ক্রিকেটতীর্থ লর্ডসের ‘অনার্স বোর্ড’ ক্রিকেট বিশ্বে অনেক মর্যাদা-সম্মানের বিষয়। সারা বিশ্বের ক্রিকেটারমাত্রই ইংল্যান্ডের এই ভেন্যুতে খেলার স্বপ্ন দেখেন। অনার্স বোর্ডে নাম তুলতে পারা মানে ক্রিকেটার হিসেবে আজীবন বয়ে বেড়ানো এক অমূল্য গৌরব।
বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার অভিজাত এই অনার্স বোর্ডে এখন পর্যন্ত নিজেদের নাম খোদাই করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লর্ডস টেস্টে সেঞ্চুরি উদযাপনের লাফিয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত শূন্যে ছুঁড়েছিলেন তামিম ইকবাল। আন্তর্জাতিকভাবে চড়া মূল্যে বিক্রি হয়েছে সেই ছবি। একই টেস্টে বাংলাদেশের পেস বোলার শাহাদাত হোসেন রাজীবও পেয়েছিলেন ইনিংসে ৫ উইকেট। তামিমের পর এই ডানহাতি পেসারের নামটাও লেখা হয়েছিল লর্ডসের অনার্স বোর্ডে।
লর্ডসের জন্মলগ্ন থেকে প্লেয়ার্স প্যাভিলিয়নে অনার্স বোর্ডটা ছিল শুধুই এই ভেন্যুতে টেস্ট ক্রিকেটে করা পারফরমারদের জন্য বরাদ্দ। এ বছর থেকে ওয়ানডে ফরম্যাটের পারফরমারদের নামও যুক্ত করা হচ্ছে অনার্স বোর্ডে। গত ৫ জুলাই বিশ্বকাপের লিগপর্বে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটি হয়েছিল লর্ডসে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচে ৭৫ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। এই পারফরম্যান্সের বদৌলতে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে নাম উঠল এই তরুণ ক্রিকেটারের। যদিও অনার্স বোর্ডে নিজের নাম দেখার আগেই দলসমেত দেশে ফিরে এসেছেন মুস্তাফিজ।
আইসিসির এফটিপি অনুযায়ী ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নেই বাংলাদেশের। তাই লর্ডসের অনার্স বোর্ডে স্বচক্ষে নিজের নাম দর্শনের অপেক্ষাটা মুস্তাফিজের জন্য বেশ লম্বাই হয়ে যাচ্ছে।
‘কাটার মাস্টার’ খ্যাত এই পেসারের অবশ্য অত তাড়াও নেই এই বিষয়ে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর নিজেই সাংবাদিকদের বলেছিলেন,
‘আবার যখন আসব, তখন না হয় দেখব।’
রেকর্ডবই’য়ে মুস্তাফিজের বিচরণ
তার আগের ম্যাচেই ভারতের বিরুদ্ধে ৫৯ রানে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানের সঙ্গে ৫ উইকেট পেয়ে দারুণ সব রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন তিনি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে দুইবার ৫ উইকেট পেয়েছেন, তাও টানা দুই ম্যাচে। বিশ্বকাপের এক আসরে একাধিকবার ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়ার রেকর্ডে তিন কীর্তিমানের সঙ্গী হয়েছেন। ১৯৭৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার গিলমোর, ২০০৩ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্রেকস, অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক চলমান বিশ্বকাপে এমন রেকর্ড করেছিলেন।
তবে অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার গিলমোর ছাড়া কারোরই নেই পরপর ২ ম্যাচে ৫ উইকেট নেয়ার রেকর্ড। ১৯৭৫ বিশ্বকাপে লীডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবং পরের ম্যাচে লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়ে রেকর্ডটির একমাত্র মালিক ছিলেন গিলমোর। এবার গিলমোরকে সেই রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন বাংলাদেশের মুস্তাফিজ। ৪৪ বছর পর গিলমোরের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন কোনো বোলার।
