আমার জন্ম হয়েছিল নরকে। না না, কৌতুক করছি না। যারা জানেন না তাদের বলছি, সাও পাওলোর যে জায়গায় আমি বেড়ে উঠেছি, সেই ফাভেলাকে ‘ছোট্ট নরক’ই বলা হয়।
যদি আপনি সত্যিই আমাকে একজন মানুষ হিসেবে বুঝতে চান, আপনাকে প্রথমে আমার জন্মস্থান চিনতে হবে। আমার ইতিহাস জানতে হবে। আমার শিকড় চিনতে হবে। আর চিনতে হবে ‘ইনফারনিনিও’, অর্থাৎ নরককে।
ফাভেলা জায়গাটা কুখ্যাত। আমাদের সদর দরজা থেকে মাত্র পনেরো পা দূরে প্রতিনিয়ত মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক বেচাবিক্রি করতো, হাতে হাতে মাদক বিলি চলতো। আমাদের বাড়ির জানালা দিয়ে সেই গন্ধ বাড়ির ভেতরে ভেসে আসতো। আমার জীবনের প্রথমদিকের একটা স্মৃতিও জড়িয়ে আছে এর সাথে। মনে পড়ছে, এক রবিবারে আমার বাবা রাস্তার লোকগুলোকে চিৎকার করে বলছিলেন যেন তারা বাড়ির সামনের রাস্থায় একটু কম হাঁটাহাটি করে, এবং তাঁর সন্তানদের একটু শান্তিতে ফুটবল খেলা দেখতে দেয়।
মাদকের মতোই বন্দুকও আমাদের খুব পরিচিত একটা জিনিস ছিল। এতটাই পরিচিত যে আমরা বন্দুককে ভয় পেতাম না, ওটা আমাদের জীবনেরই একটা অংশ ছিল। বরং আমরা বেশি ভয় পেতাম যখন আমাদের বাড়িতে পুলিশ আসতো। একবার তারা কোনো একজনের খোঁজে আমাদের বাড়িতে এসে তল্লাশি চালিয়েছিল, এবং এরপর চিৎকার করতে করতে বেরিয়ে গিয়েছিল। তারা অবশ্য কিছু খুঁজে পায়নি, কিন্তু শৈশবের এমন মুহূর্তগুলো আপনার মনে দাগ কাটতে বাধ্য।
তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু ব্যাপার আমি দেখেছিলাম, যেগুলো আসলে ব্যাখ্যাতীত। শুধু যে সেসব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়, সে-ই ব্যাপারগুলো অনুভব করতে পারে। যেমন ধরুন, আমার বয়স তখন হয়তো আট বা নয়, একদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে আমি দেখলাম রাস্তায় একজন মানুষ পড়ে আছে। মানুষটা নড়ছিল না। আমি তার কাছে গেলাম, এবং তখন বুঝলাম যে মানুষটা আর বেঁচে নেই। একজন শিশুর জন্য অভিজ্ঞতাটা নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর, কিন্তু ফাভেলাতে বসবাস করতে থাকলে আপনার এই অনুভূতিগুলো অসাড় হয়ে যেতে বাধ্য। আমার অনুভূতিও তখন কাজ করছিল না। আমি তাই শান্তভাবে চোখ বন্ধ করলাম, লাফিয়ে মৃতদেহকে পেরোলাম, এবং স্কুলে গেলাম।
আমি নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করছি না। এগুলোই ছিল বাস্তবতা। আমি সবসময়ই বলি, আমি শিশু হিসেবে খুবই সৌভাগ্যবান ছিলাম, কেননা আমার একটা ফুটবল ছিল। সারাদিনের সব সংগ্রামের মাঝে এই ফুটবলটাই ছিল আমার সঙ্গী। ‘ইনফারনিনিও’তে বড়দিনের উপহার হিসেবে খেলনাকে কেউ গণনার মধ্যে ধরতো না। তাই গড়িয়ে সামনে যেতে পারে, এমন যেকোনো বলই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল।
