“রড মার্শের চলে যাওয়াতে আমি দুঃখভারাক্রান্ত। তিনি ছিলেন ক্রিকেটের একজন কিংবদন্তী আর অনেক তরুণ ছেলেমেয়ের কাছে অনুপ্রেরণা। রড ক্রিকেটকে অসম্ভব ভালোবাসতেন আর অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডকে তিনি দিয়েছেনও অনেক। রডের পরিবারের প্রতি আমার অনেক অনেক ভালবাসা। রেস্ট ইন পিস, বন্ধু।”
হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবার আগে এটাই ছিল শেন ওয়ার্নের শেষ টুইট। আমেরিকান অভিনেত্রী জুলিয়েট লুইসের সেই বিখ্যাত উক্তিটা মনে আছে?
“সবচেয়ে সাহসী যে কাজটা আমি আমার জীবদ্দশায় করেছি, সেটা হলো আমি একদিন মারা যাব জেনেও আমার জীবনটা চালিয়ে নিয়ে গেছি।”
লুইস খুব একটা ভুল বলেননি। জন্মিলে মরিতে হইবে, অমর কে কোথা কবে। আমরা সবাই জানি, এই ভূলোক ছেড়ে একদিন আমাদের বিদায় নিতে হবে। জানতেন শেন ওয়ার্ন নিজেও, কিন্তু এতটাও কি জানতেন যে বন্ধু রডনি মার্শের মৃত্যুসংবাদে শোক জানানোর কয়েক ঘন্টা পরই তাকেও ধরতে হবে মার্শেরই পথ, যে পথ কোথায় শেষ হয়েছে কেউ জানে না?
নব্বই দশকে এই দেশে শেন ওয়ার্নের বোলিং স্টাইল নকল করেনি এমন কিশোর খুঁজে পাওয়া হবে ভার। শেন ওয়ার্ন বিদায় নিয়েছেন, রেখে গেছেন একগাদা স্মৃতি। পার্থের সেই ডিসেম্বরের কথা মনে আছে? ২০০৬ সালের কথা, স্মৃতির পাতায় ধুলো পড়ে গেলে আপনাকে দোষ দেওয়া যায়না। সদ্য তখন বারুদে অ্যাশেজ সিরিজ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা নিজেদের মধ্যে হাত মেলাচ্ছেন, মেতে উঠছেন আনন্দে। আর তখন যেমনটা হতো আরকি, অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না। শেন ওয়ার্ন তখন রীতি ভেঙে এগিয়ে গেলেন ইংল্যান্ডের দিকে। পরাজিতদেরও যে মাঠে যোগ্য সম্মান থাকতে পারে, সবাইকে দেখিয়ে দিলেন তিনি।
সেই সিরিজের পরের টেস্টের দিকেও ফিরে তাকানো যাক। ম্যাচ শেষে উইজডেনের লেখক মাইক আথারটনের সাথে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা ছিল ওয়ার্নের। আথারটনও তাড়া দিচ্ছিলেন ওয়ার্নকে, কারণ ওয়ার্নকে নিয়ে একটু পরই সম্প্রচারে যাওয়ার কথা ছিল তার, মিডিয়ার ভাষাতে যেটাকে বলে ‘অন এয়ার’। আর তখনই ওয়ার্ন যেটা করলেন সেটা আথারটনের মুখেই শোনা যাক:
“ওয়ার্ন আমার সাথেই হাঁটতে শুরু করল, এরপর হঠাৎ করেই ও থেমে গেল। আমি দেখলাম অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ম্যাচ-পরবর্তী প্রশ্নোত্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওয়ার্ন ওখানে মাথার ক্যাপ খুলে দাঁড়িয়ে পড়ল, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফ্লিনটফের কথা শুনল। এরপর ফ্লিনটফের প্রেস কনফারেন্স শেষে আবার আমার সাথে হাঁটতে শুরু করল।”
