ইংল্যান্ডের মাটিতে জয় পাওয়া সফরকারী যেকোনো দলের জন্যই কঠিন। উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য সেটা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের পূর্বের রেকর্ড খুব একটা ভালো না হলেও আসন্ন পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজকে সামনে রেখে প্রস্তুতি, পরিকল্পনা সবকিছু ভালোভাবেই সেরে নিয়েছে ভারত দল।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেতে হলে ভারতকে এই ১৫টি দিক ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করতে হবে।
১. ক্যাচ
ভারতের হয়ে ২০১৩-১৪ মৌসুম থেকে নতুন ক্রিকেটাররা স্লিপে ফিল্ডিং করছেন। দ্রাবিড়, লক্ষ্মণদের পর তারাই এই গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ফিল্ডিং করছেন। গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার আগে গত চার বছরে ভারতীয় পেসারদের বলে স্লিপের ফিল্ডারদের হাত থেকে ৪৫টি ক্যাচ ড্রপড হয়েছে। বিপরীতে তারা ৩২টি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলো।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার কেশাভ মহারাজের ক্যাচ ড্রপ করেছিলো ভারত। শেষপর্যন্ত মহারাজ ৩৫ রানের ইনিংস খেলে রান আউট হন। লো স্কোরিং টেস্ট ম্যাচে এই ৩৫ রান অনেক পার্থক্য গড়ে দিয়েছিলো।
সিরিজের শেষ টেস্ট ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পেয়েছিলো ভারত। ঐ ম্যাচ স্লিপে ভারতীয় ফিল্ডাররা একটি ক্যাচও ড্রপ করেনি। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডাররা বিরাট কোহলির দুটি ক্যাচ ড্রপ করেছেন।
২. মুরালি বিজয় এবং চেতেশ্বর পূজারা
আধুনিক ক্রিকেটের ব্যাটসম্যানরা খুব বেশি রক্ষণাত্মকভাবে খেলতে পছন্দ করেন না। কিন্তু বিজয় এবং পূজারা এদিক দিয়ে ব্যতিক্রম। তারা রক্ষণাত্মক খেলাই বেশি পছন্দ করেন। তাদের প্রথম কাজ হলো বিরাট কোহলি এবং মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদেরকে নতুন বল মোকাবেলা করা থেকে বাঁচানো।
কিন্তু তারা সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রথম দুই টেস্টে বেশকিছু স্বভাব-বিরোধী শট খেলেছেন। এরপর তৃতীয় টেস্টে তারা নিজেদের স্বাভাবিক খেলা চালু রেখেছেন এবং ভারত জয় তুলে নিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে মুরালি বিজয় ইনিংসের প্রথম ৫০ বলের মধ্যে ৩৫.৫৯% বল ছেড়ে খেলেছেন এবং ২০.৩৪% বলে আক্রমণাত্মক শট খেলেছেন।
৩. ফর্মের বিবেচনায় একাদশ নির্বাচন
বিরাট কোহলি এবং রবি শাস্ত্রী সাম্প্রতিক ফর্মের কথা মাথায় রেখে একাদশ নির্বাচন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও এই পদ্ধতিতে দল বাছাই করেছিলেন তারা। যার ফলে রোহিত শর্মা প্রথম দুই টেস্ট একাদশে থাকলেও আজিঙ্কিয়া রাহানে দলের বাহিরে ছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটাররা খুব বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেননি। তাই দেশের বাহিরে দল নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তেই করতে হবে কোচ, অধিনায়ককে। একাদশ নির্বাচনে ভুল করলে তা শোধরানোর উপায় নেই, তাই এই জায়গাতে স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৪. স্পিনারদের উপর আস্থা রাখতে হবে
ঘরের মাটিতে ভারতের প্রধান শক্তি তাদের স্পিনাররা। গত কয়েক বছর ধরে নিজেদের কাজটা ভালোভাবেই সম্পূর্ণ করেছেন জাদেজা এবং আশ্বিন। উপমহাদেশের বাহিরে স্পিনাররা উইকেট থেকে খুব একটা বাড়তি সুবিধা পায় না। এতে করে অনেক সময় দেখা যায় পেসারদের নিয়ে পরিকল্পনা করে উপমহাদেশের দলগুলো।
কিন্তু এই শতকে বিদেশের মাটিতে ভারতের জয় পাওয়া ম্যাচ গুলোতে বেশি অবদান রেখেছে তাদের স্পিনাররা। ইংল্যান্ডের মাটিতে শেষ তিনটি জয়ের মধ্যে একটি স্পিনারদের হাত ধরে এসেছে।
