জীবন নিয়ে অতীতবিধুরতায় ভোগেন না কে? কার না ইচ্ছে করে একটু পেছন ফিরে শৈশব-কৈশোরে যেতে? কার না ইচ্ছে করে একটুখানি স্মৃতিকাতর হতে? বাস্তবতার করাল গ্রাসে সেই স্মৃতির সূর্যে স্নান করা হয়ে ওঠে না হয়তো, তবে মনের গহীন কোণে ঠিকই বাজে পুরনো দিনের সেই গান। জীবনঘড়ির কাটা টিকটিক চলে, জীবন নামের সিনেমা হলে রিলের ফিতা ঘুরতেই থাকে। সাথে সেই পুরনো দিনের গান শোনার আকুতিটাও সমানতালে এগিয়ে চলে। মানুষভেদে স্মৃতিকাতরতার বেশ রকমফের। কেউ স্মৃতিকাতর হয় বাদল দিনের ঝড়ো হাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়ে, বৃষ্টির ছাঁটে বিদ্ধ হয়ে, কালবৈশাখীর দাপটে। কেউ আবার কড়া রোদের ভরদুপুরে ঘামে ভিজতে ভিজতে দেখে নেয় সেই পুরনো এপিসোডের পুনঃপ্রচার। শরৎকালের ক্রমশ বদলাতে থাকা আকাশের রঙ, রোদ-মেঘের লুকোচুরি দেখে আমাদের মনেও দোলা দিয়ে যায় ছেলেবেলার হারিয়ে ফেলা একটা শারদীয় দুপুর। কনকনে শীতের সকালে এক কাপ চা, মাঝেমধ্যে উপলক্ষ এনে দেয় কোনো এক স্মৃতিময় ঘটনার। বসন্তের কৃষ্ণচূড়া, নতুন পাতার সতেজ গন্ধ, আর মিষ্টি বাতাসেও মানব সন্তানদের মন অতীত হাতড়ে বেড়ায়। একেই নস্টালজিয়া বলে।
লম্বা একটা ভূমিকা টেনে ফেললাম নস্টালজিয়া নিয়ে। যদিও সেটা লেখার বাকি অংশের প্রয়োজনেই। পাঠক, ক্রিকেট নিয়ে লিখতে বসেছি। জীবন, স্মৃতি, অতীত, নস্টালজিয়া নিয়ে একটু মুন্সিয়ানা দেখানোর বৃথা চেষ্টা করে ফেললাম বোধহয়। ক্রিকেট জীবনের চেয়ে বড় নয়, এই মন্ত্রেই বিশ্বাসী। কিন্তু মাঝেমধ্যে বিশ্বাসে একটু চিড় ধরে যায়। ক্রিকেটকে ঘিরে যখন জীবনের এমন কিছু উপাদান আবর্তিত হয়, জীবনের ক্যানভাসে এমন সব দারুণ স্মৃতিময় আঁকিবুঁকি জমা হয়, তখন ভাবতে ইচ্ছে করে, বিশ্বাস করতে ভালো লাগে ক্রিকেটটা বোধহয় ‘লার্জার দ্যান লাইফ’।
সাউথ এশিয়ায় এবার বসন্ত এসেছে একরাশ নস্টালজিয়া নিয়ে। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের দাপটে প্রায় বছরখানেক বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে ‘রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট সিরিজ’। গত বছরের ৭ মার্চ ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে শুরু হয়েছিল এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট, যার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকার। করেছেন ভারত দলের অধিনায়কত্বও, এমনকি শিরোপাও জিতিয়েছেন। সাথে আছেন বীরেন্দর শেবাগ, যুবরাজ সিং, মোহাম্মদ কাইফের মতো ক্রিকেটাররা। ওদিকে ব্রায়ান লারা, সনাৎ জয়াসুরিয়া, তিলকারত্নে দিলশান, জন্টি রোডস, মাখায়া এনটিনি – আরো কত বড় বড় নাম! এই বড় নামগুলোর