প্রতিদিন আমার বড় ভাই আমাকে ফুটবল খেলার জন্য স্কোয়ারে নিয়ে যেতেন। ফাভেলাতে সবাই ফুটবল খেলে। শিশু, বয়স্ক, শিক্ষক, রাজমিস্ত্রী, বাস চালক, মাদক ব্যবসায়ী, এলাকার মাস্তান, সবাই। খেলার মাঠে সবাই সমান, কারো মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। অবশ্য মাঠ বলা যায় না। আমার বাবার সময়ে ওটা ছিল এক টুকরো ময়লা জায়গা, আমার সময়ে সেটা বাঁধানো হয়েছিল পাথর দিয়ে। শুরুতে আমি খালি পায়ে খেলতাম, আমাদের ভালো জুতো কেনার সামর্থ্য ছিল না। আমার পা রক্তাক্ত হতো। তবে রক্তাক্ত পা নিয়েও আমি দারুণ ড্রিবলিং করতাম। ড্রিবলিং ব্যাপারটা আমার ভেতরে সবসময়ই ছিল। আমার মনে হতো, সৃষ্টিকর্তা যেন নিজে আমার মধ্যে ড্রিবলিংয়ের কৌশলগুলো পুরে দিয়েছেন। এ কারণেই আমি খেলার মাঠে কারো কাছে মাথা নত করতাম না। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ইলাস্টিকো (ড্রিবলিংয়ের একটি কৌশল) করতাম, রেইনবো (ড্রিবলিংয়ের আরেকটি কৌশল) করে বাস চালকদের মাথার ওপর দিয়ে বল নিয়ে এগিয়ে যেতাম, এলাকার চোরদের নাটমেগ করতাম। আমার পায়ে যতক্ষণ বল থাকতো, আমি কাউকেই পরোয়া করতাম না।
এই কৌশলগুলো আমি শিখেছি রোনালদিনহো, নেইমার, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো কিংবদন্তিদের কাছ থেকে। আমি ইউটিউবে তাদের খেলা দেখতাম। আমার চাচা তোনিয়োলো আমাকে খেলা দেখতে সাহায্য করতেন। উনি অবশ্য আমার রক্ত সম্পর্কের চাচা নন। উনি আমাদের প্রতিবেশী ছিলেন, তবে আমাদের কাছে উনি পরিবারের মতোই। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন উনি আমাকে তার ওয়াইফাই ব্যবহার করতে দিতেন, যেন আমি ইউটিউব দেখে ফুটবল শিখতে পারি। আমার জীবনের প্রথম ভিডিও গেম খেলার সুযোগও উনি করে দিয়েছিলেন। তোনিয়োলো চাচার কাছে যদি দুই টুকরো রুটি থাকতো, এক টুকরো থাকতো তার নিজের জন্য, অপর টুকরো আমাদের জন্য। ফাভেলার এই বিষয়টা অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করবেন না। একজন মানুষ যদি খারাপও হয়, দুইজন মানুষ নিশ্চয়ই ভালো কাজ করছে।
আমি সবসময়েই যেটা বলি, আমি যে জায়গায় বেড়ে উঠেছি সেটা খারাপ হতে পারে, কিন্তু আশেপাশের মানুষগুলো খুব ভালো ছিল। আমি যখন আট বছর বয়সী, একদিন স্কোয়ারে ফুটবল খেলছি, এমন এক সময় আমি প্রথমবারের মতো ‘দেবদূত’ এর দেখা পাই। মানুষটা আমাকে একজন মাস্তানের সামনে বিভিন্ন কৌশল করতে দেখেছিল, এরপর সে উপস্থিত দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলেন,
”এই ছোট ছেলেটা কে?”
