প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছেন যেসকল তারকা ফুটবলার

হামেস রদ্রিগেজের কথা মনে আছে ? গত বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলতে এসেই করেছিলেন বাজিমাত। সর্বোচ্চ ৬ গোল  করে জিতে নিয়েছিলেন গোল্ডেন বুটের পুরস্কার। ফলশ্রুতিতে বিশ্বকাপ শেষে শতাব্দীর অন্যতম সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে সুযোগ লাভ করেন। যদিও বিশ্বকাপের আগে বিখ্যাত কিংবা তারকাখ্যাতি কোনোটাই ছিল না হামেসের।

তবে এবারের গল্পটা একটু ভিন্ন। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলবেন একঝাঁক খেলোয়াড়, যারা ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন তারকাখ্যাতি। কে জানে? হয়তো বিশ্বকাপ শেষে এদের কারো হাতেই উঠবে সেরা খেলোয়াড়, সেরা গোলরক্ষক কিংবা সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার।

১. মোহাম্মদ সালাহ (মিশর)

আফ্রিকার দেশ মিশর। পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি মিশরের পিরামিড। সেই সপ্তাশ্চর্যের দেশ মিশরের আরেক আশ্চর্য মোহাম্মদ সালাহ। তার হাত ধরেই বিশ্বকাপ খেলতে ফারাওরা এসেছে রাশিয়ায়। এবারের উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক সার্জিও রামোসের মারাত্মক এক ফাউলের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। বিশ্বকাপে খেলতে না পারার বিষয়ে অনেকটা আশঙ্কা ছিল। তবে ভক্তদের দোয়া আর ভালবাসা ফিরিয়ে এনেছে সালাহকে।

গত ১৫ জুন ছিল সালাহর জন্মদিন। উরুগুয়ের বিপক্ষে সেদিন মাঠে নামে মিশর। তবে পুরোপুরি ফিট না হওয়াতে সে ম্যাচ খেলতে পারেননি সালাহ। ফিরেছেন রাশিয়ার বিপক্ষে। স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৩-১ এ হেরে মিশর বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে। দলের একমাত্র গোলটি আসে সালাহর পা থেকেই। বিশ্বকাপে নিজেদের ৩য় ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় মিশর। সেই ম্যাচেও গোল করেন সালাহ

মোহাম্মদ সালাহ ; Image Source:Metro
মোহাম্মদ সালাহ; Image Source:Metro

২. কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স)

১৯ বছর বয়সী এই ফরাসি ফুটবলার ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন তারকা ফুটবলারের তকমা। মোনাকো থেকে  রিয়াল মাদ্রিদে আসার গুঞ্জন থাকলেও শেষমেষ ধারে যোগ দিয়েছেন ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে, যেখানে তার সতীর্থ এডিসন কাভানি, নেইমার জুনিয়র, দানি আলভেজের মতো তারকা খেলোয়াড়েরা। গত ২১ জুন পেরুর বিপক্ষে করা গোলটি বিশ্বকাপে তার প্রথম গোল। ফলে বিশ্বকাপে গোল করা সবচেয়ে কম বয়সী ফরাসি ফুটবলার এখন কিলিয়ান এমবাপ্পে।

 সতীর্থদের সাথে গোল উদযাপনে কিলিয়ান এমবাপ্পে ; Image Source :France 24
সতীর্থদের সাথে গোল উদযাপনে কিলিয়ান এমবাপ্পে ; Image Source :France 24

৩. ফিলিপ কৌতিনহো (ব্রাজিল)

ফিলিপ কৌতিনহো, ভক্তদের কাছে যিনি পরিচিত ম্যাজিশিয়ান কিংবা জাদুর কোটা নামে। শীতকালীন দলবদলে যোগ দিয়েছেন স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনায়। লিভারপুলের হয়ে খেলেছেন ১৫০ এর বেশি ম্যাচ। তবে নামের পাশে ছিল না কোনো বড় শিরোপা। বার্সেলোনার হয়ে নিজের প্রথম বছরেই জিতেছেন লা লিগা, কোপা ডেলরে ট্রফি। কৌতিনহোর ম্যাজিক চলছে বিশ্বকাপেও। সুইজারল্যান্ড এবং কোস্টারিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচেই করেছেন গোল।

 নেইমার ও ফিলিপ কুতিনহো ;Image Source: ua football
নেইমার ও ফিলিপ কৌতিনহো; Image Source: ua football

৪. হ্যারি কেন (ইংল্যান্ড)

