স্পেন ও বার্সেলোনার অন্যতম ভরসা লেফট ব্যাক জর্ডি আলবা। বার্সেলোনায় ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও লিওনেল মেসিকে। দুজনই আজ বিশ্বকাপে সমালোচিত।
মার্কাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে স্পেনের খেলা, বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে পাশাপাশি মেসি ও ইনিয়েস্তাকে নিয়ে কথা বলেছেন আলবা।
একমাসও হয়নি, ইনিয়েস্তাকে যথেষ্ট ভালো মনে করা হতো। এর মধ্যেই বলা হচ্ছে, তিনি বিশ্বকাপের বাকিটুকু খেলার মতো যোগ্য নন।
আসলেই সেরকম হচ্ছে। কিন্তু আমি এই কথার সাথে একমত নই। সিদ্ধান্ত তো আসলে একমাত্র কোচই নিতে পারেন। তবে আমি আমার দলে সবসময় ইনিয়েস্তাকে রাখবো। যদি সে কী করছে, সেটা আপনি স্কেল দিয়ে পরিমাপ করেন, দেখতে পাবেন যে, তার প্রতিটা ম্যাচ খেলা উচিত। আমি অবশ্যই বাকি সতীর্থদের প্রতি সম্মান রেখেই কথা বলছি। বাকিদের সাথে যদি তুলনা করেন, তাহলে সে (ইনিয়েস্তা) একেবারেই অন্য মানের একজন খেলোয়াড়।
ফার্নান্দো হিয়েরোর কথা বলা যাক। তাকে কোচ হিসেবে আপনারা কেমন দেখছেন? বিশেষ করে যে একটা বিস্ময়কর পরিস্থিতি আপনাদের ওপর দিয়ে গেলো, তারপর?
হ্যাঁ, আমাদের সবার জন্যই এই প্রতিটা ব্যাপারই খুব বিস্ময়কর ছিলো। সে (হিয়েরো) এমন একজন মানুষ, যাকে দলের সবাই যথেষ্ট ভালোবাসে এবং ড্রেসিংরুমে সে এই ভালোবাসাটা পায়। সে চমৎকার মানুষ। আপনি তার সাথে যেকোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারবেন। সে সবার খুব ঘনিষ্ঠ এবং এটা খুব মৌলিক একটা প্রয়োজনীয় ব্যাপার।
এর ফলেই সে কোচ হিসেবে দায়িত্বটা নিতে পেরেছে এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। দল তার সাথে আছে। আমাদের মূল পরিকল্পনা আগের মতোই আছে। আগের সব ধারণা ও চরিত্র একইরকম রেখে কাজ করা হচ্ছে। তবে আমরা তাকে বিশ্বাস করি। আশা করছি, আমরা পুরোটা রাস্তা যেতে পারবো এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারবো।
এরকম একটা অবস্থায় একজন খেলোয়াড় কী করে খাপ খাইয়ে নিতে পারে?
দেখুন, আমরাও আর দশজনের মতো মানুষ। এটা শুধু ফুটবলে নয়, সব জায়গায় সত্যি হতে পারে। বিশ্বকাপ তো অল্প কয়েকটা খেলার সমষ্টি। এখানে মানিয়ে নিতেই হবে। সত্যি হলো, আমাদের এখন চার পয়েন্ট আছে। আমরা এখন গ্রুপে সেরা। ফলে আমাদের এখন গ্রুপ থেকে পার হওয়ার চেষ্টা করতেই হবে।
ইরান যেভাবে ৬ জনকে ব্যাকলাইনে রেখে ডিফেন্স করলো, এরকম কি আগে কখনো সামলেছেন?
বার্সেলোনায় খেলতে হলে মাঝে মাঝেই আমাদের এরকম সামলাতে হয়। জাতীয় দলের হয়েও দু-একবার মুখোমুখি হয়েছি। তবে এটা ঠিক যে, ইরান যেমন বাড়াবাড়ি করেছে, এরকম কিছু আগে দেখেছি বলে মনে হয় না। কিন্তু এটা তো বৈধ একটা ধরন। তারা যেটা ভালো মনে করেছে, সেটার ওপর ভরসা করেছে। তারা আমাদের কঠিন একটা পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তারা প্রায় তো ড্র বের করে ফেলেছিলো।
এরকম একটা অবস্থা, যেখানে পাস করার কোনো জায়গায় নেই, তা দেখলে কি খেলোয়াড়দের একটু নিজেদের নিয়ে সন্দেহ হতে থাকে?
না। নিজেকে নিয়ে সন্দেহ তো করা যাবে না। তবে যেটা হয় একটু বেপরোয়া হয়ে উঠতে ইচ্ছে করে। কারণ, আপনি দেখছেন যে, বারবার গোলের দিকে আক্রমণ করছি, কিন্তু বারবারই একই ফল হচ্ছে। তখন… শেষ অবধি আমরা ভালো খেলেছি।
স্পেন কি ১-০ হওয়ার পর খেলার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলো?
