সায়াহ্নের দুয়ারে মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্যারিয়ার। এক দশকে অনেক ফাস্ট বোলার পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের মধ্যে রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানরা গত দশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর্বিভাবে আলো ছড়িয়েছেন। ঘুরেফিরে তারাই বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন তিন ফরম্যাটে। হাল সময়ে আবু জায়েদ রাহী, খালেদ আহমেদ, এবাদত হোসেনরাও যুক্ত হয়েছেন দেশের পেস আক্রমণের নির্ভরতার তালিকায়। দেশের পেস বিভাগের মশাল টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো তারুণ্যের দেখা মিলেছে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে।
নতুনের কেতন উড়ছে বিপিএলের সপ্তম আসরে। গতির ঝড়, সুইং দিয়ে নজর কেড়েছেন তিন তরুণ তুর্কি। যেন এক ঝলক তাজা সুবাতাস বইয়ে দিয়েছেন মেহেদী হাসান রানা, হাসান মাহমুদ, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধরা।
ড্রাফটে দল না পাওয়া মেহেদী হাসান রানা বাঁহাতি পেসার, খেলছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে। ঢাকা প্লাটুন শিবিরে নতুন বলে মাশরাফির সঙ্গী হাসান মাহমুদ। বিপিএল শুরুর পরও দর্শক হয়ে ছিলেন মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। নেটে বল করেই ঢাকায় প্রথম পর্ব কেটেছে তার। চট্টগ্রাম পর্বে রংপুর রেঞ্জার্সের জার্সিতে বিপিএল মঞ্চে হাজির হন মুগ্ধ। এই নব্য তারুণ্যেই বল হাতে তার সাহসিকতা প্রশংসা কুড়িয়েছে বেশ।
তরুণ পেসারত্রয়ীকে নিয়ে এখন সর্বত্রই আলোচনা। দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে তাদের মাধ্যমে। প্রতিভা, সম্ভাবনার মেলবন্ধনে তারা প্রশংসিত হচ্ছেন। ভবিষ্যতে দেশের সম্পদ হওয়ার সব রসদই আছে তাদের মাঝে। বিসিবির বয়সভিত্তিক কাঠামো পেরিয়ে উঠে আসা এসব তরুণের প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে গড়ে তুলতে হবে রানা-হাসানদের। কারণ, এদের তিনজনের রয়েছে একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য। চোট সখ্যতা রয়েছে তিনজনেরই।
মুস্তাফিজদের সমসাময়িক রানার নিজেকে মেলে ধরতে বিলম্বটা চোটের কারণেই। ২০১৮ সালে যুব বিশ্বকাপ খেলা হাসান মাহমুদ ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত হতে পারছিলেন না চোটের কারণে। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের মাধ্যমে সবার নজরে আসা মুগ্ধও শুরুতে বিপিএলে দল পাননি চোটগ্রস্থ থাকায়। রানা-হাসান-মুগ্ধদের গল্প অবশ্য এখানেই শেষ নয়।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রানার স্বপ্ন অনেক বড়
তিন বছর আগে দেশের মাটিতে যুব বিশ্বকাপ খেলেছিলেন মেহেদী হাসান রানা। বাঁহাতি পেসার বলে তখনই যুব দলে বেশ কদর ছিল তার। বিশ্বকাপের পর অন্য সতীর্থদের মতো ডানা মেলে উড়তে পারেননি এই তরুণ। একের পর এক ইনজুরির থাবায় হারিয়ে যেতে বসেছিলেন চাঁদপুরের ছেলে রানা। ইনজুরি কাটিয়ে ধীরে ধীরে খেলায় ফিরেছেন। বিপিএলের গত দুই আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, সিলেট সিক্সার্সে খেলেছেন। তবে সেভাবে নজর কাড়তে পারেননি।
