Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফুটবল ক্লাবগুলোর ডাকনাম রহস্য

‘রেড ডেভিল’ মানে লাল শয়তান। তবে ফুটবলের পাড় ভক্তদের কাছে রেড ডেভিল মানে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, এরিক ক্যান্টোনা, বেকহামদের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তেমনভাবেই গানার বলতে সবাই এক নামে চেনে আর্সেনালকে। শুধু ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগই নয়, ক্লাবগুলোর ডাকনাম দেখা যায় অন্যান্য লিগগুলোতেও। যেমন জুভেন্টাসকে বলা হয় ‘তুরিনের বুড়ি’, স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনাকে ডাকা হয় ‘কিউল’ বলে। কিন্তু এসব নামের রহস্যই বা কী? চলুন দেখে আসা যাক বিখ্যাত কিছু ক্লাবের ডাকনামের ইতিহাস।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড – রেড ডেভিল

ফুটবল বোদ্ধাদের কাছে ‘রেড ডেভিল’ নামে খ্যাত স্বনামধন্য ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। বেশিরভাগের মতে, এই ডাকনামের উৎপত্তি ঘটেছে ফার্গির আমলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডেভিল মনোভাবের জন্যই। আদতে এই নামের ইতিহাস ঘাটতে হলে আমাদের যেতে হবে আরও পেছনে।

অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, রেড ডেভিল নামের ইতিহাসটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক খেলার সাথে জড়িত। সালফোর্ড রাগবি টিম নামে এক রাগবি দল সর্বপ্রথম এই উপাধি অর্জন করে। ১৯৩৪ সালে ফ্রান্সে খেলতে যাওয়া এই দলের বিধ্বংসী মনোভাব দেখে এক ফরাসি সাংবাদিক তাদের রেড ডেভিল বলে আখ্যায়িত করেন। সেই সময় ইউনাইটেডের নিকনেম ছিলো ‘দ্য হিডেনস’। ১৯৬০ সালে স্যার ম্যাট বাসবির ‘রেড ডেভিল’ নামটি পছন্দ হয়ে যায় এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে নামটি বেশ ভালোভাবেই খাপ খায় বলে তিনি নিজেই ‘রেড ডেভিল’ নামটি ঠিক করেন। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে এই ইংলিশ ক্লাব আনুষ্ঠানিকভাবেই ‘রেড ডেভিল’কে নিজেদের ডাকনাম হিসেবে ঘোষণা করে।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়াও বেলজিয়াম, বেলারুশ ও কঙ্গো জাতীয় ফুটবল দলও এই নামে পরিচিত।

ফার্গুসনের সাথে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাস্কট; Image Source: The Daily Mirror

আর্সেনাল – দ্য গানার

গানার শব্দের আভিধানিক অর্থ গোলন্দাজ। গানার ডাকনামের পাশাপাশি আর্সেনালের লোগোতেও একটি কামানের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই ক্লাবটির সাথে সামরিক ব্যাপারও জড়িত।

মূলত আর্সেনাল ক্লাবটি সর্বপ্রথম গঠিত হয় টেমসের দক্ষিণে অবস্থিত উলউইচে। ১৮৮৬ সালে উলউইচের কিছু ফ্যাক্টরি কর্মী নিয়ে তৈরি হয় এই বিখ্যাত ক্লাবটি। তৎকালীন সময়ে উলউইচে তাঁবু গেঁড়েছিলো সামরিক বাহিনী। এমনকি প্রথম গঠিত দলে কিছু সৈন্য ও খেলেছিলো দলের হয়ে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই দ্য গানার্স নামটি অর্জন করে আর্সেনাল।

