সপ্তম স্বর্গে মিলল ট্রফির সন্ধান

রবার্ট ব্রুস, ময়মনসিংহের শীতল সরকার ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল যেন এখন এক সুঁতোয় গাঁথা। ছাত্র জীবনে বই-পুস্তকে রবার্ট ব্রুসের কাহিনী পড়ে থাকতে পারেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। তবে নিজ ভূমের হলেও শীতল সরকারের গল্প তামিম-সাকিবদের জানার সম্ভাবনা কম। কিন্তু এই দুই ব্যক্তির সঙ্গে ক্রিকেট মাঠে টাইগারদের লড়াই-সংগ্রামের গল্প যেন একাত্ম হয়ে গেছে।

ইংরেজদের বিরুদ্ধে টানা ছয়বার বানুকবার্নের যুদ্ধে হেরেছিলেন স্কটিশ রাজা রবার্ট ব্রুস। গুহায় আত্মগোপনকালে প্রবল বাতাসের বিপক্ষে মাকড়সার কড়িকাঠ বেয়ে উপরে উঠার চেষ্টা দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন রবার্ট ব্রুস। সপ্তম চেষ্টায় ঠিকই বানুকবার্ন যুদ্ধে ইংরেজদের হারিয়েছিলেন তিনি।

ময়মনসিংহের শীতল সরকার তিন যুগ ধরে নির্বাচন করছেন। ভোটের লড়াইয়ে ছয়বার হেরে চাল-চুলোহীন হয়ে গেছেন। প্রিয়তমা স্ত্রীও অভিমানে তার বাড়ি ছেড়েছে। জিততে জিততেও খুব কাছ থেকে ফিরেছেন ব্যর্থ হয়ে। তবে হাল ছাড়েননি ষাটোর্ধ্ব এই ব্যবসায়ী। ময়মনসিংহ পৌরসভার নির্বাচনে সপ্তম অংশগ্রহণে বিজয়ের বরমাল্য উঠেছে শীতল সরকারের গলায়। বলা বাহুল্য, এই বিজয়ে ১৮ বছর পর তার ঘরে ফিরেছেন তার জীবনসঙ্গিনী লক্ষ্মী সরকার ও ছেলে হিমেল সরকার।

বিজয়ের পর শীতল সরকার; Image Credit: Jagonews24

বাংলাদেশের তৃষিত হৃদয় ট্রফির জন্য হন্যে ঘুরে ফিরেছে ক্রিকেট দুনিয়ায়। ছয়বার ফাইনালে মঞ্চে এসে রিক্ত হস্তে বিদায় নিতে হয়েছে। মিরপুর স্টেডিয়াম, কলম্বোর প্রেমাদাসা, দুবাইয়ের মরুর বুক রাজ্যের হতাশা উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ দল ও দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। অতীতের এই ছয় ফাইনালের সবক’টিতেই বাংলাদেশ হেরেছে এশিয়ান প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাই ছিল বাংলাদেশের স্বপ্নসাধ বিলীন হওয়ার মঞ্চে প্রবল প্রতিপক্ষ।

ফাইনালের মঞ্চে হৃদয় জিততে জিততে ক্লান্ত বাংলাদেশ। অবশেষে হৃদয় জেতার দিন শেষ হয়েছে। ডাবলিনে হৃদয় নয়, বাংলাদেশ জিতেছে অধরা ট্রফি। সপ্তম স্বর্গে মিলেছে পরম আকাঙ্ক্ষিত ট্রফির সন্ধান। গত ১৭ মে ডাবলিনের মালাহাইডে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে (ডিএল মেথড) পরাজিত করে নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। ছয়টি ফাইনাল হারের দুঃখগাঁথাকে মাড়িয়ে বহুজাতিক টুর্নামেন্টে প্রথমবার শিরোপা জয়ের গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে চলে আসা মাশরাফি বিন মুর্তজার হাত ধরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যুক্ত হলো অর্জনের নতুন পালক।

ডাবলিনের ওই ফাইনাল ট্রফিটা টাইগারদের হাতে অনায়াসে ধরা দেয়নি। বাংলাদেশের স্নায়ুর চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়েছে ম্যাচটি। ছিল বৃষ্টির বাধা, যেখানে পাঁচ ঘন্টা অপেক্ষমান থাকতে হয়েছে। ডিএল মেথডের খড়্গ হিসেবে এসেছিল বাড়তি রানের চাপ। অদম্য সাহসিকতা, দৃঢ়চেতা মনোবলে সব বাধা উতরে গেছে বাংলাদেশ।

