৪-১, ৫-০, ২-১ ।
স্কোরলাইনগুলো অস্ট্রেলিয়ার জন্যে অপরিচিত কিছু নয়। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বিপক্ষকে এমন স্বাদ দেওয়ার অভিজ্ঞতা তো আর কম নেই অজিদের। তবে এক বছরে খেলা সবগুলো সিরিজেই পরাজিত দলের নাম অস্ট্রেলিয়া, এমন ঘটনা ক্রিকেট বিশ্ব প্রথম দেখেছে ২০১৮ সালেই। ক্রিকেট বিশ্বকাপ আসছে, অথচ ফেভারিট-তত্ত্বে অস্ট্রেলিয়ার নামটি নেই, এমন ঘটনাও তো এবারই প্রথম!
বছর না ঘুরতেই পরিস্থিতি মোড় নিয়েছে পুরো ১৮০ ডিগ্রি। বিশ্বকাপের বছরে অস্ট্রেলিয়া দেখা দিয়েছে সেই পুরোনো রূপে। ভারতের মাটিতে ভারতকে ওয়ানডে সিরিজ হারিয়ে, পাকিস্তানকেও মরুর বুকে সিরিজ হারানোর স্বাদ দিয়ে, ক্যাঙারুরা জানান দিয়েছে, ‘বিশ্বকাপের রঙটা হলুদই আছে, অস্ট্রেলিয়া সেই ফেভারিটই আছে।’
মাঝের সময়টা কি টালমাটালই না গিয়েছে! বল টেম্পারিং-কাণ্ডে দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া যেন পড়েছিল মারিয়ানা ট্রেঞ্চে। তাদের বিকল্প খুঁজে পেতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকেরা পড়েছিলেন মহাসমস্যায়, শেষ তিন সিরিজে দলে ডেকেছিলেন ২৬ ক্রিকেটারকে।
এখনো সমস্যা যায়নি। আবারও ক্রিকেটাররা ফর্মে ফিরেছেন, আর নির্বাচকেরা ভাবছেন, ‘কাকে রেখে কাকে নেবো?’ এ যে মধুর সমস্যা!
এই মধুর সমস্যার মূলে যারা, শেষ পর্যন্ত যারা টিকে থাকতে পারেন আলোচনায়, যাদের নিয়ে হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ স্কোয়াড, তা-ই পড়ুন এই লেখায়।
পজিশন: ওপেনিং
১২ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরি নেই, দলও জয়ের ধারায় নেই। বিগত কিছুদিনে পৃথিবীটা যেন বড্ড বেশি তেতো ঠেকছিলো অ্যারন ফিঞ্চের কাছে। রাঁচিতে ৯৩ রানের ইনিংসে আভাস দিয়েছিলেন ফর্মে ফেরার, এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা তিন ইনিংসে অর্ধশতক, শতক আর সার্ধশতকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, অধিনায়কত্বের ‘চাপ’টা উপভোগই করছেন। ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা দলকে ভারতের মাটিতে সিরিজ জিতিয়েছেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৭ বছর ধরে সিরিজ না হারার রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রেখেছেন, গত বছরের স্মৃতিকে পেছনে ফেলে অস্ট্রেলিয়া আবারও পুরনো রূপে ফিরলো তার হাতেই। বিশ্বকাপে নতুন বল সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে অধিনায়কত্বের দায়িত্বটা তাই তাকেই সামলাতে হবে।
ফিঞ্চের সঙ্গী এখন কে হবেন, তা নিয়েই যত ফিসফাস, গুনগুন। এমনিতে জায়গাটা ডেভিড ওয়ার্নারের জন্যেই বরাদ্দ। এমনকি গত বছর বল টেম্পারিং কাণ্ড ঘটানোর পরও নিশ্চিত ছিল, বিশ্বকাপে ওয়ার্নার, সঙ্গে অন্য কেউ!
