বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে একাদশ

বিশ্বকাপ উপলক্ষে অনেকেই বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা একাদশ গঠন করেছে। অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চেও দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছিলেন। তাদের দিয়েই সাজানো হয়েছিল বিশ্বকাপের সেরা একাদশ। বিশ্বকাপের সেরা একাদশ গঠন করার পাশাপাশি প্রত্যেক দলের সেরা একাদশ গঠন করতেও কাঠখড় পোড়াতে হয়। আজকের লেখায় বিশ্বকাপের সেরা একাদশ নিয়ে আলোচনা করা হবে না। যেসব ক্রিকেটারের বিশ্বকাপ দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছিল, তাদেরকে নিয়েই একাদশ বানানো যাক। তাদের অনেকেই অন্যান্য সময় দুর্দান্ত ক্রিকেট খেললেও প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর যে বিশ্বকাপ আসর বসে, সেখানে হতাশ করেছে। চলুন জেনে আসা যাক, বিশ্বকাপে বাজে পারফর্ম করা ক্রিকেটারদের একাদশ সম্পর্কে।

নাসির জামশেদ (পাকিস্তান)

২০১৫ সালের বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করার পর মোহাম্মদ হাফিজ ইনজুরিতে পড়লে তার বদলি হিসাবে দলে ডাক পান লাহোরের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাসির জামশেদ। দলে ডাক পেলেও বিশ্বকাপে পাকিস্তানের প্রথম ম্যাচে মূল একাদশে সুযোগ পাননি তিনি। তার জায়গায় উপরে উঠে এসেছিলেন ইউনিস খান। ভারতের বিপক্ষে ঐ ম্যাচে ইউনিস খুব একটা সুবিধা করতে না পারলে নতুন বল সামলানোর দায়িত্ব পড়ে জামশেদের কাঁধে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামেন তিনি। প্রথমে ফিল্ডিং করতে নেমে ডুয়াইন স্মিথের ক্যাচ হাত ফসকে দেওয়ার পাশাপাশি ব্যথা পেয়ে মাঠ ছেড়ে উঠে যান। ঐ ইনিংসে তার আর ফিল্ডিং করা হয়নি। ব্যাট করতে নেমেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি, দ্বিতীয় বলেই পুল করতে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন। যার ফলে ইউনিস খানেরই আবারও নতুন বল মোকাবেলা করতে হয়।

নাসির জামশেদ ; Image Source: AFP

পাকিস্তান পরের ম্যাচ খেলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এই ম্যাচেও পুল করতে গিয়ে মাত্র এক রান করে সাজঘরে ফেরেন নাসির জামশেদ। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান ২৩৫ রান সংগ্রহ করে ২০ রানের জয় পেয়েছিল। প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এল্টন চিগাম্বুরার ক্যাচ হাত থেকে ফেলে দেন তিনি। দুইদিন পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষেও মাত্র চার রান করে আবারও পুল শট করতে গিয়ে আউট হয়ে যান তিনি। টানা তিন ম্যাচেই একইভাবে নিজের উইকেট দিয়ে এসেছিলেন নাসির জামশেদ। তিনি তিন ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে মাত্র পাঁচ রান সংগ্রহ করলে তাকে আর মূল একাদশে রাখেনি পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষের ম্যাচটিই ওয়ানডেতে তার শেষ ম্যাচে পরিণত হয়।

রমেশ কালুভিতারানা (শ্রীলঙ্কা)

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে রমেশ কালুভিতারানা এবং সনাৎ জয়াসুরিয়ার উদ্বোধনী উইকেট জুটি বিশ্ব ক্রিকেটে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তারা দুইজনই শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতেন, যার ফলে ম্যাচের শুরুতেই শ্রীলঙ্কা প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে সক্ষম হতো। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে তিনটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে প্রশংসার সাগরে ভাসছিলেন তিনি। সবাই ধরেই নিয়েছিল, জয়াসুরিয়া এবং কালুর জুটি বিশ্বকাপে বাজিমাত করবে। কিন্তু কালু বিশ্বকাপে সবাইকে হতাশ করেছিলেন। শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপ ঘরে তুললেও ব্যাটে রান ছিল না কালুভিতারানার। ছয় ইনিংসে ১২.১৬ ব্যাটিং গড়ে করেছেন মাত্র ৭৩ রান, সেমিফাইনালে শূন্য এবং ফাইনালে মাত্র ছয় রান করে সাজঘরে ফিরিছিলেন তিনি।

