রমে ১৩২, ১১৬* এবং ৬৪ রান করেন। তার অসাধারণ পারফরমেন্সের কারণে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ।
ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও দুটি কার্যকরী ইনিংস খেলেছিলেন তামিম ইকবাল। বছরের শুরুতে তামিম সমালোচনার মুখে পড়লেও বছর শেষে তিনি ৪৬.৩৭ ব্যাটিং গড়ে করেন ৭৪২ রান। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম দ্বিশতকের দেখা পেয়েছিলেন ঐ বছরেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে অনবদ্য ২০৬ রানের ইনিংস খেলে খুলনা টেস্ট ড্র করতে বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
বিশ্বকাপের পর হঠাৎ করেই বদলে যাওয়া তামিম যেখানে খেলছেন ঐখানেই রান পাচ্ছিলেন। ডিপিএল, বিপিএল, পিএসএলের মতো ঘরোয়া টুর্নামেন্টেও নিয়মিত রান পাচ্ছিলেন তিনি। ২০১৬ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসাবে ওমানের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি শতক হাঁকিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠাতে তামিম ইকবাল মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের চাপের মুখে ৮৩* রান করার পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেললেন ২৬ বলে ৪৭ রানের ইনিংস। ১ম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে ৬৩ বলে ১০৩* রান করে প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসাবে তিন ফরম্যাটেই শতক হাঁকানোর অনন্য কীর্তি গড়েন তিনি। শেষপর্যন্ত ঐ বিশ্বকাপে ২৯৫ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় শীর্ষেই ছিলেন তামিম ইকবাল।
তামিম ইকবালের ব্যাট এখনো হাসছে, যেখানেই খেলছেন সেখানেই রান পাচ্ছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে ব্যাটসম্যানদের যত রেকর্ড আছে তার সিংহভাগ তামিমের দখলে।
তামিম ইকবাল এখন পর্যন্ত ৪৯ টেস্টে ৩৯.৫৩ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ৩,৬৭৭ রান। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ৮টি শতক তার ব্যাট থেকে এসেছে। সাকিব আল হাসানের ২১৭ রানের ইনিংসের পর তামিমের ২০৬ রানের ইনিংসটি এখনো টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ওডি’আইতে তামিম ইকবাল ১৬২ ম্যাচে ৩২.৪০ ব্যাটিং গড়ে ৫,১২০ রান করেছেন। সবচেয়ে বেশি ৭টি শতক, ৩৪টি অর্ধশতক এবং ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫৪ রানের ইনিংসটি তামিমের দখলেই।
টি-টুয়েন্টিতেও বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম ইকবাল। ৫৫টি টি-টুয়েন্টিতে ২৪.০৪ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ১,২০২ রান। বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র শতকটিও তার দখলে। বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার হিসাবে তার দেশের হয়ে তিন ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন তিনি। আজকের দিনে ইকবাল খান এবং নুসরাত ইকবালের কোলজুড়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন তামিম ইকবাল। নিজের ২৮তম জন্মদিনে উদযাপন করেছেন ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেই। এমন আরো অনেক অনবদ্য ইনিংসে বাংলাদেশকে জয়ে এনে দিবেন, তা আশা করাই যায়।