ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম টি-টুয়েন্টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় কোনোরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ছাড়াই পরাজিত হয়েছিলো নিউ জিল্যান্ড। তাই নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচের জন্য দলে দুটি পরিবর্তন এনে একাদশ ঘোষণা করে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। দুই টিমের (ব্লুনডেল ও ব্রুস) পরিবর্তে নিউ জিল্যান্ডের স্কোয়াডে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নেন মার্ক চ্যাপম্যান ও উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান টিম সেইফার্ট।
মার্ক চ্যাপম্যান এর আগেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। তিনি হংকংয়ের হয়ে দুটি ওডিআই এবং ১৯টি আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। ১৯৯৪ সালের ২৭শে জুন হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করেন মার্ক চ্যাপম্যান। তারা বাবা নিউ জিল্যান্ডের এবং মা চীনের নাগরিক। জন্মসূত্রে তিনি হংকংয়ের নাগরিক। ১৪ বছর বয়সে তিনি নিউ জিল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হন, সেখান থেকে অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হন। মার্ক চ্যাপম্যান ২০১০ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে হংকংয়ের হয়ে অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলেন।
২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে হংকংয়ের হয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে মার্ক চ্যাপম্যানের। অভিষেক ম্যাচেই বাজিমাত করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ১১৬ বলে ১১টি চার এবং দুটি ছয়ের মারে অপরাজিত ১২৪* রানের ইনিংস খেলেন। তিনি আইসিসির সহযোগী দেশের ক্রিকেটার মধ্যে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক ম্যাচেই শতক হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দুদিন পর নিজের শেষ ওডিআই ম্যাচ খেলেন চ্যাপম্যান। হংকংয়ের হয়ে দুই ম্যাচের ওডিআই ক্যারিয়ার শেষে চ্যাপম্যানের নামের পাশে ১৫১ ব্যাটিং গড়ে ১৫১ রান।
তিনি হংকংয়ের ২০১৪ সালের মার্চের ১৬ তারিখ থেকে ২০১৬ সালের মার্চের ১২ তারিখ পর্যন্ত ১৯টি টি-টুয়েন্টি খেলে ২৩.০৫ ব্যাটিং গড়ে ৩৯২ রান করেছেন। হংকংয়ে নিজের সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে না পেয়ে নিউ জিল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানে অকল্যান্ডের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন তিনি। বাবার সূত্রে চ্যাপম্যান নিউ জিল্যান্ডের নাগরিক। তাই নিউ জিল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য তার সামনে বড় কোনো বাধা ছিলো না। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে আশার চেয়ে দ্রুত নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে ডাক পেয়ে যান চ্যাপম্যান।
নিউ জিল্যান্ডের ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্ট দ্য ফোর্ড ট্রফির ২০১৭-১৮ মৌসুমে সাত ম্যাচে দুটি শতক এবং দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৮৬.৬০ ব্যাটিং গড়ে ৪৩৩ রান করে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন চ্যাপম্যান। সুপার স্ম্যাশ টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টে ১৭১.৫ স্ট্রাইক রেইটে রান তুলেছিলেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের সুবাদে জাতীয় দলের দরজা তার জন্য দ্রুত খুলে যায়। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের মধ্য দিয়ে ৬ষ্ঠ ক্রিকেটার হিসাবে ভিন্ন দুটি দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট খেলার গৌরব অর্জন করেছেন চ্যাপম্যান।
মার্ক চ্যাপম্যানের আগে আরও পাঁচ ক্রিকেটার ভিন্ন দুটি দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। তাদের সম্পর্কেও জেনে আসা যাক।
১. এড জয়েস (ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড)
১৯৭৮ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে জন্মগ্রহণ করেন এড জয়েস। তবে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয় ইংল্যান্ডের হয়ে। ২০০৬ সালে জুনের ১৫ তারিখে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে জয়েসের। অভিষেক ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে মাত্র এক রান করে সাজঘরে ফেরেন জয়েস। ইংল্যান্ডের হয়ে এই দুটি টি-টুয়েন্টি খেলেন তিনি।
২০১২ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি আয়ারল্যান্ডের হয়ে কেনিয়ার বিপক্ষে টি-টুয়েন্টিতে অভিষেক ঘটে এড জয়েসের। আয়ারল্যান্ডের হয়ে অভিষেক ম্যাচে ২২ বলে ২৪ রান করেন। এক ম্যাচ পরে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ৭৮* রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এড জয়েস আয়ারল্যান্ডের হয়ে ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৬টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচে ৩৬.৭২ ব্যাটিং গড়ে ৪০৪ রান করেন।
