বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয়তম খেলাগুলোর মধ্যে দাবা অন্যতম। চিন্তাশক্তি, পরিকল্পনা এবং ধৈর্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার কারণে বুদ্ধিজীবীদের কাছেও এই খেলার কদর নিতান্তই কম নয়। আমাদের দেশে এখনও দাবা জনপ্রিয়তার শীর্ষে না পৌঁছালেও প্রতিভাবান চশমাওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে মুদি দোকানে চা খেতে বসে ধোঁয়া ওড়ানো যুবক, দাবার গ্রহণযোগ্যতা সর্বত্র। ‘বুদ্ধির খেলা’ হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত হওয়ায় যেকোনো বয়সের এবং যেকোনো শ্রেণীর মানুষের কাছেই দাবা খেলতে জানাটা আলাদা গুরুত্ব বহন করে। আর গত শতাব্দীতে নানা প্রযুক্তির ব্যবহার দাবা খেলার বিকাশে রেখেছে অনন্যসাধারণ ভূমিকা। চলুন আজ দাবা খেলার আদ্যোপান্ত নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যাক!
দাবার উদ্ভাবন: প্রচলিত একটি উপকথা
শুরুটা করা যাক একটা ছোট্ট ‘গাণিতিক’ গল্প দিয়ে। তখন সদ্যই আবিষ্কৃত হয়েছে দাবা; যুদ্ধকৌশল সঞ্চালনে অসাধারণ ভূমিকা পালন করাতে মহামান্য শেহরাম খুঁজতে শুরু করলেন এই খেলার উদ্ভাবককে। জানা গেলো, উদ্ভাবক তাঁরই রাজ্যের একজন গুণী শিক্ষক; নাম চিসসা! এই অসাধারণ আবিষ্কারের যোগ্য পুরষ্কার দেবেন বলে ঠিক করলেন শেহরাম, চিসসাকে তাই যত দ্রুত সম্ভব রাজার সামনে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ পাঠানো হলো। দুরু দুরু বক্ষে মহামান্য শেহরামের সামনে এসে দাঁড়ালেন চিসসা।
“আরে আসুন আসুন, কি সৌভাগ্য আমার!” এভাবেই চিসসাকে সাদরে বরণ করে নিলেন শেহরাম। বিস্ময়ে এবার স্তম্ভিত হয়ে গেলেন চিসসা, তাঁর মতো সাধারণ এক শিক্ষককে কিনা রাজা এভাবে বরণ করে নিচ্ছেন! খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না চিসসাকে, শেহরাম নিজেই বললেন, “আপনার এই অবিস্মরণীয় আবিষ্কারে আমি অত্যন্ত উৎফুল্ল হয়েছি। আপনার মতো গুণী মানুষকে আমি যথাযোগ্য পুরষ্কারে ভূষিত করতে আগ্রহী।”
বিস্ময়ে হতবিহ্বল চিসসা নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়ে বললেন, “মহারাজ, এসবই আপনার বদান্যতা।” শেহরাম চিসসাকে থামিয়ে আবার বললেন, “না, না, শুধু তো এটা বললে চলছে না! কোনো সংকোচ করবেন না, আপনি বলুন আপনি পুরষ্কার হিসেবে কী চান। যা চাইবেন, তা-ই দেওয়া হবে।”
নিরুত্তর চিসসা কিছুক্ষণ পর মৌনতা ভাঙলেন, বললেন, “জাহাঁপনার মেহেরবানী সীমাহীন। তবে অনুগ্রহ করে যদি আমাকে একটা দিন সময় দিতেন চিন্তা করার জন্য, এই অধম অত্যন্ত আনন্দিত হতো। আগামীকাল সকালেই আমি আমার আর্জি পেশ করতে প্রস্তুত থাকবো, হুজুর।” শেহরাম রাজি হলেন, “ঠিক আছে, তবে তা-ই হোক!”
পরদিন সকালে রাজসভায় সময়মতো চিসসা হাজির হয়ে গেলেন। শেহরাম জিজ্ঞাসা করলেন, “কিছু মনস্থ করতে পেরেছেন?” চিসসা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ-সূচক উত্তর জানালেন, বললেন, “জাহাঁপনা, দাবার ছকের প্রথম চৌকোণা ঘরটির জন্য আমার একটিমাত্র গমের দানা চাই।”
রাজসভায় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ কিছুক্ষণের জন্য নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। এত বড় একটি সুযোগ পেয়ে চিসসা কিনা চাইলেন একটিমাত্র গমের দানা? রাজা শেহরাম থমথমে গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি যা চাইলেন, তা ভেবে চাইলেন তো? সাধারণ একটি গমের দানা?”