গানার নামে খ্যাত লন্ডনের ক্লাব আর্সেনাল; Image Source: Getty Image

লেস্টার সিটি – দ্য ফক্সেস

২০১৪ সালে যখন লেস্টার সিটি অনেকদিন পর আবার প্রিমিয়ার লীগে উত্তীর্ণ হলো তখন অনেকেরই জিজ্ঞাসা ছিলো তাদের কেন ‘দ্যা ফক্সেস’ নামে ডাকা হয়। ২০১৫-তে প্রিমিয়ার লিগ জয়ী এই দলের ডাকনামটি মূলত ক্লাবের উৎপত্তিস্থল থেকেই নেওয়া। লেস্টার সিটি নামের ক্লাবটি গঠিত হয় ইংল্যান্ডের লেস্টারশায়ার নামের এক শহরে। ১৭৫৩ সাল থেকেই ইংল্যান্ডের এই শহরটি শিয়াল শিকারের জন্য জগদ্বিখ্যাত ছিলো। সেই থেকে ১৯২০ সালে ’দ্য ফক্সেস’ নামটি উত্তরাধিকার সূত্রে ব্যবহার শুরু করে লেস্টার সিটি। এমনকি ক্লাবের লোগোতেও রয়েছে একটি শিয়ালের মুখ।

জুভেন্টাস – তুরিনের ওল্ড লেডি

বিয়ানকোনেরি নাম ছাড়াও জুভেন্টাসের আরেক বিখ্যাত ডাকনাম হচ্ছে ওল্ড লেডি। বিয়ানকোনেরি অর্থ সাদা-কালো। ঐতিহাসিক সাদা-কালো জার্সির জন্যই এই নামে ডাকা হয় এই ইতালিয়ান জায়ান্টদের। কিন্তু ওল্ড লেডি নামের রহস্য কী?

ডাকনাম ওল্ড হলেও মজার ব্যাপার হচ্ছে ইতালিয়ান ভাষায় জুভেন্টাস মানে হচ্ছে তরুণ। তবে ক্লাবের এরকম ডাকনামের ইতিহাস লেখা হয়েছে ১৯৩০ সালে। সেই সময় তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দলে না ভিড়িয়ে সবসময় বুড়ো, অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের দিকেই বেশি ঝোঁক ছিলো জুভেন্টাসের। সেই থেকে তাদের নামের সাথে ওল্ড কথাটি যুক্ত হয়ে যায়।

অন্যদিকে লেডি শব্দটি অনেকটা রুপক। এই শব্দটি দিয়ে মূলত সমর্থকদের ক্লাবের প্রতি ভালবাসা বোঝানো হয়েছে। একজন মানুষ তার স্ত্রীকে যেমন ভালবাসে, তেমনি ক্লাবের সমর্থকেরাও জুভেন্টাসকে একইভাবে ভালবাসে।

জুভেন্টাসের জার্সি গায়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো; Image Source: Sportskeeda

বার্সেলোনা – কিউলস / আজুলগ্রানা

কাতালুনিয়ার অন্তর্গত এই ক্লাবটিকে কিউলস নামে অনেকে চিনে থাকে। তবে এই উপাধি পাওয়ার পেছনে বেশ হাস্যকর কাহিনী রয়েছে। কিউলসের আভিধানিক অর্থ যারা পশ্চাৎদেশ দেখায়। এই অদ্ভুত নামের পেছনে দায়ী তৎকালীন সময়ে বার্সেলোনার ছোট আকারের স্টেডিয়াম। সেই সময় বার্সেলোনার স্টেডিয়ামটি এতই ছোট ছিলো যে দর্শকদের জায়গা সংকুলান হতো না। বিশেষ করে যারা শেষ সারিতে বসতো তাদের পশ্চাৎদেশ স্টেডিয়ামের বাইরের লোকজন দেখতে পেতো। সেই থেকে মানুষজন কিউলস বলে ডাকা শুরু করে এই কাতালান ক্লাবটিকে।

কিউলস ছাড়াও আজুলগ্রানা নামে আরেকটি কম জনপ্রিয় নামও রয়েছে বার্সেলোনার। বার্সেলোনার নীল–লাল জার্সিকে বোঝাতে এই নামটি ব্যবহার করা হয়।

ছোট স্টেডিয়ামের জন্যই কিউল নাম জোটে বার্সেলোনার; Image Source: Football Sellecion