“এই ছেলেটা? ওর নাম অ্যান্টনি”
এই দেবদূত ছিলেন গ্রেমিওর পরিচালক। উনিই আমাকে বস্তি ছেড়ে তাদের ফুটসাল দলে খেলার প্রথম সুযোগ দিয়েছিলেন। তখনই আমার স্বপ্ন দেখার শুরু হয়। আমার মনে পড়ে, একদিন আমি আমার মায়ের সাথে রাস্তায় হাঁটছিলাম। রাস্তায় হঠাৎ একটা সুন্দর লাল রেঞ্জ রোভার গাড়ি আমার চোখে পড়ে। তবে আমার ওটাকে ফেরারি বলে মনে হচ্ছিল। রাস্তার সবাই-ই ওটার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি তখন আমার মায়ের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললাম,
“মা, একদিন আমি ফুটবলার হবো, তখন আমি এরকম একটা গাড়ি কিনবো।”
মা হাসলেন,
“অবশ্যই।”
আমি কিন্তু হালকা চালে কথাটা বলিনি, আমি খুবই সিরিয়াস ছিলাম,
“চিন্তা করো না। কিছুদিন পর আমি তোমাকে চালাতে দেব গাড়িটা।”
সেই সময়ে আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। শুধু আমার জন্য একটা বিছানা কেনার মতো সামর্থ্য আমার পরিবারের ছিল না। আমি তাই আমার বাবা-মায়ের মাঝে ঘুমাতাম। প্রতি রাতে ঘুম ভাঙলে আমি একপাশে পেতাম আমার বাবাকে, আরেকপাশে আমার মাকে। আমরা অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলাম। আমাদের বন্ধনটা খুব দৃঢ় ছিল। আর এই বন্ধনটাই আমাদের শত সংগ্রামের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতো। এরপরই একটা ঘটনা ঘটল, আমার জীবনের মোড় ঘুরে গেলো তাতে।
আমার বয়স যখন এগারো, আমার বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। আমার জীবনের অন্যতম কঠিন মুহূর্ত ছিল এইটা, কেননা আগে অন্তত আমরা একসাথে থাকতে পারতাম, একে অপরকে সময়ে-অসময়ে পাশে পেতাম। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর আমি আমার বাবার সাথে থাকতে শুরু করি। রাতে ঘুম ভাঙলে যখন পাশ ফিরতাম, সেখানে মাকে পেতাম না। এই ব্যাপারটা আমাকে ভেঙেচুরে ফেলছিল, পাশাপাশি অনুপ্রাণিত করছিল। আমি চোখ বুজে ভাবতাম, “আমাকে এর থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।”
আমার বাবা কাজের জন্য বেরিয়ে যেতেন ভোর পাঁচটায়, ফিরতেন রাত আটটায়। আমি তখন তাকে বলতাম,
“এখন তুমি আমার জন্য কাজে দৌড়াচ্ছ, কিন্তু খুব শীঘ্রই আমি তোমার জন্য দৌড়াব।”
আপনি যদি মিডিয়ার সাথে কথা বলেন, তারা সবসময়ই আপনার স্বপ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। স্বপ্ন কোনটা? চ্যাম্পিয়নস লিগ? বিশ্বকাপ? ব্যালন ডি’অর? এর একটাও স্বপ্ন না। এগুলো শুধুই লক্ষ্য। আমার স্বপ্ন ছিল আমার বাবা-মাকে ফাভেলা থেকে বের করে আনা। এর কোনো বিকল্প পরিকল্পনা ছিল না। আমাকে হয় এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে হতো, নয়তো চেষ্টা করতে করতে নিজেকেই শেষ হয়ে যেতে হতো।
