ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে মাত্র দশটি দল অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। এর মধ্যে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে শীর্ষ আট দল সরাসরি লন্ডনের টিকেট পেয়েছে। অবশিষ্ট দুটি স্থানের জন্য জিম্বাবুয়েতে আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে দশটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ মোকাবেলা করছে। ইতিমধ্যে বাছাইপর্বের গ্রুপ পর্বের ইতি ঘটেছে। শেষ দুটি জায়গার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সুপার সিক্সের দলগুলো।
আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গ্রুপ পর্ব থেকে নেপাল, পাপুয়া নিউগিনি, হংকং এবং নেদারল্যান্ড বাদ পড়ে। সুপার সিক্স নিশ্চিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্কটল্যান্ড এবং আফগানিস্তান। সুপার সিক্সের আর মাত্র তিন ম্যাচ বাকি আছে, প্রত্যেক দলের একটি করে। এখনো কোনো দল ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে পারেনি।
সংযুক্ত আরব আমিরাত বাদে বাকি পাঁচ দলেরই আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শীর্ষ দুই স্থানে জায়গা করে নেবার পাশাপাশি বিশ্বকাপের মূল আসরে খেলার সুযোগ রয়েছে। এখনো জমজমাট এই আসরের শেষ দৃশ্য বাকি রয়েছে। অনেক ‘যদি’, ‘কিন্তু’র উপর নির্ভর করছে দলগুলোর ভাগ্য। সুপার সিক্সের সব দল তাদের তিন ম্যাচের মধ্যে দুই ম্যাচ খেলেছে। এই রাউন্ডের শেষ তিনটি ম্যাচ হলো-
- ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম স্কটল্যান্ড (বুধবার, ২১শে মার্চ)
- সংযুক্ত আরব আমিরাত বনাম জিম্বাবুয়ে (বৃহস্পতিবার, ২২শে মার্চ)
- আয়ারল্যান্ড বনাম আফগানিস্তান, (শুক্রবার, ২৩শে মার্চ)
এই তিন ম্যাচের সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। এখনো নিশ্চিত হয়নি কোনো দলের লন্ডন যাওয়ার টিকেট। তবে জিম্বাবুয়ে জয় পেলেই আয়ারল্যান্ড বনাম আফগানিস্তানের ম্যাচটি নিয়ম রক্ষার ম্যাচে পরিণত হবে। এখন দেখে নিই কোন দলের কীভাবে মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
অবস্থান: ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
যদি জয় পায়: স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে জয় পেলে আর কোনো সমীকরণের মুখে পড়তে হবে না তাদের। সরাসরি মূল পর্বে খেলবে তারা।
যদি তারা পরাজিত হয়: স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরাজিত হলে প্রথম দল হিসাবে বিশ্বকাপের মূল আসরে জায়গা করে নেবে স্কটল্যান্ড। এই পরাজয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে না। তখন তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে পরবর্তী দুই ম্যাচের দিকে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে জয় পেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুপার সিক্স থেকে বাদ পড়ে যাবে। জিম্বাবুয়ে পরাজিত হলে তাকিয়ে থাকতে হবে আফগানিস্তান বনাম আয়ারল্যান্ডের ম্যাচের দিকে। ঐ ম্যাচে যে দল জয় পাবে, তাদের পয়েন্টও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমান ছয় হবে। তখন সামনে আসবে নেট রান রেট।
জিম্বাবুয়ে
অবস্থান: সুপার সিক্সে এক জয় এবং এক পরাজয়ে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে আছে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে।
যদি জয় পায়: সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে জয় পেলে সাত পয়েন্ট নিয়ে কোয়ালিফাই করবে জিম্বাবুয়ে। তাদের পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম স্কটল্যান্ডের ম্যাচে জয়ী দলও শেষ দুই অবস্থান নিশ্চিত করবে।
যদি পরাজিত হয়: ব্রেন্ডন টেইলর বলেছেন, “ম্যাচটি তাদের কাছে ফাইনালের মতো।” টেইলর ঠিকই বলেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে পরাজিত হলে সুপার সিক্স থেকে বিদায় নিতে হবে জিম্বাবুয়েকে।
স্কটল্যান্ড
অবস্থান: স্কটল্যান্ডের পয়েন্টও জিম্বাবুয়ের সমান পাঁচ। কিন্তু জিম্বাবুয়ের চেয়ে নেট রান রেটে পিছিয়ে থেকে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে তারা।