প্রভাব তো আছেই, অংশগ্রহণ আছে বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটারদেরও। রোড সেফটি সিরিজে যেন আরো একটু প্রাণ এসেছে বাংলাদেশ লেজেন্ডস দলটা যোগ দেয়ার পর। কোভিড পরিস্থিতির জন্য অস্ট্রেলিয়া লেজেন্ডস টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। অজিদের বদলি হিসেবে মোহাম্মদ রফিকের নেতৃত্বে ভারত গেছেন খালেদ মাসুদ-আফতাব আহমেদরা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের নায়করা, যাদের গড়ে দেয়া ভিতের ওপরই বেড়ে ওঠেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ওদিকে কেভিন পিটারসেনের অধীনে টুর্নামেন্টে খেলছে ইংল্যান্ড লেজেন্ডস।
৭ মার্চ ভারতের বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ লিজেন্ডস। টস জিতে ইনিংস শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন ও জাভেদ ওমর বেলিম। প্রথমজনকে আলাদা করে মনে রেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা সেই এশিয়া কাপের ইনিংসটার জন্য। বেলিম তো নিজের জায়গায় ছিলেন অনন্য, বোলিং এন্ড থেকে গোলা বারুদ ছুটে গেলেও খোলস ছেড়ে বেরোতেন না তিনি। সেই ম্যাচেও একই বেলিমকে দেখা গেছে।
বলছিলাম নাজিমউদ্দিনের কথা। ম্যাচে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক রান তার ব্যাট থেকেই এসেছে, দারুণ কিছু স্ট্রোকে করেছেন ৪৯ রান। এমন ইনিংস দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বারবার ফিরে এসেছে ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালের কথা। নাজিমউদ্দিনের ৫২ বলে ১৬ রানের ইনিংস, পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই রানের হার। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা বারবার ভুলে যেতে চাইবেন যে ম্যাচটা। আমরা ভুলে যেতে চাইলেও নাজিমউদ্দিন মনে রাখবেন। কারণ, তার খেলা শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ওটাই। অবশ্য নাজিমউদ্দিন যে সবাইকে নস্টালজিক করে তুলেছিলেন, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ওদিকে ওপেনিং জুটিতে শেবাগ-শচীন, বোলারদের জন্য মায়াই হয়। ২০০২-২০১২, এই টাইম স্প্যানে দু’জন মিলে ৯৩ ইনিংসে করেছেন ৩,৯১৯ রান। পিটিয়েছেন সেই আমলের সব ডাকাবুকো বোলারদেরই। ব্রেট লি, শোয়েব আখতার, গ্লেন ম্যাকগ্রা – বাদ পড়েননি কেউই। এই ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হ্যান্ড-আই কোঅর্ডিনেশনে যারা খেলেন, তাদের মধ্যে শেবাগ অন্যতম। ফুটওয়ার্কের বালাই নেই, লেংথ বুঝে বলের লাইনে গিয়ে দারুণ জোরে ব্যাটের সুইং। ফলাফল, ছক্কা কিংবা চার। একেকটা শট আর ফলো-থ্রুতে বোলারদের দিকে যেন তাচ্ছিল্যের বাণ ছুটে যেত। ভিন্টেজ শেবাগ। রফিক-সুজন-শরীফ সবাইকেই মেরেছেন এই ম্যাচে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভারতের সাবেক এই ওপেনার এতটাই বিধ্বংসী ছিলেন যে, ইনিংসের প্রথম দুই ওভার শচীন স্ট্রাইকই পাননি।
