সদ্য বিদায় জানানো দশকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাতিয়ে রেখেছিলেন মেসি ও রোনালদো। তাদের মাঝে ছিলো চেনা-অচেনা আরও অনেক মুখ। এর আগে ফুটবল মাঠ মাতানো অনেকে এই দশকে বিদায় নিয়েছেন, অনেকে তারও আগে স্মৃতিতে পরিণত হয়েছেন। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে গত দশকের অধিকাংশ চেনা মুখ খুব দ্রুত স্মৃতির পাতায় স্থান নেবে। ফুটবল মাঠকে রঙিন করে তোলা অনেক মহারথী বয়সের কাছে হেরে রং হারাবেন। এসব তিক্ত দৃশ্য হজম করতে বাধ্য আমরা। তবে, গত দশকে যারা ফুটবল মাঠে সাফ্যলের বীজ বুনে গেলেন, তাদের থেকে বাছাইকৃত এগারোজনের একাদশের দিকে নজর দেয়া যাক।
ম্যানুয়েল নয়ার
বিগত দশক যখন শুরু হয় নয়ার ছিলেন শালকে ক্লাবে। ২০১১ সালে যখন বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে চুক্তি করেন, নয়ারের বয়স তখন মাত্র ২৩ বছর। মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে, বায়ার্ন মিউনিখ এখন তার ঘর-বাড়ি। বাভারিয়ানদের হয়ে জিতেছেন প্রায় সবকিছু। ২০১২-১৩ সালে বায়ার্নের ঐতিহাসিক ট্রেবল জেতা মৌসুমে ব্যালন ডি অরের সেরা তিনে ছিলেন তিনি। এরপরের বছর জার্মানির হয়ে স্বপ্নের বিশ্বকাপ জেতা ও বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষকের খেতাব। জাতীয় দল থেকে ক্লাব, প্রত্যেক জায়গায় নিজেকে সেরা প্রমাণ করেছেন।
২০১৭ সাল থেকে বাভারিয়ানদের অধিনায়ক তিনি। ইনজুরির সমস্যা কারণে, বর্তমানে নিজের সেরা সময় না পার করলেও, সেই সময় তিনিই ছিলেন অদ্বিতীয়। ‘সুইপার কিপার’ খ্যাত নয়ার নির্ভার মুখে অনেক খুনে স্ট্রাইকারকে হতাশ করেছেন পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে। একজন গোলরক্ষক হয়েও তার পাসিং ও বল আয়ত্ত্বে আনার দক্ষতা ছিলো ভিন্ন মাত্রার। তাই টার স্টেগান, অবলাক, লরিস বা ডি হেয়ার যুগে শুধুমাত্র মুখে মুখে সেরা নন তিনি। তার ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে দেয়, কে বিগত দশকের সেরা গোলরক্ষক!
দানি আলভেজ
আলভেজ এই দশক শুরু করেন বার্সেলোনার সাথে। ২০০৮ থেকে ২০১৫- এই বছরগুলোতে কাতালানদের হয়ে যা জেতা সম্ভব, জয় করেছেন। কাতালানদের জন্য তিনি নিছক একজন রাইট-ব্যাক নন, দুর্দান্ত একজন উইং-ব্যাকও। ২০১৫ সালে আলভেজ বার্সেলোনা ছেড়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমান। অনেকে ভেবেছিল আলভেজ তার ক্যারিয়ারের ইতি টানতে যাচ্ছেন। কিন্তু কে জানত, সেই বছরই তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অংশের শুরু হবে।
বার্সেলোনার সাথে দুবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও লিগ শিরোপা তো জিতেছেনই। পরবর্তীতে পিএসজি ও জুভেন্টাসের হয়েও জিতেছেন লিগ শিরোপা। ৩৬ বছরে এসে ব্রাজিলের হয়ে কোপা আমেরিকায় তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। তাই শেষ বয়সে এসে কোপা আমেরিকা জেতার থেকে সেখানে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তার অন্যতম অর্জন। এছাড়াও সেলেকারওদের হয়ে ২০১৩ সালে ফিফা কনফেডারেশন কাপ জিতেছিলেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সে আলভেজ এখনও দিব্যি ফুটবল খেলে যাচ্ছেন সাও পাওলোর হয়ে। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে ৪০টি শিরোপা জেতা আলভেজের ইচ্ছা আছে কাতার বিশ্বকাপ শেষে এই সাফল্যময়ী ক্যারিয়ারের শেষ ঘোষণা করার।
জর্জো কিয়েলিনি
কিয়েলিনি শুধু গত দশকে নন, সেই জিদান, পিরলোদের আমল থেকে সেরা ডিফেন্ডারদের তালিকায় ঘোরাফেরা করা বর্ষীয়ান ফুটবলার, যিনি ৩৫ বছর বয়সেও ফুটবল খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও কিয়েলিনি আলভেজের মতো বিশ্বভ্রমণ চালিয়ে যাননি। ২০০৪ সালে ফ্লোরেন্তিনা থেকে জুভেন্টাসে আসা কিয়েলিনি থিতু হয়েছেন তুরিনে।