ক্রিকেটের যেকোনো কিছুর প্রতি ওয়ার্নের এতটাই আগ্রহ ছিল। এই খেলাটাকেই তিনি ভালবাসতেন, সম্মান করতেন, একই আচরণ ছিল তাদের প্রতিও, যারা এই খেলাটাকে খেলে। মাইকেল ভনও তাই নিজের বই ‘আ ইয়ার ইন দ্য সান’-এ ওয়ার্নকে নিয়ে লিখে ফেলেন,
“ওয়ার্নকে মোকাবিলা করা দারুণ ছিল, কারণ ও সম্মান দিতে জানে। আপনি যদি ওর বিপক্ষে ভাল খেলেন, তাহলে ও আপনাকে অসম্মান করবে না। সে শুধু আপনাকে বলবে ‘পারলে মারো’। আর যদি আপনি পারেন, তাহলে ম্যাচ শেষে ও নিজেই এসে বলবে, ‘দারুণ খেলেছ।”
তবে ওয়ার্নকে নিয়ে কিন্তু কানাঘুষাও কম নেই। কোথাও কোথাও তাকে দৃশ্যায়ণ করা হয়েছে মারমুখী রূপে। মাইকেল ভন ভুলে যাননি সেসব কথাও। নিজের বইতেই তিনি লিখেছেন,
“এটা সত্যি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসবের ব্যত্যয় ঘটেছে। ২০০৬-২০০৭ সিরিজে যে আচরণ তিনি করেছেন, তার সাথে ১৯৯৭-এর ট্রেন্টব্রিজের ব্যালকনিতে তার অভব্য উদযাপনকে মেলানো যায় না। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, ওয়ার্ন কখনো ভুলে যান না, তিনি কী ছিলেন আর এখন কোথায় আছেন।”
ওয়ার্নের মতোই আমরাও ভুলে যাই না, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে কী বিপ্লবই না ওয়ার্ন এনে দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার লেগ-স্পিন সংস্কৃতির দিকে যদি তাকান, তাহলে ওয়ার্ন আসার আগে আর পরে সেখানে একটা বিরাট পরিবর্তন দেখতে পাবেন। গ্যাবা-মেলবোর্নের সবুজ ঘাসে কব্জির মোচড় দেখানোর সাহস এখনকার অস্ট্রেলিয়ান লেগ-স্পিনারেরা পেয়েছেন ঐ ওয়ার্নকে দেখেই।
তবে যেকোনো সিরিজের আগে ওয়ার্ন কিন্তু একেবারে হাতিঘোড়া কিছু করে ফেলার কথা ভাবতেন না। ওয়ার্নের সিগনেচার ডেলিভারি মাত্র তিনটে – ইংলিশ বোসানকেটের আবিষ্কার করা গুগলি, ক্লারি গ্রিমেটের ফ্লিপার, আর ট্রেন ভ্রমণে আপেল হাতে নিয়ে রিচি বেনোর শেখা ঐ দুর্দান্ত ডেলিভারিটা – স্লাইডার। হ্যাঁ, একইসাথে একদম পুরোদস্তুর লেগ-স্পিনার আর টপ স্পিনারের মতো গুগলি, ফ্লিপার, আর স্লাইডার তিনি করতে পারতেন প্রবল দক্ষতার সাথে।
এখানে একটা মজার গল্প বলে নিই। লেগ স্পিনের জনক বলা হয় যে বোসানকেটকে, তিনি এটা প্রথম চেষ্টা করেছিলেন টেনিস বল নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় খেলা ‘টুইস্টি-টস্টি’তে তিনি হাতের মোচড়ে এই ডেলিভারিটা প্রথম করে ফেলেন। ওয়ার্নকে অবশ্য প্রথম করতে হয়নি, ওয়ার্ন আসার আগে বরং ক্রিকেট পেয়ে গেছে অনেক অনেক লেগ স্পিনার। তবে ওয়ার্নের প্রথমবারের লেগ স্পিন চেষ্টা করার জায়গাটাও কিন্তু ক্রিকেট নয়, ওটা ছিল একটা বিলিয়ার্ড টেবিল।