চলতি বছরের মাঝামাঝি জাতীয় দলের নেটে বোলিং করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরুল হকের ছেলে রানা। তার বোলিং মনে ধরে সদ্য সাবেক হওয়া বাংলাদেশের বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্টের, যার সুবাদে নেপালে এসএ গেমসে খেলেছেন এই তরুণ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ড্রাফটে দল পাননি রানা। কোনো দলই তার প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। পরে রানাকে দলে ভেড়ায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সেই রানাই এখন চট্টগ্রামের ‘ট্রাম্পকার্ড’ এবং বঙ্গবন্ধু বিপিএলের সবচেয়ে বড় চমক।
চট্টগ্রামের সাগরিকায় রানস্বর্গে মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন রানা, উইকেট নিয়ে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন। গত ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম ম্যাচে রান উঠেছিল ৪২৬, সেখানে ৪ ওভারে ২৩ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। ২০ ডিসেম্বর কুমিল্লা-চট্টগ্রাম ম্যাচে রীতিমতো রান উঠেছিল ৪৬০! বোলারদের এমন দুর্দিনেও উজ্জল রানা, তিন ওভার শেষে তার বোলিং ফিগার ছিল ৩-১-৬-৪। সৌম্য, রাজাপাকশে, সাব্বির ও মালানকে ফিরিয়েছিলেন এই তরুণ। শেষ ওভারে আবু হায়দার রনির তোপে পড়ে ২২ রান দেন তিনি। তারপরও ম্যাচের সার্বিক আবহ বিবেচনায় ২৮ রানে ৪ উইকেট ব্যবধান গড়ে দেয়া বোলিংই বলতে হবে।
বিসিবির কোচদের মতে, বয়সভিত্তিক পর্যায়ে মুস্তাফিজুর রহমানের চেয়ে প্রতিভাধর ধরা হতো রানাকে। মুস্তাফিজ এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত বোলার। রানা এখনও সেই মঞ্চে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। ২০১৪ যুব বিশ্বকাপের আগে বিসিবির পেস বোলিং ক্যাম্পে একসঙ্গেই ছিলেন মুস্তাফিজ-রানা।
বিসিবির পেস বোলিং কোচ মাহবুব আলী জাকি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন,
‘শুধু আমিই নই, আরো অনেকেই মুস্তাফিজের চেয়ে রানাকে বেশি প্রতিশ্রুতিশীল মনে করেছিলেন। কারণ, ওর বোলিংয়ে তখন দুরন্ত গতির সঙ্গে সুইংও ছিল। মুস্তাফিজ পরে বোলিংয়ে কাটার যোগ করেই না নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেল।’
অন্যদিকে রানার পিছিয়ে পড়ার কারণও জানিয়েছেন মাহবুব,
‘চোটের কারণেই ওর প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি।’
মুস্তাফিজের সঙ্গে যুব দলের ক্যাম্পে ছিলেন রানা। ওই বয়স থেকেই চোটের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে তাকে। সময়টা মনে করে বাঁহাতি এই পেসার বলেছেন,
‘আমি আর মুস্তাফিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ছিলাম একসঙ্গেই। কিন্তু ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে কুঁচকির চোটে পড়ায় ও খেললেও আমি ২০১৪ যুব বিশ্বকাপ মিস করি। দেশের মাঠে ২০১৬ বিশ্বকাপ খেলি। এর পরপরই হার্নিয়ার অপারেশন হয় আমার, যে কারণে ১৮ মাস খেলার বাইরে ছিলাম আমি। কিছুই খেলতে পারিনি।’
অনেক সময় হারিয়ে গেলেও মনোবল ধরে রেখে ফেরার লড়াই করেছেন চাঁদপুরের ছেলে রানা। বিপিএলে ভালো করে এখন বড় স্বপ্ন দেখছেন তিনি। বলেছেন,
