যুদ্ধ আর ভালোবাসার মাঠে ভালো-খারাপের তফাৎ নাকি খুঁজতে নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার সিরিজটা রীতিমতো স্ফুলিঙ্গ ছড়াচ্ছে। একের পর এক বিতর্কে জর্জরিত দুই দলই, মাঠ ও মাঠের বাইরে ‘কেহ কারে নাহি জিনে, সমানে সমান’ অবস্থা! একবার কুয়েন্টিন ডি ককের সঙ্গে ওয়ার্নারের রীতিমতো হাতাহাতি শুরু হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো, একবার স্মিথ-রাবাদার শারীরিক সংঘর্ষ এবং নিষেধাজ্ঞা-বিতর্ক, এবার বল ট্যাম্পারিং অভিযোগ। ক্রিকেটটা এ সিরিজে যে আর কেবলই খেলার গণ্ডিতে আবদ্ধ নেই, সে বিষয়ে সন্দেহ কী!
সিরিজের প্রথম ম্যাচটি জিতলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ঠিক পেরে ওঠেনি স্টিভ স্মিথের নেতৃত্বাধীন ক্যাঙ্গারুশিবির, পরাজিত হয় ছয় উইকেটের ব্যবধানে। কেপটাউন টেস্টেও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল না তারা, মাত্র ২৫৫ রানে অজিদের গুটিয়ে দিয়ে ৫৬ রানের গুরুত্বপুর্ণ একটি লিড পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর মার্করামের ব্যাটে ভর করে সেই লিডকে তুঙ্গস্পর্শী করে তোলার পথে এগিয়ে চলেছে প্রোটিয়ারা, এখনও ক্রিজে আছেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স এবং প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান ডি কক। ম্যাচের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে সিরিজটাও, ব্যাটসম্যানরাও কোনোমতেই সুযোগ দিতে রাজি নন। সে হতাশাটাই হয়তো পেয়ে বসলো অস্ট্রেলিয়া শিবিরে, তাই তারা বেছে নিলো নীতিবিরুদ্ধ এক পথ। বল টেম্পারিং!
ক্রিকেট মাঠে অস্ট্রেলিয়া কখনোই ঠিক ‘সুবোধ বালক’টি হয়ে থাকেনি, যেকোনো পরিস্থিতিতে ম্যাচ জিততে তাদের ভয়াবহ আগ্রাসনের কিংবদন্তী সর্বজনবিদিত। তবে সম্প্রতি সে ‘আগ্রাসন’ যেন আর অস্ট্রেলিয়াসুলভ নেই, হঠাৎ যেন চিরন্তন সেই ক্রিকেটদর্শন থেকে কিছুটা বিচ্যুত হয়ে পড়েছে তারা। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া অনেকাংশেই যেন ঝুঁকে পড়েছে ব্রাজিলের সাবেক কোচ কার্লোস দুঙ্গার মতবাদের দিকেই, দলের স্বার্থে যেন যেকোনো কিছু করতেই প্রস্তুত তারা। তবে সেটা গত দেড়শ’ বছরের মতো এখন আর কেবল জয়েই সীমাবদ্ধ নেই, বরং সেটা বিস্তারলাভ করেছে ‘হার না মানা’ অবধি। ব্রাজিলের মতোই অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তীরাও এ পরিবর্তনকে ঠিক ভালোভাবে গ্রহণ করেননি। ব্যাপারটা কেমন? চলুন, একটু পিছনে ফিরে দেখা যাক।
বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফি, ২০১৬/১৭। মাইকেল ক্লার্কের উত্তরাধিকার সদ্যই অর্জন করেছেন স্টিভ স্মিথ, নিজেকে সেই অর্থে অধিনায়ক হিসেবে প্রমাণ করে উঠতে পারেননি তখনও। পন্টিং-ক্লার্কের বিদায়ের পর স্থিতধী একটি দল বিনির্মাণে মনযোগ দিয়েছেন, ক্ষুরধার কিছু ক্রিকেটমস্তিষ্কের সৌজন্যে রূপান্তরকালীন সময়টা খুব একটা গুরুতর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু স্মিথে ঠিক ডাকাবুকো সেই চিরায়ত ‘অজি’ অধিনায়কটিকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না ‘ক্লাসিক’ ক্রিকেটভক্তরা। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে সেই আলোচনাতে হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার যোগান দিলেন অধিনায়ক স্মিথ নিজেই।