চৌদ্দ বছর বয়সে আমি সাও পাওলো ফুটবল ক্লাবে সুযোগ পাই। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে আমি খালি পেটে একাডেমিতে যেতাম। মাঝেমধ্যে, যদি দিনটা খুব ভালো হতো, সেক্ষেত্রে সতীর্থদের সাথে টাকা জড়ো করে হয়তো বিস্কুট খেতে খেতে বাড়ি ফিরতাম। তবে সত্যি যেটা, অনুপ্রেরণা পাওয়ার জন্য আমাকে ক্ষুধার্ত থাকার অভিনয় করতে হতো না। আমি আক্ষরিক অর্থেই ক্ষুধার্ত থাকতাম।
আমি আমার ভেতরে একটা প্রবল তাড়না অনুভব করতাম, এটাকে রাগও বলতে পারেন। আমি সবসময়ে আমার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না। এজন্য অন্তত তিনবার আমাকে ক্লাব থেকে বের করে দেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। আর তিনবারই ক্লাবের কেউ না কেউ আমার পক্ষে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন, আমাকে বের করে না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। আসলে সবই সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা।
আমি দৈহিকভাবে খুবই হালকাপাতলা ছিলাম। তবে আমার চোখে সবসময়ে জেতার তাড়না ছিল। এই তাড়নাটা আমি পেয়েছিলাম রাস্তা থেকে। এই ব্যাপারটা মিথ্যা না, একে নকল করা যায় না। মানুষ হয়তো ভাববে আমি মিথ্যা বলছি, কিন্তু সাও পাওলোর হয়ে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করার পরও আমি ফাভেলাতে থেকেছি। সত্যি বলছি, আমার বয়স যখন আঠারো, তখনো আমি আমার বাবার সাথে বিছানায় ঘুমাতাম, অথবা সোফায়ই ঘুমাতে হতো। আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না। ২০১৯ সালে করিন্থিয়ান্সের বিপক্ষে পাউলিস্তার ফাইনালে গোল করার রাতে আমি আমার বাড়িতে ফিরে ঘুমিয়েছিলাম। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে লোকেরা আঙুল দিয়ে আমাকে দেখিয়ে দিচ্ছিলো,
“আমি তোমাকে মাত্রই টিভিতে দেখলাম, তুমি এখানে কী করছো?”
“ভাই, আমি এখানেই থাকি।”
তখন লোকেরা অবিশ্বাসের হাসি হেসেছিল।
এক বছর পরে, আমি তখন আয়াক্সের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলছি। আমার তখন শুধু নিজের বিছানাই নেই, আমার লাল রেঞ্জ রোভারটা আমার মায়ের ড্রাইভওয়েতে দাঁড়ানো, আর আমি মাকে বলছি –
“দেখেছো? আমি বলেছিলাম যে আমি একদিন জিতবো, এবং আমি জিতেছি।”
প্রথমবার, দশ বছর বয়সে যখন মাকে এই কথাটা বলেছিলাম, মা হেসেছিলেন। এখন যখন তাকে মনে করিয়ে দিই, তিনি কাঁদেন।
মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে আমি বস্তি থেকে আয়াক্স হয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পৌঁছে গিয়েছি। মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করে, কীভাবে আমি এত তাড়াতাড়ি পাশার দান উল্টে দিলাম। সত্যি বলতে, ফুটবল মাঠে আমার ওপর কোনো চাপ থাকে না। কোনো ভয় থাকে না। কীসের ভায় থাকবে? মৃতদেহের ওপর দিয়ে স্কুলে যাওয়ার মতো শৈশব যে ছেলে কাটিয়েছে, ফুটবলের কোনো কিছু তাকে ভীত করতে পারে না। আমি যা যা দেখেছি জীবনে, ফুটবলবোদ্ধারা সেটা শুধু কল্পনাই করতে পারেন। এমন অনেক কিছু আমাকে দেখতে হয়েছে, যা আমি চাইলেও ভুলতে পারি না।