যদি জয় পায়: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পেলে সাত পয়েন্ট নিয়ে সরাসরি বিশ্বকাপের মূল আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে স্কটিশরা।
যদি পরাজিত হয়: তাদের সমীকরণটাও জিম্বাবুয়ের মতো। জয়লাভ করলে কোয়ালিফাই করবে। পরাজিত হলে সুপার সিক্স থেকে বিদায় নেবে।
আয়ারল্যান্ড
অবস্থান: চার পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে আয়ারল্যান্ড।
যদি জয় পায়: টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে জয় ছাড়া কোনো বিকল্প নেই আয়ারল্যান্ডের সামনে। জয় পেলেও অনেক ‘যদি’, ‘কিন্তু’র উপর নির্ভর করবে তাদের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন।
যদি জিম্বাবুয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে জয় তুলে নেয়, তাহলে আয়ারল্যান্ড সুপার সিক্স থেকেই বিদায় নেবে।
যদি জিম্বাবুয়ে পরাজিত হয় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়লাভ করে, তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফাইনাল খেলবে আয়ারল্যান্ড। যদি জিম্বাবুয়ে পরাজিত হয় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজও পরাজিত হয়, তাহলে স্কটল্যান্ডের সাথে কোয়ালিফাই করতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকতে হবে আয়ারল্যান্ডকে।
যদি পরাজিত হয়: টুর্নামেন্টের এ পর্যায়ে জয়ের কোনো বিকল্প নেই আয়ারল্যান্ডের সামনে।
আফগানিস্তান
অবস্থান: আফগানিস্তান সুপার সিক্স শুরু করেছিল দুই ম্যাচে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে। তখনই তাদের সামনে সমীকরণ দাঁড়ায় যে এক ম্যাচ হাত ছাড়া হলেই লন্ডনের টিকেটের বদল বাড়ির টিকেট। তবে এখন পর্যন্ত টানা দুই জয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে ৫ম স্থানে অবস্থান করছে আফগানিস্তান।
যদি জয় পায়: আফগানিস্তানের সমীকরণটাও অনেকটা আয়ারল্যান্ডের মতো। যদিও আফগানরা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তুলে নেয়, তখনো শেষ দুইয়ে তাদের জায়গা নিশ্চিত হবে না। নেট রান রেট কম হওয়ার কারণে তাদের জন্য হিসাবটা আরো কঠিন।
যদি এর আগের ম্যাচে জিম্বাবুয়ে জয়লাভ করে, তখন তাদের ম্যাচটি নিয়ম রক্ষার ম্যাচে পরিণত হবে। শিরোনাম হবে অনেকটা এমন- আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে সান্ত্বনার জয় পেলো আফগানিস্তান। যদি জিম্বাবুয়ে পরাজিত হয়, তখন আফগানিস্তানের ভাগ্য খুলে যাবে। নিজেদের জয়ের পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় পেলেই বিশ্বকাপের টিকেট কাটা হয়ে যাবে তাদের। আবার যদি জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ উভয় দলই নিজ নিজ ম্যাচে পরাজিত হয়, তখন স্কটল্যান্ডের সাথে দ্বিতীয় দল হিসাবে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকতে হবে আফগানদের। গ্রুপ পর্বে টানা তিন পরাজয়ে আফগানিস্তানের নেট রান রেটের খুবই শোচনীয় অবস্থা। তাই হিসাবটা তাদের জন্য আরো কঠিন।
যদি পরাজিত হয়: এখানেই শেষ হবে আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন। আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, এবং জিম্বাবুয়ের মতো জয়ের কোনো বিকল্প নেই আফগানিস্তানের সামনে।
শেষপর্যন্ত সব সমীকরণ দাঁড় করালে ৭টি উপায়ে দলগুলো ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের মূল আসরে কোয়ালিফাই করতে পারবে।
- ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ে।
- ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আয়ারল্যান্ড।
- ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আফগানিস্তান।
- ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং স্কটল্যান্ড।
- স্কটল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়ে।
- স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড।
- স্কটল্যান্ড এবং আফগানিস্তান।
ফিচার ইমেজ- Icc-Cricket.com