রিয়াল মাদ্রিদ – দ্য হোয়াইট / মেরেঙ্গুয়েজ

রিয়াল মাদ্রিদের দুটি ডাকনামই তাদের ঐতিহাসিক সাদা জার্সিকে প্রতিনিধিত্ব করে। ‘দ্য হোয়াইট’ নামে ডাকার পাশাপাশি ‘মেরেঙ্গুয়েজ’ নামেও ডাকা হয় স্প্যানিশ এই ক্লাবটিকে। মেরেঙ্গুয়েজ স্প্যানিশ এক জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। ডিম ও চিনি দিয়ে তৈরি এই মিষ্টান্নটিও দেখতে সাদা।

রিয়াল মাদ্রিদের আরেক নাম মেরেঙ্গুয়েজ; Image Source: Marzana. com

অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ – কলকোনোরোস

মাদ্রিদের আরেক ক্লাব অ্যাটলেটিকোকে সমর্থকেরা ডাকে কলকোনেরোস নামে। স্প্যানিশ ভাষায় এই শব্দটির মানে হচ্ছে তোষক। অ্যাটলেটিকোর লাল-সাদা জার্সি অনেকটা তোষকের ডিজাইনের মতো দেখতে। সেই কারণেই এই অদ্ভুত নামে পরিচিত এই ক্লাবটি।

অ্যাথলেটিক বিলবাও – লায়নস

লায়নস নামে খ্যাত এই ক্লাবটির ডাকনাম ও স্টেডিয়াম নামের পেছনে একটি মিথোলজিক্যাল কাহিনী রয়েছে। সান মেমেস নামের স্টেডিয়ামটি সান মেমেস নামের এক মিথোলজিক্যাল চরিত্র থেকে নেওয়া। বর্ণিত কাহিনী থেকে জানা যায়, ধার্মিক সান মেমেস এবং তার পরিবারের উপর ধর্ম বিরোধীরা অত্যাচার শুরু করে। সেই অত্যাচার থেকে বাঁচতে এক গুহায় আশ্রয় নেয় মেমেস। সেই গুহায় তার সাথে দেখা হয় তিনটি সিংহের। পরবর্তীতে কিছু বছর পর রোমানরা সান মেমেসকে ধরে নিয়ে যায় রোমান কলোসিয়ামে। কলোসিয়ামে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বেই সেখানের সিংহগুলো মাথা নুইয়ে সান মেমেসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।

সেই গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ক্লাবটির স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয় সান মেমেস। আর ক্লাবকে ডাকা হয় দ্য লায়ন্স নামে।

দেপোর্তিভো আলাভেস – বাবাজোরোস

স্প্যানিশ ভাষায় বাবা মানে ফাভা বিনস। আর জোরোস মানে বস্তা। স্পেনের প্রদেশ আলাভা আদিকাল থেকেই ফাভা বিন উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। আর সেই ফাভা বিন থেকেই প্রদেশের ক্লাবটিকে ঢাকা হয় বাবাজোরোস, যার আভিধানিক অর্থ ফাভা বিনের বস্তা।

সেল্টিক – দ্য ভয়েজ

সেল্টিক দর্শকদের একাংশ; Image Source: The Daily Record

১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সেল্টিক ক্লাব সেই সময়েই বোল্ড বয়েজ নামে পরিচিত ছিলো। কিন্তু বোল্ড বয়েজ উচ্চারণে তা অনেকটা ইংলিশদের মতো হয়ে যায় বিধায় এতে পরিবর্তন আনার পক্ষপাতী ছিলেন সেই সময়ের ক্লাব সভাপতি পিজে কিলিয়ান। পরবর্তীতে বোল্ড কথাটি তুলে দিয়ে বয়েজ কথাটিতে আইরিশ টান আনার জন্য বি এর পর একটি এইচ অক্ষর সংযুক্ত করা হয়। আর তাতেই এর উচ্চারণ দাঁড়ায় ভয়েজ। এই ঘটনার পর থেকে সেল্টিক ‘দ্য ভয়েজ’ নামেই বিশ্বে সমাদৃত হয়।

This Bangla article is about the nicknames of famous football clubs. Necessary references are hyperlinked in the article. 

Feature Image : Youtube

Related Articles