শচীন, ভারতের ক্রিকেট ঈশ্বর। যার নামটাই একটা ব্র্যান্ড, যে নামের পাশে আর কোনো বিশেষণ দিতে হয় না। সেই চেনা ব্যাটিং স্টান্স, মোরান্ট প্যাডজোড়া, গুড লেন্থ থেকে উঠে আসা বলে অসাধারণ ব্যাকফুট পাঞ্চ, তাও আলতো হাতে। পায়ের ওপর উঠে আসা বলে কব্জির মোচড়ে দারুণ ফ্লিক, ফ্রন্টফুটে এগিয়ে এসে কভার ড্রাইভ, লেগ গ্লান্স, আর স্ট্রেইট ড্রাইভ – লিটল মাস্টারের ছোট্ট ইনিংসে সবই দেখা গেছে। ক্লাস, ব্রিলিয়ান্স, শব্দগুলো বারবার ব্যবহার হয়েছে তার নামের সাথে। নতুন করে না-ই বা করলাম। খালেদ মাহমুদ সুজনকে ছয় মেরে ম্যাচটা শেষ করেছেন শেবাগ। বাংলাদেশের বোলারদের অসহায় আত্মসমর্পণ। পুরনো দৃশ্যের মঞ্চায়ন যেন আবারও।
সুজন-শেবাগ একে অপরের বিপক্ষে খেলেছেন বেশ ক’বারই। অবশ্য শেবাগের ক্যারিয়ারের সূর্য যখন মাঝ গগনে, সুজন তখন অস্তাচলে। সুজনের বলের গতি আরো কমেছে, কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন এতটুকুও কমেনি। শেবাগের চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। বয়স বাড়ছে, শরীরও হয়তো বিদ্রোহ করে। কিন্তু যে অথরিটি আর দাপট নিয়ে গোটা ক্যারিয়ারে ব্যাট করেছেন, সেই ঝলকে বিন্দুমাত্র কমতি নেই। তারা এক বিন্দুতে মিলেছেন, আমাদের মিলিয়েছেন দারুণ সেই নস্টালজিয়ায়।
ব্রায়ান লারা, ক্রিকেটের বরপুত্র। ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডের পোস্ট ম্যাচ প্রেজেন্টেশনে কেনসিংটন ওভালের দর্শকের প্রশ্ন করেছিলেন, ‘Did I entertain you?’ উত্তরে শোরগোল পড়ে গেছিল গ্যালারিতে। লারার ব্যাটিং কতটা আনন্দদায়ী ছিল, সেটার প্রতিফলন দেখা গেছে এই রোড সেফটি সিরিজেই। লারার আনঅর্থোডক্স ব্যাটিং স্টান্স আর টেকনিক নিয়ে কুমার সাঙ্গাকারা ক্রিকইনফোতে এক কলামে লিখেছিলেন,
‘লারার ব্যাটিংয়ে শিল্প আর সৌন্দর্যই প্রধান। তাকে ব্যাট করতে দেখে মনে হতো যেকোনো কিছুই সম্ভব। ক্রিকেটে এর চেয়ে সুন্দর জিনিস আর নেই।’
লারার বয়স এখন ৫১। মুখের চামড়াতেও হালকা ভাঁজ পড়েছে, চোখেমুখেও বয়সের ছাপ। তবুও হাই ব্যাকলিফট আর দারুণ ব্যালান্সড স্ট্যান্সে মোটেও মরচে ধরেনি। পয়েন্টের ওপর দিয়ে স্লাইস করা, স্পিনে সুইপ, কভার ড্রাইভে মুন্সিয়ানা। যখন মাঠে নামেন, ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে শুরু করে ক্রিকেট ভক্তদের মন; সবখানে জ্বলজ্বল করে লারার সব অর্জন। শ্রীলংকার বিপক্ষে খেলছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লারা ছিলেন স্ট্রাইকে, তাকে বল করছিলেন লংকান কিংবদন্তি রঙ্গনা হেরাথ। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে লারার স্কয়ার কাট; শর্ট থার্ডম্যানে ছিলেন জয়াসুরিয়া, ছুটে গিয়েও আটকাতে পারেননি তিনি। অধিনায়ক দিলশান ইনিংস ওপেন করতে নেমে এখনো তাণ্ডব বইয়ে দেন স্ট্রাইকিং এন্ড থেকে। পার্টটাইম অফ স্পিনেও জং ধরেনি।
অজন্তা মেন্ডিসের কথা মনে আছে? সেই রহস্য স্পিনার, যার একেকটা ক্যারম ডেলিভারির উত্তর জানা ছিল না শচীন-দ্রাবিড়দের মতো ব্যাটসম্যানদেরও? কী দারুণ উত্থান ছিল তার! এরপর হারিয়ে যাওয়ার পালা। তার দেখাও মিলেছে এই সিরিজে। ডেলিভারিতে আগের মতো রহস্য নেই, বরং অস্ত্রাগারে মরচে ধরেছে। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য জয়াসুরিয়াকে বলা হতো ‘মাতারা হারিকেন’। একেকটা শটে যে ধ্বংসের বাতাস বইতো, শুনতে পেতো প্রতিপক্ষের বোলাররা। স্কয়ার কাটে কিংবা ব্যাক অফ দ্য লেংথ থেকে উঠে আসা বলে পুল শটে বাজতো মাতারা হারিকেনের ধ্বংসলীলার আওয়াজ। সেই জয়াসুরিয়ার শরীর বেশ মুটিয়ে গেছে, বোল্ড হচ্ছেন ইনসাইড এজে। ইনজুরড হয়ে মাঠ ছাড়ছেন, তবুও তাদের নিবেদন শতভাগ। হেরাথ অবসর নিয়েছেন বেশ ক’বছর হলো, তার আর্ম বলগুলো এখনো বিষাক্ত।
কেভিন পিটারসেন সেদিন ইনিংস শুরু করলেন এনটিনিকে লফটেড কভার ড্রাইভে চার মেরে। এরপর গুনে গুনে আরো তিনটা মেরেছেন। পিটারসেন, যাকে আধুনিক ইংল্যান্ডের সবচেয়ে স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান বললেও ভুল হবে না। কীর্তিতে ইংলিশ ক্রিকেটের এক অবিনশ্বর, অদ্বিতীয় মূর্তি। দারুণ এক ম্যাচ উইনার। এতদিন পর তাকে খেলতে দেখা আনন্দজনক। চোখে ভাসছিল ২০০৫ সালের বিখ্যাত অ্যাশেজের ওভাল টেস্ট, শেন ওয়ার্ন, ব্রেট লি-ম্যাকগ্রাদের পিটিয়ে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। মিচেল জনসনের সাথে ২০১৩ অ্যাশেজে বাগযুদ্ধ, আর একগাদা কন্ট্রোভার্সি।
এনটিনির দৌড়ের গতি বেশ কমেছে। শরীরটাও ছেড়ে দিয়েছে বেশ। ডেলিভারির ফলো-থ্রুতেই বোঝা যায় শরীরের ওজন বাড়তির দিকে। জাস্টিন কেম্প, চেহারা এমনই বদলেছে যে স্কোরকার্ডে নাম না দেখে চেনার উপায় নেই। এর ওপর নাকের ডগায় বসেছে মোটা ফ্রেমের এক চশমা। লুটস বসম্যান, ডানহাতি এই প্রোটিয়া ওপেনারকে দেখে সেই আফ্রো-এশিয়া কাপের কথাও মনে পড়েছে আশা করি সবার। প্রায় প্রতি ম্যাচেই উড়ন্ত সূচনা এনে দিতেন দলকে।