ওয়ার্ন লেগ-স্পিন শিখেছিলেন একটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে। ওয়ার্নের শেখা ঐ লেগ-স্পিন দিয়ে তিনি এরপর যে কতশত স্মৃতির জন্ম দিয়েছেন, তার জুড়ি মেলা ভার। ১৯৯৩ সালে কার্ভিং ও ডিপিং দিয়ে মাইক আথারটনের স্ট্যাম্প ভাঙার ডেলিভারিটার কথা আপনি ভাবতে পারেন, কিংবা মনে করতে পারেন ১৯৯৪ সালে ব্রিসবেনে অ্যালেক স্টুয়ার্টকে বোকা বানানো সেই ফ্লিপারটার কথা। আবার ওয়ার্নের মহত্ত্ব ভাবতে গেলে যদি আপনার স্মৃতির কোণে ডানা মেলে মেলবোর্নে ডেভন ম্যালকমকে ফেরানো ডেলিভারিতে হ্যাটট্রিকের কোটা পূরণের কথা, অথবা ২০০৬ সালে অ্যাডিলেডে ম্যাথ্যু হগার্ডের ডিফেন্স গলে ঢুকে যাওয়ার সেই ডেলিভারিটার কথা, তাহলেও আপনাকে দোষ দেওয়া যাবে না। এসব যদি ভাবতে না-ও চান, তাহলে ২০০৫ সালের সেই ডেলিভারিটার কথা মনে আছে? স্লাইডারে ইয়ান বেলকে পরাস্ত করার পর কি কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতোই না দাঁড়িয়ে ছিলেন বেল! তবে বেলের আর কী দোষ? এটাই তো ওয়ার্ন! যে ওয়ার্নের জন্যে ডেভিড লয়েড নিজের দলে ডেকে আনেন পিটার ফিলপটকে, উদ্দেশ্য একটাই: ওয়ার্নকে যদি খেলতে পারে তার দলের শিষ্যরা!
তবে নক্ষত্রদেরও মাঝে মাঝে ফুরিয়ে যেতে হয়, হঠাৎ পাওয়া ধাক্কাতেও মাঝেমধ্যে থেমে যেতে হয় আমাদের। সেরকমই একটা ধাক্কা এসেছিল ওয়ার্নের জীবনেও। নাহ, অনাকাঙ্খিত কোনো স্ক্যান্ডালে তাকে থমকে যেতে হয়নি, থমতে যেতে হয়নি ফর্মহীনতার দোহাই দিয়েও। দর্পণ কবীরের সেই কথাটা ভুলে যাবেন না,
“বসন্ত নয়, আমার দরজায় প্রথম কড়া নেড়েছিল অবহেলা।”
ওয়ার্নের ক্ষেত্রে অবশ্য প্রথম হবে না, বরং বলা ভালো, বসন্তের মাঝেই ওয়ার্নের দরজায় একদিন কড়া নাড়ে ইনজুরি! সেই ইনজুরিতে কাঁধের অস্ত্রোপচারের পর ওয়ার্ন ফ্লিপার ছোঁড়া কমিয়ে দিলেন, স্লাইডার আর লেগ-স্পিনের ওপর ভরসা বাড়িয়ে দিলেন। ইনজুরিটা ওয়ার্নকে এতটাই ভুগিয়েছিল যে একটা দীর্ঘ সময় ওয়ার্ন মাঠে কোন ফ্লিপার ডেলিভারিই করেননি। তবে তিনি যে ওয়ার্ন, ফিনিক্স পাখির মতোই ছাই থেকে বেঁচে উঠতে হবে তাকে। সেটা তিনি পেরেছিলেনও। এমসিজিতে নিজের করা শেষ ডিসমিসালে সাজিদ মাহমুদকে ফেরানো ডেলিভারিটা অন্তত সেটাই প্রমাণ করে – ফ্লিপার হারানো ওয়ার্ন তা আবারও ফিরে পেয়েছিলেন একসময়!