শেষ টেনেছিলেন তারা; Image Credit: AP

ব্যাট হাতে ট্রফির রূপকার ছিলেন সৌম্য সরকার ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দুই তরুণের বিধ্বংসী ভয়ঙ্কর সুন্দর ব্যাটিংয়ে উড়ে গেছে ক্যারিবিয়ানরা। রান তাড়ার শুরুতে নান্দনিক ব্যাটিংয়ে বিমোহিত করেছেন সৌম্য। দারুণ ফর্মে থাকা সৌম্যই সুরটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। পরে মোসাদ্দেকের টর্নেডো নিশ্চিত করেছে ঐতিহাসিক জয়।

টসে হেরে আগে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০.১ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩১ রান তুলেছিল। তারপরই মালাহাইডে নামে বৃষ্টি। ভেজা আউটফিল্ড ও বৃষ্টির কারণে প্রায় পাঁচ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর ম্যাচের দৈর্ঘ্য নির্ধারিত হয় ২৪ ওভার। বৃষ্টির আগে ও পরে ব্যাট করে ক্যারিবিয়ানরা এক উইকেটে ১৫২ রানের স্কোর গড়ে। কিন্তু ডিএল মেথডে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ২১০ রান। সৌম্য-মোসাদ্দেকের হাফ সেঞ্চুরিতে ২২.৫ ওভারে পাঁচ উইকেটে ২১৩ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ, গড়ে অনন্য ইতিহাস। ক্রিকেট বিশ্বকে দিয়েছে বড় মঞ্চের পরাশক্তি হওয়ার আগমন ধ্বনি।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশের পদচারণা শুরু ১৯৮৬ সালে। ওয়ানডে স্ট্যাটাস অবশ্য এসেছিল ১৯৯৭ সালে। এই একদিবসী ক্রিকেটেই এখন বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত শক্তি বাংলাদেশ। অন্য যেকোনো ফরম্যাটের তুলনায় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সাফল্য অনেক বেশি। ২০১৪ সালের শেষ দিকে মাশরাফি আবার নেতৃত্বে আসার পর এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের উত্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। তার অধিনায়কত্বে ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভূপাতিত করেছে টাইগাররা। বহুজাতিক সিরিজে অতীতের ছয় ফাইনালের তিনটিই খেলেছে বাংলাদেশ মাশরাফির নেতৃত্বে, গত চার বছরে। ২০১৬ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও সেমিফাইনালে উঠেছিল লাল-সবুজের দল। ২০১৮ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজ, পরে নিদাহাস কাপ টি-টোয়েন্টি (মাশরাফি ছিলেন না), একই বছর সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের ফাইনালে লড়েছিল টাইগাররা।
ভগ্ন মনরথে ছয়টি ফাইনাল থেকে ফিরলেও এই ব্যর্থতার পদভারেই রচিত হয়েছে নতুন অর্জনের ভিত। ট্রফির দুয়ার থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশই শেষ পর্যন্ত ফাইনালের চাপের, মানসিকতার ‘জুজু’ ভাঙতে পেরেছে।

ডাবলিনে ইতিহাস গড়ার আগের ছয় ফাইনালের তিক্ত স্মৃতি সহজে বিস্মৃত হওয়ার নয়। ক্রিকেট প্রেমীদের হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়া ফাইনালগুলো এখন বাংলাদেশের কষ্টের অলঙ্কার হয়েই টিকে থাকবে।

জয়ের পর; Image Credit: Getty Images

ত্রিদেশীয় সিরিজ (২০০৯, ১৬ জানুয়ারি)

নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার বহুজাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে আয়োজিত সিরিজের ফাইনালে মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল মাহেলা জয়াবর্ধনের শ্রীলঙ্কা। মিরপুর স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ১৫২ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। ৬ রানে লঙ্কানদের পাঁচ উইকেট ফেলে দেওয়ার পরও শেষ রক্ষা হয়নি। সাঙ্গাকারার প্রতিরোধের পর শেষ দিকে মুরালিধরনের রুদ্রমূর্তির সামনে মুহূর্তেই বাংলাদেশের হৃদয় চৌচির হয়। ব্যাট হাতে ওই সময়ের নবাগত তরুণ রুবেলকে কচুকাটা করেন মুরালি। ১১ বল আগে দুই উইকেটের জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা।

Image Credit: AFP

এশিয়া কাপ (২০১২, ২২ মার্চ)

মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে ঘরের মাঠে ভারত, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। মিরপুরে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মিসবাহ-উল হকের পাকিস্তানকে ২৩৬ রানে আটকে রেখেছিলেন বোলাররা। ব্যাটিংয়ে তামিম-সাকিবের হাফ সেঞ্চুরির পরও অনভিজ্ঞতার কারণে পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ উইকেটে থাকলেও শেষ ওভারে গিয়ে হেরে যায় বাংলাদেশ। ২ রানের হৃদয়ভাঙা হারের কষ্টে মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মুশফিক-সাকিবরা।

