বলটা হাতে নিয়ে ক্যাপ খুলে আম্পায়ারকে দিলেন আব্দুর রাজ্জাক। রান আপের দিকে হাঁটতে হাঁটতে তালুতে রাখা মলিন লাল রংয়ের বলটির দিকে এক মনে চেয়েছিলেন। যেন জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে প্রথম প্রেমিকার সেই মায়ামুখ দেখার মতন রোমাঞ্চ। সতীর্থদের মুহুর্মুহু উল্লাসে বুক ভরে শ্বাস নিলেন, বল করলেন। দুয়েকটি হার্টবিট কি মিস করলেন বাঁহাতি স্পিনার? টিভি কিংবা গ্যালারি থেকে তা টের পাওয়া দুঃসাধ্য। পরে অবশ্য জানিয়েছিলেন, খুব নার্ভাস ছিলেন। নার্ভাস থাকারই কথা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই বয়সে জাতীয় দলে ফেরার আশা শোকেসে তুলে রাখে অনেক ক্রিকেটার। সেখানে রাজ্জাক খেলেছেন, খেলছেন। চার বছর পর ফিরে মনে রাখার মতো একটি টেস্ট খেলে গেলেন। দলের জন্য যেমন তা দুঃস্মৃতির, ব্যক্তিগতভাবে নিঃসন্দেহে তা আনন্দের। কারণ, ফিরেই টেস্টের সেরা বোলিং করে গেলেন তিনি! ডাক নামটা তার রাজ, তাই যেন সেই নামের শানে নূযুল প্রমাণ করে গেলেন।
১
২০১৪ সালে যখন চান্দিকা হাতুরুসিংহে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিলেন, এই সময়ের মধ্যেই দল থেকে বাদ পড়েন রাজ্জাক। তাতে করে টিম ম্যানেজমেন্টের শনির দৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয় শ্রীলঙ্কান কোচের। হাতুরুসিংহে কখনই ‘বুড়ো’দের পছন্দ করেননি। তাই শুরুর আগেই তালিকা থেকে বাদ ১৫৩ ওয়ানডেতে ২০৭ উইকেট ও ৩৪ টি-টোয়েন্টিতে ৪৪ উইকেট পাওয়া এই ক্রিকেটার। এই দুই ফরম্যাটে একটা সময়ে অটোমেটিক চয়েজ ছিলেন। কিন্তু সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তার ঝলমলে উপস্থিতি খুব বেশি দেখা যায়নি। সে কারণেই কিনা রঙিন পোশাকের ক্রিকেটেই নিজের ছায়াকে ‘অবধারিত’ করেছেন।
তারপরও হারাতেই হয়েছে তাকে। বয়সের দায় দিয়ে, ফিটনেসের দায় দিয়ে বারবার ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে জাতীয় দলের ভাবনা থেকে। আর রাজ্জাক? পিছনে ফিরে না তাকিয়ে, এগিয়েছেন মাটি কামড়ে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি কী, তার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দলে ফেরার আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ, ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের মতো ঘরোয়া টুর্নামেন্টে নিজেকে নিয়ে গেছেন সর্বোচ্চ উচ্চতায়। কদিন আগেই গড়েছেন নতুন রেকর্ড। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে শিকার করেছেন ৫০০ উইকেট, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। রাজ্জাকের পাশপাশি ব্যাটসম্যান তুষার ইমরানও ইতিহাস গড়েছেন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তুলে নিয়েছেন ১০ হাজার রান।
এ নিয়ে যখন সমর্থক, গণমাধ্যম এমনকি সতীর্থরাও রাজ্জাক-তুষারের প্রশংসায় মুখর, তখন দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মুখে কুলুপ এটে থেকেছে। তাই রাজ্জাকের মতো প্রথম শ্রেণিতে কীর্তি গড়া তুষার ইমরানকে অভিনন্দন জানাতে, গেল জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ত্রিদেশীয় সিরিজে মাঠে আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ দল। তাদের হাতে তুলে দেয় স্মারক ক্রেস্ট। তার আগেই বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা রাজ্জাকের অবদান নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। তরুণ ক্রিকেটারদেরকে তাদের দেখে শিখতে বলেছিলেন।
আগেই মাশরাফির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, রাজ্জাকদের সঠিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে কিনা, তাদেরকে যোগ্য সম্মান দেওয়া হচ্ছে কিনা। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘খেলোয়াড়দের দিক থেকে যদি বলেন, অবশ্যই পাচ্ছে। তাদের যে সম্মানটা মন থেকে দেওয়া দরকার খেলোয়াড়দের দিক থেকে তা দেওয়া হচ্ছে। তাদের সঙ্গে কথা বললেই আমার বিশ্বাস আপনারা এটা পরিষ্কার হবেন।’
হালের তারকা সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালদের পারফরম্যান্সকে সম্মান জানিয়ে মাশরাফি তুলনা করেন রাজ্জাকদের অবদানের। তিনি বলেন, ‘সবসময় সাকিব-তামিম-মাশরাফি-মুশফিকরা কী বলছে সেটা অনুরসরণ করা আমাদের মানসিকতা থাকে। কিন্তু আমার মনে হয় রাজ্জাক-তুষারদের থেকে শিখে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা উচিত। ফার্স্ট ক্লাসে ৫০০ বা ১০ হাজার কোনো হেলাফেলা নয়। সেজন্য তাদের ১৭-১৮ বছর খেলতে হয়েছে।’
সেই রাজ্জাকের সামনে সুদিন আসছে, সেটা হয়তো টের পাননি মাশরাফি নিজেও। ত্রিদেশীয় সিরিজের পরই তাকে ডাকা হল, রাজ্জাক নিজের ক্যারিয়ারে এসে গড়ে গেলেন নতুন ইতিহাস।
২
মূলত, রাজ্জাকের সুযোগ পাওয়ার জন্য অনেকখানি দায়ী সাকিব আল হাসান। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচে যখন আঙ্গুলের ইনজুরিতে পড়লেন বাংলাদেশের এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, ততক্ষণে লঙ্কানদের বিপক্ষে দুটি টেস্ট থেকে ছিটকে গেছে তার ভাগ্য। তাই রঙ্গনা হেরাথ, আকিলা ধনঞ্জয়া, দিলরুয়ান পেরেরাদের সামনে একজন অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনারের খুব দরকার ছিল বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের। ব্যস, উড়িয়ে আনা হল রাজ্জাককে!