বিদেশের মাটিতে ভারতের খেলার পদ্ধতি সাধারণত দুই রকমের। পেস সহায়ক উইকেটে লো স্কোরিং ম্যাচ কিংবা স্কোরবোর্ডে ভালো সংগ্রহ জমা করে দুইপ্রান্ত থেকে স্পিনারদেরকে লেলিয়ে দেওয়া।
ভারত বনাম ইংল্যান্ডের টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে। অন্যসব মাসের তুলনায় এই সময়ে ইংলিশ কন্ডিশনে স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পায়। বেশিরভাগ সময় ভারত তাদের একাদশে একজন কব্জির স্পিনার এবং একজন ফিঙ্গার স্পিনার রাখে। এবং রবীচন্দ্রন আশ্বিন অলরাউন্ডার হিসাবে দলে জায়গা করে নেন। ফিঙ্গার স্পিনার হিসাবে রবীন্দ্র জাদেজা এবং কব্জির স্পিনার হিসাবে কুলদ্বীপ জাদব সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন।
৫. আজিঙ্কিয়া রাহানে
ইংল্যান্ডে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে রাহানের ব্যাটিং গড় ৪৬.১১। বর্তমান দলে তারচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় আছে শুধুমাত্র বিরাট কোহলির। ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতের শেষ দুটি টেস্ট জয়েও বড় অবদান রেখেছেন তিনি।
২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে ভারত মাত্র ১৪৫ রান তুলতেই সাত উইকেট হারিয়ে বসে। তারপর ভারতকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলেন রাহানে। লর্ডসের সবুজ উইকেটে বোলারদের সাথে জুটি বেঁধে ১৫৪ বলে ১৫টি চার এবং একটি ছয়ের মারে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন রাহানে। শেষপর্যন্ত ইংল্যান্ডকে ৯৫ রানে পরাজিত করেছিল ভারত।
বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জোহানসবার্গ টেস্টেও প্রথম ইনিংসে দলীয় সর্বোচ্চ ৪৮ রানের ইনিংস খেলেন রাহানে। সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে দলে ছিলেননা তিনি। শেষ টেস্টে দলে ফিরেই দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনা করে তাকে দলের বাইরে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
৬. উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে রান
মহেন্দ্র সিং ধোনির অবসরের পর টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের হয়ে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন ঋধিমান সাহা। ঘরের মাঠে ব্যাট হাতে আশানুরূপ পারফর্ম করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তিনি ছিলেন নিষ্প্রভ। তার ইনজুরির কারণে সুযোগ পাওয়া পার্থিব প্যাটেলও নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন।
টেস্ট ক্রিকেটে এখনও ব্যাটসম্যান ধোনির জায়গা কেউ দখল করতে পারেনি। তার অবসরের পর অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ভারতের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং গড় মাত্র ১২.৩৭!
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসাবে ডাক পেয়েছেন দীনেশ কার্তিক এবং রিশাভ পান্ট। তারা ব্যাট হাতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভালো পারফর্ম করছেন। ইংল্যান্ডের মাটিতেও তাদের ফর্ম অটুট থাকুক, এমনটাই আশা করছে ভারত।
৭. বিরাট কোহলি
বিরাট কোহলি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আটটি টেস্ট ম্যাচ খেলে পাঁচটি শতকের সাহায্যে ৬২.০০ ব্যাটিং গড়ে ৯৯২ রান করেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পাঁচটি টেস্ট ম্যাচে দুটি শতক এবং দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫৫.৮০ ব্যাটিং গড়ে ৫৫৮ রান করেছেন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এখনপর্যন্ত দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন কোহলি। দুই ম্যাচে ৭১.৩৩ ব্যাটিং গড়ে তিনি ২১৪ রান করেছেন।
