এমবাপে রিয়াল মাদ্রিদে আদৌ আসবেন তো?
প্রথমেই এই প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েই লেখাটা শুরু করা যাক। আগের বছরের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের সময়টা ফুটবল ভক্তদের একরকম পাগল বানিয়েই ছেড়েছিল। একদিকে লিওনেল মেসি দুই দশকের বার্সেলোনা ক্যারিয়ার শেষ করে পাড়ি জমিয়েছেন পিএসজিতে, আবার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জুভেন্টাস ছেড়ে ফিরে এসেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। তবে চমকের শেষ ছিল না এখানেই। বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছিল, কিলিয়ান এমবাপে নাকি চড়া দামে এই মৌসুমেই অথবা ফ্রি এজেন্ট হয়ে আগামী মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে চান। পিএসজির স্পোর্টিং ডিরেক্টর লিওনার্দোও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এমবাপে তার ছোটবেলার এই স্বপ্নপূরণে বেশ কয়েকবার পিএসজি থেকে পাওয়া নতুন চুক্তির প্রস্তাব ফিরিয়েও দিয়েছেন।
কিন্তু শেষমেষ কিছুই হয়নি। এমবাপে রয়ে গেছেন প্যারিসেই, পরে ছন্দ খুঁজে নিয়েছেন মেসি-নেইমারদের সঙ্গে জুড়েই, আধিপত্য বিস্তার করেছেন, মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন।
ইন্টারনেটে এমবাপের ছেলেবেলার কয়েকটি ছবি খুঁজলেই পাওয়া যায়, যেখানে তিনি তার আইডল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ছবি নিজের বেডরুমের চারদিকে লাগিয়ে বসে রয়েছেন। মোনাকোতে থাকাকালীন চেলসি থেকে অফার পেলেও সেটি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ঐ সময় রিয়াল মাদ্রিদে একটি ছোটোখাটো ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিলেন তার বাবার সাথে, বলতে গেলে তখনই তিনি তার ভবিষ্যৎ ইচ্ছেটা মনে গেঁথে ফেলেন।
এমবাপে বলেন,
“আমি ছোট থাকতেই আমার ক্যারিয়ারের জন্য একটি পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছি। আমি জানি আমি কী করতে চাই, জানি কোথায় যেতে চাই, আর আমি কিছুতেই এই লক্ষ্য থেকে সরব না।”
এমবাপের জন্য রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া অন্য কোনো ক্লাব আগ্রহ দেখায়নি। গত গ্রীষ্মকালীন দলবদলের সময়ে শুধুমাত্র এই রিয়াল মাদ্রিদই নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে ১৬০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব গত দিয়েছিল পিএসজিকে, যেটি বাড়তে বাড়তে ২২০ মিলিয়নে পৌছেছিল। পিএসজির পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি পিএসজি’র স্পোর্টিং ডিরেক্টর লিওনার্দো তো হতাশ হয়ে এমনটাও বলেছেন যে টানা দু’বছর ধরে যেভাবে খুল্লামখুল্লা কথাবার্তা বলে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ, সেটার জন্য শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। বলেছেন, এমবাপে সাধারণ কোনো খেলোয়াড় নন, তিনি পুরো বিশ্বেরই অন্যতম সেরা। আর তাকে সেই সম্মানটা দেওয়া হচ্ছে না।