রাজ্জাককে সরাসরি দলে নেওয়া হয়েছে এমনও নয়। ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলছিলেন তিনি, বিসিবির ফোনে উড়ে যেতে বলা হল চট্টগ্রামে। সেখানে গেলেন, নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যোমে। যদিও স্কোয়াডে তিনি সহ মোট ছয়জন স্পিনার ছিল। রাজ্জাক ছাড়াও বাঁহাতি স্পিনে আরও ছিলেন তাইজুল ইসলাম ও সানজামুল ইসলাম। এছাড়া ডানহাতি মেহেদী হাসান মিরাজ ও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে টেস্টের জন্য উড়িয়ে আনা নাঈম হাসানও তার দলে জায়গা পাওয়ার পথটা প্রতি মুহূর্তে মানসিকভাবে সংকীর্ণ করে দিচ্ছিল। কিন্তু অপেক্ষায় ছিলেন রাজ্জাক।
সাগরিকায় প্রথম টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনেও তাকে নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। বলে গেলেন, ‘রাজ ভাই ভাবনায় আছে। তিনি ফর্মে আছেন। দলের জন্য যেটা ভালো হবে সেটাই করা হবে। এখনও আমরা দল সাজাইনি।’
কিন্তু ম্যাচের দিন সকালটা ভালো হল না রাজ্জাকের জন্য। অভিজ্ঞ স্পিনার রেখে খালেদ মাহমুদ সুজন-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টেস্টে অভিষেক করালেন সানজামুল ইসলামের। আর রাজ্জাক? তার হাতে টেস্ট ক্যাপ পরলেন ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক করা সানজামুল। তাহলে কি এমন ক্যাপ পরিয়ে দেওয়ার উপলক্ষ হতেই তোড়জোড় করে রাজ্জাককে আনা হল? কিছু বলার নেই। যদিও ভাগ্য ভাল কিছুই লিখে রেখেছিল তার জন্য।
ম্যাচে সানজামুল এককথায় নির্বিষ বোলিং করলেন। প্রথম ইনিংসে ১৫৩ রান করে পেলেন একটি মাত্র উইকেট। তাতে লজ্জার রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন। বেশি রান দিয়ে উইকেট না পাওয়ার তালিকায় নাম উঠে গেছে অনেক উপরে। কেবল বাকি ছিল ১৫০ রান খরচ করেও আদিল রশিদের মতো উইকেট না পাওয়া অভিষিক্ত ক্রিকেটার হিসেবে তার পাশে নাম লেখানো। এ যাত্রা অত দুর্ভাগ্য হয়নি সানজামুলের। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে রাজ্জাকের অভাব।
দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনকে যখন চেপে ধরল গণমাধ্যম, স্বীকার করলেন সানজামুলের ওপর বেশি ভরসা করেছিলেন। আর রাজ্জাককে দলে রাখা হয়নি, তার কারণ অনেক দিন দলের বাইরে ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
সুজনের ভাষায়, ‘রাজ্জাক হয়ত ইন্টারন্যাশনাল ফিগার, কিন্তু আামাদের সাথে ছিল না। অনেক দিন জাতীয় সেট আপেই ছিল না। যদিও রাজ্জাকের অভিজ্ঞতা নিয়ে কারও কথা বলার কিছু নেই। আমাদের জন্য দারুণ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। আমাদের বিশ্বাস হয়ত সানজামুলের প্রতি বেশি ছিল। সে সেট আপে ছিল, ট্রেনিংয়ে ছিল জাতীয় দলের সঙ্গে। রাজ্জাকের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু আমরা চিন্তা করেছি যে সানজামুল হয়ত এই কন্ডিশনে আমাদের বেশি কিছু দিতে পারবে। হয়ত এটার জন্যই। অন্য কোনো কারণ নেই।’
তাহলে কেন রাজ্জাককে উড়িয়ে আনা হল? সুজনের উত্তর, পরিকল্পনা করেই আনা হয়েছে এই ক্রিকেটারকে। তিনি বলেন, ‘রাজ্জাককে নিয়েও অবশ্যই পরিকল্পনা ছিল। হঠাৎ করে নিয়ে আসা হয়নি। তবে দল নির্বাচনে যখন আমরা বসেছি, অধিনায়ক ছিল; আমরা চিন্তা করেছি রাজ্জাককে একটু সময় দেওয়া দরকার। আরেকটু কাজ করলে হয়ত ওর জন্য সহজ হবে।’
তাই রাজ্জাক বসে থাকলেন পুরো পাঁচটা দিন। ‘সময়’ নিলেন। আর যাকে নেওয়া হল, সেই সানজামুলের নখদন্তহীন বোলিংয়ে শুধু একাদশের কোটাই পূরণ হল বাংলাদেশ দলের।