তবে একদিক এগিয়ে থাকছেন মুস্তাফিজ। কারণ, ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ছিল ৬০ ওভারের ম্যাচ, গিলমোর পেয়েছিলেন ১২ ওভার বোলিংয়ের সুযোগ। তখন উইকেটও এখনকার মতো রানপ্রসবা ছিল না। তাছাড়া, বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ তিনবার ৫ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব আছে শুধু অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের। নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই মুস্তাফিজ দুইবার ৫ উইকেট পেয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীতেও ক্রিকেটের এই মহাযজ্ঞে বল হাতে দেখা যেতে পারে কাটার মাস্টারকে। সেক্ষেত্রে স্টার্ককে ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্নটা বুকে লালন করতেই পারেন মুস্তাফিজ।
নিজের বিশ্বকাপ অভিষেককে অনেকভাবেই স্মরণীয় করে রেখেছেন সাতক্ষীরার এই তরুণ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ২০ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এর আগে বিশ্বকাপের এক আসরে বাংলাদেশের জার্সিতে সর্বোচ্চ ১২টি উইকেট ছিল বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের। ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ২০০৭ বিশ্বকাপে রাজ্জাকের গড়া সেই রেকর্ড এবার টপকে নতুন ইতিহাস গড়েছেন মুস্তাফিজ।
২০১৫ সালে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে সাড়া জাগানো অভিষেকের মাধ্যমেই এই বাঁহাতি পেসারকে চিনেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। মিরপুরে প্রথম দুই ম্যাচেই ১১ উইকেট নিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। রোহিত শর্মা, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের নাকানি-চুবানি খাইয়েছিলেন মারণঘাতী কাটারের ছোবলে। তারপর বিশ্বকাপের আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে একবারই ৫ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। সেটা জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই।
ক্যারিয়ারে চতুর্থবার ৫ উইকেট ভারতের বিরুদ্ধে। পঞ্চমবার এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। লর্ডসের ম্যাচটি ছিল মুস্তাফিজের ক্যারিয়ারের ৫৪তম ওয়ানডে, যে ম্যাচে এই ফরম্যাটে উইকেট শিকারের ‘সেঞ্চুরি’ও করেছিলেন তিনি। হারিস সোহেল হয়েছিলেন তার ১০০তম শিকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ৪ বছর ১৭ দিন বয়সেই এই মাইলফলকে পা রেখেছেন তিনি। ওয়ানডে ইতিহাসে উইকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে মুস্তাফিজের অবস্থান চতুর্থ। আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার রশীদ খান (৪৪ ম্যাচে), অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক (৫২ ম্যাচে), পাকিস্তানের সাকলাইন মুশতাক (৫৩ ম্যাচে) পরই বাংলাদেশের এই তরুণ রয়েছেন, ছুঁয়ে ফেলেছেন নিউ জিল্যান্ডের সাবেক ফাস্ট বোলার শেন বন্ডকে (৫৪ ম্যাচ)।
গতি নিয়ে তুষ্ট, নজর এখন বৈচিত্র্যে
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে লর্ডসে এত সব রেকর্ড, ইতিহাসে নাম লেখানোর পরও তৃপ্তির ঢেঁকুর ছিল না মুস্তাফিজের কণ্ঠে। কারণ, ম্যাচটা হেরেছিল বাংলাদেশ দল। ম্যাচের পর লর্ডসের মিক্সড জোনে নিজের অতৃপ্তির কথা তুলেছিলেন এই তরুণ পেসার। বলেছিলেন,
‘ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তো ৫ বার ইনিংসে ৫টি করে উইকেট পেলাম, তার মধ্যে বিশ্বকাপে ২ বার। তারপরও পুরোপুরি খুশি হতে পারছি না। দল সেমিফাইনালে উঠলে খুশি হতাম।’