স্রেফ দুই রান; Image Credit: The Daily Star

এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি (২০১৬, ৬ মার্চ)

ক্রিকেটের এই ক্ষুদে সংস্করণে বাংলাদেশকে কখনোই ভালো দল বলা হয় না, এবং সেটি সঙ্গত কারণেই। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দেশের মাটিতে আয়োজিত এশিয়া কাপে সবাইকে চমকে দেয় মাশরাফির দল। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপে সবার ধারণাকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বাদ পড়ে। ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে টলাতে পারেনি মাশরাফির দল। স্কোরবোর্ডে পুঁজিটা বড় না হওয়ায় মিরপুরে আট উইকেটে ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ।

ট্রফি জয়ের পর ভারত; Image Credit: AFP

ত্রিদেশীয় সিরিজ (২০১৮, ২৭ জানুয়ারি)

১০ বছর পর আবারও দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ে-শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজন করে বাংলাদেশ। তখন সদ্যই টাইগারদের ছেড়ে নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার হেড কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। স্বাভাবিকভাবেই সিরিজটাতে ছিল প্রবল উত্তাপ। প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছিল মাশরাফি বাহিনী। পরে প্রত্যাশিতভাবে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওঠে ফেভারিট বাংলাদেশ। তবে ফাইনালের আগে লঙ্কানদের কাছেও ৮০ রানে অলআউট লজ্জা পেয়েছিল স্বাগতিকরা।
ফাইনালে বোলাররা শ্রীলঙ্কাকে ২২১ আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডিংয়ের সময় সাকিব ইনজুরিতে পড়ার পর ভড়কে যায় গোটা দল। ব্যাটিং করতে পারেননি তিনি। সাহস, মনোবল হারিয়ে ১৪২ রানে অলআউট হয়ে আরেকবার ট্রফি হারানোর বেদনায় পুড়ে বাংলাদেশ।

Image Credit: AFP

নিদাহাস কাপ টি-টোয়েন্টি (২০১৮, ১৮ মার্চ)

জানুয়ারি মাসে নিজেদের মাটিতে শ্রীলঙ্কার কাছে হতাশায় পুড়েছিল বাংলাদেশ। এক মাস না যেতেই লঙ্কানদের ডেরায় আবার দুই দলের সাক্ষাৎ হয়। এ যাত্রা পাল্টা শোধ নিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। কলম্বোয় নিদাহাস কাপ টি-টোয়েন্টি’র ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার উৎসবকে মাটি করে দিয়েই। দুইবারই লঙ্কানদের হারিয়েছিল টাইগাররা। ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই হয়েছিল জমজমাট। কিন্তু প্রেমাদাসায় ম্যাচের শেষ দিকে দীনেশ কার্তিকের অবিশ্বাস্য বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা ভারত চাপের বাঁধন ছিন্ন করতে সক্ষম হয়। সৌম্যর করা শেষ বলে ছক্কা মেরে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করেন কার্তিক।

ম্যাচ জেতানো ছক্কার পর কার্তিক; Image Credit: AP

এশিয়া কাপ (২০১৮, ২৮ সেপ্টেম্বর)

আরব আমিরাতের মরুর বুকে এশিয়া কাপে খেলেছিল চোটজর্জর বাংলাদেশ। সাকিব-তামিমকে ছাড়াই নিজেদের ইতিহাসে ষষ্ঠ ফাইনাল খেলেছিল মাশরাফির দল। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে লিটন দাসের চোখধাঁধাঁনো সেঞ্চুরির পরও ২২২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। এই স্বল্প পুঁজিতেই ভারতকে প্রায় বেঁধে ফেলেছিলেন বোলাররা। কিন্তু এ যাত্রাও ভাগ্য বিড়ম্বিত টাইগারদের। দুবাইয়ে ভারতের ত্রাতা হয়ে ধরা দেন কেদার যাদব। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ার পরও তার হার না মানা ব্যাটিংয়ে শেষ ওভারে তিন উইকেটে ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। বাংলাদেশের কষ্টের বুকে যুক্ত হয় আরেকটি ফাইনালে হারের স্মৃতি।

আবারও ভারত; Image Credit: Cricket Australia

ট্রফির আক্ষেপ মোচনের ছয়টি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৯৯৮ সালের ১৭ মে হায়দরাবাদে কেনিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে জিতেছিল বাংলাদেশ। ঠিক ২১ বছর পর ওই তারিখেই (১৭ মে) প্রথম বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশ। কাকতালীয় মনে হতে পারে, তবে হয়তো ক্রিকেট বিধাতা বাংলাদেশের গল্পটা এভাবেই লিখে রেখেছিলেন!

This article is in Bangla language. It is about the six encounters where Bangladesh failed to seize the moment in the finals.

Featured Image: AP

Related Articles

Exit mobile version