গত মৌসুমে পচেত্তিনোকে নতুন কোচের দায়িত্ব দেয়ার পর থেকেই আস্তে আস্তে পিএসজিকে নতুন পরাশক্তি হিসেবে ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত করার কাজটা পুরোদমে চলছে। তার ধারাবাহিকতায়ই এই মৌসুমে পিএসজি দলে ভিরিয়েছিল দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সদ্য ইউরোজয়ী ইতালির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোনারুমা, রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক অধিনায়ক সার্জিও রামোস, ইন্টার মিলানের রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমি, আর শেষে মেসিকে। তাই বর্তমান ফ্রান্সের সেরা ফরোয়ার্ডকে ছাড়ার ব্যাপারে তাদের কিছুটা অনীহা রয়েছে, সেটা বলাই বাহুল্য।
এমবাপেকে তার প্রজন্মের সেরা ফরোয়ার্ডদের একজন ধরা হয়। ২২ বছর বয়সী এই ফরাসির সাথে ভবিষ্যতে লড়াইয়ের জন্য ধরা হচ্ছে কেবল আর্লিং হালান্ডকে। তবে জাতীয় দলের প্রাপ্তির বিচারে এমবাপে ইতঃমধ্যেই হালান্ডকে বহু পেছনে ফেলে দিয়েছেন। এগিয়ে আছেন ‘ভার্সেটাইল’ হওয়ার লড়াইয়েও। এই ফরাসি ফরোয়ার্ড মূলত স্ট্রাইকার হলেও খেলতে পারেন দুই উইংয়েই। ২০১৬-১৭ মৌসুমে যখন প্রথমবারের মতো এমবাপে সবার নজরে এলেন, সেই মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে ৯টি খেলায় করেছিলেন ৬টি গোল। এর মধ্যে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিরুদ্ধে ২ গোল করে প্রায় একাই খেলাটি পিএসজির হাতে এনে দিয়েছিলেন।
মোনাকোতে সেই মৌসুমে এমবাপে ছিলেন ফ্রি রোলে। ৪-৪-২ ফরমেশনে খেলা মোনাকোতে তার পাশে ডিপ-লায়িং ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলতেন রাদামেল ফ্যালকাও। এইজন্য এমবাপে মাঠের দুই পাশেই নিজের কাজ চালাতে পারতেন। থমাস লেমার, ফ্যাবিনহো, হোয়াও মৌতিনহো, বার্নার্ডো সিলভার মতো তরুণ মিডফিল্ডারদের নিয়ে মোনাকো হুংকার দিয়েছিল ফুটবল বিশ্বে। এই রকম তরুণ তুর্কিদের মাঝেই আলাদা করে নজর নিজের দিকে টেনে নিয়েছিলেন এমবাপে। তারই পুরস্কারস্বরূপ জায়গা পেয়ে যান ফ্রান্সের বিশ্বকাপ অভিযানের দলে।
ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী এই দলে এমবাপে খেলেছেন মূলত ডান পাশে। ডান পায়ের খেলোয়াড় হয়ে ডান দিকে খেলে এই বিশ্বকাপে তার পা থেকে এসেছিল ৪টি গোল। এর মধ্যে দ্বিতীয় পর্বে আর্জেন্টিনার রক্ষণের সাথে ছেলেখেলা করে আদায় করে নিয়েছিলেন ২ গোল। তাতেই বিদায় ঘটে মেসিবাহিনীর। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন এমবাপে।
পিএসজির টানা লিগ জয়ের যে কারিশমা চলছিল, তাতে এমবাপের অবদান অনেক। অধরা ছিল শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগ, ২০১৯-২০ মৌসুমে ফাইনালে উঠলেও সেখানে হারতে হয় বায়ার্নের কাছে। আবার গত মৌসুমেও হয়নি স্বপ্নপূরণ। কিন্তু গত মৌসুমে বার্সেলোনার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকসহ করেছিলেন মোট ৮ গোল, করিয়েছিলেন ২ গোলও। লিগ ওয়ানে গোল করেছিলেন ২৭টি, পাশাপাশি করিয়েছেন ৭টি। পিএসজিতে তিনি মূলত বামদিকেই বেশি খেলেন। তার মানের বিচারে গত মৌসুমটি ভালো না গেলেও প্রতি ৯০ মিনিটে ০.৯৪ গোল তৈরিতে যুক্ত ছিলেন। অর্থাৎ, তাকে আমরা প্রতিটি খেলাতেই কমপক্ষে একটি গোলে যুক্ত থাকতে দেখেছি। এরকম গোলের সুযোগ তৈরির জন্যই তিনি রিয়ালের নজরে এসেছেন। তার অন্যতম একটি গুণ হচ্ছে তার শ্যুটিং এক্যুরেসি। প্রতি ৯০ মিনিটে তিনি ৩.৫১টি শ্যুট নিয়েছেন, যার ১.৬টিই ছিল অন টার্গেট – যা ইউরোপে খেলা কেবল ৬% খেলোয়াড়ই পেরেছিলেন।
এখন কথা হচ্ছে, রিয়াল মাদ্রিদে এমবাপের পাড়ি জমানো নিয়ে যে এত গুঞ্জন, তিনি রিয়ালে গেলে তার খেলা কেমন ধাঁচের হতে পারে? নতুন কোচ কার্লো আনচেলত্তির অধীনে কেমন হতে পারে তার ভূমিকা?