‘মুস্তাফিজের মতো কিছু করেই আমার ক্যারিয়ারও শুরু হবে বলে আশা করেছিলাম। নানা কারণেই তা হয়ে ওঠেনি। স্বপ্ন তো অনেক বড়। স্বপ্নের শেষও নেই কোনো। আমারও স্বপ্ন জাতীয় দলে খেলার। তার আগে আপাতত বিপিএলটাই শুধু মন দিয়ে খেলে যেতে চাই।’
গতির সঙ্গে বৈচিত্র্যে নজর হাসান মাহমুদের
সময়টা ২০১৬ সাল, ২০১৮ যুব বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল গঠনের কাজ চলছে। মিরপুর স্টেডিয়ামের বিসিবি একাডেমিতে যুব দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ক্রিকেটারদের অনুশীলন চলছিল। সেখানে লিকলিকে গড়নের হাসান মাহমুদ নেটে বল করছিলেন। কিন্তু প্রথম কয়েকটি সিরিজে মূল যুব দলেই জায়গা হয়নি ডানহাতি এই পেসারের। স্ট্যান্ডবাই তালিকায় থাকতেন লক্ষীপুরের ছেলে হাসান।
বল হাতে তার কার্যকারিতা, দক্ষতা বেশিদিন লুকিয়ে থাকেনি। এক বছরের মধ্যেই চূড়ান্ত যুব দলে চলে আসেন হাসান। পরে নিউ জিল্যান্ডে যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের মূল স্ট্রাইক বোলার হিসেবেই তিনি।
তবে বিশ্বকাপের পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কয়েক ম্যাচ খেলেই ইনজুরিতে পড়েন। সেই ইনজুরি বয়ে বেড়ান অনেক দিন। বিসিবির দুয়ারে অনেক ধর্না দিয়ে, নির্বাচকদের সুপারিশে হাসানের কাঁধের অপারেশন হয়। সেটি ঠিক হতেই গ্রোয়েন, হ্যামস্ট্রিং লেগেই ছিল তার। সুষ্ঠ পরিকল্পনা, পরিচর্যায় ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরেন এই তরুণ। সর্বশেষ এনসিএলে চট্টগ্রামের হয়ে খেলেছেন।
এইচপি, ইমার্জিং দল হয়ে নেপালে এসএ গেমস খেলেছেন হাসান। এদিকে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে ঢাকা প্লাটুন। ঢাকার কোচ সালাউদ্দিন দলে টানেন এই তরুণকে। যুব বিশ্বকাপে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করেছিলেন হাসান। বিপিএলেও বল হাতে গতির ঝড় দেখালেন তিনি।
চলতি বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪৪.১ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন হাসান। গতি আরও বাড়াতে কাজ করছেন এই তরুণ। তার জন্য কঠিন পরিশ্রম করছেন। তবে গতির সঙ্গে বোলিংয়ে বৈচিত্র্য রাখার চেষ্টা করছেন হাসান।
গতি বাড়ানোর বিষয়ে হাসান বলেছেন,
‘পেস বোলারদের গতি নিয়ে আসলে… নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাটাই মূল ব্যাপার। আর সঠিক অনুশীলন, সঠিক খাবার, সঠিক বিশ্রাম, পেস বোলারদের গতি বাড়ায় আসলে। ফলে অনুশীলনটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি শৃঙ্খলার মধ্যে থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে শুধু গতির উপরই নির্ভর না করে নিজেরে বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টায় আছেন হাসান। বিশেষ করে টি-২০ ম্যাচে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। হাসান বলেছেন,
‘টি-টোয়েন্টিতে (বোলিংয়ে) বৈচিত্র্য আনাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সব সময় জোরে বল করে তো আর বাঁচতে পারবেন না। ব্যাটসম্যান সব বলেই শট মারতে পারবে সহজেই, যদি জোরে বল করেন। এজন্য বৈচিত্র্য আনাটা খুব দরকার।’