এর আগের দুই টেস্টে ১-১ সমাবস্থায় বিরাজমান সিরিজটিতে এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে নেমে ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে রানউৎসবে মেতেছিলো ভারত-অস্ট্রেলিয়া দুই দলই। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে কিছুটা ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া, মাত্র ২৩ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে চতুর্থদিন শেষ করে তারা। চিরায়ত ‘অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটদর্শন’ অনুসারে, এ পরিস্থিতিতে অনেকটা আহত বাঘের মতো খুবলে নেওয়ার প্রবণতা নিয়ে ব্যাটিং করতে নামার কথাই ভেবেছিলেন ক্রিকেটবিশ্লেষকেরা। এর আগে বহুবার এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া, জয়-পরাজয়ের তোয়াক্কা না করে বিধ্বংসী এক মানসিকতায় প্রতিপক্ষকে অবাক করে দিয়ে ম্যাচ জিতে নেওয়ার নজিরও নেহায়েত কম নেই। এমনকি যদি স্মৃতিশক্তি বিশ্বাসঘাতকতা না করে থাকে, তারই পুর্বসূরী মাইকেল ক্লার্কও একবার মাত্র ২০০ রানের সামান্য বেশি লিড নিয়ে পঞ্চাশ ওভার হাতে রেখে ইনিংস ঘোষণা করে দিতে দুবার ভাবেননি, যদি কোনোভাবে ম্যাড়ম্যাড়ে একটা ম্যাচকে সামান্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়!
কিন্তু এ অস্ট্রেলিয়া যে সেই দর্শন থেকে সরে এসেছে অনেকটাই! অবাক বিস্ময়ে সকলে লক্ষ্য করলো, অস্ট্রেলিয়া প্রাণপণে চেষ্টা করছে কোনোক্রমে দিনটা শেষ করার, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করছে ম্যাচটি কোনোরকমে ড্র করার! সারাদিনে ৯৩ ওভার ব্যাটিং করে তারা রান তুললো মাত্র ১৮২, শন মার্শ-পিটার হ্যান্ডসকম্বের ‘বীরোচিত’ দুই ইনিংস তাই অস্ট্রেলিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে হয়ে উঠলো কাপুরুষতারই অপর নাম। গর্জে উঠলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটাররা, এ যে অস্ট্রেলিয়ার শতবর্ষের দর্শনে এক বিশাল ধাক্কা! তবু এই স্মিথেই ভরসা রেখেছিলো অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট, যথেষ্ট সময় দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন তারা। মাঝে আরো বেশ কয়েকবার তার অধিনায়কত্বের ধরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও সেভাবে গা করেনি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এবার নড়েচড়ে বসতেই হচ্ছে… তাই বলে বল টেম্পারিংয়ের মতো কাজ করবে এই অস্ট্রেলিয়া!
পুরো বিষয়টা নিয়ে আরো একটু বিস্তারিত কথা বলা যাবে, তবে এর আগে একটু কথা বলা দরকার ‘বল টেম্পারিং’ নামের এই বিতর্কটি নিয়ে।
বল টেম্পারিং: কী এবং কেন?