২. লুক রংকি (অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড)
লুক রংকি নিউ জিল্যান্ডের জন্মগ্রহণ করে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। তিনি ১৯৮১ সালের ২৩শে এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২০০৮ সালের ২০শে জুন প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলেন। অভিষেক ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২২ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। রংকি ২০০৮-০৯ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিন ম্যাচে ২৩.৫০ ব্যাটিং গড়ে ৪৭ রান করেন।
প্রায় চার বছর পর ২০১৩ সালের ৬ই নভেম্বর বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউ জিল্যান্ডের হয়ে অভিষেক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলেন রংকি। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে নিজের শুরুটা স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না তিনি। রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন। পরবর্তী তিন ম্যাচে লুক রংকির ব্যাটে রানের দেখা মিলেছিল। তিন ম্যাচে যথাক্রমে ৩৪*, ৪৮* এবং ৫১* রান করেন। তিনি নিউ জিল্যান্ডের হয়ে ২৯ ম্যাচে ১৮.৩৫ ব্যাটিং গড়ে ৩১২ রান করেছেন।
৩. রোয়েলফ ভ্যান ডার মারওয়া (দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ড)
১৯৮৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গে জন্মগ্রহণ করেন ভ্যান ডার মারওয়া। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথচলাও শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকাতেই। ২০০৯ সালের ৫ই এপ্রিল সেঞ্চুরিয়ানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে মারওয়ার। অভিষেক ম্যাচে ব্যাট হাতে ক্যারিয়ার সেরা ৪৮ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি এক উইকেট শিকার করেন তিনি। লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করার দরুন তিনি খুব একটা সুযোগ পেতেন না। নেদারল্যান্ডে পাড়ি জমানোর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৩টি টি-টুয়েন্টিতে মাত্র ছয়বার ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এই ছয় ম্যাচে ১৯.০০ ব্যাটিং গড়ে ৫৭ রান করেছিলেন মারওয়া।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে শেষ টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলার প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৫ সালের ৩ জুলাই নেপালের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডের হয়ে অভিষেক ঘটে ভ্যান ডার মারওয়ার। নেদারল্যান্ডের হয়ে অভিষেক ম্যাচেও উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে অপরাজিত ৪০* রানের ইনিংস খেলার পর দুই উইকেট শিকার করেন। রোয়েলফ ভ্যান ডার মারওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৯.০০ ব্যাটিং গড়ে ৫৭ রান করার পাশাপাশি ১৪ উইকেট শিকার করেন। এবং নেদারল্যান্ডের হয়ে ১১ ম্যাচে ১৯.৫০ ব্যাটিং গড়ে ১১৭ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ১৫ উইকেট শিকার করেন।
৪. ডার্ক ন্যানেস (নেদারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া)
ডার্ক ন্যানেস ১৯৭৬ সালের ১৬ই মে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে জন্মগ্রহণ করেন। প্রায় ৩০ বছর বয়সে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেট ক্লাব ভিক্টোরিয়ার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন তিনি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটান নেদারল্যান্ডের হয়ে। নেদারল্যান্ডের হয়ে মাত্র দুটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলার পর অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসেন ন্যানেস।
লর্ডসে ২০০৯ সালের ৫ই জুন এবং ৯ই জুন ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডের হয়ে দুটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলে এক উইকেট শিকার করেন। একই বছরের ৩০শে আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট খেলার সুযোগ পান তিনি। ডার্ক ন্যানেস ১৫ ম্যাচে ২৭ উইকেট শিকার করেন।
৫. বয়েড র্যানকিন (আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড)
২০০৯ সালের ৮ই জুন আয়ারল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে বয়েড র্যানকিনের। এরপর ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানেও বেশিদিন থাকেনি। পুনরায় আয়ারল্যান্ডে ফিরে আসেন। ইংল্যান্ডের হয়ে ২০১৩ সালে দুটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচে এক উইকেট শিকার করেন তিনি। বয়েড র্যানকিন আয়ারল্যান্ডের হয়ে ২৪টি ওডিআইতে ২৭ উইকেট শিকার করেছেন।
ফিচার ইমেজ- Bridget Rive