রমেশ কালুবিতরণা ; Image Source: AFP

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের আগেও ফর্মে ছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে চারটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ফুরফুরে মেজাজে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন। এইবারও বিশ্বকাপে এসে নিজের ফর্ম ধরে রাখতে পারেননি। পাঁচ ইনিংসে ২২.৫০ ব্যাটিং গড়ে সর্বসাকুল্য ৯০ রান করেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের মোট দুই আসরে ১১ ম্যাচে খেলে ১৬.৩০ ব্যাটিং গড়ে ১৬৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন কালুবিতরণা। বিশ্বকাপের মতো এশিয়া কাপেও রানের দেখা পাননি তিনি। এশিয়া কাপের সাত ইনিংসে তার ব্যাটিং গড় মাত্র ১০.৫৭।

হাবিবুল বাশার (বাংলাদেশ)

গত দশকে বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসাবে হাবিবুল বাশারের নাম সবার উপরে ছিল। টেস্ট ক্রিকেটে দ্যুতি ছড়ালেও ওয়ানডে ক্রিকেটে নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে মোট ১১১ ম্যাচ খেলে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন ১৮ বার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নেই কোনো শতক। মাত্র ২১.৬৮ ব্যাটিং গড়ে এবং ৬০.৪৫ স্ট্রাইকরেটে ২,১৬৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে তার ব্যাটিং গড় আরও কম, তিনি বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচ খেলে মাত্র ১০.৫০ ব্যাটিং গড়ে ১০৫ রান করেছিলেন।

হাবিবুল বাশার ; Image Source: Getty Images

বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ খেলে ১৯৯৯ সালে। ঐ আসরে দলে জায়গা না পেলেও ২০০৩ সালে তিনি বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। কিন্তু কানাডা এবং নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেয়ে দুই ম্যাচেই শূন্য রানে সাজঘরে ফিরে যান। এরপর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেও তার ব্যাটে রানের দেখা মিলেনি। মাত্র ১৩.১২ ব্যাটিং গড়ে ১০৫ রান করেছিলেন। ঐ বিশ্বকাপের পরই তার ক্যারিয়ারের বিদায় ঘন্টা বাজতে শুরু করে। বিশ্বকাপের তিন মাস পর অধিনায়কের দায়িত্ব হারানোর পর এক বছরের মাথায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন।

ইনজামাম-উল হক (পাকিস্তান)

ইনজামাম-উল হক ১৯৯২ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন। পাকিস্তানের শিরোপা জয়ে তার ভূমিকাও অবর্ণনীয়। সেমিফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এবং ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত দু’টি ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এরপর পাকিস্তানের হয়ে ১৯৯৬ এবং ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপও খেলেন। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের হয়ে বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করেন, তখন তিনি ছিলেন ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপে ভালো করার লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করে শরীর থেকে বাড়তি ১৭ কেজি ওজন কমান। শেষ পর্যন্ত ওজন কমানোই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। তিন বছর পর এক সাক্ষাৎকারে তো বলেই দিয়েছিলেন, এমন কাজ আর তিনি করবেন না।

Image Credit: Mike Hewitt

আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ওজন কমিয়ে খেলতে গিয়ে ছয় ইনিংসে মাত্র ৩.১৬ ব্যাটিং গড়ে ১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাকিস্তানের এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ওয়ানডেতে দশটি শতক এবং ৮৩টি অর্ধশতকের সাহায্যে ১১,৭৩৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অন্যান্য সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও বিশ্বকাপের সময়ই ছন্দ হারিয়ে ফেলতেন তিনি। পাকিস্তানের হয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। এই পাঁচ বিশ্বকাপে মোট ৩৫ ম্যাচ খেলে চারটি অর্ধশতকের ২৩.৯০ ব্যাটিং গড়ে ৭১৭ রান করেছিলেন ইনজামাম উল হক।

অ্যালান বোর্ডার (অস্ট্রেলিয়া) – অধিনায়ক

পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিয়েছিলেন অ্যালান বোর্ডার। তার নেতৃত্বে ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে তিনি ৩১ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি মাইক গ্যাটিংয়ের উইকেটটি তুলে নিয়েছিলেন, যা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। অধিনায়ক হিসাবে এরপর ১৯৯২ সালে আবারও অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রথম রঙিন আসরে অস্ট্রেলিয়া এবং বোর্ডার কেউই রঙ ছড়াতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়া গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয়, এবং বোর্ডার সাত ইনিংসে মাত্র ৬০ রান করেন।

অ্যালান বোর্ডার ; Image Source: Getty Images

টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান অ্যালান বোর্ডার ওয়ানডে ক্রিকেটে তেমন ভালো নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে পারেননি। ২৭৩ ম্যাচে হাঁকিয়েছেন মাত্র তিনটি শতক, ব্যাটিং গড় ৩০.৬২। বিশ্বকাপে তার পরিসংখ্যান আরও শোচনীয়। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বিশ্বকাপে মোট ২৫ ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। এই ২৫ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৭ রানের ইনিংসটিই বিশ্বকাপের ক্যারিয়ারে তার সেরা ইনিংস। তিনি বিশ্বকাপে ১৮.৮৩ ব্যাটিং গড়ে ৪৫২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের এমন নিষ্প্রভ নৈপুণ্য তাকে বিশ্বকাপের বাজে একাদশের অধিনায়কে পরিণত করেছে।

কেইথ অ্যাথারটন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য খুব একটা ভালো কাটেনি। নয় দলের টুর্নামেন্টে তারা ষষ্ঠ স্থানে থেকে আসর শেষ করছিল। তবে ব্যাটিং অলরাউন্ডার কেইথ অ্যাথারটন তার নৈপুণ্যে অনেককে মুগ্ধ করেছিলেন এবং ওয়ানডেতে নিয়মিত সদস্যে পরিণত হয়েছিলেন। ইংল্যান্ড এবং ভারতের বিপক্ষে অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৩৮.৮৩ ব্যাটিং গড়ে ২৩৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

কেইথ অ্যাথারটন ; Image Source: Getty Images

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ যখন শুরু হয়, ততদিনে অ্যাথারটন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান, বাঁহাতি স্পিনের পাশাপাশি দুর্দান্ত ফিল্ডার হিসাবে খ্যাতি ছিল তার। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর শুরু হয় তার ক্যারিয়ারের কালো অধ্যায়। এশিয়ার মাঠে ঐ বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলে যথাক্রমে এক, শূন্য , শূন্য , এক এবং শূন্য রানে সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। বিশ্বকাপ শেষে তিনি দল থেকে বাদ পড়েন। এরপর ১৯৯৮ সালে আবারও দলে ফেরেন এবং ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা করে নেন। ‘৯৯ এর বিশ্বকাপে এক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে বল হাতে এক ওভারে দশ রান খরচ করার পর ব্যাটিংয়ে নয় নাম্বারে নেমে ছয় রান করেছিলেন তিনি। এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচ খেলে ২০.০৮ ব্যাটিং গড়ে ২৪১ রান করেছিলেন।

মনোজ প্রভাকর (ভারত)

ভারতের অলরাউন্ডার মনোজ প্রভাকর বিশ্বকাপের তিন আসর খেলেছিলেন। সব আসরে মিলিয়ে তার পরিসংখ্যান খুব একটা খারাপ নয়। ভারতের হয়ে বহু ম্যাচে ব্যাটিংয়ে এবং বোলিংয়ে উদ্বোধন করা এই ক্রিকেটার বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে হতাশ করলেও বল হাতে গড়পড়তা নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছিলেন। ব্যাট হাতে ১১ ইনিংসে ৫.০০ ব্যাটিং গড়ে মাত্র ৪৫ রান করেছিলেন। বোলিংয়ে ২৬.৬৬ গড়ে তার উইকেট সংখ্যা ২৪টি। প্রভাকর বিশ্বকাপের বাজে একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের পারফরমেন্সে।

মনোজ প্রভাকর ; Image Source: Getty Images

তিনি ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে চার ম্যাচে তিন উইকেট শিকার করেছিলেন। তিনটি উইকেটই পেয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ম্যাচে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার পারফরমেন্স ছিল হতাশাজনক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫৫ রানের বিনিময়ে উইকেট শূন্য থাকার পর তিন রান করেছিলেন। এরপরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠ ফিরোজ শাহ কোটলাতে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ৩৬ বলে মাত্র সাত রান করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তার ধীরগতির এই ইনিংস কেউ মনে রাখেনি, তার জন্য শচীন টেন্ডুলকার এবং আজহারউদ্দীনকে ধন্যবাদ দিতে পারেন তিনি। তাদের কল্যাণে ভারত তিন উইকেটে ২৭১ রান সংগ্রহ করেছিল। সেসময় এই রান ওয়ানডেতে বেশ ভালো সংগ্রহ।

ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও উদ্বোধন করেন মনোজ প্রভাকর। তার প্রথম দুই ওভার থেকেই জয়াসুরিয়া এবং কালুভিতারানা ৩৩ রান তোলেন। চার ওভারে ৪৭ রান দিলে তাকে আর বোলিং আক্রমণে আনেননি অধিনায়ক। তার এমন এলোমেলো বোলিংয়ের কারণে শুরুতেই ম্যাচের গতিপথ নিজেদের দিকে নিয়ে নেয় শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত ছয় উইকেট এবং আট বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় তারা।

জন ব্রেসওয়েল (নিউ জিল্যান্ড)

টেস্ট ক্রিকেটে নিউ জিল্যান্ডের প্রথম বোলার হিসাবে ১০০ উইকেট শিকার করেছিলেন অফস্পিনার জন ব্রেসওয়েল। তিনি ১৯৮৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাডিলেইড ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করে নিউ জিল্যান্ডকে বিখ্যাত জয় এনে দেন। কিন্ত ওয়ানডে ফরম্যাটে তিনি খুব একটা কার্যকরী ছিলেন না। তিনি ৫৩টি ওয়ানডে খেলে উইকেট শিকার করেছিলেন মাত্র ৩৩টি। রান করেছিলেন ৫১২ রান। বিশ্বকাপে তার নৈপুণ্য ছিল আরও শোচনীয়।

জন ব্রেসওয়েল ; Image Source: Getty Images

তিনি নিউ জিল্যান্ডের হয়ে ১৯৮৩ এবং ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। দুই বিশ্বকাপে মোট সাত ম্যাচ খেলে মাত্র এক উইকেট শিকার করেছিলেন। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে ছিলেন উইকেট শূন্য। তার একমাত্র উইকেটটি ছিল ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে ইয়ান বোথামের। বিশ্বকাপে কমপক্ষে এক উইকেট শিকার করেছেন, এমন বোলারদের মধ্যে তার বোলিং গড় সবচেয়ে বাজে। তিনি বিশ্বকাপে ৩১০ রান খরচ করে এক উইকেট শিকার করেছিলেন।

টনি সুজি (কেনিয়া)

একসময় কেনিয়া ক্রিকেট বিশ্বের আলোচিত নাম ছিল। আইসিসির সহযোগী দেশ হিসাবে খেলে তারা ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। বিশ্বকাপে তাদের যত সুখস্মৃতি রয়েছে, তার বেশিরভাগের রচয়িতা ছিলেন স্টিভ টিকোলো, টমাস ওদোয়ো এবং আসিফ করিম। কেনিয়ার একাদশে খুব বেশি ম্যাচ উইনার ছিল না, কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই যেন একাদশ সাজানোর জন্য থাকতো। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন টনি সুজি।

টনি সুজি ; Image Source: Getty Images

বোলিং অলরাউন্ডার হিসাবে খেলা টনি সুজি কেনিয়ার হয়ে ৬০ ম্যাচে ব্যাট হাতে মাত্র ৫০৬ রানের পাশাপাশি ২১ উইকেট শিকার করেছিলেন। বিশ্বকাপেও তার পারফরমেন্স ছিল অনুজ্জ্বল। তিনটি বিশ্বকাপে মোট নয় ম্যাচের মধ্যে সাত ম্যাচে বোলিং করেছিলেন, যার মধ্যে কখনোই ইনিংসে সাত ওভারের বেশি বল করেননি। উইকেট শিকার করেছিলেন মাত্র একটি। বিশ্বকাপে ১৭০ রান খরচ করে তিনি এই একটি উইকেট শিকার করেন।

তাকে বলা হতো বোলিং অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে নয় ম্যাচের মধ্যে ব্যাট করেছিলেন পাঁচবার, চারবার নয় নাম্বারে ব্যাট করেছিলেন। একবার আশ্চর্যজনকভাবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট করেছিলেন তিন নাম্বারে। তিনে ব্যাট করতে নেমে ২৯ বলে ১৪ রান করেছিলেন, এটিই ছিল বিশ্বকাপে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।

শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবন (ভারত)

শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবন ১৯৭৫ এবং ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার নেতৃত্বে ভারত প্রথম দুই বিশ্বকাপে মাত্র এক ম্যাচে জয় পায়। ভারতের জয়টি ছিল পূর্ব আফ্রিকার বিপক্ষে। এছাড়া তখনকার আইসিসির সহযোগী সদস্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও পরাজিত হয়েছিল তারা।

শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবন ; Image Source: Getty Images

ভারতের অধিনায়ক ভেঙ্কটরাঘবন দুই আসরে ছয়টি ম্যাচ খেলেছিলেন। সে সময় ওয়ানডে ম্যাচ হতো ৬০ ওভারে। একজন বোলার সর্বোচ্চ ১২ ওভার বল করতে পারতো। তিনি ছয় ম্যাচের সবকটিতে ১২ ওভার করে বল করেছিলেন; ছয় ম্যাচে মোট ৭২ ওভার বোলিং করলেও ছিলেন উইকেটশূন্য। বিশ্বকাপ ছাড়াও ওয়ানডে ক্রিকেটে খুব একটা ভালো নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে পারেননি তিনি। মোট ১৫টি ওয়ানডে ম্যাচে তিনি পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন।

জেমস অ্যান্ডারসন (ইংল্যান্ড)

টেস্ট ক্রিকেটে পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন জেমস অ্যান্ডারসন। ২০১৫ সালে ওয়ানডে ক্রিকেট ছাড়ার আগে ২৬৯ উইকেট শিকার করেছিলেন। তবে বিশ্বকাপে নিজের সামর্থ্যানুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি তিনি। অ্যান্ডারসন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলেন ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে নিজের অভিষেক ম্যাচেই নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে চার উইকেট এবং তৃতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে আবারও চার উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।

জেমস অ্যান্ডারসন ; Image Source: Getty Images

বিশ্বকাপে নিজের প্রথম আসরে দুর্দান্ত বোলিং করার পর বিশ্বকাপের পরবর্তী আসরগুলোতে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে তার বোলিং গড় ছিল ৪১.৭২। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে তার বোলিং গড় ছিল ৪৯.০০। ঐ বিশ্বকাপের পর আর ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেননি তিনি।

সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছিলেন ২০১১ সালের বিশ্বকাপে, এশিয়ায় অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপে তার বোলিং গড় ছিল ৭০.৫০ এবং প্রতি ওভারে রান দিয়েছেন ৬.৫৫ রান করে।২০১১ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৯.৫ ওভারে ৯১ রান দিয়েছিলেন। এছাড়া নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৭২ রান এবং আয়ারল্যান্ড যে ম্যাচে রেকর্ড গড়ে জিতল, ঐ ম্যাচে ৮.১ ওভারে ৪৯ রান খরচ করেছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে ৬৭ রান দিয়ে। ইংল্যান্ডের এই কিংবদন্তি পেসার বিশ্বকাপে প্রতি উইকেটের পিছনে ৪০.০৩ রান করে খরচ করেছিলেন। নিজের শেষ তিন বিশ্বকাপে রান খরচের পরিমাণ আরও বেশি ছিল।

This article is in Bangla language. It is about the Worst World Cup Eleven. Please click on the hyperlinks to check the references

Featured Image: Getty Images

Related Articles

Exit mobile version