বহুদিন ধরে একটা অভিশাপ সেঁটে ছিল বাংলাদেশ দলের গায়ে, কিংবা একটা অপূর্ণতাও বলা যেতে পারে। টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির একুশ বছর কেটে গেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরির খামতিটা দূর করতে পারছিলেন না কোনো বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান। অবশেষে তিনি পারলেন, প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে তিন অঙ্ক স্পর্শ করে হেলমেট খুলে ব্যাট উঁচিয়ে উদযাপনের সুযোগ পেলেন মাহমুদুল হাসান জয়। কী আশ্চর্য, প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সদ্যসমাপ্ত টেস্ট সিরিজে সেটাই কি না হয়ে থাকল বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের একমাত্র অর্জন! সিরিজের বাকি তিন ইনিংসে নিজের ব্যর্থতাটাও ঢাকা পড়ে গেল ঐ অসাধারণ সেঞ্চুরিতে।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)-এর হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট আঙিনায় জয়ের পদার্পণ, তবে পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছেন বয়সভিত্তিক দলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হয়েছেন, এরপর রানের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটেও। পুরস্কারস্বরূপ গত বছরের শেষভাগে বুঝে পেয়েছেন বহুল আকাঙ্ক্ষিত টেস্ট ক্যাপটা। পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেকটা সুখকর না হলেও জয়ের আসল রূপ দেখা যায় পরের দুটো ইনিংসে, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুইতে, আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডারবানে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের ঐ ৭৮ রানের ইনিংসটাই গড়ে দিয়েছিল অভূতপূর্ব বিজয়ের ভিত্তি, আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দলীয় ব্যাটিং ব্যর্থতার ভিড়ে একাই বুক চিতিয়ে লড়াই করে ১৩৭ রান করেছিলেন এই একুশ বছর বয়সী তরুণ। চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাটিংয়ের টেকনিক্যাল দিকগুলো আর তার শক্তি-দুর্বলতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।
মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে শক্তির দিকটা তার ধৈর্য্য আর নিজের টেম্পার বা মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারা। বয়সভিত্তিক পর্যায়, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট, বা দুটো আলোচিত টেস্ট ইনিংস – সবক্ষেত্রেই জয়ের ধৈর্য্যের প্রমাণ মেলে। ক্রিজে সেট হয়ে গেলে জয় হয়ে ওঠেন ধৈর্য্য আর অবিচলতার প্রতিমূর্তি। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐ ৭৮ রানের ইনিংসে জয় খেলেছিলেন ২২৮ বল, যেখানে ফিফটি পেরিয়েছেন ১৬৫তম বলে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরির ক্ষেত্রে জয় প্রথম পঞ্চাশ পেরিয়েছেন ১৭০ বলে, শততম রান করেছেন ২৬৯ বলে। এরপর রানের গতি বাড়িয়ে ৩২৬ বলে খেলেছেন ১৩৭ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। শুধু বলের হিসাবে নয়, এই দুটো ইনিংস খেলার পথেই জয় অফ স্ট্যাম্পের বাইরের অনেক বল ছেড়েছেন, স্কয়ার কাট বা কাভার ড্রাইভ খেলার লোভ সংবরণ করেছেন।
ব্যাটসম্যান হিসেবে মাহমুদুল হাসান জয়ের ভাণ্ডারে মোটামুটি সব ধরনের শটই আছে। তবে স্পিনারদের বিপক্ষে ব্যাকফুট স্কয়ার কাট আর পুল শটটাই জয় সবচেয়ে ভালো খেলেন।
স্কয়ার কাট