ক্রিকেটের নিয়মবিধিতে ৪২ নং আইনের উপধারা ৩-এ উল্লেখ রয়েছে, কৃত্রিম যেকোনো বস্তুর সরাসরি প্রয়োগ ছাড়া বলের ঔজ্জ্বল্য রক্ষার্থে থুতু বা ঘাম ব্যবহার করে বলকে পরিষ্কার করা যাবে। এছাড়া শুকনো তোয়ালে বা রুমাল দিয়ে আম্পায়ারের তত্ত্বাবধায়নে বলের উজ্জ্বলতা ফেরানো কিংবা কাদামাটি পরিষ্কারের কাজও চালানো যেতে পারে। তবে এর বাইরে যেকোনো পদ্ধতি অবলম্বন করা হলেই তা বল টেম্পারিং নামে পরিচিত হবে। এর অর্থ যেটা দাঁড়ায়, নিচের যেকোনো কাজই বল টেম্পারিং নামক অপরাধের অন্তর্ভুক্ত:
- বলকে ইচ্ছাকৃতভাবে মাটিতে ঘষা।
- নখ দিয়ে বলে খোঁচা দিয়ে বলের রুক্ষতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা।
- বলের সিমে সুতা তুলে ফেলা কিংবা চূড়ান্ত কোনো ক্ষতিসাধন করার প্রচেষ্টা।
- পায়ের বুটের সূচালো অংশ দিয়ে বলে ইচ্ছাকৃত আঘাত।
- প্যান্টের জিপারে বল ঘষে রুক্ষতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা।
- ভ্যাসলিন কিংবা কোনো ক্রিম ব্যবহার করে ঔজ্জ্বল্য বাড়ানো।
- মাঠের বাইরে থেকে আনা যেকোনো বস্তুর প্রয়োগে বলে গাঠনিক কোনো পরিবর্তন।
বল টেম্পারিংয়ের মূল উদ্দেশ্য, বোলিংয়ের সময় অ্যারোডাইনামিক্স তথা বাতাসের আনুকূল্যের পরিমাণ যাতে কিছুটা হলেও নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা যায়। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, ক্রিকেট বল কিন্তু একদম গোলাকার হয় না, বরং ঠিক মাঝ বরাবর একটি সেলাইকৃত অংশ থাকে যাকে ‘সিম’ বলা হয়। এর ফলে বলের দুই পাশ সবসময় প্রতিসম হবে, সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা নেই। চিরায়ত সুইং বোলিংয়ের ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়, বল ডেলিভারির পর বাতাসে বলটি এর তুলনামূলক ভারী পার্শ্ব বরাবরই মুভ করে। আর তাই ফিল্ডাররা চেষ্টা করে থাকে, যাতে কোনোক্রমে এক পার্শ্বে থুতু, ঘাম, ভ্যাসলিন বা অন্য যেকোনো উপায়ে বলকে কিছুটা ভারী করে তোলা যায়। কিন্তু রিভার্স সুইংয়ের ক্ষেত্রে গোটা ব্যাপারটা একদম উল্টো, এখানে বলটি বরং মুভ করে এর শুষ্কতর পার্শ্ব বরাবর।
বল টেম্পারিং মূলত কোন দিকগুলোতে সাহায্য করে বোলারদেরকে? ধরে নিন সাধারণ আউটসুইংয়ের কথাই। বল টেম্পারিংয়ের ফলে বলের সিম কাজ করে অনেকটা রাডারের মতো; সিম যেদিকে সামান্য বাঁকানো অবস্থায় ধরা হয়, সেদিকেই বলটিতে টারবুলেন্সের সৃষ্টি হয়। বলের রুক্ষ অংশ ও মসৃণতর অংশটুকুতে বায়ুপ্রবাহ এবং চাপের প্রভাবে সিমের দিক বরাবর সুইং হয়।
কিংবা রিভার্স সুইং। ধরা যাক, নরমাল আউটসুইং ডেলিভারিটা যেখানে করার ইচ্ছে, সেখানেই বলটাকে পিচ করানো হলো। বলে সামান্য পরিবর্তনের ফলে বলের রুক্ষ অংশটুকুতেও বলের উজ্জ্বলতর অংশের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যের কিয়দংশ ছড়িয়ে পড়ে, ফলে টারবুলেন্সের সৃষ্টি হয় বলের দু’দিকেই। ডেলিভারির সময় বলকে জোরের উপর ছাড়া হলে বলের মসৃণতর অংশ বাতাসের সংস্পর্শে বেশিক্ষণের জন্য আসে, ফলে সৃষ্টি হয় নিম্নচাপ অঞ্চল। অন্যদিকে রুক্ষ অঞ্চলের উচ্চচাপ অঞ্চল সৃষ্টি হওয়ার ফলে বলটি আউটসুইংয়ের বদলে হুট করেই ইনসুইং করে যায়, আর একেই বলা হয় রিভার্স সুইং।
প্রসঙ্গ রিভার্স সুইং