এক সময়ের গল্প বলি এবার। ওয়ার্ন তখন নিজের স্টক বলে দক্ষতা অর্জন করে নিয়েছেন। কিন্তু নানাবিধ ভ্যারিয়েশন শিখলে তো হবে না, ঐ ভ্যারিয়েশনটা কোথায় ব্যবহার করতে হবে, সেটাও তো জানতে হবে। ওয়ার্ন সেটা জেনেছিলেন কীভাবে?
কীভাবে না বলে অবশ্য কার থেকে বলা ভালো। স্টক বলে দক্ষতা অর্জনের পর ওয়ার্ন ছুটে গেছিলেন ববি সিম্পসন ও অ্যালান বোর্ডারের কাছে। সেখানে তিনি নিজের ট্যাকটিক্সে একটা পরিবর্তন আনেন, আর সেটাই পরের এক দশকে তাকে ডানহাতি ব্যাটারদের সামনে মূর্তিমান আতঙ্ক বানানোর জন্যে যথেষ্ট ছিল।
ওয়ার্ন সবসময় আক্রমণাত্মক বল করতে চাইতেন। স্পিনে মিডল আর অফ-স্ট্যাম্পে ট্র্যাডিশনাল ডেলিভারি করাটা তার জন্যে ছিল অপচয়। কারণ ওগুলো তো সোজা স্ট্যাম্পে আঘাত করে না। ওয়ার্ন তাই লেগ স্ট্যাম্প আর মিডল স্ট্যাম্পে বল করতে চাইতেন। অন্তত ওগুলোতে ব্যাটারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ ছিল। আর পুরো জীবনটা যার জন্যে চ্যালেঞ্জে ভরপুর ছিল, তার কাছে বাইশ গজ আরেকটা চ্যালেঞ্জ হবে, এ তো অনুমেয়ই।
ওয়ার্ন আসলে কী চাইতেন? ওয়ার্ন চাইতেন ব্যাটাররা তার বল খেলার আগে অন্তত নিজেদের টেকনিক নিয়ে ভাবুক। ব্যাটাররা কিন্তু এটা ভাবতও। সেলিম মালিকের কথাই ধরা যাক। পাকিস্তানি এই ব্যাটার বুদ্ধিমান ছিলেন, আর তাই তার সাহস ছিল তিন স্ট্যাম্প ছেড়ে দিয়ে ওয়ার্নের বল মুখোমুখি হওয়ার। সেখানে যে তিনি একেবারে ব্যর্থ ছিলেন, এমনটাও বলা যাবে না। আবার কেভিন পিটারসেনের চাইতে কোনো ডানহাতি ব্যাটার ওয়ার্নকে ভালভাবে খেলতে পেরেছিলেন কি না, সেটাও আপনাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হতে হবে। পিটারসেনই নিজের ড্রিফট পরিবর্তন করে ওয়ার্নকে ভালোভাবে খেলতে পারতেন। আর বাকি ডানহাতিদের জন্যে ওয়ার্ন ছিলেন এক আতঙ্কের নাম।
আর এই ‘আতঙ্ক’ ছড়ানো মানুষটাই কিন্তু বেশ আয়েশিও ছিলেন। ইয়ান চ্যাপেলের সাথে ওয়ার্নের সেই ঘটনাটা বলা যাক। ম্যাচের আগে তখন ৪৫ মিনিটের ফিল্ডিংয়ের ফিটনেস ড্রিল করতে হত। এমনই এক ম্যাচের আগে যখন ওয়ার্নকে বলা হচ্ছে ফিটনেস ড্রিলের কথা, ওয়ার্ন ইয়ান চ্যাপেলকে বলে ফেলেন,
“এসব ৪৫ মিনিটের স্টুপিড ড্রিল কেন করতে হবে আমাকে? আমাকে যেটা করতে হবে, সেটা হলো নেটে কিছু বল করা, আর এরপর ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়ে চা খেতে খেতে আজ কাদের বিপক্ষে বল করব সেটা ভাবা!”