“জ্বী হুজুর। প্রথম চৌকোণার জন্য একটি দানা, দ্বিতীয় চৌকোণার জন্য দুইটি, তৃতীয় চৌকোণার জন্য চারটি, চতুর্থটির জন্য আটটি, পঞ্চমটির জন্য ষোলটি, …” বলতে শুরু করলেন চিসসা। আর তাতে বিরক্ত হয়ে থামিয়ে দিলেন শেহরাম, “বুঝেছি বুঝেছি। আগের ঘরের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ গমের দানা চাই পরের ঘরটির জন্য, এই তো? আপনার চাওয়া এনাম যথাসময়ে আপনার বাসায় পৌঁছে যাবে। শুধু এতটুকু মনে রাখবেন, আপনি এই তুচ্ছ পুরষ্কারের আর্জি জানিয়ে আমাকে অত্যন্ত অসম্মানিত করলেন। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আপনার কাছে আরো ভালো কিছু আশা করেছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার হুকুমদারেরা আপনার গমের বস্তা এনে দিচ্ছে।”
চিসসা মৃদু হেসে বিদায় নিলেন রাজসভা থেকে, পুরষ্কারের জন্য ‘অপেক্ষা’ করতে থাকলেন মূল ফটকে।
সেদিন নৈশভোজের সময়ে রাজা শেহরামের মনে পড়লো চিসসার কথা। জিজ্ঞেস করলেন, “ঐ কূপমণ্ডুক শিক্ষকের প্রাপ্য পুরষ্কার তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে?” জবাব এলো, “মহারাজ, আমাদের রাজসভার জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গ এখনও হিসেব করে চলেছেন চিসসার প্রাপ্য গমের পরিমাণ।” বিরক্ত রাজা ভ্রূকুঞ্চিত করে এত ঢিমেতালে কাজ চলার কারণ জানতে চাইলেন। একইসঙ্গে আদেশ করলেন, ঘুম ভেঙেই তিনি যেন শুনতে পান যে চিসসাকে তাঁর ভাগ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরদিন ভোরবেলায় দরবারের খাজাঞ্চি রাজার সঙ্গে দেখা করার জন্য রাজপ্রাসাদে উপস্থিত হলেন। খাজাঞ্চিকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “বাকি সব কথা পরে। আগে বলুন, চিসসাকে তাঁর ভাগ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা।”
নতমস্তকে খাজাঞ্চি এবার বলতে শুরু করলেন, “হুজুর, সে কথা বলতেই তো এত সকালে হাজির হয়েছি আপনার কাছে। তাঁর প্রার্থনা মোতাবেক গমের দানার সংখ্যা হিসেব করতে সারা দিনরাত একটানা খেটেছি আমরা। কিন্তু জাহাঁপনা, হিসেবটা যে অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে।”
বিরক্ত কণ্ঠে রাজা বললেন, “যত বড়ই হোক, সেটা আমার শস্যভান্ডার থেকে দিয়ে দিন।”
খাজাঞ্চি বললেন, “মহারাজ, চিসসার প্রার্থনা পূর্ণ করা আপনার ক্ষমতার বাইরে। সে যা চেয়েছে, তত দানা আপনার গোলায় নেই। আপনার পুরো রাজ্যেও এত দানা নেই। শুধু তা-ই নয়, গোটা পৃথিবীতেও এত দানা নেই। এবং যদি আপনি আপনার কথা রাখতে চান, তবে দুনিয়ার সমস্ত জমিকে গমের ক্ষেত বানিয়ে ফেলতে হবে, সমস্ত নদী-সাগর-মহাসাগর শুকিয়ে সেখানে গমের ক্ষেত করতে হবে, সুদূর উত্তর মেরুর বরফাচ্ছন্ন ভূমিকে গলিয়ে সেখানেও কোনোভাবে গমের চাষ শুরু করতে হবে। তাতেও সে পরিমাণ গমের সংকুলান হবে কিনা, আমি নিশ্চিত নই জাহাঁপনা।”
রাজা অবাক বিস্ময়ে খাজাঞ্চির কথা শুনছিলেন এতক্ষণ। ঘোর কাটার পর জানতে চাইলেন, “কতগুলো দানা?”