জয়ের স্কয়ার কাটের বিশ্লেষণে সর্বশেষ বিপিএলে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে তার খেলা ৪৮ রানের ইনিংসটাকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যাক, যে ইনিংস খেলার পথে বেশ কিছু স্কয়ার কাট খেলেছেন জয়।
দেখা যাচ্ছে, মিডল-লেগ স্ট্যাম্পে গার্ড নিয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। বোলার বল ছোঁড়ার মুহূর্তে সামনের পা অর্থাৎ বাম পা সামনে এগিয়ে অফ-মিডল স্ট্যাম্প বরাবর নিয়ে এসেছেন। যেহেতু বলটা পিচ করেছে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে শর্ট লেন্থে, জয় তাই ব্যাকফুটে গিয়ে স্কয়ার কাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এক্ষেত্রে বাম পা’কে লেগ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরে সরিয়ে নিয়ে জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন এবং স্কয়ার কাট করে বাউন্ডারি আদায় করেছেন।
বিপিএলের একই আসরে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ৬৫ রানের ইনিংস খেলার পথেও এই ব্যাকফুট স্কয়ার কাট খেলে কিছু বাউন্ডারি আদায় করেছেন জয়। এক্ষেত্রেও শট খেলার মুহূর্তে বাম পাটা লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে সরিয়ে নিয়ে জায়গা তৈরি করেছেন এবং পয়েন্ট ও কাভারের মাঝ দিয়ে বাউন্ডারি আদায় করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডারবান টেস্টে ১৩৭ রানের ইনিংস খেলার পথেও এই শটে বাউন্ডারি আদায় করে নিতে দেখা গেছে জয়কে।
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২৬ রানের ইনিংস খেলার পথে এই ব্যাকফুট স্কয়ার কাট খেলে বাউন্ডারি আদায় করতে দেখা গেছে জয়কে। অর্থাৎ, বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই এই শটে মোটামুটি সিদ্ধহস্ত তিনি।
তবে ব্যতিক্রমও আছে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের লেগস্পিনার রবি বিষ্ণইয়ের গুগলিতে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন জয়। আগেই বলেছি, স্পিনারের শর্ট বলের বিরুদ্ধে ব্যাকফুট স্কয়ার কাটটা ভালোভাবে খেলতে পারেন জয়, কিন্তু রবি বিষ্ণইয়ের এই বলটা পিচ করেছিল ফুল লেন্থে, আর জয়ের শট সিলেকশন ভুল হওয়ায় তা উপড়ে নেয় মিডল স্ট্যাম্পটাই।
বলের লেন্থ বুঝতে ভুল করে ভুল শট সিলেকশনের আরেকটা উদাহরণ দেওয়া যাক। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের এই ম্যাচটায় তাইজুল ইসলামের এই ফুল লেন্থ বলে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন মাহমুদুল হাসান জয়।
পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে জয়ের স্কয়ার কাটের বিশ্লেষণে আসা যাক। স্পিনারদের বিরুদ্ধে স্কয়ার কাটের ক্ষেত্রে পায়ের নড়াচড়া দেখা গেলেও, সাধারণত পেসারদের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করা বলে বিরুদ্ধে এই শটের ক্ষেত্রে পেছনের পা নড়ে না জয়ের, সামনের পাকে লেগ স্ট্যাম্পের লাইনে এনে শরীর থেকে অনেক দূরের বলে শট খেলেন। বল মাটিতে রাখতে পারলে চার রান পেয়ে যান, অন্যথায় গালি বা পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে আউট। উপরের ছবিটা বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষের ম্যাচে, যেখানে স্কয়ার কাট খেলে পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি আদায় করেছেন জয়।
মুদ্রার অপর পিঠে, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরুতে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে আউটসাইড এজ হয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি।