উপমহাদেশের বাহিরে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো অপরিচিত কন্ডিশনেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন কোহলি। কিন্তু ইংল্যান্ডের মাটিতে নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিং করতে পারেননি তিনি। ইংল্যান্ডের মাটিতে পাঁচটি টেস্টে মাত্র ১৩.৪০ ব্যাটিং গড়ে ১৩৪ রান করেছেন তিনি।
সিরিজে ইংলিশ বোলারদের পাশাপাশি ইংলিশ মিডিয়ার প্রেশারও সামলাতে হবে তাকে। ২০০২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আগে ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার রোনালডো ইনজুরিতে পড়েন। সেইসময় সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলো তার ইনজুরি। তাই তিনি অদ্ভুত হেয়ার কাটে সবার সামনে আসেন। এবং মিডিয়া তার অদ্ভুত হেয়ার কাট নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিরাট কোহলি অদ্ভুত হেয়ার কাট দিয়ে মিডিয়ার আলোচনা অন্যদিকে না নিতে পারলেও ব্যাট হাতে ঠিকই মিডিয়ার চাপ সামলাতে পারবেন। এইজন্য তাকে ফিট থাকতে হবে।
বিরাট কোহলি ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। সেইসাথে আইপিএল নিয়েও ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় তাকে। তাই তার ফিট থাকাটা জরুরি।
বিরাট কোহলি ইংল্যান্ডের মাটিতে শেষ সফরে ছয়বার উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। অফ স্ট্যাম্পের বাহিরের বল খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে এবং উইকেটরক্ষকদের হাতে বন্দি হতেন তিনি।
বিরাট কোহলি প্রতিটা বল খেলতে পছন্দ করেন। অফ স্ট্যাম্পের বাহিরের বল গুলো ডিফেন্ড না করে ছেড়ে খেলাটাই তার জন্য নিরাপদ। ডিফেন্ড করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লাগার সম্ভাবনা থাকে। যেমনটা গত ইংল্যান্ড সিরিজে হয়েছিলো। কোহলি যদি একবার উইকেটে সেট হয়ে যান, তখন তিনি কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠেন সেটা সবাই জানে।
৮. পেসারদের অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া
ছয় সপ্তাহের মধ্যে ভারত বনাম ইংল্যান্ডের পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ভারতীয় পেসারদের উপমহাদেশের মাটিতে খুব বেশি বল করতে হয়না। দলের হয়ে সিংহভাগ ওভার করেন স্পিনাররা। তাই তাদের জন্য ছয় সপ্তাহে পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ খেলে ফিট থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে ইনজুরির কারণে অনিশ্চিত রয়েছেন প্রধান দুই পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ এবং ভুবেনেশ্বর কুমার। তাই প্রথম কয়েক টেস্টে পেস ডিপার্টমেন্ট সামাল দিবেন ইশান্ত শর্মা, মোহাম্মদ সামি এবং উমেশ যাদব। এরপর ইনজুরি কাটিয়ে সম্পূর্ণ ফিট হয়ে দলে ফিরবেন বুমরাহ এবং ভুবেনেশ্বর, তারা নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্যই তৈরি থাকবেন।
৯. জো রুটকে আটকানো
মিডল অর্ডারে ইংল্যান্ডের ভরসা অধিনায়ক জো রুট। তাকে সহজে রান নিতে দেওয়া যাবেনা। যেমনটা অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজে করেছিলো। জো রুট নিয়মিত রান পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। অ্যাশেজে নয় ইনিংস ব্যাট করে পাঁচটি অর্ধশত রানের ইনিংস খেললেও একটিকেও তিনি শতকে রূপান্তরিত করতে পারেননি।
টেস্ট ক্রিকেটে জো রুটের ১৩টি শতকের মধ্যে ইংল্যান্ড ১০টিতে জয় পেয়েছে এবং বাকি তিনটি টেস্ট ড্র হয়েছে। ইংল্যান্ডের জয় পাওয়া ম্যাচে তার ব্যাটিং গড়ও ঈর্ষণীয়। এখন পর্যন্ত ২৬টি জয়ে ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন জো রুট। এই ২৬ ম্যাচে তিনি ৭৪.৬০ ব্যাটিং গড়ে ২,৮৩৫ রান করেছেন।
ঘরের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ড্র এবং ঘরের বাইরে টানা হারে জো রুট এমনিতেই চাপে আছেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রুটকে ব্যাকফুটে রাখতে পারলেই ভারতের কাজটা তুলনামূলক সহজ হয়ে যাবে।