কিছুক্ষণ খাতার দিকে তাকিয়ে থাকার পর বয়োবৃদ্ধ খাজাঞ্চি বললেন, “মহারাজ, সংখ্যাটা ১,৮৪,৪৬,৪০,৭৩,৭০,৯৫,৫১,৬১৫ !”
গল্পটা কতদূর সত্য, তা জানা যায়নি। তবে পুরষ্কারটা যে এই রকম একটা সংখ্যা দাঁড়াবে, সেটা আজকাল গণনা করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না খুব সহজ, ১ থেকে শুরু করে ২, ৪, ৮ ইত্যাদি সংখ্যাগুলো পর্যায়ক্রমে যোগ করতে হবে। এভাবে ২ এর ৬৩তম ঘাত যা হবে, সেটাই হল ৬৪তম ছকের জন্যে আবিষ্কারকের প্রাপ্যের সমান। আর মোট গমের দানার পরিমাণ বের করতে হলে ২ এর ৬৪তম ঘাত থেকে ১ বিয়োগ করলেই চলবে। উত্তরটা আসবে ঠিক এটিই, খাজাঞ্চি যা বলেছিলেন! এই বিরাট সংখ্যাটা সম্বন্ধে ঠিকঠাক ধারণা করতে হলে ভাবুন, শস্যগুলো রাখতে কত বড় গোলার দরকার হবে? উত্তরটা দিয়ে দিচ্ছি। গোলাঘরটি যদি ৪ মিটার উঁচু আর ১০ মিটার প্রস্থের বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে এর দৈর্ঘ্য হবে ৩০ কোটি কিলোমিটার! এই দূরত্বটি এতটাই যে, পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব রীতিমতো এর দ্বিগুণ।
চিসসা’র সেই পুরষ্কার দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন শেহরাম। তবে তিনি সেটা খুব সহজে এড়িয়েও যেতে পারতেন বৈকি! শুধু তাঁকে পাল্টা একটা প্রস্তাব দেওয়ার প্রয়োজন ছিলো তাঁর, প্রতিটি দানা গমকে একটি একটি করে গুনে নিতে হবে চিসসাকে। যদি তিনি এই প্রস্তাবটি করতেন এবং চিসসা তাতে সম্মত হতেন (যদিও সে সম্ভাবনা ছিলো নিতান্তই সামান্য!), তাহলেও তিনি তাঁর গোটা জীবন জুড়ে না খেয়ে না ঘুমিয়ে যদি টানা গুনে যেতে পারতেন, তাতেও তিনি তাঁর মোট প্রাপ্য গমের দানার পরিমাণের একটি তুচ্ছ অংশ পেতেন মাত্র!
দাবার ইতিহাস
ঠিক কোথায় সর্বপ্রথম দাবা খেলার উৎপত্তি, সেটি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কিছু প্রাচীন আমলের হরফে দাবা খেলার প্রারম্ভিক কাল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, পাশাপাশি খেলাটির আদি অস্তিত্বের প্রমাণস্বরূপ কিছু কিছু দাবার গুটিরও হদিশ মেলে। কিন্তু এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, তত্ত্ব ও মতামতের অভাব নেই। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদের ধারণা ভারত, পারস্য কিংবা চীনই দাবার জন্মস্থল। তবে দাবা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান এখানেই সীমিত নয়। ইউরোপে দাবার যে রূপ অনুপ্রবেশ করে তা আদপে প্রায় ১,৩৫০ বছর আগেই পারস্যে খেলা হতো। সেই সময় তথা সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সেই অঞ্চলে মুসলিম সেনাশক্তির অধীনে ছিল। মুসলিম বিশ্বে এই খেলাটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায় এবং ইসলামের প্রচারের সাথে সাথে খেলাটি ছড়িয়ে যেতে যেতে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপেও চলে যায়।
বিভিন্ন জাতির পক্ষেই নানারকম দাবি থাকলেও হলেও বহু গবেষণার পর গবেষকগণ একমত হয়েছেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশেই খেলাটির আদি উৎপত্তি স্থান। দাবার মতো এক ধরনের খেলার সন্ধান পাওয়া যায় প্রাচীন মিশরে খ্রিস্টপূর্ব ৩,০০০ অব্দে, যার নাম ছিলো শতরঞ্জ। তবে ভারত বর্ষে চতুরঙ্গ নামক দাবা খেলাটির সূচনা হয় ষষ্ঠ শতাব্দীর আগেই, ভারতবর্ষে তখনও গুপ্ত সাম্রাজ্য বিরাজমান। তখন দাবাকে চতুরঙ্গ বলার কারণ ছিল– খেলাটিতে হাতি, ঘোড়া, রথ ও সৈন্য এই চারটি অংশ ছিল। কিন্তু চতুরঙ্গ খেলাটা ‘দাবা’ হয়ে উঠতে অনেক সময় চলে গেছে, পাড়ি দিতে হয়েছে সমুদ্র। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে খেলাটা ছড়িয়ে পড়লো কীভাবে?
