অন্যান্য খেলাধূলার মতো ক্রিকেটে এতটা অর্থের ঝনঝনানি না থাকলেও খেলোয়াড়দের আয় নেহাতই কম নয়। বেতন ভাতা ছাড়াও ম্যাচ ফি কিংবা এন্ডোর্সমেন্ট, অথবা বিভিন্ন লিগ খেলে খেলোয়াড়দের পকেটে আসে বড় অঙ্কের টাকা। তবে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে মাঠের পারফরমেন্সের প্রভাবও রয়েছে। গড়পড়তা মানের একজন খেলোয়াড়ের চেয়ে মাঠের একজন সুপারস্টারের কাছেই ব্র্যান্ডগুলোর ছোটাটা স্বাভাবিক। তাই ভালো খেললে শুধু দল থেকেই নয়, খেলার বাইরে থেকেও মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করা সম্ভব। তবে বর্তমানে ক্রিকেট খেলোয়াড়দের আয় বাড়ার পেছনে মূল কারণ বিভিন্ন দেশীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ গুলোর প্রসার। আইপিএল ছাড়াও বিপিএল, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ কিংবা বিগ ব্যাশ খেলেও খেলোয়াড়রা আয় করছেন অর্থ। তবে যদি বর্তমান ও অতীত মিলিয়ে সবচেয়ে ধনী পাঁচ ক্রিকেটারের তালিকা তৈরি করা হয়, তাহলে তাতে যে কারা কারা থাকবেন, চলুন দেখে আসা যাক।
৫. শেন ওয়ার্ন: ৫০ মিলিয়ন ডলার
তর্কাতীতভাবেই শেন ওয়ার্ন বিশ্বের সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার এবং অন্যতম সেরা স্পিনারদের একজন। অস্ট্রেলিয়ার অপরাজেয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন শেন ওয়ার্ন। নিজের ক্যারিশমা দিয়ে সমাদৃত হয়েছেন বিশ্বে।
সেলেব্রিটিনেটওয়ার্থ ডট কমের মতে, শেন ওয়ার্নের বর্তমান সম্পত্তির মূল্য ৫০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ক্রিকেট থেকে অবসরের পরও ওয়ার্নের টাকার বড় একটি অংশ আসে বিভিন্ন ম্যাচে ধারাভাষ্য দিয়ে। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ায় প্রফেশনালি পোকারও খেলে থাকেন তিনি।
এর বাইরে শেন ওয়ার্নের আয়ের বড় একটা উৎস হচ্ছে বিভিন্ন এন্ডোর্সমেন্ট। কোডমাস্টার, লাইক মেসেজের মত কয়েকটি ব্র্যান্ডের সাথে যুক্ত আছেন এই কিংবদন্তী লেগ স্পিনার। সম্প্রতি একটি টিভি সিরিজেও দেখা গিয়েছে ওয়ার্নকে। ‘আই অ্যাম সেলেব্রিটি‘ নামের এই অস্ট্রেলিয়ান টিভি সিরিজের জন্যও পকেট গরম করেছেন তিনি। গত বছরই ওয়ার্ন নিজের জীবনী নিয়ে বই প্রকাশ করেছিলেন। ‘নো স্পিন‘ নামের সেই বইয়ের কাটতিও ছিলো রমরমা। বইটিতে কিছু বিস্ফোরক মন্তব্য ও ঘটনা উল্লেখ করায় বইটি চলেছিলোও বেশ। আর বইয়ের রয়্যালটি বাবদ বেশ কিছু ডলারও আয় করেছেন। আর তাতেই ৫০ মিলিয়ন ডলারের মালিক বনে যান ওয়ার্ন।
৪. বিরাট কোহলি: ৬০ মিলিয়ন ডলার
বর্তমানে ভারতের ‘পোস্টার বয়’ বিরাট কোহলির এই তালিকায় স্থান পাওয়াটা অনুমিতই ছিলো। একের পর এক রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায় কোহলি নিজেকেও নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। সময়ের সেরা তো বটেই, সর্বকালের সেরা একজন ব্যাটসম্যান হিসেবেও কোহলির নাম উচ্চারিত হয় ছোট্ট পরিসরে। শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও ব্র্যান্ডগুলোর কাছে কোহলির রয়েছে দারুণ চাহিদা। তাই সব মিলিয়ে এই তালিকায় চার নাম্বারে রয়েছেন তিনি।