আমার মনে হয়, আমরা পুরো খেলাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলাম। তবে এটা সত্যি যে, ওরা বেশ কিছু বিপদ তৈরি করতে পেরেছিলো। বিশেষ করে অফসাইডে বাতিল হওয়া গোলটি এবং ফার পোস্টে একটা হেড। আমি বুঝতে পারি, এজন্য অনেকের মনে একটা সন্দেহ তৈরি হয়েছিলো যে, আমরা হয়তো সেভাবে খেলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। কিন্তু সত্যি বলি, ড্রেসিংরুমে আমাদের কখনো সেরকম মনে হয়নি। যা-ই হোক, আমরা প্রত্যেক প্রতিপক্ষকে শ্রদ্ধা করি।
আপনি কি আসলেই দাবি করবেন যে, আপনাদের ইতিবাচক মনোভাবে কোনো ধ্বস নামেনি?
চার ম্যাচ আগেই সবাই আমাদের বিশ্বাস করেছে। এখন সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আমাদের এখন শান্ত থাকতে হবে। আমাদের অসাধারণ একটা স্কোয়াড আছে। দেখুন, একটা দলের আপনি তখনই সমালোচনা করতে পারেন, যখন দলটা যা করার কথা ছিলো, তা করছে না বলে মনে হচ্ছে। আমরা তো ভালো অবস্থায় আছি। কিছু বাজে সময় পার করার পরও ভালো করছি। যা ঘটেছে, তা সবার জন্য তো খুব খুশির ব্যাপার ছিলো না। কিন্তু সেই সময় আমরা পার করে এসেছি। এখন এই দলটাকে নিয়ে আপনি স্বপ্ন দেখতে পারেন।
আপনার কি মনে হচ্ছে না, দলগুলো সামান্য চেষ্টাতেই এখন স্পেনের রক্ষন ভেঙে দিতে পারছে?
দেখুন, পর্তুগাল আমাদের তিনটি গোল দিয়েছে। একটা প্রশ্ন করার মতো পেনাল্টি থেকে, একটা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিস্ময়কর ফ্রি কিক থেকে এবং একটা দুর্ভাগ্যজনক একটা মুহুর্ত থেকে। আমরা অবশ্যই পর্তুগালের চেয়ে শ্রেয়তর দল হিসেবে খেলেছি। আমাদের আরও ভালো ফল প্রাপ্য ছিলো। কিন্তু এটাই বিশ্বকাপ। লোকে ভাবছে, ইরান মনে হয় ঐ মানের দল নয়। কিন্তু আজ সত্যি বলি, ইরান আমাদের জীবনটা পর্তুগালের চেয়ে অনেক কঠিন করে দিয়েছিলো। আমাদের এখন চার পয়েন্ট হাতে আছে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমরা এই পয়েন্টের দিকেই চেয়ে ছিলাম। আপনাকে সবসময় কিছু শোধরাতে হবে। তবে এটা বিশ্বাস। আমরা তো দেখতে পাচ্ছি, রোজ বিভিন্ন খেলায় কী সব ঘটনা ঘটছে।
কোনো দলই সহজে জিতছে না…
একমাত্র রাশিয়াই সহজে জিতলো। তারা সৌদি আরবের সাথে জিতেছে। বাকি সব খেলাই তো খুব ক্লোজ হচ্ছে। প্রত্যেকটা দল অনেক কাজ করে এসেছে। তারা প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ভালো জানে। তারা জানে, কিভাবে আপনাকে আঘাত করতে হবে। কিভাবে কাউন্টার অ্যাটাক করতে হবে। এটা কারো জন্য সহজ নয়।
আপনারা কি এখনই শেষ ১৬-তে কাদের সাথে খেলা পড়বে, এটা নিয়ে ভাবছেন?
আমরা অপেক্ষা করবো। শেষ দিনেও অনেক কিছু ঘটতে পারে। আমাদের প্রথমে নিজেদের নিয়ে আশা করতে হবে। আমার ধারণা, আমাদের পরিণতি আরও ভালো হতে পারে। আমাদের লক্ষ্য প্রথম দল হিসেবে শেষ করা।
মেসি ছাড়া বিশ্বকাপ কল্পনা করতে পারছেন?
আমি কল্পনা করতে পারছি না। ওর অনেক সমালোচনা হচ্ছে। আমি এগুলো কিছুতেই বুঝতে পারছি না। আর্জেন্টিনা দল ওকে ছাড়া যা, তার চেয়ে ওকে সহ অনেক ভালো একটা দল। ওদের তো গর্ব করা উচিত যে, মেসির মতো একজন খেলোয়াড় ওদের দলে খেলে। ও অনন্য একজন খেলোয়াড়। ও দুর্ভাগ্যজনকভাবে আর্জেন্টিনার হয়ে তিনটি ফাইনাল জিততে পারেনি। এটা মেনে নেওয়া সহজ ছিলো না। ও জাতীয় দলের হয়ে যা করছে, তার প্রশংসা আপনাকে করতেই হবে।
স্পেনে ডিয়েগো কস্তার খুব সমালোচনা হতো আগে এবং এখন…
সে বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে তিন গোল করেছে। আপনি যদি দুর্ভাগ্যজনকভাবে গোল করতে না পারেন, তাহলে আপনাকে টেনে বের করে নিয়ে বিতর্ক করা হবে। এটাই স্বাভাবিক। আপনাকে এর মধ্যেই বাঁচতে হবে। লোকজন এরকমই। আপনাকে জানতে হবে, কতটুকু আপনি গ্রহণ করবেন।
Feature image: SunduL.com