বিশ্বকাপজুড়ে পুরাতন বলে ভালো করেছেন মুস্তাফিজ, নতুন বলে কার্যকর ছিলেন না। নতুন বলে ভালো করতে কাজ করবেন তিনি। বলেছেন,
‘নতুন বলে মাঝে মাঝে সুইং পেয়েছি। এখানে কাজ করতে হবে। কাঁধের সমস্যাটা নেই, তাই ভাল লাগছে এখন।’
গতি নিয়ে সন্তুষ্ট মুস্তাফিজ। এখন বোলিংয়ে বৈচিত্র্য বাড়ানোর দিকে নজর দিতে চান তিনি। বলেছেন,
‘আমার কিছু ভেরিয়েশন আছে, যা অন্যদের চেয়ে আলাদা। আমি খুব জোরে বল করি না, ১৩৫ কিলোমিটারের মতো গতিতে বল করি। তবে এই স্পিড নিয়ে আমি সন্তুস্ট। এখন দুই-একটা ভেরিয়েশন বাড়াতে হবে।’
বড্ড অসময়ে জ্বলেছিলেন মুস্তাফিজ
বিশ্বকাপে ২০ উইকেট পেলেও একটা সমালোচনা ঠিকই মুস্তাফিজের নামের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। কারণ এই টুর্নামেন্টে বড্ড অসময়ে জ্বলে উঠলেন তিনি। পেস বোলিংয়ে স্ফুলিঙ্গের অভাবটা বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ভোগাচ্ছিল বাংলাদেশকে। বোলিংয়ে বড় ভরসা ছিলেন এই বাঁহাতি পেসার। কিন্তু টুর্নামেন্টের শেষ দুই ম্যাচে ১০ উইকেট পেলেও মোটা দাগে প্রত্যাশার দাবি মেটাতে পারেননি তিনি। এবং তার জ্বলে উঠার সময়টা এমনই ছিল যে, ততক্ষণে সেমিফাইনালের দৌঁড় থেকে ছিটকে পড়া বাংলাদেশ দল ছিল দেশের উদ্দেশ্যে বিমানে চড়ার দ্বারপ্রান্তে।
বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে নতুন বলে বোলিং করেছেন মুস্তাফিজ, উইকেটের দেখা পাননি। বেশিরভাগ ম্যাচেই তৃতীয় স্পেলে এসে বোলিং করে উইকেট পেয়েছেন। ততক্ষণে রানের পাহাড় গড়ে ফেলেছে প্রতিপক্ষরা। তাই মুস্তাফিজ ২০ উইকেট পেলেও তা দলের জন্য কতটা কাজে লেগেছে, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
ওভাল, প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা (৩/৬৭, ১০ ওভার)
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নতুন বলটা মুস্তাফিজের হাতেই তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। দ্বিতীয় স্পেলে এসে ২৩ রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়েছিলেন, আউট করেছিলেন ডেভিড মিলারকে। তৃতীয় স্পেলে ৩ ওভারে দেন ২৩ রান, তবে উইকেট নিয়েছেন দু’টি। ক্রিস মরিস ও জেপি ডুমিনিকে আউট করেন তিনি।
ওভাল, প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড (০/৪৮, ৭.১ ওভার)
ওভালে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে বোলিংয়ে আসেন মুস্তাফিজ। প্রথম স্পেলে ১ ওভারে ৫ রান, দ্বিতীয় স্পেলে ৪ ওভারে ২৪ রান, তৃতীয় স্পেলে ১ ওভারে ৭ রান। চতুর্থ স্পেলে ১.১ ওভারে ১২ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন।
কার্ডিফ, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড (১/৭৫, ৯ ওভার)
কার্ডিফে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রানের পাহাড় গড়েছিল ইংল্যান্ড। মুস্তাফিজও বল হাতে বিবর্ণ, খরুচে ছিলেন। ইনিংসের ১১তম ওভারে চতুর্থ বোলার হিসেবে বোলিংয়ে আসেন তিনি। প্রথম স্পেলে ৩ ওভারে ২৪ রান, দ্বিতীয় স্পেলে ৩ ওভারে ১৮ রান, তৃতীয় স্পেলে ২ ওভারে ১৯ রান, চতুর্থ স্পেলে ১ ওভারে ১৪ রান দেন। শেষ স্পেলেই তুলে নিয়েছিলেন স্টোকসের উইকেটটি।
টন্টন, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৩/৫৯, ৯ ওভার)