বিশ্বের সবচেয়ে ধন্যাঢ্য ক্রীড়াবোর্ডের একটি হচ্ছে বিসিসিআই। আর বিসিসিআইয়ের সঙ্গে ‘এ’ ক্যাটাগরির সাথে চুক্তি রয়েছে বিরাট কোহলির। পুরো ভারতজুড়ে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ক্রীড়াবিদও তিনিই। তিন ফরম্যাটেই ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া এই ‘ব্যাটিং জিনিয়াস’ বিসিসিআই থেকে পান সর্বোচ্চ বেতন। প্রতি বছর এই ব্যাটসম্যান প্রায় ৭ কোটি রুপি পান শুধু বেতন হিসেবেই।
বর্তমানে কোহলির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৬০ মিলিয়ন ডলার। এর বেশিরভাগই অবশ্য এসেছে এন্ডোর্সমেন্ট বা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে। কোহলির সাথে চুক্তি রয়েছে পুমা, এমআরএফ, কোলগেটসহ বেশ নামীদামী কিছু কোম্পানির।
সম্প্রতি নিজেই একটি ফ্যাশন হাউজ খুলেছেন। এছাড়া বেশ কিছু জিম ও ফিটনেস সেন্টারের মালিক এই ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যান। আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়কের দায়িত্বে রয়েছেন কোহলি। আর এই সুবাদেও বেশ অর্থ পান তিনি।
৩. রিকি পন্টিং: ৬৫ মিলিয়ন ডলার
অস্ট্রেলিয়ার তো বটেই, সর্বকালের সেরা অধিনায়কের ছোট্ট তালিকায় রিকি পন্টিং এর নাম থাকাটা বাধ্যতামূলক। শুধু অধিনায়কই নন, ব্যাট হাতেও অস্ট্রেলিয়ার ভরসার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন বহুবার। অস্ট্রেলিয়াকে টানা তিনবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করানো অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের বর্তমান সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৬৫ মিলিয়ন ডলার। আর তাতেই বিরাট কোহলিকে টপকে এই তালিকায় তিন নাম্বার স্থানে রয়েছেন তিনি।
মাঠের ভেতর অভাবনীয় সাফল্যের জন্য মাঠের বাইরেও এন্ডোর্সমেন্টে পন্টিং হয়ে উঠেছিলেন তারকা। রেক্সোনা, ভালভোলিন ব্র্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর ধারাভাষ্যেও সাফল্য পেয়েছেন পন্টিং। এখনো প্রায়ই কমেন্ট্রি বক্সে পাওয়া যায় সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ককে। তাই ধারাভাষ্যেও বেশ টাকাকড়ি কামিয়েছেন তিনি।
তবে খেলা থেকে অবসরের পরও ক্রিকেট মাঠের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে রিকি পন্টিংয়ের। কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন বেশ ক’বার, যদিও সবই টি-টোয়েন্টি লিগে। বর্তমানে আইপিএলের দল দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এত কিছুর পাশাপাশি তিনি গড়ে তুলেছেন পন্টিং ফাউন্ডেশন, যেই ফাউন্ডেশন এর কাজ হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের জন্য তহবিল গঠন করা।
২. মহেন্দ্র সিং ধোনি: ১০৫ মিলিয়ন ডলার
এই তালিকায় দুই নাম্বারে আছেন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। সর্বমোট ১০৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের সম্পত্তি নিয়ে ধোনি পেছনে ফেলেছেন রিকি পন্টিংকে।
প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে ভারত টিমের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছেন ধোনি। ভারতকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, এশিয়া কাপসহ বড় বড় সব শিরোপাই। তাই ক্যারিয়ারের এই পড়ন্ত সময়েও বিসিসিআইয়ের সাথে বেশ ভালো চুক্তিই রয়েছে তাঁর। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ক্রিকেট বোর্ড থেকে প্রতি বছর ধোনি পান ৫ কোটি রুপি।