তুরিনো বুড়িদের হয়ে তার অর্জন ঈর্ষণীয়। লিগ শিরোপা জিতেছেন ৮ বার। ইতালিয়ান কাপ ও ইতালিয়ান সুপার কাপও জিতেছেন যথাক্রমে ৪ বার করে। দুবার ফাইনালে উঠলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা নেই তার অর্জনের ঝুলিতে। ক্লাবের হয়ে যেমন সেরা ছিলেন, একই ধারা বজায় রেখেছিলেন ইতালি জাতীয় দলের হয়েও। তবে ২০১২-তে ইউরোতে দ্বিতীয় হওয়া ছাড়া আর কোনো সাফল্য নেই তার। দুই বিশ্বকাপে তার দল ভালো খেলেনি। তাই ইতালির হয়ে বড় মঞ্চ মাতানোর সুযোগ হয়নি কিয়েলিনির। তবে নিজের দক্ষতায় তিনি অবশ্যই সময়ের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন।
সার্জিও রামোস
তিনি রিয়াল মাদ্রিদের অ্যাকাডেমিতে বেড়ে ওঠা কোনো ফুটবলার নন। মূল ক্যারিয়ার শুরু সেভিয়াতে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আসেন ২০০৪ সালে। কিন্তু বর্তমানে রামোস আর রিয়াল মাদ্রিদ যেন সমার্থক এক শব্দ।
এ দশক তিনি শুরু করেছিলেন স্পেনের স্বর্ণালী প্রজন্মের সাথে বিশ্বকাপ জিতে। এরপর ২০১২ সালে আবারও স্প্যানিশদের সাথে ইউরো জয়। এক দশকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন ৪ বার, লিগ শিরোপা ২ বার। রিয়ালের ‘লা ডেসিমা’ স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল রামোসের গোলের কারণে। সবসময় রক্ষণ যেমন করেন কড়াভাবে, তেমনই লাল কার্ড হজম করার রেকর্ডটাও তার দখলে। তবে এসব কোনো সমস্যা নয় রামোসের জন্য। একজন সেন্টারব্যাক ডিফেন্ডার হয়ে রক্ষণের পাশাপাশি গোল করতেও দারুণ ওস্তাদ তিনি। স্পেনের হয়ে ১৭০ ম্যাচে তিনি করেছেন ২১ গোল। ব্যক্তিগত অর্জন ও দলগত অর্জন, উভয় দিক থেকে তিনি শুধু এ দশকের সেরা ডিফেন্ডার নন, সর্বকালের সেরাদের একজন।
মার্সেলো
এই দশকে তিনটি জিনিস ধ্রুব ছিলো; মৃত্যু, সরকারকে ট্যাক্স দেওয়া, ও মার্সেলোর ফিফার সেরা একাদশে জায়গা করে নেওয়া। কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল দলে তার জায়গা হয়নি। শেষ দুই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের বাম পাশের স্থায়ী জায়গাও নড়বড়ে হয়ে গেছে। কিন্তু ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মার্সেলো যে বিশ্বের সেরা লেফট-ব্যাকদের একজন ছিলেন, এটা কেউ অবিশ্বাস করতে পারবে না।
রিয়ালের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে জিদানের দলে তিনি রোনালদো, মদ্রিচ, ক্রুস বা রামোসদের মতো লাইমলাইটে থাকতে পারেননি। কিন্তু মাঠের বাম পাশে রক্ষণ থেকে আক্রমণ, প্রতিটি পজিশনে মার্সেলো অনবদ্য ছিলেন। ফ্লুমিনেসে থেকে ২০০৬ সালে লস ব্লাঙ্কোসদের দলে নাম লেখানো মার্সেলো ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ২টি লিগ শিরোপা জিতেছেন। ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন ফিফা কনফেডারেশন কাপ।
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা
বার্সেলোনার অ্যাকাডেমিতে বেড়ে ওঠা ইনিয়েস্তা গত দশক শুরু করেছিলেন বিশ্বকাপ জিতে। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা ইনিয়েস্তার একমাত্র গোলেই বিশ্বকাপ জিতেছিল স্পেন। দুই বছর পর ইউরো জেতা দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন তিনি।
চকিতে পাস, দুর্দান্ত ড্রিবলিং ও সলো রান- এ দশকের অন্যতম কমপ্লিট মিডফিল্ডার ছিলেন ইনিয়েস্তা। ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত টানা ৬ বছর ছিলেন নিজের সেরা ফর্মে। ২০১১ সালে ব্যালন ডি অরের সেরা তিনে ছিলেন, বার্সেলোনার হয়ে ৭ বার লিগ শিরোপা জিতেছেন। ২০১৫ সালে ট্রেবল জেতা দলের মধ্যমাঠের প্রাণ ছিলেন তিনি। বার্সেলোনায় থাকাকালে যেমন তাকে ছাড়া মধ্যমাঠ ভাবা যেতো না, তেমনই অবসর না নেওয়া পর্যন্ত ইনিয়েস্তার পরিবর্তে স্পেন দলে অন্য কেউ সুযোগ পায়নি। একজন মিডফিল্ডার হিসেবে সম্ভাব্য সকল শিরোপাও জিতেছেন তিনি। ২০১৮ সালে শৈশবের ক্লাবের মায়া কাটিয়ে, বর্তমানে তিনি খেলছেন জাপানী ক্লাব ভিসেল কোবেতে।