১০. দর্শকদের সমর্থন
বিশ্বের নানা প্রান্তে ভারতের সমর্থক রয়েছে। তারা বরাবর-ই মাঠে গিয়ে ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করেন। গ্যালারিতে দর্শকদের সমর্থনে ক্রিকেটারদের মনোবল বেড়ে যায়।
বার্মিংহাম এবং লন্ডনে প্রচুর ভারতীয় সমর্থক রয়েছে। ঐ দুই ম্যাচে ভালো খেললে তারা নটিংহ্যাম এবং সাউথাম্পটনেও উড়ে যাবে।
১১. প্রতিপক্ষের স্পিনারদের উইকেট দেওয়া যাবে না
ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আসল পরীক্ষা হয় পেসারদের বিরুদ্ধে। প্রায়শ পেসারদের ঠিকঠাক ভাবে সামাল দিলেও স্পিনারদের সামনে খেই হারিয়ে বসে ব্যাটসম্যানরা।
ইংল্যান্ডের মাটিতে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে মঈন আলী ১৯ উইকেট এবং অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে নাথান লায়ন ২৩জন ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে নিজের শিকারে পরিণত করেছিলেন। তাই শুধুমাত্র পেসারদের নিয়ে পরিকল্পনা করলেই হবেনা, স্পিনারদেরকেও উইকেট দেওয়া যাবে না।
১২. ইংল্যান্ডের তৃতীয় পেসারকে আক্রমণ করা
ইংল্যান্ডের দুই অভিজ্ঞ পেসার জেমস অ্যান্ডারসন এবং স্টুয়ার্ট ব্রড এখন আর তরুণ নেই। তাই তারা একটানা বল করে যেতে পারবেননা। তাদেরকে দেখেশুনে খেলে তৃতীয় পেসারকে আক্রমণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ঘরের মাটিতে এখনও ইংল্যান্ডের ভরসা এই দুই পেসার। ২০১৩ সালের পর থেকে অ্যান্ডারসনের বোলিং গড় এবং স্ট্রাইক রেইট সবচেয়ে ভালো, এরপরে আছেন ক্রিস ওকস এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছেন ব্রড।
১৩. ছয়জন ব্যাটসম্যান নিয়ে একাদশ সাজানো
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচে ভারতের একাদশে অলরাউন্ডার হিসাবে ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু তার কয়েক ওভার বোলিংয়ের চেয়ে স্পেশালিষ্ট একজন ব্যাটসম্যান দলে থাকলে সবুজ উইকেটে দলের ব্যাটিং গভীরতা বাড়তো। ঐ ম্যাচে পান্ডিয়া আট ওভার বল করেছেন এবং মাত্র ১৬ বল মোকাবেলা করেছিলেন।
গত ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে একই পজিশনে খেলেছিলেন স্টুয়ার্ট বিন্নি। হার্দিক পান্ডিয়া অবশ্য বিন্নি থেকে নিজেকে ভালো প্রমাণ করেছেন। তাই হয়তো তার উপরও আস্থা রাখতে পারে নির্বাচকমণ্ডলী। তবে সবুজ উইকেটে ছয়জন স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান না খেলালে বিপদে পড়তে হবে।
১৪. চেতেশ্বর পূজারার ‘রানিং বিটুইন দ্য উইকেট’
নন-স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যানের সাথে পূজারার বোঝাপড়া খুব একটা ভালো নয়। হয়তো তিনি নিজে রান আউট হবেন, নতুবা তার পার্টনারকে রান আউট করবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বশেষ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দুই ইনিংসেই তিনি রান আউটের শিকার হয়েছেন। ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ছয়বার এই তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
১৫. যোগ্য ওপেনার নির্বাচন করা
বীরেন্দ্র শেহওয়াগ অবসর নেওয়ার পর ভারত স্থিতিশীল ওপেনার খুঁজে পায়নি।
মুরালি বিজয়ের দলে থাকা একপ্রকার নিশ্চিত। তার সাথে রাহুল নাকি ধাওয়ান ইনিংস গোড়াপত্তন করবেন, সেটা এখনও ঠিক হয়নি। ধাওয়ানের সাথে এখন পর্যন্ত ৩৯বার ইনিংস উদ্বোধন করে ৪৪.১৮ গড়ে ১,৬৭৯ রান করেছে বিজয়। এশিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাহিরে এই দুুই ওপেনার গড়ে ২৫.৪৫ রান করেছেন।
লোকেশ রাহুলের সাথেও ২০বার ইনিংস উদ্বোধন করেছেন বিজয়। এই ২০ ইনিংসে মাত্র ২৩.৫৫ গড়ে রান করেছেন এই জুটি। এশিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাইরে তা আরও কমে মাত্র ১৮.৮ এ দাঁড়িয়েছে।
ফিচার ইমেজ- Getty Images