তবে বিপিএলে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার বিপক্ষের ম্যাচে মাশরাফি বিন মুর্তজার এই বলে, যেখানে মিডল স্ট্যাম্পকে লক্ষ্য করে ধেয়ে আসছিল বলটা, জয় লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে সরে গিয়ে জায়গা তৈরি করে স্কয়ার কাট করে বাউন্ডারি আদায় করেছিলেন।
কভার ড্রাইভ
স্কয়ার কাট নিয়ে তো অনেক কথা হলো। এবার আসা যাক জয়ের কভার ড্রাইভে।
আগেই বলেছি, স্পিনাররা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে শর্ট লেন্থের বল করলে জয় সাধারণত ব্যাকফুটে গিয়ে স্কয়ার কাট করেন বেছে নেন, তবে বোলার যদি শর্ট লেন্থের বদলে ওভারপিচ বল করেন, সেক্ষেত্রে জয় বেছে নেন ফ্রন্টফুট কভার ড্রাইভকে। এক্ষেত্রে বল পিচ করার পর জয় তার ফ্রন্টফুট অর্থাৎ বাম পায়ের ওপর শরীরের ওজনকে চাপিয়ে দেন, এবং অফ স্ট্যাম্প বা অফ-মিডল স্ট্যাম্পের লাইনে নিয়ে আসেন পা; এরপর কভার ড্রাইভ করেন।
এক্ষেত্রে সামনের পায়ের আঙুলগুলো থাকে কভারের দিকে, যেটা আসলে কভার ড্রাইভের আদর্শ নিয়ম। পেসারদের বিপক্ষেও কভার ড্রাইভ খেলেন জয়, সময়ে সময়ে বাউন্ডারি আদায়ে তা ভীষণ কার্যকরীও হয়।
স্পিনারদের ফুল লেন্থের বলগুলোকে ওভার পিচ বানিয়ে কাভার ড্রাইভ করার জন্য কখনো কখনো পায়ের ব্যবহার করে ডাউন দ্য উইকেটেও আসেন জয়।
প্রথাগত কভার ড্রাইভ খেলার ক্ষেত্রে জয়ের তেমন দুর্বলতা লক্ষ্য করা না গেলেও লফটেড কাভার ড্রাইভ খেলার ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা দেখা যায়। মূলত বলের লেন্থ সঠিকভাবে বুঝতে না পেরে এবং তাড়াহুড়ো করে শট খেলতে গিয়ে আউটসাইড এজ হয়ে প্রায়ই পয়েন্ট বা কাভারে ক্যাচ দেন জয়।
সুইপ
স্পিনের বিরুদ্ধে জয়ের অন্যতম শক্তির জায়গা তাঁর সুইপ শট। মিডল-লেগ বা লেগ স্ট্যাম্পের লাইনের ফুল লেন্থের বলগুলোকে সুইপ করে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি আদায় করে নেন তিনি। এক্ষেত্রে পিছনের হাঁটু গেড়ে ফ্রন্টফুটকে লেগ স্ট্যাম্পের লাইনে এনে সুইপ শট খেলেন তিনি। প্রথাগত সুইপ ছাড়া স্লগ সুইপও খেলেন জয়।
স্ট্রেইট ড্রাইভ
স্লটে বল পেলে স্ট্রেইট ড্রাইভটাও খেলেন জয়, বিপিএলেও বেশ কিছু বাউন্ডারি আদায় করতে দেখা গেছে তাকে। এই স্ট্রেইট ড্রাইভগুলো চোখের জন্য উপকারী হলেও একটু খুঁতখুঁতানি থেকেই যায়। এই শটের ক্ষেত্রে ব্যাটটা সোজা থাকে না জয়ের (ছবির শটে বাউন্ডারি পেলেও ব্যাটটা সোজা নেই)।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে অফ স্ট্যাম্পের বাইরের একটা ছেড়ে দেওয়ার মতো বলে স্ট্রেইট ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন জয়। ছবিতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, তার ব্যাটটা সোজা নেই এক্ষেত্রে।
পুল
পেসের বিরুদ্ধে পুল শটটা ভালোই খেলেন জয়। টপ এজ হয়ে বল শূন্যে ভাসা, অথবা লেন্থ বুঝতে ভুল করে বোল্ড হওয়ার কিছু উদাহরণ থাকলেও এই শটে জয়ের সাফল্যের হারই বেশি।
স্পিনের বিপক্ষেও জয়ের পুল শটটা বেশ রানপ্রসবা। ব্যাকফুটকে একটু পিছিয়ে নিয়ে অফ স্ট্যাম্প বা অফ-মিডল স্ট্যাম্পের লাইনে নিয়ে, ফ্রন্টফুটকে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে নিয়ে পুল শট খেলেন জয়। কিছু ক্ষেত্রে বল বেশিক্ষণ হাওয়ায় ভাসলেও সাধারণত তা ফিল্ডারের হাত অবধি পৌঁছায় না।
অন ড্রাইভ
প্রথাগত মাটিঘেঁষা অন ড্রাইভ ছাড়াও স্পিনের বিরুদ্ধে জয়ের আরেকটি রানপ্রসবা শট হলো লফটেড অন ড্রাইভ। স্ট্যাম্পের মধ্যে বা অফস্ট্যাম্পের সামান্য বাইরের বলগুলোকে টেনে লং অন দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে পারেন জয়, এক্ষেত্রে ফ্রন্টফুট অর্থাৎ বাম পাকে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে নিয়ে জায়গা তৈরি করে নেন এবং শট খেলেন।
এই লফটেড অন ড্রাইভের ক্ষেত্রে পায়ের ব্যবহারও করে থাকেন জয়। দুই-এক কদম সামনে এগিয়ে, ফুল লেন্থের বলকে ওভার পিচ বানিয়ে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে তুলে মারেন তিনি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফলও হয়ে থাকেন। ডারবান টেস্টের প্রথম ইনিংসে সাইমন হারমারকে কাউন্টার অ্যাটাক করার ক্ষেত্রে এই শটটা খেলেছিলেন জয়।
এবার জয়ের দুর্বলতার দিকগুলোতে একটু আসা যাক।
আগেই বলেছি, জয়ের সবচেয়ে বেশি শক্তির জায়গা তার ধৈর্য্য এবং টেম্পারামেন্ট। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি দুর্বলতার জায়গাও এটাই। ক্রিজে সেট হওয়ার আগ পর্যন্ত জয় বেশ নড়বড়ে থাকেন, যার উদাহরণ দেখা গেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে তার অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ তিন ইনিংসে। এছাড়া যেকোনো বিরতির পর বা নতুন দিনের খেলার শুরুতেও একটু নড়বড়ে দেখায় জয়কে, অবশ্য পৃথিবীর প্রায় সব ব্যাটসম্যানের জন্যই সেটা সত্য হতে পারে। তবে ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়ার পর ধৈর্য্যের ঘাটতি দেখা যায় না জয়ের মধ্যে।
উপরের ছবিটা মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের, যেখানে ইনিংসের শুরুর দিকে অফ স্ট্যাম্পের বাইরের একটা বলে খোঁচা মেরে বসেছিলেন জয়। ভাগ্য ভালো ছিল তার, স্লিপ আর গালির মাঝ দিয়ে বলটা বেরিয়ে গিয়েছিল।
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালেও এভাবে ইনিংসের শুরুতেই অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে আউট হুয়ে গিয়েছিলেন জয়। এক্ষেত্রে আরেকটা বিষয়ও স্পষ্ট, ইনিংসের শুরুর দিকে বলের লাইন, লেন্থ বা গতিপথ বুঝতেও একটু সময় নেন জয়। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল, যেগুলো সহজেই ছেড়ে দেওয়া যায়, সেগুলোতেও অনেক সময়ে খোঁচা মেরে বসেন তিনি।
পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে জয়ের আরো একটা দুর্বলতা লক্ষ্য করা গেছে। টার্নের বিপরীতে ফ্রন্টফুটে খেলতে গিয়ে তিনি একটু তাড়াহুড়ো করেন, এবং এই সুযোগটা নিয়েছেন সাজিদ খান এবং কেশব মহারাজ। হয় আউটসাইড এজ হয়ে স্লিপে ধরা পড়েছেন জয়, অথবা উপড়ে গেছে স্ট্যাম্প।
টুকটাক দুর্বলতার জায়গা সব ব্যাটসম্যানেরই থাকে, জয়েরও আছে। আর দুর্বলতাগুলোকে শক্তিকে রূপান্তর করাটাই এই একুশ বছর বয়সী তরুণের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেক ইনিংসে শূন্য, এরপরের দুই টেস্টে দুটো মহাকাব্যিক ইনিংস। পরের তিন ইনিংসে আবার সর্বসাকুল্যে চার রান, যার মধ্যে শেষ টেস্টে আবার পেয়েছেন ‘চশমা’ও। দেশের জার্সিতে মাহমুদুল হাসান জয় তাই মুদ্রার দুটো পিঠই দেখে ফেলেছেন ক্যারিয়ারের শুরুতেই। তবে ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে, দুর্বলতাগুলোকে শক্তিতে রূপান্তর করে, সাফল্যের নতুন চূড়ায় নিজেকে নিয়ে যাবেন, যেকোন পর্যায়ের ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের কাছ থেকে এটুকু আশা তো করাই যায়!
জয়ের ব্যাটে নিশ্চয়ই অনেকবার জয়ের হাসি হাসবে বাংলাদেশ!