আসলে ওই সময়ে পারস্যের সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিলো দারুণ। পারস্যের বণিকেরা খেলাটি দেখেন, এবং বেশ পছন্দ করে ফেলেন। অতি উৎসুক কয়েকজন বেশ শোরগোল করে নিয়মকানুন শিখেও ফেলেন। পরবর্তীতে পারস্যে এই খেলার উন্নয়ন সাধিত হয়, এবং চতুরঙ্গ নামটা বদলে সেটিই হয়ে ওঠে ‘শতরঞ্জ’। নাহ, নামটা বদলে গেছে বলাটা ঠিক হলো না। আসলে পারস্য বর্ণমালাতে ‘চ’ এবং ‘গ’ না থাকায় সেটাই কালক্রমে ‘শ’ এবং ‘জ’-তে পরিণত হয়। তবে কিছু কিছু জায়গায় খেলাটিকে ‘শাহ-মাৎ’-ও বলা হতো, যা থেকে পরবর্তীতে ইংরেজি ‘চেকমেট’ এসেছে বলে ধারণা করা হয়।
তবে প্রায় একই সময় ভারত থেকে খেলাটি চীনেও পাড়ি দেয়। চীনারা এই খেলার নামকরণ করে জিয়ানকি (Xiangqi), যা কিনা দাবারই আরেক নামান্তর! তবে চীন দাবি করে, জিয়ানকি তাদের নিজেদের উদ্ভাবিত খেলা। শুধু তাই নয়, দাবা খেলাটাও নাকি ভারতে নয়, চীনেই উদ্ভাবিত হয়েছে! যদিও ইতিহাসবিদেরা চীনের সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পাননি।
অন্যদিকে শতরঞ্জ কিন্তু পারস্যে অলস বসে ছিলো না, সুযোগ বুঝে ঠিক পাড়ি জমিয়েছিলো স্পেনে! সে সময় স্পেনে ছিলো মুসলিম শাসনামল, যার বদৌলতে পারস্য থেকে খেলাটি খুব সহজেই স্পেনে শক্ত আসন গেঁড়ে বসে। তবে নামটা এখানে এসে বদলে যায় আরেকবার, এবার সেটা পর্তুগীজ ভাষায় হয়ে যায় ‘Xadrez’, যাকে ইংরেজিতে ‘Ajedrez’, ‘Acedrex’, ‘Axedrez’ বিভিন্নভাবে লেখা হয়।
পারস্যের ‘শাহ-মাৎ’ নামটিও রেহাই পায়নি রূপান্তর থেকে। গ্রিসে ‘শাহ’ তথা রাজা শব্দটির পরিভাষা হচ্ছে ইয়াট্রিকিওন (Zatrikion), আর এই নামেই খেলাটি সেখানে প্রচলিত হয়। এছাড়া ল্যাটিন ভাষায় Ludus Scacchorum, ইতালিয়ান ভাষায় scacchi, কাতালান ভাষায় escacs, ফ্রেঞ্চ ভাষায় échecs, ওলন্দাজ ভাষায় schaken, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে দাবা বিভিন্ন নাম ধারণ করেছে। পরে ইউরোপে ও রাশিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এই খেলা, তবে এখানে নতুন নাম ‘চেস’। শব্দটি পুরাতন ফরাসি ভাষা ‘échecs’ (অর্থ চেক) থেকে উদ্ভূত। তবে শুধু নামেই নয়, খেলাটিতেও পরিবর্তন আসে অনেকটাই। ইউরোপে আসার পরই দাবায় প্রথমবারের মতো বিশপ (হাতি) যুক্ত হয়, আরও পরে যোগ হয় কুইন (রানি)। ধীরে ধীরে ‘চেস’ বা দাবা ইউরোপীয়দের মাধ্যমেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
প্রকারভেদ
দাবার দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামধারণ করেছে খেলাটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েক প্রকার দাবা নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। বলা বাহুল্য, বিশেষ কোনো পর্যায়ক্রম হিসেবে নামগুলো এখানে দেওয়া হয়নি। কারণ, এদের মধ্যে অনেকগুলো খেলাই অনেকটা সমসাময়িকভাবে প্রচলিত আছে কিংবা ছিলো।
(১) চতুরঙ্গ
ধারণা করা হয়, ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে এই খেলাটিই ছড়িয়ে গিয়েছিলো পারস্য, চীনসহ আরো অনেক দেশেই। খেলাটির বিশেষত্ব হচ্ছে, খেলাটিতে চারটি বিভাগ ছিলো; অর্থাৎ খেলাটিতে চারজন অংশগ্রহণ করতে পারতেন।
(২) শতরঞ্জ
ভারতবর্ষ থেকে পারস্যে পাড়ি জমানোর সাথে সাথে ‘চতুরঙ্গ’ যে কোন ফাঁকে ‘শতরঞ্জ’ হয়ে গেছে, কেউ বুঝতেই পারেনি!