লুকা মদ্রিচ
ফরোয়ার্ড ও উইঙ্গারদের গোল বন্যার ভিড়ে তাদের পেছনে থাকা মিডফিল্ডারদের কারুকাজ সেভাবে ফুটে ওঠে না। জাভি, ইনিয়েস্তা, ডেভিড সিলভাদের মতো মিডফিল্ডার কোনোদিন মেসি ও রোনালদোর তাণ্ডবের সামনে ব্যালন ডি অর জিততে পারেননি। কিন্তু মদ্রিচ পেরেছেন। ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিলেন, পাশাপাশি রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে তোলার পেছনে তার অবদান ছিলো সর্বোচ্চ। সেখানে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন এই ক্রোয়েট মিডফিল্ডার।
২০১২ সালে টটেনহাম হটস্পার থেকে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। প্রথম মৌসুম হতাশায় কাটলেও পরবর্তী মৌসুম থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মদ্রিচ ছিলেন সেরা ফর্মে। ব্যক্তিগত অর্জনে আছে ব্যালন ডি অর, উয়েফা ও ফিফার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ফিফার সেরা একাদশেও ছিলেন তিনি। বিশ্বকাপ হয়তো জেতা হয়নি, কিন্তু ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন ৪ বার। তাই ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসের সেরা এ মিডফিল্ডারকে এই দশক স্বরণে রাখবে ভালোবাসা ও সম্মানের সাথে।
জাভি হার্নান্দেজ
আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা যদি এ দশকের কমপ্লিট খেলোয়াড় হন, তবে জাভি হবেন মধ্যমাঠের শিল্পী। গার্দিওলা বা ভিসেন্তে দেল বক্স- প্রত্যেক কোচের ক্যানভাসের তলায় জাভি ছিলেন ভ্যান গগ। মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ তৈরি করে দেওয়া অথবা রক্ষণে সহায়তা করা, দুর্দান্ত সেটপিস, আক্রমণভাগের সাথে টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ- জাভি এই দশকের নয়, সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন।
লা মাসিয়াতে বেড়ে ওঠা এ মিডফিল্ডারের মূল দলে অভিষেক হয়েছিলো মাত্র ১৮ বছর বয়সে। এরপর পুরো ক্যারিয়ার পার করেছেন কাতালানদের হয়েই। বিশ্বকাপ, ইউরো, চ্যাম্পিয়নস লিগ, সুপার কাপ, লা লিগা, কোপা দেল রে, ফিফা বিশ্বকাপ- এমন কিছু নেই যা জাভি জেতেননি। ট্রেবল জেতার স্বাদ পেয়েছেন দুবার। ২০১৫ সালে ট্রেবল জিতে বার্সা থেকে বিদায় নেওয়া জাভির শূন্যস্থান এখনও বার্সেলোনা অনুভব করে চলছে। আল সাদ ক্লাবে খেলার পর বর্তমানে তিনি ঐ দলের কোচের দায়িত্বে আছেন। হয়তো কোনো একদিন খেলোয়াড় জাভির দেখা মিলবে বার্সেলোনার ডাগআউটে, কোচের ভূমিকায়।
লিওনেল মেসি
এ দশকের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের একজন আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি দশক শুরু করেছিলেন বিশ্বকাপ হতাশা দিয়ে ও ব্যালন ডি অর জিতে। শেষও করেছেন কোপা আমেরিকায় আবারও ব্যর্থ হয়ে ও ব্যালন ডি অর জিতে। তার একমাত্র হতাশা জাতীয় দলের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ, চারটি কোপা আমেরিকা খেললেও একবারও শিরোপা ঘরে আনতে পারেননি। টানা তিনবার ফাইনাল খেলেও তীরে এসে তরী ডুবিয়ে ফিরেছেন খালি হাতে।
এই ব্যর্থতা বাদে পুরো দশকজুড়ে মেসি যা করেছেন, ইতিহাসে তার পুনরাবৃত্তি হবে কি না সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই দশকের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। ব্রাজিল বিশ্বকাপে ছিলেন সেরা খেলোয়াড়। বার্সেলোনার হয়ে লিগ শিরোপা জিতেছেন ৭ বার, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২ বার। ব্যক্তিগত অর্জনের খাতায়ও কোনো কমতি নেই। দশকে ব্যালন ডি অর জিতেছেন ৫ বার, ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শ্যু সর্বোচ্চ ৬ বার। নতুন দশকে মেসির ম্যাজিক শো বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এ দশকে যে অতিমানবীয় পারফর্ম করে গেলেন, ভবিষ্যত ফুটবল তাকে মনে রাখবে পেলে ও মারাডোনার মতো কিংবদন্তিদের পাশে।