ধরে নিন, ম্যাচের তৃতীয় দিন। ম্যাচের পিচটা ঠিক বোলিং-সহায়ক নয়, ম্যাচটা ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাচ্ছে কোনো দলের হাত থেকে। ৭০ ওভারের পুরোনো বল, তবু সুইংটা যেন ঠিক বিষ ছড়াতে পারছে না। কিন্তু আকস্মিক ঘটলো দৃশ্যপটের পরিবর্তন, অফ স্ট্যাম্পের বেশ খানিকটা বাইরে পড়া একটি বল হঠাৎ একটি বল যেন হুট করেই অনেকখানি সুইং করে ফেললো, ছেড়ে দেওয়া বলটাই হঠাৎ ভাঙলো ব্যাটসম্যানের অফ স্ট্যাম্প! তবে ঠিক চিরায়ত সুইং নয়, স্ট্যাম্পে ছোবল দেওয়া আকস্মিক মুভমেন্টের কারণে পিচ থেকে আদায়কৃত সুইং। যে পিচটা এতক্ষণ বিন্দুমাত্র সাহায্য করছিলো না, সেটাই হুট করে কীভাবে এতটা বদলে গেল একটা বলের ব্যবধানে? উত্তরটা এখানে সহজ; পিচ নয়, বদলেছে অন্য কিছু। আর ডেলিভারিটা যেহেতু আর চিরন্তনী সুইং বোলিংয়ের প্রদর্শনী নয়, সুতরাং সেটারও একটা আলাদা নাম দিয়ে দেওয়া উচিত। হ্যাঁ, সে নামটাও দেওয়া আছে আগে থেকেই- রিভার্স সুইং।
ক্রিকেটের উচ্চশ্রেণীর বোদ্ধামাত্রই জানেন, রিভার্স সুইং নেহায়েত প্রকৃতির নিয়ম মেনে ঘটা খুব একটা সহজসাধারণ ব্যাপার নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা যতটা না বোলারের কৃতিত্ব, তার চেয়েও বেশি কৃতিত্ব তার যে কিনা বলটাকে রিভার্স সুইংয়ের জন্য ‘প্রস্তুত’ করে দেয়। কিন্তু ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে এই ‘প্রস্তুত’ শব্দটাতেই, কীভাবে করা হয় সেটা? সেটাকে একটা খুব নিয়মিত দৃশ্য দিয়ে পরিচিত করানো ভালো।
টেলিভিশনে খেলা দেখতে দেখতে নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, বোলার বোলিং এন্ডে ফিরে যেতে যেতে মুখের লালা ব্যবহার করে বলটাকে পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। কিংবা বোলারকে না দিয়ে প্রায়ই দেওয়া হচ্ছে বোলারের সমান্তরালে হাঁটতে থাকা কোনো ফিল্ডারকে, তিনিই বলটাকে ‘প্রস্তুত’ করে তুলে দিচ্ছেন বোলারের হাতে। সেটা হতে পারে মুখের লালা, আঙুল, রুমাল, এমনকি ট্রাউজারও। ঠিক এ ব্যাপারটাই যদি এমনভাবে ব্যবহার করা হয়, যেন বলের সিম কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে যায় যা বোলারকে কাঙ্ক্ষিত ডেলিভারিটা করার জন্য সহায়তা করবে, সেটাকেই আমরা বলছি ‘প্রস্তুত’ করে দেওয়া। ক্ষেত্রবিশেষে সেটারই বিশেষায়িত রূপটিকে আমরা বল ‘শাইনিং’ বলে থাকি। কিন্তু সেই বল শাইন করাটা যদি এমন হয় যা আইসিসি আইনের পরিপন্থী, সেটার নামই দেওয়া হয় বল টেম্পারিং।
এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, রিভার্স সুইং আদায় করার জন্য বল টেম্পারিং কেন? শোয়েব আখতার বলেছিলেন, “‘এতে বলের উপর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে আসে এবং বলকে নিজের মতো করে ব্যবহার করা যায়। বোলারের হাতেই চলে আসে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব।” কিন্তু বল সুইং করানোর জন্যও কি বল টেম্পারিং খুব গুরুত্বপূর্ণ? শহীদ আফ্রিদির কথাটা এই মুহূর্তে প্রণিধানযোগ্য, “বল সুইং করানোর জন্য বল ‘প্রস্তুত’ করাটা খুবই দরকারি। আমার কাছে মনে হয় না যে তাতে খুব অন্যায়ের কিছু আছে, কারণ এসব জঘন্য পিচে বোলিং করাটাই বোলারদের জন্য রীতিমতো অত্যাচারের সামিল। এরকম উইকেটেই যদি খেলা চলতে থাকে, আপনি না চাইলেও সেটা বরং বোলারদের মৃত্যুই ডেকে আনবে।”
আবারও স্মিথ-ইস্যুতে প্রত্যাবর্তন