হ্যারি এডওয়ার্ড কেন, ইংল্যান্ড জাতীয় দল এবং ইংলিশ প্রিমিয়াম লিগের দল টটেনহ্যাম হটস্পারের অধিনায়ক। রিজওয়ে রোভারস এর হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা এই ফুটবলারের ছেলেবেলা কেটেছে আর্সেনালের ইয়ুথ ক্লাবে। ২০০৯ সালে টটেনহ্যামে যোগ দিলেও টটেনহ্যামের সিনিয়র দলে সুযোগ পান ২০১৪-১৫ মৌসুমে। ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ মৌসুমে ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়াম লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই তিউনিসিয়ার বিপক্ষে করেছেন জোড়া গোল। পানামার বিপক্ষে করেছেন হ্যাটট্রিক। ফলে গোল্ডেন বুট জয়ের লড়াইয়ে এখন অনেকটাই এগিয়ে হ্যারি কেন।

৫. রাদামেল ফ্যালকাও (কলম্বিয়া)

কী? অবাক হলেন তো? ভাবছেন গত ১১ বছর ধরে কলম্বিয়ার হয়ে খেলা রাদামেল ফ্যালকাওয়ের এটাই প্রথম বিশ্বকাপ কিভাবে?  অবাক হলেও সত্যি, ৩২ রছর বয়সী এই কলম্বিয়ান তারকা ফুটবলারের এটিই প্রথম বিশ্বকাপ। গত বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে মোট ৭টি গোল করেছিলেন ফ্যালকাও। তবে শেষ মুহূর্তে ইঞ্জুরির কারণে বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে জাপানের বিপক্ষে নিজেদের ২য় ম্যাচে করেছেন বিশ্বকাপে নিজের অভিষিক্ত গোল। উল্লেখ্য, কলম্বিয়ার সর্বোচ্চ গোলদাতা ফ্যালকাও।

রামাদাও ফ্যালকাও ; Image Source:Forbes
ফ্যালকাও; Image Source:Forbes

৬. ডেভিড ডি গিয়া (স্পেন)

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই স্প্যানিশ গোলরক্ষক বর্তমান সময়ের সেরা গোলরক্ষকদের একজন। স্পেনের  রাজধানী মাদ্রিদে জন্ম নেওয়া এই গোলকিপার ছোটবেলায় খেলতেন অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের ইয়ুথ ক্লাবে। গত বিশ্বকাপে স্পেনের বিশ্বকাপ দলে ছিলেন দলের ৩য় গোলকিপার হিসেবে। তবে কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি ডি গিয়ার। সেই বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয় স্পেন।

৭. মার্কো অ্যাসেন্সিও (স্পেন)

স্পেন এবং রিয়াল মাদ্রিদের অন্যতম আক্রমণাত্মক  মিডফিল্ডার। বাবা গিলবার্তো অ্যাসেন্সিও ছিলেন একজন ফুটবলার। খুব অল্প বয়সে মাকে হারান অ্যাসেন্সিও। তবে বাবা এবং বড় ভাই যেন তার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নটা নিজেদের হাতেই তুলে নিয়েছিলেন। জিদানের ট্যাকটিস এবং ফরমেশনের ফলে রিয়াল মাদ্রিদের মূল একাদশে সুযোগ খুব কম পেয়েছেন। তবে দ্বিতীয়ার্ধে যতটুকু খেলেছেন, নিজেকে উজার করে দিয়েছেন। রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের ৬,০০০ তম গোলদাতা  মার্কো অ্যাসেন্সিও। জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত কোনো গোল নেই তার। তবে পর্যাপ্ত প্লেয়িং টাইম পেলে স্পেন কিংবা রিয়াল মাদ্রিদকে নিজের শতভাগ দেবেন অ্যাসেন্সিও- এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

৮. রবার্ট লেভানডস্কি (পোলান্ড)