মেহরাব হোসেন অপি, জাতীয় দলের ক্যারিয়ারটা খুব বেশি লম্বা নয়। তবে ওপেনার হিসেবে কতটা ভালো ছিলেন, তার শটের রেঞ্জ, সিলেকশন, গ্যাপ খুঁজে নেয়ার স্কিল কেমন ছিল, সেটা দেখা গেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। স্কয়ার কাট, সুইপ, লফটেড ড্রাইভে ছিলেন দারুণ অ্যাকটিভ। আফতাব আহমেদ, বাংলাদেশের খাঁটি হার্ড হিটার। এখনো যেভাবে ক্লিন হিটিং করেন, তাতে করে আফসোসের পারদই কেবল ঊর্ধ্বগামী হবে বাংলাদেশী ক্রিকেট ভক্তদের।
শচীনের স্ট্রেইট ড্রাইভ এখনো অনিন্দ্যসুন্দর। কোনো চিত্রশিল্পী যেভাবে সুনিপুণ দক্ষ হাতে রংতুলির আঁচড়ে ছবি আঁকেন, ঠিক তেমন। লারার শৈল্পিক আগ্রাসনের সাক্ষী অনেকগুলো প্রজন্ম। লংকার মাতারা হারিকেনে ধ্বংস দেখেছি কত, হয়ে গেছে কত লঙ্কাকাণ্ড! শেবাগের ‘থোড়াই কেয়ার’ অ্যাটিটিউডে কত বল হলো বাউন্ডারি ছাড়া। যুবরাজের বয়স ৩৮, ব্যাটিং দেখে মনে হয় তা কেবলই সংখ্যা; ওভারপ্রতি চার-পাঁচটা ছক্কা মারার ক্ষমতা তার এখনো আছে, আর পুল-হুকে মুন্সিয়ানা সেই আগের মতোই। পাঠান ব্রাদার্সকে দীর্ঘদিন না পাওয়ার আফসোসে ভারত হয়তো পুড়েছে কদিন আগের জুটি দেখে। হেরাথের কোন ডেলিভারি টার্ন করবে, কোনটা করবে না, সেটা হেরাথ নিজে এখনো জানেন না। জানেন কেবল – টানা এক জায়গায় বল করে যেতে হবে। রাজ্জাক-রফিক, এখনো আর্মার-টার্নে সিদ্ধহস্ত। সুজন বল করেন, পাইলট করেন কিপিং। কুলাসেকারার লেট মুভমেন্টের আউটসুইংগারে লিভ করেন লারাও।
গোটা কয়েকটা প্রজন্মের বেড়ে ওঠার সময়ের সাথী তারা। সেই প্রজন্মের অনেকেই, পাড়ার ক্রিকেটের সেই ছোট্ট ছেলেটা থেকে এখন হয়তো পুরোদস্তুর সংসারী, চাকুরিজীবী। কারো কারো আনন্দে ভরা সেই শৈশব এখন রূপ নিয়েছে বাস্তবতার ঘা খাওয়া তারুণ্যে। পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় কত জল বয়ে গেল, বাঁশের ডগায় অ্যালুমিনিয়ামের অ্যান্টেনা থেকে ডিটিএইচ, সাদাকালো টিভির ঝিরঝিরে পর্দা থেকে ডিজিটাল স্মার্ট টিভি চলে এলো ঘরে ঘরে। গ্রামীনফোনের সাত টাকা মিনিট কলরেটে নেমে এসেছে এক পয়সা সেকেন্ডে।
চোখের পলকেই কত কিছু হয়ে যাচ্ছে, কতকিছু বদলে গেছে। তবে বদলায়নি আমাদের নস্টালজিয়ায় ভোগানো ক্রিকেট হিরোরা। এই রোড সেফটি সিরিজে তাদের খেলা একেকটা শটে, কিংবা তাদের একেকটা ডেলিভারিতে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে ইতিহাস, রেকর্ডস, পরিসংখ্যান, আনন্দ, দুঃখের স্মৃতি। ক্রিকেটও মেলে ধরেছিল আমাদের সামনে পাওয়া না পাওয়ার, যোগ-বিয়োগের হিসাব। শুনিয়েছে পুরনো ফেলে আসা দিনের গান। ভিজিয়েছে অতীতের বিধুর বৃষ্টিতে। রাঙিয়েছে বসন্তের রঙ দিয়ে।
সেই মুঠোভর্তি নস্টালজিয়া নিয়ে আমরাও তাদের উদ্দেশ্য গলা ছেড়ে গাইতে পারি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টির ক’টা লাইন,
“পুরানো সেই দিনের কথা
ভুলবি কী রে হায়…”