আবার ফিরে আসা যাক স্টিভ স্মিথ ইস্যুতে। এর আগে কম সংখ্যকবার কিন্তু বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ ঘটেনি, সেই ওয়াকার ইউনিস থেকে শুরু করে হালের ফাফ ডু প্লেসিস অনেকেই হাতেনাতে ধরা পড়েছেন বল নিয়ে ‘কারসাজি’ করার চেষ্টায়। অস্ট্রেলিয়াও কিন্তু সেটা প্রথমবার করেনি, এর আগেও প্রায় প্রতি ম্যাচেই করেছে। কিন্তু সেটা আম্পায়ারের চোখে অস্বাভাবিক বলে মনে হয়নি। আর এখানেই লুকিয়ে আইনের শুভঙ্করের ফাঁকি।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চলমান সিরিজের প্রথম টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার সদ্য ‘প্রাক্তন’ হয়ে যাওয়া কোচ ড্যারেন লেহম্যানকে প্রশ্ন করা হয়, “আপনি কি দাবি করবেন, আপনাদের কার্যকলাপ আইসিসি কর্তৃক স্বীকৃত?” লেহম্যানের সহজ এক লাইনের উত্তর, “সেটা আমি জানি না, আপনি আম্পায়ার এবং আইসিসিকেই বরং জিজ্ঞেস করে নেবেন সেটা।” সাথে আরো একটা কথা যোগ করেন তিনি, “দু’দলের কেউই সন্ত প্রকৃতির ছিলো না। দুই দলই রিভার্স সুইংয়ের জন্য নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, আর এভাবেই খেলা হয়। আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই, সোজা কথা!”
লেহম্যান কি বল টেম্পারিংয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন? সেটা সোজাসুজি বোঝার উপায় নেই, তবে সেদিকেই যে আঙুল উঠেছে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই! কারণ ক্রিকেটে বল টেম্পারিং নিয়ে এভাবেই কথা হয়, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। ক্রিকেটে বল টেম্পারিং যেন হগওয়ার্টসের ‘ডার্ক আর্ট’ নামের এক ট্যাবু। সবারই সেটাতে দক্ষতা অর্জনের ইচ্ছে থাকে, কয়েকজনমাত্র সেটাতে দক্ষ হতে পারেন, কিন্তু কেউ সেটা নিয়ে কথা বলতে রাজি নয়! তবে সমস্যা হচ্ছে, সে বিষয়ে হাজারও বিধিনিষেধ থাকলেও এর আগেও অনেকে সে পথে চলেছেন, সামনেও চলবেন। মাঝ থেকে ফেঁসে গেলেন স্মিথ-ওয়ার্নার।
ফেঁসে গেলেন বলাটাও ঠিক হলো না বোধ হয়, বরং বলির পাঠা হিসেবে নিজের মাথাটা বাড়িয়ে দিলেন স্মিথ। ইচ্ছে করলেই তিনি দায় এড়াতে পারতেন, এর আগে বহুবার বহু রথী-মহারথী বল টেম্পারিং করে কিংবা অন্তত চেষ্টা করে ধরা পড়েছেন এবং আজগুবি সব কারণ দর্শিয়ে পার পেয়ে গেছেন। কিন্তু সে রাস্তা বেছে না নিয়ে নবীন ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে বাঁচাতে চাইলেন, জানালেন ‘লিডারশিপ গ্রুপ’ জানতো এ সিদ্ধান্তের কথা। ব্যস, স্মিথ-ওয়ার্নারদের দুঃস্বপ্নের শুরু এখানেই।
স্মিথ বল টেম্পারিংয়ের মতো কাজে মদদ দিয়েছেন, যা কোনোপ্রকার সন্দেহ ছাড়াই একটি অপরাধ। কিন্তু ঠিক কত বড় অপরাধ? আইসিসির নিয়মবিধিকে যদি বেদবাক্য ধরে নেওয়া হয়, তবে বলতেই হবে সেটা খুব বড় কোনো অপরাধ নয়। আইসিসি কর্তৃক স্টিভেন স্মিথকে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি পুরো ম্যাচ ফি কর্তন এবং ব্যানক্রফটকে ৭৫ শতাংশ ম্যাচ ফির পাশাপাশি তিনটি ডিমেরিট পয়েন্ট জরিমানা করা হয়েছে, আর অপরাধটিকে আইসিসি কোড অফ কনডাক্টের লেভেল ২ ভঙ্গের তকমা দেওয়া হয়েছে। পরিষ্কারভাবেই প্রতীয়মান যে ‘বল টেম্পারিং’ নামের অপরাধটিকে খোদ আইসিসিও ঠিক ‘বিশাল অপরাধ’ কোটায় ফেলে না। তবু অস্ট্রেলিয়ার কেন এই বিমাতাসুলভ আচরণ?