জীবনটা কষ্টের। জীবনটা দুশ্চিন্তার। জীবনটা কান্নার।
কিন্তু ফুটবল? আপনার পায়ে যখন বল থাকবে, আপনার তখন মনে তখন জায়গা নেবে শুধুই আনন্দ। আমি একজন জাত ড্রিবলার। এটা আমার জীবন, আমার শিকড়ের অংশ। এই ব্যাপারটাই আমাকে ফাভেলার বস্তি থেকে থিয়েটার অব ড্রিমসে নিয়ে গেছে। আমি আমার খেলার ধরন কখনো পাল্টাবো না। কারণ, এটা শুধু আমার খেলার ধরন না, এটা আমিই। এটা আমার অংশ। এটা আমাদের মতো ব্রাজিলিয়ানদের জীবনের গল্পের অংশ। আপনি যদি আমার খেলার দশ সেকেন্ডের একটা ক্লিপ দেখেন, তাহলে আপনি এটা বুঝবেন না। আমি যেটা করি, এটা কোন কৌতুক না। সবকিছুরই একটা উদ্দেশ্য থাকে। আমার উদ্দেশ্য সামনে এগিয়ে যয়া, প্রতিপক্ষের মধ্যে ভয় ধরিয়ে দেওয়া, জায়গা তৈরি করা, খেলায় পার্থক্য তৈরি করে দেওয়া।
যদি আমাকে আপনার ‘ভাঁড়’ মনে হয়, তাহলে আপনি আমার গল্পটাই বোঝেননি। যে শিল্প দেখিয়ে গেছেন রোনালদিনহো, যে শিল্পের কারিগর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর নেইমার, সেই শিল্পটা আমাকে শৈশবে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই শিল্পীদের খেলা আমি চুরি করে ইউটিউবে দেখেছি, এরপর বাঁধানো পিচে সেই শিল্পটাই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। আমার মতো নরকবাসীর জন্য এটা ছিল স্বর্গ থেকে আসা সামান্য উপহার।
লোকে জিজ্ঞেস করে,
“তোমার এই শিল্পের উদ্দেশ্য কী? কী বার্তা দিচ্ছো তুমি?”
ভাই, আমি আমার বাড়ির উদ্দেশ্যে বার্তা পাঠাচ্ছি।
ইউরোপের বাড়িতে বাড়িতে, যেখানে রাতের খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না, লোকে মাঝেমধ্যে ভুলে যায় যে ফুটবল একটা খেলা। একটা সুন্দর খেলা, কিন্তু তবুও তো একটা খেলাই। পক্ষান্তরে জীবনটা অনেক বেশি সিরিয়াস, অন্তত আমার মতো ছোট ছোট নরকে জন্মানো মানুষগুলোর জন্য। আমি সবসময়ই বলি, আমি আমার জীবনে যত দূরেই যাই, আমার সাথে যা-ই ঘটুক না কেন, আমি সেই জায়গারই প্রতিনিধিত্ব করছি, যে জায়গাটা আমাকে সবকিছু শিখিয়েছে। আমার বাড়ি, আমার চেনা মানুষগুলোই আমার সব। প্রতিটা ম্যাচের আগে আমার বুটের ওপরে একটা অদৃশ্য কথা লিখে নিজেকে মনে করিয়ে দিই,
“ফাভেলা”।
আমি যখন আমার বুটের ফিতা বাঁধি, সব কথা আমার মনে পড়ে। আমার জন্মস্থান, আমার পরিবার, আমার বাড়ি, আমার চেনা মানুষজন, সব।
এটাই আমার গল্প। যদি আপনি এখনো আমাকে না বোঝেন, যদি এখনো আমাকে ‘ভাঁড়’ মনে হয়, তাহলে আমার হাতে লেখা এই উক্তিটা দেখুন,
“ফাভেলা থেকে যে উঠে এসেছে, শুধু সে-ই জানে আমি কীসের মধ্য থেকে উঠে এসেছি।”
এই শব্দগুলোই আমার হয়ে কথা বলবে।