রবার্ট লেভান্ডস্কি
আয়াক্স থেকে লিভারপুল ও বার্সেলোনা বা উরুগুয়ের হয়ে লুইস সুয়ারেজ শিরোপা ও নিজের ব্যক্তিগত পারফরম্যানসের দিক থেকে বরাবরই এগিয়ে ছিলেন, কিন্তু দশকের হিসাবে তার থেকে বেশি ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভান্ডস্কি। এজন্যই মেসি ও রোনালদোর পর এই দশকের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি।
লেভান্ডস্কি ২০১১ ও ২০১২ সালে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ বুন্দেসলিগা শিরোপা জিতেছিলেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে। ২০১৩ সালে তার ডর্টমুন্ড চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালও জিতেছিল, যেখানে সেমি-ফাইনালে ৪ গোল করে সিগনাল ইদুনা পার্কে বিধস্ত করেছিলেন স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদকে। ২০১৪ সালে ডর্টমুন্ড ছেড়ে বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দেন তিনি। সেখানেও তার তুলনাহীন সাফল্য। বাভারিয়ানদের সাথে পাঁচটি লিগ শিরোপা জিতেছেন, যেখানে ৩টিতে ছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। এ দশকে স্ট্রাইকার বা আক্রমণাত্মক অংশের খেলোয়াড়রা আরও খুনে রূপ ধারণ করেছেন। সেখানে লেভান্ডস্কি ছিলেন আরও এক ধাপ এগিয়ে। গোল করা যেন তার কাছে দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ। তাই ৩১ বছর বয়সী এ পোলিশ স্ট্রাইকারকে এ দশকের সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে রোনালদো যখন লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে নাম লেখালেন, ততদিনে তিনি সুপারস্টার। কিন্তু তখন লা লিগায় একক রাজত্ব মেসির। তবে রোনালদো ঠিকই মেসির রাজত্বে ভাগ বসিয়েছেন, মেসির অর্জনকে স্পর্শ করেছেন, জিতেছেন তার থেকেও বেশি কিছু।
এ দশকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। রিয়াল মাদ্রিদকে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়েছেন। যে চারবার মাদ্রিদ এই শিরোপা জিতেছে, সেই কয়বার রোনালদো ছিলেন প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোলদাতা। তাই এ দশকে ৬ বার চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ গোল দেয়া এই পর্তুগিজকে এই দশকের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা বললে কোনো ভুল হবে না।
এমন কোনো ট্রফি নেই যা রোনালদো জেতেননি। মেসির মতো আক্ষেপ তার নেই। পর্তুগালের হয়ে ইউরো জিতেছেন, সাথে ন্যাশন্স লিগও। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পাশাপাশি লা লিগা রোনালদো জিতেছেন দুবার। জুভেন্টাসে পাড়ি জমিয়ে সেখানের লিগ জেতার স্বাদও ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের আলমারিও ভর্তি। এ দশকে ফিফার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন ৪ বার , উয়েফা সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন ৩ বার।
এছাড়াও, বিশেষভাবে উল্লেখ করা উচিত লুইস সুয়ারেজ, ডেভিস সিলভা, জেরার্ড পিকে, টনি ক্রুস, সার্জিও বুসকেটস ও ভার্জিল ভ্যান ডাইকের নাম। তবে এই ঐতিহাসিক দশক স্বর্ণাক্ষরে নামাঙ্কিত থাকবে মেসি ও রোনালদো নামক দুই অতিমানবের জন্য। দীর্ঘ ১৫ বছর তারা দুজন ফুটবল বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছে। আর তারা তাদের ক্যারিয়ারের রঙিন সময় পার করেছে গত দশকেই। সর্বকালের সেরা এই দুজনের পারফরম্যান্স, ব্যক্তিগত অর্জনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের এমন উদাহরণ ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্ব উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছে। আর, হয়তো এটাই শেষ।