রবার্ট লেভানডস্কিকে ছোট দলের বড় তারকাও বলা যায়। বিশ্বকাপ কিংবা ইউরোতে পোল্যান্ডের সফলতা নেই বললেই চলে। ক্লাব পর্যায়ে খেলেন বুন্দেসলিগার দল বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে। ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ভলসবুর্গের বিপক্ষে ১-০ তে পিছিয়ে ছিল বায়ার্ন মিউনিখ। বদলি হিসেবে নামেন লেভানডস্কি। বাকি ৯ মিনিট যেন রূপকথা। ৯ মিনিট পর স্কোরলাইন ৫-১, যার ৫টি গোলই করেছিলেন রবার্ট লেভানডস্কি। মাত্র ৪ মিনিটেই করেছিলেন ৩ গোল, যা বুন্দেসলিগার দ্রুততম হ্যাটট্রিক। বায়ার্ন মিউনিখের এই খেলোয়ার নিজের দেশ পোল্যান্ডেরও সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি লেভানডস্কি। নিজেদের প্রথম ২ ম্যাচে হেরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে পোল্যান্ডকে। এই ২ ম্যাচেই অনুজ্জ্বল ছিল  লেভানডস্কির পারফর্মেন্স।

 রবার্ট লেভানডস্কি ; Image Source: telecom sports
রবার্ট লেভানডস্কি; Image Source: telecom sports

৯. গ্যাব্রিয়েল জেসুস (ব্রাজিল)

ব্রাজিলের বর্তমান নাম্বার নাইন। ম্যানচেস্টার সিটির এই স্ট্রাইকার এ মৌসুমে আকাশী-নীলদের হয়ে জিতেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা। ব্রাজিলের জাতীয় দলে জেসুসের অভিষেক হয় ২০১৬ সালে। গত বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিলের বিভিন্ন রাস্তায় রং মিস্ত্রির কাজ করে বেড়ানো জেসুস এই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে মাতাচ্ছেন রাশিয়া বিশ্বকাপ।

গ্যাব্রিয়েল জেসুস ; Image Source:daily express
গ্যাব্রিয়েল জেসুস; Image Source:daily express

১০. মার্কো রইস (জার্মানি)

মার্কো রিউসের সাথে ইঞ্জুরি যেন একসূত্রে গাঁথা। ইঞ্জুরির কবলে না পড়লে হয়তো হতে পারতেন সেরাদের একজন। থাকতে পারতেন গত জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী দলে। ব্রাজিল বিশ্বকাপের আগে আর্মেনিয়ার বিপক্ষে এক প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে ইঞ্জুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তার। গত ১৭ জুন মেক্সিকোর বিপক্ষে সামি খেদিরার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন রইস। সুইডেনের বিপক্ষে  বিশ্বকাপে করেন নিজের  প্রথম গোল।

১১. অ্যালিসন বেকার (ব্রাজিল)

পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী দল ব্রাজিলের প্রধান গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। তাই হয়তো এই বিশ্বকাপে স্নায়ুচাপটা একটু বেশিই অ্যালিসনের। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ২ লেগ মিলিয়ে লিভারপুলের কাছে ৭-৬ এ হেরে বিদায় নেয় তার দল এ এস রোমা। তবে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে তার পারফর্মেন্স ছিল দেখার মতো। ঠেকিয়েছেন মোট ৪৭টি শট। জায়গা করে নিয়েছেন উয়েফার টিম অব দ্য সিজনে।

১২. সাদিও মানে (সেনেগাল)

২০১৬ সালে ৩৪ মিলিয়ন ইউরোতে সাউদাম্পটন থেকে লিভারপুলে যোগ দেন সেনেগালের এই খেলোয়াড়। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের রাউন্ড অব সিক্সটিনে এফসি পোর্তোর বিপক্ষে করেছিলেন হ্যাটট্রিক, যা লিভারপুলের জার্সিতে তার প্রথম হ্যাটট্রিক। ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে করেছিলেন ১ গোল। ফলে চ্যাম্পিয়নস লিগে ফাইনালে গোল করা সেনেগালের একমাত্র খেলোয়াড় এখন তিনি।

১৩. এঞ্জেলো কন্তে (ফ্রান্স)

ইংলিশ প্রিমিয়াম লিগে লেস্টার সিটির রুপকথা হয়তো কারোরই অজানা নয়। ২০১৫-১৬ মৌসুমে লেস্টার সিটির হয়ে জিতেছিলেন প্রথম লিগ শিরোপা। পরের মৌসুমে ৩২ মিলিয়ন ইউরোতে চেলসিতে যোগ দেন এই ফরাসি মিডফিল্ডার। ২০১৬-১৭ মৌসুমে লিগ শিরোপা ঘরে তোলে চেলসি। ২৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের এটিই প্রথম বিশ্বকাপ। ফ্রান্সের জার্সিতে গত ইউরোতে রোমানিয়ার বিপক্ষে খেলেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। 

ফিচার ইমেজ: Metro

Related Articles

Exit mobile version