(৩) সিগার ডিভান
(৪) স্টন্টন (Staunton)
(৫) কুরিয়ার দাবা
সেন্ট্রাল ইউরোপে এই দাবা প্রায় ৬০০ বছর ধরে প্রচলিত ছিলো। তবে এই মুহূর্তে এ ধরনের দাবা পাওয়া খুব সহজ ব্যাপার নয় বৈকি!
(৬) চীনা দাবা (শাঙ্ চি)
(৭) বাবুশকা দাবা
এটিও চীনা একধরনের দাবা। শুধু পার্থক্যটা হচ্ছে, এই খেলাটি মূলত শিশুদের জন্য বিশেষায়িত।
(৮) জাপানী দাবা
(৯) থাই দাবা
(১০) দা ভিঞ্চি দাবা (পাচিওলি দাবা)
মূলত এই দাবার মূল ডিজাইন করেছিলেন পাচিওলি, যিনি কিনা লিওনার্দো দা ভিঞ্চির বন্ধু এবং রুমমেট ছিলেন। কারো কারো মতে, দা ভিঞ্চি নিজেও এই দাবার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
(১১) বার্মিজ দাবা
(১২) মঙ্গোলীয় দাবা (সাঁতার)
(১৩) ফিলিপিন্স দাবা
(১৪) কোরিয়ান দাবা
(১৫) শার্লেমেইন দাবা
এ ধরনের দাবা মূলত প্রচলিত ছিলো ইতালিতে।
(১৬) আইল অফ লুইস দাবা
এখন পর্যন্ত ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে বিখ্যাত দাবার প্রকার।
(১৭) মুসলিম ক্যামেলবর্ন দাবা
এই দাবাতে প্রায় সবরকমের গুটিই দেখতে অনেকটা একই রকম। কোনোটার হয়তো নিচের অংশ স্ফীত, কোনোটার ক্ষেত্রে উপরের অংশ স্ফীত, আবার কোনোটা হয়তো উপরে এবং নিচে দুই অংশই সামান্য স্ফীত। কিছুটা গম্বুজাকৃতি রূপ দেওয়া হয়েছে এ দাবায়।
(১৮) কোরিয়ান সোপস্টোন দাবা
(১৯) বিশাখাপত্তনম দাবা
ভারতবর্ষে দাবার প্রকারের বিশেষ অন্ত নেই। তার মধ্যেই অন্যতম একটি ধরন এই বিশাখাপত্তনম দাবা। বলুন তো, এই ধরনের দাবা কোথায় প্রচলিত রয়েছে এখনও?
(২০) লোকা
এই দাবা দেখতে অনেকটাই চতুরঙ্গের মতো, শুধু পার্থক্যটা দাবার সদস্যদলের আকৃতিতে এবং খেলার নিয়মকানুনে।
(২১) আধুনিক দাবা
এটি নিয়ে বিশেষ কিছু বলার আদৌ অপেক্ষা রাখে না। আধুনিক এই দাবা মূলত ইউরোপিয়ান দাবা, যা আন্তর্জাতিকভাবে এবং ঘরোয়া পরিবেশেও আমরা নিয়মিত ব্যবহার করে থাকি।
পরেরবার কাউকে কোনো উপহার দিতে হলে দাবাটাও তাহলে খুব একটা খারাপ সংযোজন হয় না বৈকি!
ফিচার ইমেজ: HDWallpapers