ওয়ার্ন ছিলেন এতটাই আয়েশি। ওয়ার্নকে চাইলে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায়। তিনি ক্রিকেটের এক অমোঘ চরিত্র। স্বয়ং মাইকেল ভন বই লিখে যার আচরণের প্রশংসা করেন, সেই ওয়ার্ন অবসরের পরেই স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে যান, জরিমানা গোণেন। ওয়ার্নকে আসলে সংজ্ঞায়িত করার দরকার হয় না। তিনি ভয়ংকর কিন্তু সুন্দর, আয়েশি কিন্তু বিপ্লবী। ওয়ার্ন আসলে শুধুই শেন কীথ ওয়ার্নই!
সংখ্যায় সংখ্যায় শেন ওয়ার্ন
১,০০১ – আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেন ওয়ার্নের উইকেটের সংখ্যা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র দুইজন বোলারের এক হাজারের বেশি ক্যারিয়ার উইকেট আছে। একজন এই শেন ওয়ার্ন, আরেকজন মুত্তিয়া মুরালিধরন (১,৩৪৭)। তবে ওয়ার্ন তার এই মাইলফলক অর্জন করেন একদম শেষ ম্যাচে গিয়ে, ২০০৭ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের সাথে সিরিজের শেষ টেস্টে।
৭০৮ – টেস্ট ক্রিকেটে ওয়ার্নের উইকেটের সংখ্যা। সাদা পোশাকে ওয়ার্নের চেয়ে বেশি উইকেট আছে মাত্র আর একজনের – মুত্তিয়া মুরালিধরন। ৮০০ উইকেট নিয়ে প্রথম স্থানেই আছেন তিনি।
৩৭ – টেস্ট ক্রিকেটে ওয়ার্নের ইনিংসে পাঁচ উইকেটের সংখ্যা। এখানেও ওয়ার্নের আগে আছেন মাত্র একজনই। নামটা অনুমিতই, মুত্তিয়া মুরালিধরন। এছাড়াও ওয়ার্নের ঝুলিতে আছে দশ উইকেট নেওয়ার মাইলফলকও।
২১ – শেন ওয়ার্নের ‘কট অ্যান্ড বোল্ড’ ডিসমিসালের সংখ্যা। এখানে তিনি ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সাথে আছেন তিন নম্বরে। ওয়ার্ন আর ভেট্টোরির আগের দু’জন হলেন অনিল কুম্বলে এবং মুরালিধরন।
১,৭৬১ – টেস্ট ক্রিকেটে ওয়ার্নের করা মেইডেন ওভারের সংখ্যা। এখানেও তিনি পিছিয়ে আছেন একজনের চাইতেই। তিনি আর কেউ নন, টেস্ট ক্রিকেটে ১,৭৯৪ মেইডেন ওভার করা মুরালিধরন।
৮ – ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপ টাউন টেস্টে ওয়ার্নের উইকেটের সংখ্যা। এটাই নিজের খেলা শততম টেস্ট ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। তবে শততম টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা আছে মুরালিধরনের ঝুলিতে। ২০০৬ সালে চট্টগ্রামে নিজের খেলা শততম টেস্টে তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট।
১৯৫ – অ্যশেজে নেওয়া ওয়ার্নের উইকেট সংখ্যা। এখানে অবশ্য ওয়ার্নের ধারেকাছেও কেউ নেই। তার কাছাকাছি আছে কেবল ১৫৭ উইকেট নেওয়া গ্লেন ম্যাকগ্রা, তাও কি না ওয়ার্নের চাইতে ৩৮ উইকেট পেছনে।