রামোস এবং ভারানে চলে যাওয়ার পর রিয়াল সামান্য স্থিতি হারালেও ধীরে ধীরে গুছিয়ে উঠছে। কার্লো আনচেলত্তি তার দলকে খেলাচ্ছেন ৪-৩-৩ ফরমেশনে, ‘লা ডেসিমা’ও জিতেছিলেন এভাবে খেলিয়েই। এমবাপে একজন ‘ভার্সেটাইল’ খেলোয়াড় – স্ট্রাইকার, রাইট ফরোয়ার্ড, লেফট ফরোয়ার্ড, রাইট উইঙ্গার, লেফট উইঙ্গার… সব পজিশনেই খুব ভালোভাবেই মানিয়ে যান। রিয়ালের একদম সামনের তিনটি পজিশন বর্তমানে মূলত পাঁচজন খেলোয়াড়ের কাছে রয়েছে – করিম বেনজেমা, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, মার্কো আসেন্সিও, গ্যারেথ বেল, এডেন আজার। এদের পাশাপাশি রদ্রিগো ও লুকা ইয়োভিচকেও মাঝে মধ্যে দেখা যায়। দলে জায়গার জন্য এদের সাথেই টক্কর দিতে হবে এমবাপেকে।
এমবাপের যে ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে, তা হচ্ছে তার দুর্দান্ত গতি। শুধু তা-ই নয়, ৭৩.৬% পাসিং অ্যাক্যুরেসি প্রমাণ করে পাস দেয়া-নেয়াতেও তিনি কতটা পারদর্শী। রিয়াল মাদ্রিদের বিশ্বসেরা মিডফিল্ডের জন্য বল যোগান দেওয়াটা বরাবরই ছিল হাতের মোয়া, তাই এমবাপের এই শক্তির জায়গাটা হতে পারে মাদ্রিদের জন্যও দারুণ কাজের। পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, প্রতি ৯০ মিনিটে রিয়ালের মধ্যমাঠ থেকে ৪৩.৪টি বল ফরোয়ার্ডদের কাছে পাঠানো হয় গোলের সুযোগ তৈরির জন্য। রিয়ালে বর্তমানে খেলা অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চাইতে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢোকা এবং ফাইনাল থার্ডে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে এমবাপে অনেকটাই এগিয়ে। মাঠে এমবাপের এলাকা মূলত লেফট ওয়াইড এরিয়া ও লেফট হাফ স্পেস। হিট ম্যাপে তাকে এসব জায়গাতেই বেশি দেখা যায় সচরাচর। এমবাপে তার গতিকে কাজে লাগিয়ে নিচে নেমে আসতে পারবেন, আবার কাউন্টার অ্যাটাকের সময় ত্বরিতগতিতে উপরেও উঠে যেতে পারবেন।
এবার বরং পজিশন নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
রাশিয়া বিশ্বকাপে এমবাপে খেলেছেন ডানদিকে। রিয়ালেও তার পক্ষে ডানে খেলা সম্ভব, যদি বামদিকে ভিনিসিয়াস বা এডেন আজার খেলেন। স্ট্রাইকার হিসেবে সেক্ষেত্রে বেনজেমা থাকবেন। এই পদ্ধতিতে এমবাপের কাছ থেকে আউটপুট তুলনামূলক কম আসার সম্ভাবনাই বেশি। এখানে ভিনিসিয়াস মূলত বল নিয়ে ভেতরে ঢুকবেন, তার সামনে দৌড়ানোর জন্য তৈরি থাকবেন এমবাপে, আর জায়গা নিয়ে অবস্থান করবেন বেনজেমা। ভিনিসিয়াসের জায়গায় যদি আজার খেলেন তাতেও প্রায় এরকমই হবে তাদের পরিকল্পনা।
যদি এমবাপেকে বামে খেলানো হয়, তবে ডানদিকে খেলাতে হবে বেল কিংবা আসেন্সিওকে। বেনজেমার ভূমিকা পরিবর্তিত হয়ে তিনি চলে যাবেন ফলস নাইনে। ডানে থাকা বেল বা আসেন্সিও ইনভার্টেড উইঙ্গার হিসেবে খেলবেন। তারা কাট-ইন করে ভেতরেও ঢুকতে পারেন, আবার বক্সের কোণায় গিয়ে বক্সে ক্রসও ফেলতে পারেন। এই সিস্টেমে এমবাপেই দলের মূল গোলস্কোরার থাকবেন। তার কাজই হবে শুধু বক্সে ঢুকে বল পাওয়ার অপেক্ষা করা, কিংবা নিজ থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে গোলের চেষ্টা করা। এমবাপে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন এই পজিশনেই। রিয়ালের বর্তমানে দরকার এমন এমবাপেকেই।
গত মৌসুমে দলে ভেড়ানো লেফটব্যাক ডেভিড আলাবার সাথে এমবাপের কম্বিনেশনের উপর এটা অনেকখানিই নির্ভর করবে। আলাবা একজন আক্রমণাত্মক ফুলব্যাক, সেই সাথে ভার্সেটাইলও। এমবাপের সাথে জুটি গড়ার কাজটি আলাবার উপরই বেশি নির্ভর করবে।
কোনো কারণে যদি বেনজেমাকে খেলানো সম্ভব না হয় বা বিশ্রাম দেয়া হয়, তবে তার জায়গায় রদ্রিগোকে ফলস নাইন হিসেবে খেলানো যেতে পারে। তবে এই পরিকল্পনায় না গিয়ে আনচেলত্তি সরাসরি এমবাপেকেই স্ট্রাইকার হিসেবে খেলাতে পারেন। তখন তার সাথে দুই উইংয়ে আজার বা ভিনিসিয়াস এবং বেল বা আসেন্সিও থাকবেন।
তবে কখনো যদি রিয়াল দুই স্ট্রাইকার খেলানোর পরিকল্পনা নেয়, সেক্ষেত্রে দুই ওয়াইড মিডফিল্ডার রোলে বেল আর ভিনিসিয়াসকে খেলিয়ে একদম সামনে বেনজেমা আর এমবাপেকে খেলাতে পারে। তবে আনচেলত্তির নিজস্ব ট্যাকটিক্স অনুযায়ী ৪-৩-৩ বাদ দিয়ে অন্য ফরমেশনে চেষ্টা করার সম্ভাবনা খুবই কম।
রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পর গোলের জন্য রিয়াল প্রায় পুরোপুরিই বেনজেমার উপর নির্ভরশীল। গত মৌসুমে লা লিগায় তাদের করা ৬৭টি গোলের এক-তৃতীয়াংশই এসেছিল তার পা থেকে। যতক্ষণ তিনি ধারাবাহিক থাকেন, ততক্ষণ রিয়ালের কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু যেদিন তিনি ‘অফ’ থাকেন, পুরো রিয়ালই সেদিন নিজেদের হারিয়ে খোঁজে। দলের অন্য ফরোয়ার্ডদের কৃতিত্ব কেমন, তা এই পরিসংখ্যানেই বুঝা যায়। লা লিগায় ৩১টি খেলায় ২৭টি গোল করে রিয়ালকে কোনোমতে দ্বিতীয় স্থানে রাখতে পেরেছিলেন বেনজেমা। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?
ইউরো ২০২০ আসরে সবাই মুখিয়ে ছিল এমবাপে-বেনজেমা জুটির কাজ দেখতে। তেমন সাফল্য না পেলেও তারা যে একসাথে খেলে একে অপরের উপর থেকে চাপ কমিয়ে দিতে পারবেন, তা দৃশ্যমান ছিল। ইউরোতে তারা যা পারেননি, সেটাই তারা করে দেখিয়েছেন নেশন্স লিগে। ফাইনালের স্পেনকে হারিয়ে তার ঘরে তুলে নিয়েছিলেন ফ্রান্সের জন্য প্রথম নেশন্স লিগ শিরোপা। এইভাবে রিয়ালও কেবল বেনজেমার উপর নির্ভরতা থেকে সরে আসতে পারবে।
তবে এই মৌসুমে রিয়ালের হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। আজার ও বেলের অনুপস্থিতি টেরই পেতে দেননি লস ব্লাংকোসদের। আজার ইনজুরি থেকে ফিরে নিজেকে হারিয়ে খুঁজলেও বেল এখনো দলে অনিশ্চিত। গত আগস্টের পর থেকেই তিনি ইনজুরিতে রয়েছেন।