৩
ঢাকায় ফেরার আগেই চট্টগ্রামে বসে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ। সেখানে বাদ পড়েন সানজামুল ইসলাম ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। রাজ্জাক দলেই ছিলেন। এবার তাই সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা একরকম নিশ্চিত ছিল।
হলোও তাই! মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আট ফেব্রুয়ারি চকচকে নতুন সাদা পোশাকে ‘একাদশের’ সঙ্গে মাঠে নামলেন আব্দুর রাজ্জাক। সময়ের হিসেবে তা ঠিক কাঁটায় কাঁটায় চারটি বছরের ব্যবধানে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে যে টেস্ট খেলেছিলেন এই ক্রিকেটার, সেটা শেষ হয় ৮ ফেব্রুয়ারি। সেবারও প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। এবারও তারাই। সেই ম্যাচে চার ওভার বল করে হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরিতে মাঠ ছেড়েছিলেন। আর এই দিনটিও চারের বৃত্তেই বাঁধিয়ে রাখলেন। তুলে নিলেন চার চারটি উইকেট! নিজের ঘূর্ণি বোলিংয়ের ফাঁদে ফেলে একে একে ফেরালেন দুই লঙ্কান ওপেনার কুশল মেন্ডিস-ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে। এরপর দানুশকা গুনাথিলাকা ও অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমালও ফেরেন রাজ্জাকের সামনে পরাস্ত হয়ে।
এমন চার বছরের ব্যবধানে দলে ফেরা ক্রিকেটারদের মধ্যে রাজ্জাক আসলে কীর্তিমান হুয়ে গেলেন। সেটাও আবার ৩৫ বছর বয়সে এসে। অতীতে আমির এলাহী নামের এক ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক করেছিলেন ৩৯ বছর বয়সে। পরের টেস্টে সুযোগ পেতে আরও চারটি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাকে। সেই ম্যাচে ১৩৪ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়েছিলেন এলাহী। বলে রাখা ভালো, এই ক্রিকেটার ভারত ও পাকিস্তান; দুই দেশের হয়েই খেলেছেন। যদিও তার জন্মস্থান পাকিস্তানের লাহোরে।
দ্বিতীয় ইনিংসে রাজ্জাক একটি উইকেট পান। তাতেই টেস্টে নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার নতুন করে লেখেন এই ‘উপেক্ষিত’ ক্রিকেটার। ১৩টি টেস্ট খেলে এবারই প্রথম পাঁচ উইকেট নেওয়ার গৌরব অর্জন করলেন তিনি।
***
রাজ্জাক টেস্ট দিয়েই জাতীয় দলে অভিষেক করেছিলেন, ২০০৬ সালে। একই বছরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক করেন। ১৩ টেস্টে তার উইকেট ২৮টি। ওয়ানডেতে ১৫৩ ম্যাচে ২০৭ উইকেট রয়েছে। পাঁচ উইকেট নিয়েছেন পাঁচবার। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ৩৪ ম্যাচে ৪৪ উইকেট, পাঁচ উইকেট নিয়েছেন একবার।
অবসর নেওয়ার ইঙ্গিত অনেকবারই দেওয়া হয়েছিল রাজ্জাককে। কিন্তু প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নিজেকে উদাহরণ বানালেন তিনি। ফিরে এসে দেখলেন, জয় করলেন। যদিও পরবর্তী সিরিজে তার জায়গা নিয়ে অতীতের মতন সঙ্কট রয়েছেই। তারপরও, দল হারলেও দলের প্রয়োজনে নিজের কাজটা পুরোপুরি করে এসেছেন তিনি। তারপরও জবাব হিসেবে দেখছেন না রাজ্জাক। কাঁচাপাকা চুল-দাড়িতে অভিজ্ঞতা আর ভাবনার রেশেও অনেকটা শান দিয়েছেন বোঝা যায়।
তাই বলে গেলেন, ‘এখনকার সময়ে ক্রিকেটের যে অবস্থা, তারপরও আমাকে দলে নেয়া হয়েছে, এর জন্য বোর্ডকে ধন্যবাদ। এটাতেই প্রমাণ হয় কারো সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে না কখনো। সুযোগ থাকে।’
ফিচার ইমেজ- AFP