১৩৮ – টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে নেওয়া ওয়ার্নের উইকেট সংখ্যা। এটাই টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। ওয়ার্নের পর এ রেকর্ডে আছেন যথাক্রমে ১০৬ উইকেট নেওয়া মুরালিধরন ও ১০৩ উইকেট নেওয়া ম্যাকগ্রা।
১০২ – শূন্য রানে ফেরানো ওয়ার্নের ঝুলিতে থাকা ব্যাটারের সংখ্যা। ওয়ার্নের আগে এ রেকর্ডে আছেন কেবল ১০৪ উইকেট নেওয়া ম্যাকগ্রা।
৯৬ – ২০০৫ সালে টেস্টে নেওয়া ওয়ার্নের উইকেটের সংখ্যা। এটাই এখন অব্দি এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। এ বছর ওয়ার্ন ভেঙেছিলেন ১৯৮১ সালে ৮৫ উইকেট নেওয়া ডেনিস লিলির ২৪ বছরের রেকর্ড।
৪০ – ২০০৫ সালের অ্যাশেজে নেওয়া ওয়ার্নারের উইকেটের সংখ্যা। পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজে এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। এক্ষেত্রে ওয়ার্নারের আগে আছেন কেবল ১৯৫৬ সালে ৪৯ উইকেট নেওয়া জিম লেকার।
১,৪৪০ – টেস্টে ২০০ উইকেট নিতে ওয়ার্নারের যে কয়দিন লেগেছে। এত কম সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে কেউ আর ২০০ উইকেট নেওয়ার মাইলফলক ছুঁতে পারেনি। জানুয়ারি ২, ১৯৯২ সালে অভিষিক্ত ওয়ার্ন ১৯৯৫ এর ১১ ডিসেম্বরই এই রেকর্ড গড়ে ফেলেন।
২,১৯৬ – টেস্টে ৩০০ উইকেট নিতে ওয়ার্নারের যে কয়দিন লেগেছে। এত কম সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে কেউ আর ২০০ উইকেট নেওয়ার মাইলফলক ছুঁতে পারেনি। ১৯৯৮ সালের ৫ জানুয়ারি এই রেকর্ড গড়ে ফেলেন।
২৮ – টেস্টে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়ার সময় ওয়ার্নের বয়স (২৮ বছর ১১৪ দিন)। এটা সবচেয়ে কম বয়সে ৩০০ টেস্ট উইকেট নেওয়ার রেকর্ডের তালিকায় থাকবে দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রথম অবস্থানে কপিল দেব তার ২৮ তম জন্মদিনের পরদিনই ৩০০ উইকেট নিয়েছিলেন।
১২৫ – টেস্টে ওয়ার্নের ক্যাচের সংখ্যা। এই রেকর্ডের সময় তিনি পেরিয়ে যান ইয়ান বোথামকে, যার ১০০ ক্যাচ ও ৩০০ উইকেট নেওয়ার ক্যারিয়ার ডাবল আছে।
১৭ – টেস্ট ক্রিকেটে নেওয়া ম্যান অফ দ্য ম্যাচের সংখ্যা। এটা এই ফরম্যাটে যৌথভাবে ওয়াসিম আকরামের সাথে সবচেয়ে বেশি ম্যাচসেরার পুরস্কার নেওয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। এ তালিকায় উপরের দিকে আছে মুরালিধরন (১৯) ও জ্যাক ক্যালিস (২৩)।
৩,১৫৪ – টেস্ট ক্রিকেটে করা ওয়ার্নের রানের সংখ্যা। এটাই টেস্ট ক্রিকেটে কোনো সেঞ্চুরি না করেই সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড।
২৯৩ – ওয়ানডে ক্রিকেটে নেওয়ার ওয়ার্নের উইকেটসংখ্যা। ব্রেট লি (৩৮০) ও ম্যাকগ্রা’র (৩৮১) পর এটাই সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড।