২০০১ সালের দিকে যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হতো, “উইম্বলডনের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় কে?”, তাহলে খুব সহজেই বলে দেয়া যেত, “পিট সাম্প্রাস”। একটু গোড়া থেকে বলা যাক, টেনিসে বহু টুর্নামেন্ট থাকলেও এর মধ্যে চারটিকে বলা হয় গ্র্যান্ডস্লাম। এই চারটি হলো অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফরাসি ওপেন (রোঁলা গাঁরো), লন্ডনের উইম্বলডন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ওপেন। চারটিই প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এদের মধ্যে সবচেয়ে আভিজাত্যপূর্ণ ধরা হয় উইম্বলডনকে। ঘাসের কোর্টের এই টুর্নামেন্টে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সরাসরি সংযুক্তি রয়েছে। সাদা পোশাকে খেলা হওয়া গ্রাসকোর্টের এই টুর্নামেন্ট ইতিহাস, ঐতিহ্য আর আভিজাত্যে অনন্য।
সেই উইম্বলডনে সাতটি ট্রফি নিয়ে ২০০১ সালে তৎকালীন চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই খেলতে আসেন পিট সাম্প্রাস। ঘাসের সার্ফেসে তার দারুণ আধিপত্যের ইতিহাস আর ওপেন জমানায় সবচেয়ে বেশি ট্রফি জেতার রেকর্ড মিলিয়ে সেবারও সাম্প্রাসকে ভাবা হচ্ছিল ভাবী চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। বাগড়া বাঁধালো বড় চুলের ১৯ বছর বয়সী এক সুইস তরুণ, তেমন কোনো নামডাক ছিল না তার। সেবার চতুর্থ রাউন্ডে পাঁচ সেটের এক মহাকাব্যিক লড়াইয়ে সাম্প্রাসকে হারিয়ে দেন অচেনা সেই সুইস তরুণ। হার না মানা মনোভাব সে তরুণের, পেছন থেকে এগিয়ে আসা সাম্প্রাসকে শেষ সেটে হারিয়ে দেন নার্ভ ধরে রেখে। সেই ম্যাচে সাম্প্রাস কেবল পরাজিতই হলেন না, বলা চলে সেই ছেলেটির হাতে ব্যাটন তুলে দিলেন পরবর্তী যুগ-শ্রেষ্ঠত্বের। ছেলেটির নাম রজার ফেদেরার, অধিকাংশ টেনিস খেলোয়াড় আর বিশেষজ্ঞের মতেই সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড়।
যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, বালকদের উইম্বলডনে সেবার একক ও দ্বৈত দু’জায়গাতেই চ্যাম্পিয়ন হন ফেদেরার। এরপর ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে সিনিয়র সিঙ্গেলসে আসেন। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে প্রথম দিকেই বাদ পড়ে যেতেন। ফেদেরারের ভাষায়, ম্যাচের পর একা ঘরে বসে কাঁদতেন। তার মনে হতো, তিনি কেবল বাসেলে প্রীতি ম্যাচগুলোতেই ভালো, তার বড় ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা নেই! বিশ্বমঞ্চে ফেদেরারের আসল ব্রেকথ্রু আসে সাম্প্রাসের সাথে সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে। তবে সেবার কোয়ার্টার ফাইনালের বেশি যেতে পারেননি। একই বছরে ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠেন। ধীরে ধীরে অন্য টুর্নামেন্টগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে থাকেন। পরের বছরও উইম্বলডনে ভালো কিছু করতে পারেননি। তার রুদ্র রূপের দেখা বিশ্ববাসী পেতে থাকে ২০০৩ সাল থেকে।
২০০৩ সালে মার্ক ফিলিপোসিসকে হারিয়ে ফেদেরার ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জেতেন এই উইম্বলডনেই। ততদিনে বিশ্বব্যাপী তার পরিচিতি হয়ে গেছে বেশ। টেনিসে খুব বড় চোখে দেখলে দুই ধরনের খেলোয়াড় দেখা যায়, একদল সিঙ্গেল হ্যান্ডেড আর একদল ডাবল হ্যান্ডেড। এর মানে হলো, সিঙ্গেল হ্যান্ডেড খেলোয়াড়রা তার শক্তিশালী হাতটি ব্যবহার করেই ব্যাকহ্যান্ড, ফোরহ্যান্ড ইত্যাদি সব শট খেলেন। আর ডাবল হ্যান্ডেড খেলোয়াড়রা দুই হাত এক করে এসব শট নেন। সাধারণত টেনিস ইতিহাসের দৃষ্টিনন্দন প্রায় সব খেলোয়াড়ই সিঙ্গেল হ্যান্ডেড। ফেদেরার নিজেও সিঙ্গেল হ্যান্ডেড। ঘাসের কোর্ট প্রচন্ড দ্রুতগতির সার্ফেস, টুর্নামেন্টের শুরুতে ঘাস একরকম আচরণ করে, আবার শেষ দিকে অন্যরকম। প্রচন্ড দ্রুত এই সার্ফেসে স্পেশালিষ্ট হওয়া বেশ কঠিন একটি ব্যাপার। এই সার্ফেসে ভালো সার্ভিস করতে পারা খেলোয়াড়রাই বেশি সুবিধা পান। পিট সাম্প্রাসকে ডাকা হতো ‘পিস্তল পিট’ নামে। কারণ তাঁর সার্ভিস স্পিড এত বেশি ছিলো যে, প্রতিপক্ষের কাছে তা বুলেটের মতো লাগতো।
কিন্তু ফেদেরার সার্ভিস এন্ড ভলি টাইপ খেলোয়াড় ছিলেন না। তার খেলার পুরোটাই টেকনিক নির্ভর, দারুণ সব ফোরহ্যান্ড আর ব্যাকহ্যান্ড শট থাকে সেখানে। কিছু কিছু ব্যাপারে তিনি যেন পুরো সাম্প্রাসের মতোই। কেবল এইস মেরেই গেম জিততে চাইতেন না, খেলাটা র্যালিতে নিয়ে দারুণ সব শটে পয়েন্ট পেতেন। ফলে দ্রুতই জনপ্রিয়তা পেতে থাকেন তিনি সুন্দর খেলার জন্য।
২০০৪ সালে ৩টি, ২০০৫ সালে ২টি, ২০০৬ সালে ৩টি, ২০০৭ সালে ৩টি, ২০০৮ সালে ১টি, ২০০৯ সালে ২টি গ্র্যান্ডস্লাম জেতেন ফেদেরার! বিশ্বে অবিসংবাদিতভাবে ২০০৪-২০০৯ পর্যন্ত রাজত্ব করে গেছেন তিনি, আর এরপরের দিকে নাদাল। ২০০৩ সালে প্রথম উইম্বলডন জেতার পর টানা উইম্বলডনে জেতা শুরু করেন ফেদেরার। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে অ্যান্ডি রডিককে আর ২০০৬ ও ২০০৭ সালে রাফায়েল নাদালকে হারিয়ে টানা পাঁচটি উইম্বলডন জেতেন তিনি। গ্রাসকোর্টে তিনি হয়ে উঠেন অবিসংবাদিত সম্রাট। ২০০৮ সালের উইম্বলডন ফাইনালে নাদালের সাথে পাঁচ ঘণ্টার মহাকাব্যিক লড়াইয়ে হেরে গিয়ে টানা ষষ্ঠ শিরোপা থেকে বঞ্চিত হন। এর পরেরবার ২০০৯ সালে অ্যান্ডি রডিককে পাঁচ সেটের এক লড়াইয়ে হারিয়ে আবার উইম্বলডন জেতেন ফেদেরার।
এরপরের দুই বছর কেবলই হতাশার। ২০১০ এ বারডিচ আর ২০১১ সালে সোঙ্গার কাছে হেরে ফাইনালের আগেই বাদ পড়ে যান ফেদেরার। ২০১২-তে ফাইনালে উঠেন দুইবছর পর। সামনে বাধা ছিল ব্রিটিশদেরই ঘরের ছেলে অ্যান্ডি মারে। মারেকে তার নিজের সমর্থকদের সামনে হারিয়েই সপ্তম ট্রফিটি জেতেন, সমান করেন পিট সাম্প্রাসের ট্রফি সংখ্যার। ফেদেরার বেশ আবেগী ব্যক্তি, ফাইনাল হেরে কাঁদার অনেক ইতিহাস আছে তার। সেই ২০১২ সালের ফাইনাল ম্যাচে হেরে অশ্রুসিক্ত মারে বলেছিলেন, “আমি রজারের মতো কাঁদতে পারি, তবে এটা লজ্জার ব্যাপার যে, আমি তার মতো খেলতে পারি না।’’ ২০১২ সালের পরই ফেদেরারের টেনিস ক্যারিয়ারে ধ্বস নামতে থাকে।
২০১৩ সালে অচিন্ত্যনীয় ব্যাপারটিই ঘটে যায়, উইম্বলডন থেকে ফেদেরার দ্বিতীয় রাউন্ডেই বাদ পড়ে যান! সেই সাথে ইনজুরি সমস্যা শুরু হয় আবার। টেনিসে তখন রাফায়েল নাদাল আর নোভাক জোকোভিচের রাজত্ব। ২০১৪-তে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ফাইনালে নাদালের কাছে হেরে যান ফেদেরার। সেবার উইম্বলডনের ফাইনালেও উঠেন, সেখানেও পাঁচ সেটের এক দারুণ লড়াইয়ে জোকোভিচের কাছে হারেন তিনি। ২০১৫ সালেও সেই একইরকম ঘটনাই ঘটতে থাকে। ২০১৫-তে আবার উইম্বলডনের ফাইনালে উঠেও জোকোভিচের কাছে হেরে যান। বছরের শেষ গ্র্যান্ডস্ল্যাম ইউএস ওপেনের ফাইনালে আবার সেই জোকোভিচের সাথে দেখা এবং পরাজয়। ফেদেরার যেন পেরেই উঠছিলেন না জোকোভিচের সাথে। ২০১৪ আর ২০১৫-তে চার-চারটি গ্র্যান্ডস্লাম ফাইনালে হার! শারীরিকভাবে দুর্বল দেখাতো তাকে এ সময়, নাদাল বা জোকোভিচদের পাওয়ার গেমের কোনো প্রত্যুত্তর তার পুরোদস্তুর টেকনিক-ভিত্তিক গেমের মাঝে ছিল না সেই সময়টায়। ২০১৬-তে সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ ঘটনাটি ঘটে যায়। তার বাচ্চা দুই মেয়ের সাথে খেলতে গিয়ে পায়ের গোড়ালির ইনজুরিতে পড়েন, ঘোষণা দিয়ে দেন যে, বাকি পুরো সিজনই মিস করতে যাচ্ছেন তিনি।
একদিকে একের পর এক ফাইনালে জোকোভিচের কাছে হার, অন্যদিকে বয়সও হয়ে গেছে ৩৪, যে সময়টায় অনেক লিজেন্ডই অবসর নেন, সাথে যোগ হলো ইনজুরি। সেই সময় অবধি ১৭টি গ্র্যান্ডস্লাম নিয়ে সফলতম খেলোয়াড় হলেও টেনিস বিশ্বে একটি ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, ফেদেরার ফুরিয়ে গেছেন, তার গ্র্যান্ডস্লাম সংখ্যা ১৭ এর বেশি হচ্ছে না আর। অনেক বিশেষজ্ঞ, সম্পাদকের ভাষা পরোক্ষভাবে এমন ছিল যে, আর কত ফাইনাল হারলে তিনি বুঝবেন যে তার দিন ফুরিয়ে গেছে!
কিন্তু বিধাতার ইচ্ছে হয়তো অন্যরকম ছিলো। দীর্ঘ ইনজুরি থেকে ফিরে ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলতে এলেন তিনি নিম্নতম সম্ভাবনাময় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে, অর্থাৎ কেউ ভাবেওনি যে তার পক্ষে সেমিফাইনালেও যাওয়া সম্ভব! সেই ফেদেরার একে একে বারডিচ, ওয়ারিঙ্কার মতো ফর্মে থাকা তারকাদের হারিয়ে ফাইনালে উঠলেন আবার। প্রতিপক্ষ নাদাল, যার সাথে তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন। নাদাল নিজেও দীর্ঘ ইনজুরি থেকে ফিরেছেন তখন। খেলাটার নাম হয়ে গেল ‘Clash of Reborn’।
ততদিনে টেনিস দর্শকেরা বুঝে গেছেন, এ এক পরিবর্তিত রজার ফেদেরার। ৩৫ বছর বয়সে তার সার্ভিস শটগুলো যেন বুলেট, সাম্প্রাসের মতো। র্যাকেট বদলে ফেলেছেন, ফোরহ্যান্ড শট আগের চেয়ে অনেক বেশী চাঁছাছোলা, ব্যাকহ্যান্ডে এরর খুব কম হয়। এ বয়সে এসে র্যালিতে গিয়ে এনার্জি খরচ করার চেয়ে প্রচন্ড জোরে অ্যাকুরেট সার্ভ করে কম র্যালিতে পয়েন্ট নেয়া শুরু করলেন তিনি। দর্শক দেখলো, খেলার কিছু ধাঁচ বদলে ফেলে আবার সেই আগের মতোই ক্ষিপ্র হয়ে উঠেছেন ফেদেরার। ফাইনালে নাদালের সাথে ২-২ এ সমতায় লাস্ট সেটে ব্রেকপয়েন্ট দিয়ে দেন নাদালকে, ম্যাচ তখন হাতছাড়ার পথে। ২০১৪ বা ’১৫ এর ফেদেরার হলে নিশ্চিত হেরে বসতেন। কিন্তু তিনি যে এসেছেনই টেনিস বিশ্বকে ভুল প্রমাণ করতে! নার্ভ ঠিক রেখে দুইটি ব্রেকপয়েন্ট নিয়ে হারের মুখ থেকে ম্যাচটি বের করে ফেলেন, জিতে নেন সবচেয়ে বেশি বয়সী হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন! বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া এই মহাতারকাকে এরপর থেকেই বিশ্ব অন্যরূপে দেখতে লাগলো। এরপর আরো দুটো টুর্নামেন্টে (গ্র্যান্ডস্লাম নয়) ফাইনালে সরাসরি সেটে নাদালকে হারালেন তিনি। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, যে নাদালের সামনে ফেদেরারের জিততে ঘাম ছুটে যেত, সেই নাদালকেই রীতিমতো একপেশেভাবে হারালেন পরপর দু’বার!
বয়স হয়ে গেছে ৩৫, এটা ভুললেন না ফেদেরার। প্রত্যেকটা খেলোয়াড়েরই কিছু দুর্বলতা থাকে। ফেদেরারের দুর্বলতা ক্লে কোর্ট। এই ক্লে কোর্ট টেনিস ইতিহাসের অনেক লিজেন্ডকেই ভুগিয়েছে। এই কোর্টে ডিফেন্সিভ এবং পাওয়ারফুল প্লেয়াররা বেশি ভালো করেন, যেমন- নাদাল, বিয়ন বর্গের মতো খেলোয়াড়রা। ফেদেরার এবারের পুরো ক্লে কোর্ট মৌসুমই বাদ দিলেন উইম্বলডনে সেরাটা দেয়ার জন্য। ফরাসি ওপেন খেললেনই না।
শুরু থেকেই এবারের উইম্বলডনে অজেয় ছিলেন তিনি। কাউকে কোনো সুযোগ দিলেন না। একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমান প্রাধান্য নিয়েই খেললেন। কোন সেট হারেননি! একেবারে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে ছিলেন ফেদেরার। বারডিচের সাথে সেমি ফাইনালে দ্বিতীয় সেটে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক পয়েন্ট দেওয়ার পথে ছিলেন ফেদেরার, তখন ১৫-৪০ এ বারডিচ এগিয়ে, এসময় ব্রেক পয়েন্টটি পেয়ে গেলে ম্যাচে ফিরে আসতে পারতেন বারডিচ। কিন্তু টানা চারটি এইস মেরে পয়েন্টটি জিতে নিলেন ফেদেরার। নিয়মিত টেনিস দর্শক মাত্রই এটা বুঝবেন যে, কতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে এমন খেলা সম্ভব হয় এ পর্যায়ে এসে। তারকা পতনের এই টুর্নামেন্টে নিজের পথে সদর্প ছিলেন ফেদেরার, রাওনিচ থেকে জেভরেভ বা বারডিচ থেকে চিলিচ কাউকে দাঁড়ানোর সুযোগই দেননি তিনি। শেষপর্যন্ত চিলিচকে হারিয়ে যখন উইম্বলডনের সোনালী ট্রফিতে চুমু খেলেন, তখন অনেক রেকর্ডই হয়ে গেছে। সাম্প্রাসকে ছাড়িয়ে উইম্বলডনে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ট্রফি তার, সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ডস্লাম জয় সহ বহু রেকর্ড। ওদিকে ভাঙা রেকর্ডারের মতো বাজতে থাকা “ফেদেরার ফুরিয়ে গেছেন” রবও থেমে গেছে সে খেলার পর। টেনিস খেলোয়াড় আর বিশেষজ্ঞদের মতে রজার ফেদেরার হয়ে গেছেন সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড়।
একজন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার বিচারের খুব বড় একটি মাপকাঠি হলো, দুঃসময়কে তিনি কীভাবে সামলেছেন। প্রায় সবগুলো ঘটনা যখন তার বিরুদ্ধে চলে গেছে, তখনও তিনি লক্ষ্যে অবিচল থেকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। আপনি যদি টেনিস খেলার ভক্ত বা নিয়মিত দর্শক হন, তবে বুঝবেন যে, ফেদেরার টেনিসের মেসি, ম্যারাডোনা, পেলে বা রোনালদিনহোর মতো। তাদের খেলা ছিলো কেবল গোল করার চেয়েও খানিকটা বেশি কিছু, প্রতিটা মুহূর্ত যেন দৃষ্টিনন্দন স্কিলের শৈল্পিক প্রদর্শনী। ফেদেরারও ঠিক তেমন, ফেদেরারকে ট্রফির সংখ্যা দিয়ে মাপা মানে হলো তার খেলাকে অবজ্ঞা করা। হয়তো তার ট্রফিসংখ্যাও অদূর ভবিষ্যতে কেউ না কেউ ছাড়িয়ে যাবে, তবে যে জিনিসটি ছাপিয়ে যাওয়া কষ্টকর তা হলো, তার দৃষ্টিনন্দন খেলা। ফেদেরারের ক্লাসিক, শৈল্পিক সেসব শটের কথা ইতিহাস মনে রাখবে, যেগুলো দেখে একটি প্রজন্ম টেনিস উপভোগ করেছে, টেনিসকে ভালোবেসেছে।
এই ছিল টেনিসের অবিসংবাদিত সম্রাটের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের এক অনুপ্রেরণাদায়ক উপাখ্যান। আগামী ৮ই আগস্ট ৩৬ বছরে পা দেবেন তিনি, তার এই পা দুটো চলতেই থাকুক নিরন্তর। ৯৫ বর্গ ইঞ্চির র্যাকেটটি দিয়ে তিনি মোহিত করে রাখুন টেনিস ভক্তদের আরো অনেকদিন- এটাই চাওয়া।
ফিচার ইমেজ: espn.com