বিপিএলে তার মতোই বোলিংয়ে সবার নজর কেড়েছে মেহেদী হাসান রানা, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। হাসানের মতে, এসব তরুণদের মধ্যে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা রয়েছে। আর এই প্রতিযোগিতা তারা নিজেরা উপভোগও করছেন। ডানহাতি এই পেসার বলেছেন,
‘নিজেদের মধ্যে এটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কয়জন দলের মধ্যে থাকতে পারবে। আমাদের স্কোয়াডেই অনেকে খেলছে নতুন। আমরা যারা এইচপিতে আছি, ওদের মধ্যেও অনেকেই বিপিএলে খেলছে। ফলে আমাদের মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জ কাজ করছে, সামনে কে এগিয়ে যেতে পারে, কে কার আগে যেতে পারে।’
লোহার জুতো পেরিয়ে ২২ গজের গতি তারকা মুগ্ধ
প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই থাকে গল্পের সমাহার। মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর উঠে আসার রাস্তায় জীবন সংগ্রাম পাড়ি দেয়ার এক রোমাঞ্চকর গল্প রয়েছে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শীতলগাড়ি গ্রামে ২০০০ সালের ৩০ জুন জন্ম মুগ্ধ’র। জন্মের পরই থেকেই তার টিকে থাকার সংগ্রাম শুরু। জন্মের পর ৪০ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকতে হয়েছিল নবজাতক মুগ্ধকে। তিন বছর বয়স থেকে তার দুই পা বাঁকা হয়ে যেতে থাকে। পা সোজা রাখতে চিকিৎসকেরা তাকে পরিয়ে দেন লোহার জুতো। সঙ্গে দৌঁড়ানো বারণ ছিল। কারণ, তাতে নেমে আসতে পারত পঙ্গুত্বের অভিশাপ।
দুই বছর পর লোহার জুতোর শেকল থেকে মুক্ত হয় মুগ্ধ’র পা জোড়া। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় রংপুর জেলা স্টেডিয়ামে বিকেএসপির ট্রায়ালে গিয়ে উত্তীর্ণ হন। বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমেই নতুন স্বপ্নের পথে পথচলা শুরু।
পরবর্তীতে ওই চিকিৎসকও অবাক হয়েছেন মুগ্ধ’র ক্রিকেটার হওয়ার খবর শুনে। সেই গল্প শোনাতে গিয়ে এই তরুণ পেসার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন,
‘পুরোটা আল্লাহর রহমত হিসেবেই দেখি। আমার আম্মু ভাবতেও পারেনি, এমনটা হবে। আশপাশের সবাই অবাক। যে ছেলে হাঁটতেও পারত না, সে এই পর্যন্ত চলে আসছে! আত্মীয়-স্বজন যারা আছে, সবাই খুব বিস্মিত হয়েছে। তারা বলে, আমরা তো ভেবেছিলাম কোনোদিন তুমি খেলতেই পারবে না। রোগটার নাম জানি না। পরে একদিন ওই ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম দেখা করতে। উনি আমাকে দেখে চিনতে পারেনি। পরে আম্মু তাকে জানায়, মুগ্ধ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলে। ডাক্তার শুনে অবাক হয়েছে।’
মুগ্ধ’র উচ্চতা এখন ৬ ফুট ১ ইঞ্চি। ২০১৮ সালে যুব বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। বর্তমানে ১৯ বছর বয়সী এই তরুণের নামটা বাংলাদেশের ক্রিকেটে চাউর হয়েছে গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের মাধ্যমে। বিকেএসপির হয়ে খেলতে নামা মুগ্ধ বল হাতে দারুণ পারফর্ম করেছিলেন। তারপরই সোজা এইচপি ক্যাম্পে সুযোগ পান। কিন্তু সেখানেও নিয়মিত খেলা হয়নি চোটের কারণে। সর্বশেষ এনসিএলে রংপুরের হয়ে তিনটি ম্যাচ খেলেছেন মুগ্ধ। সম্ভাবনার ছাপ রাখলেও এবার বিপিএলের শুরুতে এই তরুণও দল পাননি হালকা চোট থাকায়।