এর মূল কারণটা এখন পর্যন্ত ঘোলাটে হলেও আমরা কিছুটা আন্দাজ করতে পারি। গত বছরের শুরুর দিকে ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া’র সঙ্গে বেতনসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে প্রকাশ্য বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন স্মিথ-ওয়ার্নাররা। শেষ পর্যন্ত নিজেদের দাবি আদায় করেই নিয়েছিলেন তারা, তবে একই সাথে কিছুটা যেন অনাস্থাও অর্জন করে ফেলেছিলেন বোর্ডের। তবে সেটা এতদিন অবধি খুব একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই নাইন অ্যান্ড টেন নেটওয়ার্কের স্পন্সরশিপের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, হঠাৎই যেন সে জায়গাটা কিছুটা নড়বড়ে হয়ে বসেছে। দুটো ব্যাপারকে একসাথে করলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অসন্ত্বোষের কারণ বোঝাটা খুব শক্ত নয় বটে, তবে এক বছরের নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে এর বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা বোঝা শক্ত। আর তাছাড়া অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ‘নাকউঁচু’ স্বভাবও সুবিদিত। তাদের কাছে খেলাটা নিতান্ত খেলা নয়, বরং দেশের গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায়ের নাম। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক, খেলাধুলাই যে বরাবরই অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বদরবারে স্বমহিমায় ভাস্বর করে তুলেছে। অস্ট্রেলিয়া যখন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি, তারও আগে এডউইন ফ্ল্যাক অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটো অলিম্পিক স্বর্ণপদক জয় করেছেন। ১৮৭৭ সালে ডেভ গ্রেগরি অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অফিস পেয়ে যান, অথচ অস্ট্রেলিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এডমান্ড বার্টন অফিস পান এরও ২৪ বছর পর! এমন দেশের জন্য ক্রিকেট যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এমনকি অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানে এমনও আইন রয়েছে, স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের নামে সরকারি অনুমতি ব্যতিত কোনো কোম্পানি থাকতে পারবে না! ঘটনাটির গুরুত্ব বোঝার জন্য বলে রাখা ভালো, আর মাত্র একজনের জন্য এ আইন বহাল – অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ক্যাথলিক সন্ত ম্যারি ম্যাককিলোপ। অস্ট্রেলিয়াতে তাই একজন খেলোয়াড়ের সামাজিক মর্যাদা অন্য যেকোনো পেশা থেকেই তুলনামূলক বেশি। বিনিময়ে জনসাধারণের হৃদয়গত একটিমাত্র দাবি, “প্রতারণার আশ্রয় নিও না, বিশ্বাস ভেঙো না আমাদের।” আর ঠিক এখানেই হয়তো পিছিয়ে পড়লেন স্মিথ-ব্যানক্রফটরা।
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্ব কোনো অধিকার নয়, বরং একটি অবিস্মরণীয় সম্মাননা এবং বিশাল এক দায়িত্ব। আর সেটা অর্জন করাটাও সহজ নয় বৈকি। স্মিথ সেটা অর্জন করে নিয়েছিলেন, মাইকেল ক্লার্কের উত্তরসূরী হিসেবে নেতৃত্বের ব্যাটন হাতে নবীন একদল অভিযাত্রিককে সামনে থেকে পথপ্রদর্শনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তবে শুরু থেকেই বারবার সেটা হয়েছিলো প্রশ্নবিদ্ধ, অস্ট্রেলীয় চেতনাবোধটা যে ঠিক ফুটিয়ে উঠতে পারছিলেন না! অস্ট্রেলীয় দর্শন বোঝার জন্য স্টিভ ওয়াহ’র উক্তিটা একদম যথাযথ, “অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বরাবরই বিশ্বাস করে এসেছে, যেকোনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র যুদ্ধাংদেহী মনোভাবে কুশল এবং যথাযথ ক্রিকেটের মাধ্যমেই ব্যাগি গ্রিনের মর্যাদা রক্ষার্থে জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব।” কিন্তু স্মিথের অধীনে সেটা যেন কিছুটা ধূসর হতে বসেছিলো, যা উল্লেখ করেছি একটু আগেই। তবে ‘বল টেম্পারিং’ ঘটনাটিতে শুধু স্মিথ-ওয়ার্নারদের দোষ দেওয়াটাও সমীচীন নয়, কোচ ড্যারেন লেহম্যান এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না সেটা বিশ্বাস করা দুরূহ ব্যাপারই বটে!