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ে অবদান ছিল মুস্তাফিজের। চতুর্থ স্পেলে এসে ৪০তম ওভারে তার জোড়া শিকারই (শিমরন হেটমায়ার, আন্দ্রে রাসেল) ম্যাচটা বাংলাদেশের করে দেয়। ইনিংসের অষ্টম ওভারে তৃতীয় বোলার হিসেবে বোলিংয়ে আসেন এই বাঁহাতি পেসার। প্রথম স্পেলে ১ ওভারে ৮ রান, দ্বিতীয় স্পেলে ৩ ওভারে ১৪ রান, তৃতীয় স্পেলে ১ ওভারে ১৯ রান। চতুর্থ স্পেলে ২ ওভারে ৯ রান দিয়ে দু’টি উইকেট নেন। পঞ্চম স্পেলে ২ ওভারে ৯ রানের সঙ্গে শাই হোপের উইকেট তুলে নেন।
নটিংহ্যাম, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া (১/৬৯, ৯ ওভার)
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে স্টিভেন স্মিথের উইকেট পেয়েছিলেন ইনিংসের শেষদিকে এসে। নতুন বলে দ্বিতীয় ওভারেই বোলিংয়ে আনা হয়েছিল মুস্তাফিজকে, কিন্তু সফলতা এনে দিতে পারেননি দলকে। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ২১ রান, দ্বিতীয় স্পেলে ৩ ওভারে ৩০ রান। তৃতীয় স্পেলে স্মিথকে আউট করার সঙ্গে ২ ওভারে ১৮ রান দিয়েছিলেন।
সাউদাম্পটন, প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান (২/৩২, ৮ ওভার, ১ মেডেন)
আফগানদের বিপক্ষেও নতুন বল তুলে দেয়া হয়েছিল মুস্তাফিজের হাতে। একটি মেডেন পেলেও উইকেট পাননি। দ্বিতীয় ওভারে বোলিং করেছিলেন তিনি। প্রথম স্পেলে এক মেডেনসহ ৩ ওভারে ১০ রান, দ্বিতীয় স্পেলে ৩ ওভারে ১৯ রান। তৃতীয় স্পেলে ২ ওভারে তিন রান দিয়ে দু’টি উইকেট নেন। রশিদ খান ও দৌলত জাদরানকে আউট করেন তিনি। অবশ্য এর আগেই আফগানরা ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছিল। প্রতিপক্ষের ব্যাটিংয়ের লেজটা গুটিয়ে দেয়া কাজটাই করেছেন মুস্তাফিজ।
বার্মিংহাম, প্রতিপক্ষ ভারত (৫/৫৯, ১০ ওভার, ১ মেডেন)
ভারতের বিপক্ষে সামগ্রিকভাবে সফলতা পেয়েছেন বোলার মুস্তাফিজ। পাঁচ স্পেলে তাকে ব্যবহার করেছেন অধিনায়ক মাশরাফি। এই তরুণ যখন উইকেটের দেখা পেয়েছেন, ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে বড় পুঁজি তুলে ফেলেছিল ভারত। অবশ্য এটাও সত্য, শেষদিকে তার নিয়মিত শিকারের কারণেই ভারতের স্কোরটা আরও বড় আকার পায়নি।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তৃতীয় বোলার হিসেবে বোলিংয়ে আসেন মুস্তাফিজ। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ২৩ রান, দ্বিতীয় স্পেলে ১ ওভারে ১১ রান, তৃতীয় স্পেলের ১ ওভার ছিল মেডেন। এবং ওই ওভারেই সেঞ্চুরিয়ান রোহিত শর্মা ও হার্দিক পান্ডিয়াকে ফেরান ‘কাটার মাস্টার’।
প্রান্ত বদল করে চতুর্থ স্পেলে ১ ওভারে ১০ রান দেন, পঞ্চম স্পেলে ৩ ওভারে ১৫ রান দেন। তবে দীনেশ কার্তিক এবং শেষ ওভারে ধোনি, শামিকে আউট করে নিজের ক্যারিয়ারে চতুর্থবার ৫ উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ। এটি ছিল ভারতের বিরুদ্ধে তার তৃতীয়বার ৫ উইকেট। কিন্তু তার এই অর্জন ম্যাচের ভাগ্যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
লর্ডস, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান (৫/৭৫, ১০ ওভার)
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচেও মুস্তাফিজের ঝলক অব্যাহত ছিল। এ যাত্রাও মুস্তাফিজ ৫ উইকেট নিয়েছেন। এবং চিরাচরিতভাবেই পুরাতন বলে উইকেট উৎসব করেছেন এই বাঁহাতি পেসার।
ইনিংসের ১০ম ওভারে তৃতীয় বোলার হিসেবে বোলিংয়ে আসেন তিনি। প্রথম স্পেলে ২ ওভারে ১১ রান, দ্বিতীয় স্পেলে ৩ ওভারে ২৯ রান, তৃতীয় স্পেলে ৫ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। তার বলে সেঞ্চুরি করা ইমাম-উল হক হিট উইকেট হন। পরে হারিস সোহেলকে ওয়ানডেতে নিজের শততম শিকার বানান মুস্তাফিজ। এরপর শাদাব খান এবং শেষ ওভারে ইমাদ ওয়াসিম, আমিরকে ফেরান বাংলাদেশের এই তরুণ পেসার।