চোট কাটিয়ে উঠতেই রংপুর রেঞ্জার্স দলে টানে মুগ্ধকে। মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, পাকিস্তানের জুনায়েদ খানের মতো প্রতিষ্ঠিত তিন পেসার থাকতেও মুগ্ধকে দলে নিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি রংপুর। অবশ্য শুরুতে মুস্তাফিজ-তাসকিনদের অফফর্মও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল এই তরুণের অন্তর্ভুক্তিতে। গত ১৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিরুদ্ধে বিপিএল অভিষেক হয় তার। অভিষেকেই ঘন্টায় ১৪৩ কিমি. গতিতে বোলিং করে তাক লাগান মুগ্ধ।
রংপুরের এই তরুণ পেস বোলিংটা শিখেছেন বিকেএসপির শিক্ষক আখিনুর জামান রুশোর কাছে। মুগ্ধ জানিয়েছেন,
‘রুশো স্যার বলেছে, ব্যাটিং মাঝে মাঝে, বোলিংয়ের দিকে বেশি জোর দাও। তখন গতি ছিল। লাইন-লেন্থ হয়ত খারাপ ছিল, কিন্তু গতিটা ছিল। উনি হয়তো সেটা বুঝেছেন। তারপর ওনার কাছ থেকেই শেখা পেস বোলিংটা। অনূর্ধ্ব-১৪ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯, এ পর্যন্ত খেললাম ৪ বছরের মধ্যে। ইনজুরির কারণে যুব বিশ্বকাপ খেলতে নিউ জিল্যান্ড যেতে পারিনি। খেলার বাইরে ছিলাম একটা বছর। এ বছর প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগের পর এখন বিপিএল খেলছি।’
তরুণ পেসারদের যত্নের পরামর্শ মাশরাফির
বিপিএলে নজর কাড়া তিন তরুণ পেসারের পরিপূর্ণ পরিচর্যার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। পেসারত্রয়ীকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মেহেদী হাসান রানা, হাসান মাহমুদ, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধদের মাঝে দারুণ সম্ভাবনা দেখছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
প্রথম ম্যাচেই ঘন্টায় ১৪৩ কিমি. গতিতে বোলিং করেছেন মুগ্ধ। হাসান মাহমুদও ঘন্টায় ১৪৪.১ কিমি. গতিতে বোলিং করেছেন। গতি, সুইং মিলিয়ে রানাও কার্যকর বোলিং করছেন বিপিএলে। পরিকল্পনা করে সঠিকভাবে গড়ে তুললে আগামী দিনে এরাই হবেন বাংলাদেশের সম্পদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দলকে লম্বা সময় সার্ভিস দিতে পারবেন। তাই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাড়াহুড়ো করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উত্তপ্ত মঞ্চে পাঠানোর পক্ষপাতী নন মাশরাফি। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন,
‘আমি মনে করি, ওদের এখন গড়ে তোলার সময়। ওরা যারা আছে, প্রত্যেকেই খুব সম্ভাবনাময়। বয়সও ২৫-এর নিচে। একটি সুন্দর পরিকল্পনা করে ওদের গড়ে তুলতে হবে আগে।’
তিন ফরম্যাটের কথা চিন্তা করেই এই তরুণদের গড়ে তোলার পরামর্শ মাশরাফির। তিনি বলেছেন,
‘এমন নয় যে ভালো করছে বলেই জাতীয় দলে নিয়ে নিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে ওদের তৈরি করা যেতে পারে। সেটি টি-টোয়েন্টির জন্যই শুধু নয়, টেস্টের জন্যও। বড় পরিসরের কথাও চিন্তা করতে হবে। কারণ, ওরা বাংলাদেশের সম্পদ। ওদের সঠিকভাবে পথ দেখানো গেলে ওরা লম্বা সময় সার্ভিস দিতে পারবে।’