সময় যত যাবে, এ ঘটনাটি স্মৃতির পাতা থেকে ধূসর হতে শুরু করবে। সময় হয়তো লাগবে খানিকটা, কিন্তু এই বিতর্কও একদিন রঙ হারাবে। স্মিথ-ব্যানক্রফটরা হয়তো নিষেধাজ্ঞা শেষ করে দলে ফিরবেন, হয়তো শেন ওয়ার্নের মতো রূপকথার গল্প লিখবেন নিজ হাতে। হয়তবা একদিন অস্ট্রেলিয়া ক্ষমা করবে তাদেরকে, যারা ‘বল টেম্পারিং’-এর ঘটনাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। দাগটা কোনোদিন পুরোপুরি হয়তো মিলিয়ে যাবে না, তবে সময়ের সাথে সাথে নিশ্চয়ই ফিকে হয়ে আসবে, আসতেই হবে!
শেন ওয়ার্ন ডোপ কেলেঙ্কারিতে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। মার্ক ওয়াহ-ওয়ার্নের বিরুদ্ধে বাজিকরদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছিলো, ট্রেভর চ্যাপেল আন্ডারআর্ম বল করে কলঙ্কিত এক অধ্যায় রচনা করেছিলেন। ঘটনাগুলো ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যায়নি, তবে সে কারণে অভিযুক্তদেরকে ছুড়েও ফেলা হয়নি কখনো। কিন্তু স্মিথ? জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব হারালেন, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা পেলেন এক বছরের, আইপিএল থেকে বাদ পড়লেন। জোহানেসবার্গে পুলিশ রীতিমতো তার সঙ্গে ফেরারি আসামীর মতো ব্যবহার করতেও দ্বিধা করেনি! ম্যাচ ফিক্সিং ছাড়া ক্রিকেটে আর কোনো অপরাধের জন্য এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার কথা ভাবাটাও দুঃসাধ্য বৈকি! আর কতটা বঞ্চনার শিকার হলে ‘বল টেম্পারিং’-য়ের মতো অপরাধের পর্যাপ্ত শাস্তি হবে স্মিথের?
এই প্রথমবারের মতো বল টেম্পারিংয়ের পরিকল্পনা করেনি অস্ট্রেলিয়া, স্মিথও এখানে প্রথম অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক নন। অতীতেও এটা হয়েছে, ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে। কিন্তু স্মিথের সঙ্গে যেটা হচ্ছে এবং হয়েছে, সেটা শুধু মাত্রাতিরিক্তই নয়, রীতিমতো ‘বিস্ময়কর’ রকমের বাড়াবাড়ি। হ্যাঁ, এটা নিশ্চিত, ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দেওয়ার জন্য এহেন হেনস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্মিথকে। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা হলো, বার্তাটা কী? ‘বল টেম্পারিং করবে না অস্ট্রেলিয়া, সেটা স্পিরিট অফ ক্রিকেটের পরিপন্থী’, নাকি ‘বল টেম্পারিং করলেও কোনোক্রমেই স্বীকার করা চলবে না’?
প্রথমটা হলে সেটা হজম করা যেকোনো ক্রিকেটবোদ্ধার জন্য কেবল কঠিনই নয়, রীতিমতো হাস্যরসের খোরাক হওয়ার কথা। অস্ট্রেলিয়া কিনা বলছে স্পিরিট অফ ক্রিকেটের কথা? জঘন্যতম ভাষায় কড়া ‘স্লেজিং’ যেখানে মাঠ ও মাঠের বাইরে তাদের নিয়মিত সংস্কৃতি, সেখানে স্পিরিট অফ ক্রিকেটের গানটা কিছুটা অদ্ভুত নয় কি?
কিন্তু সবচেয়ে শঙ্কার ব্যাপার হবে, যদি দ্বিতীয়টা সত্যি হয়। তরুণ ব্যানক্রফটকে একা ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে দিতে চাননি স্মিথ, তাই দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন নিজ কাঁধে। ‘বল টেম্পারিং’ অপরাধ হলেও তাতে মূল উদ্দেশ্য ছিলো যেকোনো প্রকারেই হোক না কেন, দেশের জন্য জয় ছিনিয়ে আনা। সেই মরিয়া ভাব থেকেই বেরিয়ে আসে ‘বল টেম্পারিং’য়ের আইডিয়াটা। এরপরও যে এহেন কর্মকাণ্ড থমকে থাকবে, সেটা ভাবার বিশেষ সুযোগ নেই। কিন্তু এই শাস্তির পর যেকোনো অধিনায়কই ব্যানক্রফটদের পাশে দাঁড়ানোর আগে কয়েকবার ভাববেন, হয়তো তরুণ কোনো খেলোয়াড়কেই বলির পাঠা বানানো হবে বারবার। কারণ, আর কোনো ‘স্টিভেন স্মিথ’ ভুলেও বল কারসাজির অভিযোগে কোনোক্রমেই স্বীকার করবেন না, দলের তরুণ সদস্যটির মাথার উপরে বটবৃক্ষের মতো দাঁড়াতে চাইবেন না। যদি দৃষ্টান্ত স্থাপনই হয় এই শাস্তির মূল লক্ষ্য, সে দৃষ্টান্তটা যে বিন্দুমাত্র শোভন হচ্ছে না তা বলাই বাহুল্য!
আপনি মানতে চান কিংবা না চান, বল টেম্পারিং একটি শিল্প, কিংবা জাদুর পরিভাষায় ‘ডার্ক আর্ট’। নিখুঁতভাবে এই কর্ম সম্পাদন শুধু দারুণ একটা স্কিলই নয়, এটা কখনো কখনো রীতিমতো অপরিহার্যও বটে! প্রায় সব দলেই থাকেন অন্তত এক থেকে দুজন স্পেশালিস্ট, যাদের উপর অর্পিত থাকে বল ‘শাইন’ করার গুরুদায়িত্ব। সেটা কখনো ধরা পড়ে, কখনো বা পড়ে না। কিন্তু এর অস্তিত্ব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের খেলা দেখার সময় নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, বাংলাদেশের বোলিংয়ের সময় যে পিচকে দেখে মনে হচ্ছিলো ‘ব্যাটিং-স্বর্গ’, হঠাৎই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে যেন ছোবল দিতে শুরু করে প্রতিটা বল। হঠাৎ করেই যেন পিচটা হয়ে ওঠে ‘ব্যাটসম্যানদের মারণফাঁদ’। কারণ অনেকাংশেই এই বল ‘শাইন’ করতে পারার সক্ষমতা, বাংলাদেশে যে এমন কেউ নেই যে সুনিপুণভাবে এ কাজটা করতে পারেন! তাই রিভার্স সুইংও আদায় করে নিতে পারে না বাংলাদেশ, টেস্টে বোলিং লাইনআপও হয়ে পড়ে নখদন্তহীন। আপনি স্বীকার করুন কিংবা না করুন, বল কারসাজির ‘অপশিল্প’ শত বছরের পরম্পরায় চলে আসছে এবং ‘কোনো বিস্তর অঘটনের সম্মুখীন না হলে’ ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে।
তবু মনে হচ্ছে, স্মিথের শাস্তি যথাযোগ্য? বল টেম্পারিং নামের ‘ন্যাক্কারজনক’ এই ঘটনার শেষ দেখতে চাচ্ছেন? তবে এটাও জেনে রাখা ভালো, বল ‘শাইন’ করার মতো শিল্প লুপ্ত হয়ে যাওয়ার মানে ক্রিকেট থেকে রিভার্স সুইংয়ের মতো দৃষ্টিসুখকর কিছু দৃশ্য হারিয়ে যাওয়া। তখন ঘন্টার পর ঘন্টা একটা অঘটনের প্রত্যাশাতে টেস্ট ক্রিকেট দেখার ধৈর্য ধরে রাখতে পারবেন নিশ্চয়ই? চলুন তবে, স্মিথ-ওয়ার্নারদের শুধু জেল জরিমানা নয়, দাবি তুলি ফাঁসির। সেটাই তো শুধু বাকি আছে ওদের ভাগ্যে!
Featured Image Credit : toptenperfumes.com