তবে ‘অন্য কেউ’ যে পারফর্মই করতে পারছিলেন না। ডার্সি শর্ট তার আগুনে ফর্ম সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন কেবল বিগ ব্যাশেই, ট্রাভিস হেড মিডল অর্ডার ছেড়ে ওপেনিংয়ে উঠে এসে সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না। অ্যারন ফিঞ্চকে নিচে নামিয়ে, অ্যালেক্স ক্যারিকে ওপরে উঠিয়েও কিছুতেই মিলছিলো না ওয়ার্নারের বিকল্প।
অবশেষে সেই বিকল্পের সন্ধান পাওয়া গেল ভারত সফরে, বিকল্প মিললো উসমান খাজাতে। ওয়ানডে দলে বহুদিন ছিলেন ব্রাত্য, ফিরেছিলেন এ বছরের গোড়ায় ভারতের বিপক্ষে সিরিজে। সেই থেকে এখন অব্দি ম্যাচ খেলেছেন ১২টি, অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন এর অর্ধেক ম্যাচেই। যে ছয় ম্যাচে পঞ্চাশের দেখা পাননি, তাতে সর্বনিম্ন স্কোর ২১। সবচেয়ে বড় কথা, বহুদিন বাদে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটিটা জমেছে।
তারপরও উসমান খাজা নিজেকে ফিঞ্চের সঙ্গে নিশ্চিত ভাবতে পারছেন না। ৪৩.৪ গড় আর ৯৬.৫ স্ট্রাইক রেটের ডেভিড ওয়ার্নার যে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার জন্যে পুরোপুরি তৈরি!
জাতীয় দলে খেলার সুযোগ মিলছে না? অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটের দরজা বন্ধ? তাতে কী! বিপিএল খেলছেন, সিপিএল খেলছেন। ৩৪.০৭ গড়ে ৪৪৩ রান করে বুঝিয়েও দিয়েছেন, বিশ্বকাপ খেলতে চান তিনি। আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৮৫ রানের ইনিংসের পর নিজেদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে যথাক্রমে ৬৯ এবং অপরাজিত শতরান হাঁকিয়ে ঘোষণা করেছেন, নিষেধাজ্ঞার সময়টাতেও ব্যাটে মরচে ধরতে দেননি।
বাকিটা নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত, উসমান খাজা নাকি ডেভিড ওয়ার্নার।
পজিশন: ওয়ান ডাউন
জায়গাটা দলের ব্যাটিং কাণ্ডারির। জায়গাটা ফ্যাবুলাস ফোরের একজনের, জায়গাটা স্টিভেন স্মিথের।
বিশ্বকাপে যাবার কথা ছিল অধিনায়ক হিসেবে। কিন্তু মুহূর্তের হঠকারী সিদ্ধান্তে অধিনায়কত্বের সাথে ক্যারিয়ার থেকে হারিয়ে ফেলেছেন মূল্যবান একটি বছর। তবে দলে নিজের জায়গাটা কারও কাছে যে হারাননি, সেটা বেশ নিশ্চিত করেই বলা যায়।
স্মিথের নিষেধাজ্ঞার সুযোগে অস্ট্রেলিয়া এই পজিশনে গত এক বছরে চেষ্টা করে দেখেছে ছয়জন ক্রিকেটারকে। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ ভালোও করেছেন, শন মার্শ তো তিন সেঞ্চুরিই বাগিয়ে নিয়েছেন নাম্বার থ্রি’তে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে। হ্যান্ডসকম্ব প্রথম সুযোগেই করেছেন ফিফটি। কিন্তু দলের ব্যাটিংয়ের স্থিতিশীলতা আনা, প্রতিপক্ষকে ভাবতে বাধ্য করা, এসব পারেননি কেউই। অস্ট্রেলিয়াও স্মিথকে বাদ দিয়ে ভাববার সুযোগটা পায়নি।
এখনও স্মিথই নির্বাচকদের প্রথম পছন্দ, কিছুটা ‘যদি’, ‘কিন্তু’র বেড়াজালে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা স্মিথ কি সেই আগের স্মিথই রইবেন? দেখার অপেক্ষা রইলো।
পজিশন: মিডল অর্ডার
‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’ প্রবাদকে আপ্ত মেনে অস্ট্রেলিয়ার মধ্যভাগের ব্যাটসম্যানরা যখন রান করেছেন, সবাই করেছেন। আবার যখন কোনো একজনের ব্যাটে রান আসেনি, কারও ব্যাটেই আসেনি। ফলাফল যা হয়েছে, বারেবারে দলে পরিবর্তন এসেছে, নির্বাচকদের প্রশ্নের তোপের মুখে ফেলতে বিশ্বকাপের আগে সবাই ফর্ম ফিরে পেয়েছে।
বিশ্বকাপ আলোচনায় সর্বশেষ যুক্ত হওয়া অ্যাশটন টার্নারের উদাহরণই টানা যাক। বিগ ব্যাশে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া দলে ডাক পেয়েছেন, ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড রান তাড়া করা ম্যাচে নায়ক বনে গিয়ে নির্বাচকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছেন। উনি যে সুযোগটাই পেয়েছিলেন আরেকজনের ইনজুরির কারণে।
যার ইনজুরিতে সুযোগ পেয়েছিলেন, তিনি গত বছরই অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা ওডিআই ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন। কার্যকরী মিডিয়াম পেসটা উহ্যই থাকুক, ব্যাটিংয়ে দলের আস্থার জায়গা হয়ে গিয়েছেন অভিষেকের বছর দেড়েকের মাঝেই। ৪১.৬ গড়ের সাথে চুরানব্বই ছুঁইছুঁই স্ট্রাইক রেট, সঙ্গে ইনিংসপ্রতি ছয় ওভার, শেন ওয়াটসনের দায়িত্বটা মার্কাস স্টোইনিসের কাঁধেই শোভা পায়।
সাথে টুকে নিন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের নামটাও। ক্যারিয়ারের শুরুতে মারকাটারি ব্যাটিংয়ের ঝলক দেখিয়ে দলের অবিচ্ছেদ্য সদস্য হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন নিজেকে। ব্যাট হাতে নিয়মিত স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটালেও ছিল ধারাবাহিকতার অভাব। দলেও তাই হয়ে পড়েছিলেন অনিয়মিত। মাঝে কোচ আর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তার বনিবনা না হওয়া নিয়েও খবর ছড়িয়েছিলো মিডিয়ায়।
সেসব এখন অতীত। ম্যাক্সওয়েল আবারও নিয়মিত হয়েছেন দলে। ভারতের বিপক্ষে দলকে নিয়ম করে নাগালের বাইরে নিয়ে গিয়েছেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তুলেছেন। কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারও তাই ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে পুনরায় ভাবতে বসেছেন।
ভাবতে হচ্ছে পিটার হ্যান্ডসকম্বকে নিয়েও। স্পিনটা দারুণ খেলেন, একের পর এক সুইপ-রিভার্স সুইপে স্পিনারদের দিশেহারা করে রানের গতিটা সচল রাখেন ভালোমতোই। ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতে রান আর বলের পাল্লাটা যে বেশ ভালোমতোই দিতে পারবেন, সে তো সদ্য সমাপ্ত ভারত সিরিজেই প্রমাণিত।
এমনিতে তাদের পছন্দের জায়গাটা মিডল অর্ডার নয়, তবে ওয়ার্নার আর স্মিথ ফিরলে নিজেদের পছন্দের জায়গাগুলো ছেড়ে দেয়াই হয়তো বা তাদের নিয়তি। বলা হচ্ছে শন মার্শ আর উসমান খাজার কথাও। যখনই সুযোগ পেয়েছেন, কথা বলেছেন ব্যাট হাতে। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকেরা তাদের উপেক্ষা করবেন কী করে!
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকেরা পড়েছেন মহাবিপদে। বিকল্প অনেক, একাদশে খেলবেন তো মাত্র তিনজনই।
পজিশন: উইকেটকিপার
ব্র্যাড হ্যাডিন নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। জন্মেছিলেন এক সুপারম্যানের সময়ে, ক্রিকেটে উইকেটকিপিংয়ের সংজ্ঞাই বদলেছে যার কারণে। অথচ জন্মটা যদি বছর কয়েক পরে হতো, বয়সটা যদি কিছু কম হতো!
সেই অ্যাডাম গিলক্রিস্ট দূরে থাক, হন্যে হয়ে খুঁজে যে একজন ব্র্যাড হ্যাডিনও পাওয়া যাচ্ছে না।
উত্তরসূরি হয়ে এসেছিলেন ম্যাথু ওয়েড। পারফরমেন্সের অবনমনে বাদ পড়লেন, বদলে বহু বছর পরে দলে ফিরলেন টিম পেইন, একেবারে অধিনায়ক হিসেবে। দলের টালমাটাল সময়টায় দলকে জয়ের পথ দেখানো দূরে থাক, নিজের পারফরমেন্সই ছিল অস্থিতিশীল। সাত বছর পরে দলে ফিরে খেলেছিলেন নয় ম্যাচে, পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি একদিনও। ফলাফল, বাদ পড়লেন দল থেকে।
পরবর্তীতে এলেন অ্যালেক্স ক্যারি। এখন পর্যন্ত পারফরম্যান্স অবশ্য সন্তোষজনক নয়। শেষদিকে যেখানে ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ঝড় দেখাটাই চাওয়া, সেখানে ৮৩.৭৮ স্ট্রাইক রেটের বেশি পাওয়া যায়নি তার ব্যাটে, ফিফটিই ছাড়িয়েছেন মোটে একবার। শেষদিকে নেমে খেলার সুযোগ পেয়েছেন কম, এমন দাবিও করতে পারছেন না, ১৬ ইনিংস ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে মাত্র তিনবারই ছিলেন অপরাজিত।
এদিকে সর্বশেষ বিগ ব্যাশে রান ফিরেছে ওয়েডের ব্যাটে, ছয় ফিফটিতে রান করেছেন ৫৯০। দেখার বিষয়, ওয়েড আবারও দলে ফেরেন, নাকি বিশ্বকাপের বিমানে অ্যালেক্স ক্যারিকেই ‘ক্যারি’ করে অস্ট্রেলিয়া!
কিপিংটা হ্যান্ডসকম্বও খারাপ পারেন না। মেলবোর্ন স্টারস তো বটেই, অস্ট্রেলিয়ার উইকেটও সামলেছেন গত মাসের ভারতের বিপক্ষের টি-টোয়েন্টি সিরিজে। তার ভাগ্যেও যে শিকে ছিঁড়তে পারতে পারে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পজিশন: স্পিনার
পুরোপুরি পেসারদের দল না বানালে অ্যাডাম জাম্পাই হতে যাচ্ছেন একাদশের একমাত্র স্পিনার। সাথে কি নাথান লায়ন কিংবা অ্যাশটন অ্যাগারের কেউ সুযোগ পাবেন স্কোয়াডে?
গত বছর ৩০৬ বল করেও উইকেটপ্রাপ্তির উল্লাসে মাততে পেরেছিলেন মোটে দুইবার। বিশ্বকাপের বছর আসতেই পাশার দান দিলেন উল্টে। ৩৫.১৮ স্ট্রাইক রেটে উইকেট পেয়েছেন ১৭টি, তিন ম্যাচের ব্যবধানে বিরাট কোহলিকে আউট করেছেন দুইবার। ইংল্যান্ডের মাঠে বল করার সুযোগই পেয়েছেন মোটে বারো ওভার, এবারে বিশ্বকাপে সুযোগ পেলে অতীত পাল্টে দেবার সংকল্পেই নামবেন তিনি।
যে দেশে গণ্ডায় গণ্ডায় ফাস্ট বোলার তৈরি হয়, সেই অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে ওই বিলেতভূমে একের অতিরিক্ত স্পিনার নেওয়াটা বাতুলতা। নাথান লায়ন কিংবা অ্যাশটন অ্যাগার তাই সুযোগ পাবেন কি না, সে সম্পর্কে আগাম কিছু বলাটাও বিশাল ঝুঁকি।
এমনিতেই নাথান লায়ন সাদা বলটা ধরেন বেশ কয়েক বছর পর পর। ইকোনমি রেটটা পাঁচের ঘর না ছুঁলেও, এক উইকেট পেতে তাকে করতে হয়েছে কমপক্ষে ৫৪ বল। একই কথা খাটে অ্যাশটন অ্যাগারের বেলাতেও। উইকেট পেতে গড়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৬৩ বল, অর্থাৎ এমন অনেক ম্যাচ গিয়েছে, যেখানে একবারও উইকেট পাবার উল্লাসে ভাসতে পারেননি তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে যে নয় ম্যাচে খেলেছেন, তার মাঝে সাতবারই মাঠে নেমেছেন ইংল্যান্ডের মাটিতে। সেখানে স্ট্রাইক রেট কিছুটা ‘ভালো’, ৫৩। সাথে টুকটাক ব্যাটিং সামর্থ্যে দলে জায়গা পাবার ক্ষীণ আওয়াজ তুলতেই পারেন তিনি।
অবশ্য তার দাবি হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আর অ্যারন ফিঞ্চের জন্যে। ব্যাটিংটা তারা বেশ ভালোই পারেন, সাথে কার্যকরী বোলিংটাও।
পজিশন: পেসার
লড়াইটা এখানে বহুমুখী। কেননা যিনিই সুযোগ পেয়েছেন, প্রমাণ করেছেন নিজেকে। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকেরাও যেন নিজেদের কাজটাকে আরও কঠিন বানানোর চেষ্টাতেই লিপ্ত ছিলেন। নতুবা কেন পিটার সিডলকে আট বছর পরে দলে ফেরাতে যাবেন!
কাউকে কাউকে অবশ্য সুযোগ না দিয়ে উপায়ও ছিলো না। ঝাই রিচার্ডসন যেমন বিগ ব্যাশে গতির ঝড় বইয়ে দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। ২৯ লিস্ট-এ ম্যাচে ৪৯ উইকেট নিয়ে ওয়ানডে দলেও জায়গা করে নিয়েছেন। সেখানেও ছড়াচ্ছেন আলো, ইতোমধ্যেই তুলে নিয়েছেন ২৪ উইকেট।
টি-টোয়েন্টিতে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বসিয়ে দিয়ে জেসন বেহরেনডর্ফও সুযোগ করে নিয়েছিলেন একদিবসী ক্রিকেটে। নাথান ব্র্যাকেনকে মনে করিয়ে বোলিং করেছেন মিতব্যয়ী, তবে উইকেটের কলামটা মোটেই আকর্ষণ-জাগানিয়া নয়। লড়াই থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন, তবে এখনো লড়াইতে আছেন। বাঁহাতি সুইং বোলার পরিচয়টাই যে বহু সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।
চোটমুক্ত থাকতে পারা সাপেক্ষে লড়াইয়ে নামবেন নাথান কোল্টারনাইলও। কখনো পিঠের চোট, তো কখনো মাথা ঝিমঝিম রোগ, ক্রিকেটে পুরোপুরি মন লাগাতে পারছেন কই! তবে যখনই যা সুযোগ পাচ্ছেন, কাজে লাগাচ্ছেন শতভাগ। এ বছর ২৬.৪০ গড়ে ১০ উইকেট তুলে নিয়ে নিজেকে ভালোমতোই রেখেছেন আলোচনায়।
তবে এদের কেউই নন, বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম পছন্দের পেসার যারা, তাদের একজন গত বছরে ওয়ানডে খেলেছেন মোটে ছয়টি, অন্যজন একটা বেশি। পারফরম্যান্সও ওপরে উল্লেখিত নামগুলোর চেয়ে ভালো নয়। ওভারপ্রতি রান খরচ করেছেন ছয়ের বেশি, স্ট্রাইক রেট, গড় সবই পঁয়ত্রিশের বেশি, তার ওপরে আবার আছে চোট-আঘাতের ঝুঁকি। একজন খেলার মতো ফিট হবেন বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পর, অন্যজন আরও একটু পর, বিশ্বকাপের অনুশীলন ম্যাচ যখন শুরু হবে। তবে বোলারদের নাম যখন হ্যাজলউড আর মিচেল স্টার্ক, বিশ্বের যেকোনো দলই এই ঝুঁকিটুকু নেবে। অস্ট্রেলিয়াও নিচ্ছে।
সাথে তৃতীয় পেসার হিসেবে থাকবেন প্যাট কামিন্স। স্টার্ক-হ্যাজলউডের অনুপস্থিতিতে দলের বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব ছিলো তার কাঁধেই, ভারত আর আমিরাতে নতুন বলটাও উঠেছিলো তার হাতেই। ক্যারিয়ারের সেরা সময়টাই পার করছেন যেন, বোলিং গড়, স্ট্রাইকরেট কিংবা ইকোনমি রেট, ক্যারিয়ারের বাকি সাত বছরের তুলনায় এ বছরই সবচেয়ে কম। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছেন ভারতের বিপক্ষে, দিনবিশেক আগেই।
স্টার্ক-হ্যাজলউড-কামিন্সই তাই অস্ট্রেলিয়ার প্রথম পছন্দ। বাকি পেসারদের লড়াইটা যে মূলত স্কোয়াডের কোটা পূরণ করার, সে বলাই বাহুল্য।
***
বিশ্বকাপ ট্রফি জয়টা অজিদের জন্যে নতুন কিছু নয়। এর আগেও পাঁঁচবার জেতার অভিজ্ঞতা হয়েছে এই শিরোপা। রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের দায়িত্বটা কাদের ওপরে বর্তায়, সেটাই এখন দেখার।
কয়েকটা দিন নাহয় সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকা যাক!