এমবাপের এই ট্রান্সফার শুধু রিয়ালের খেলোয়াড়দের উপর নয়, তাদের সমর্থকদের উপরও একটি বড় প্রভাব ফেলবে। রোনালদো চলে যাবার পর তারা সবাই অপেক্ষায় রয়েছে তাদের নতুন সুপারস্টারের জন্য, তাদের নতুন ত্রাণকর্তার জন। এডেন আজার প্রত্যাশার তুলনায় ব্যর্থ, বিশেষ করে ইনজুরির জন্য গত মৌসুমে ৯ মাসে মাত্র পাঁচটি ম্যাচে নেমেছিলেন তিনি। ভিনিসিয়াস এখনো একজন রাইজিং স্টার। ফলে এমবাপে রিয়ালে এলে সমর্থকেরা তার কাছেই খুঁজতে চাইবেন আশ্রয়। এখনো বয়সে তরুণ হলেও এমবাপে যে সমর্থকদের এই চাপ সামাল দিতে সক্ষম, সেটা বলাই বাহুল্য।
তবে এই আলোচনার পুরোটার পিছনেই এমন দু’জন রয়েছেন, যাদের নিয়ে আদৌ পুরো লেখাটাতে তেমন কোনো কথাই হয়নি। ঠিক ধরেছেন, দুই বর্ষীয়ান মিডফিল্ডার টনি ক্রুস ও লুকা মদরিচের কথাই হচ্ছে। তারাই রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠকে রীতিমতো দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছেন, তাদের উপরেই নির্ভর করে মাদ্রিদের পুরো গেমপ্লে। কিন্তু তাদের বয়স হচ্ছে, দরকার ছিল বদলির খোঁজ করা। মধ্যমাঠের এই অভাব দূর করতে তারা ১৮ বছর বয়সী ফরাসী খেলোয়াড় এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গাকে দলে ভিড়িয়েছে। মৌসুমের শুরুতে রামোস এবং ভারানের জায়গায় নতুন কাউকে নিয়ে আসাও ছিল রিয়াল মাদ্রিদের জন্য ‘টপ প্রায়োরিটি’, সেক্ষেত্রে এসেছেন এডার মিলিতাও – যাকে দিয়ে তাদের এই দুই অভিজ্ঞ ডিফেন্ডারের অভাব অনেকাংশেই পূরণ হচ্ছে। ফলে স্কোয়াড এই মুহূর্তে স্থিতই মনে হচ্ছে। কিন্তু সঙ্গত কারণেই বছরখানেক আগে পরিস্থিতিটা ঠিক এমন ছিল না। আবার কোভিড মহামারীর ফলস্বরূপ অর্থনৈতিক দৈন্যতার প্রসঙ্গ ছিল, ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’ হয়ে ছিল সুপার লিগ। সেই সময়টাতে ১৬০-২২০ মিলিয়নে এমবাপেকে কিনতে চাওয়াটাও হতে পারত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। রিয়ালের যে ঐতিহ্য রয়েছে প্রতি মৌসুমে কম হলেও একজন তারকা খেলোয়াড় দলে ভিড়ানোর, সেই লক্ষ্যে ফ্লোরেন্টিনো পেরেজ এবার মাঠে গাঁট বেঁধে নামতেই পারেন। সুপার লিগ নিয়ে তার যেরকম দুর্নাম রটেছে, আবার পরবর্তীতে দলের সাবেক খেলোয়াড়দের ব্যাপারে বেফাঁশ মন্তব্যের যে অডিও রেকর্ড বের হয়েছিল, তা থেকে পরিষ্কারভাবেই অবস্থানটা কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গেছে তার। সে দায় মেটাতে পেরেজ এভাবে এবার মাঠে নামার কথা ভাবতেই পারেন। তবে প্রশ্নটা এখনো ঝুলছে মাথার উপরে, এমবাপে এবার আসবেন তো?
আবার এমবাপে এলেও আরেকটা প্রশ্ন উঠবে। ভিনিসিয়াস এই মুহূর্তে পরিণত হচ্ছেন, দারুণ পারফর্ম করছেন। এমবাপে এলে কীভাবে মানিয়ে নেবেন ভিনিসিয়াস? দলে তার ভূমিকা কেমন হবে? তিনি কি তখনও প্রাসঙ্গিক থাকবেন? তার পরিণতির গতিটা বাধাপ্রাপ্ত হবে না তো? রিয়ালও কি চাইবে ফরাসি এই সুপারস্টারের জন্য নিজেদের এক রত্নকে ছুড়ে ফেলতে?
প্রশ্নগুলো বড় এবং জটিল। উত্তরটা তোলা রইল সময়ের হাতেই।