তবে ধোনির টাকার বড় অংশ আসে বিজ্ঞাপন কিংবা বিভিন্ন কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার সুবাদে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বিজ্ঞাপন বা ইন্ডিয়ান টিভিসিগুলোতে ধোনি হচ্ছেন পরিচিত মুখ। বর্তমানে তিনি যুক্ত আছেন এয়ারসেল, পেপসি, সোনাটা, টিভিসি মোটরসহ আরো বেশ কয়েকটি পণ্যের সাথে। কিছুদিন আগে ধোনির জীবনী নিয়ে বের হয়েছে একটি মুভি। ‘ধোনি : দ্য আনটোল্ড স্টোরি‘ নামের সেই মুভিতে অভিনয় না করলেও বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পেয়েছেন তিনি।
এসব ছাড়াও আইএসএলে (ইন্ডিয়ান সুপার লিগ) ধোনির মালিকানাধীন একটি দলও রয়েছে। ‘চেন্নাইয়ান এফসি’ নামের সেই দল ছাড়াও বিভিন্ন খেলাধুলার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতেও রয়েছে এই ক্রিকেটারের দল, যার মধ্যে মাহি রেসিং ইন্ডিয়া, রাঁচি রেইজ অন্যতম। এইসব ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলো থেকেও আয় করেন মোটা অঙ্কের টাকা। তাই দ্বিতীয় ও বর্তমানে খেলে যাওয়া একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ধোনির রয়েছে একশ’ মিলিয়ন ডলারের উপর সম্পত্তি।
১. শচীন টেন্ডুলকার: ১১৫ মিলিয়ন ডলার
পুরো ভারত জুড়ে সবচেয়ে বেশি আয় করা খেলোয়াড় বিরাট কোহলি হলেও সবচেয়ে বেশি ধনী ক্রীড়াবিদের তালিকায় কোহলির চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে আছেন তারই আদর্শ এবং ‘ব্যাটিং-ঈশ্বর’ হিসেবে পরিচিত শচীন টেন্ডুলকার। ১১৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের সম্পত্তি নিয়ে তালিকার প্রথম স্থানটি দখল করেছেন ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান করা এই খেলোয়াড়।
২০ বছরের বেশি মাঠ দাপিয়ে বেড়া এই কিংবদন্তি খেলোয়াড় মাঠের বাইরেও সমাদৃত ছিলেন নিজের বিনয়ী মনোভাবের কারণে। তাই বিজ্ঞাপন কিংবা এন্ডোর্সমেন্টেও তার কদর ছিল আকাশছোঁয়া। কোকাকোলা, তোশিবা, অ্যাডিডাস, বিএমএফসহ বেশ কয়েকটি এন্ডোর্সমেন্টের সাথে যুক্ত টেন্ডুলকার। খেলা ছাড়লেও খেলার সাথে যুক্ত আছেন এখনো। আইপিএলের মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলের ব্যাটিং পরামর্শক ছাড়াও দলটির মেন্টরের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়াও আইএসএলে (ইন্ডিয়ান সুপার লিগ) তার রয়েছে কেরালা ব্লাস্টার্স নামে একটি দল।
২০১৮ সালে নিজের বেড়ে উঠা ও বিশ্বসেরায় পরিণত হওয়ার গল্প নিয়ে লিখেছেন নিজের জীবনী। ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে‘ নামের সেই বই লিখে রয়্যালটি বাবদ বেশ টাকাকড়ি কামিয়েছেন তিনি। এর বাইরে ২০১৭ সালে বলিউডে মুক্তি পেয়েছে টেন্ডুলকারকে নিয়ে নির্মিত একটি মুভি। ‘শচীন: আ বিলিয়ন ড্রিমস’ নামের মুভিটি বক্স অফিসেও সাড়া ফেলেছিলো।
এইসবের বাইরেও শচীন টেন্ডুলকার বেশ কিছু সংস্থার সাথে জড়িত আছেন। এইডস নিয়ে জনসচেতনতা কিংবা বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের ইস্যুতে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন তিনি।