বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন শচীন টেন্ডুলকার। উইকেট শিকারের দিক দিয়ে গ্লেন ম্যাকগ্রা সেরা। সবার চেয়ে বেশি কে এগিয়ে থাকবেন, সেটা নিয়ে মতানৈক্য থাকবে। পরিসংখ্যানসহ নানা দিক বিবেচনায় যেমন শচীনকে যেমন সেরা ব্যাটসম্যান এবং ম্যাকগ্রাকে সেরা বোলার বলা যায়, তেমনই সেরা অলরাউন্ডার হিসাবে এককভাবে কাউকে এগিয়ে রাখা যায়না। ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসাবে সনাৎ জয়াসুরিয়া এবং জ্যাক ক্যালিস এগিয়ে থাকবেন, বোলিং অলরাউন্ডার বিবেচনায় ইমরান খান এগিয়ে থাকবেন।
বিশ্বকাপের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার হিসাবে অধিকাংশ ক্রিকেট ভক্তের ভোট পড়বে ল্যান্স ক্লুজনারের পক্ষে। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে তার অসাধারণ নৈপুণ্য এখনও স্মৃতির পাতায় জ্বলজ্বল করছে। বিশ্বকাপে মাত্র ১৪ ম্যাচ খেলে পাঁচ ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন তিনি। বিশ্বকাপে ১২৪.০০ ব্যাটিং গড়ে ৩৭২ রান সংগ্রহ করেছিলেন ক্লুজনার। সে সময়কার তুলনায় তার স্ট্রাইকরেটও ছিল ঈর্ষনীয়, ১২১.১৭ স্ট্রাইকরেটে রান করেছিলেন তিনি। মাত্র ২২.১৩ বোলিং গড়ে শিকার করেছেন ২২ উইকেট।
আজকের লেখায় বিশ্বকাপের সেরা অলরাউন্ডার কে, সেটা নিয়ে তর্কবিতর্ক হবে না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বকাপে সেরা অলরাউন্ডারদেরকে নিয়ে সাজানো থাকছে এই লেখা। যদি অলরাউন্ডারদের যোগ্যতা হিসাবে ৫০০ রান এবং ২০ উইকেট। তাহলে ল্যান্স ক্লুজনারের মতো বিশ্বকাপের সেরা অলরাউন্ডার তালিকা বাদ পড়বে। তাই এই তালিকাকে বিশ্বকাপের সেরা অলরাউন্ডারদের তালিকা বলা যাবে না। তবে এই তালিকায় থাকা ক্রিকেটারদের পরিসংখ্যান বেশ স্বাস্থ্যবান।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৫০০-র বেশি রান করেছেন ৮৫ জন ক্রিকেটার, এবং ২০-এর বেশি উইকেট শিকার করেছেন ৫৯ জন ক্রিকেটার। দুই তালিকাতেই নাম আছে, এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা সাতজন। চলুন জেনে আসা যাক সেই সাতজন অলরাউন্ডার সম্পর্কে।
ইমরান খান
ইমরান খান বিশ্বকাপে ২৮ ম্যাচ খেলে একটি শতকের সাহায্যে ৩৫.০৫ ব্যাটিং গড়ে ৬৬৬ রান করেছেন। বোলার হিসাবে বেশ সফল ছিলেন তিনি। মাত্র ১৯.২৬ বোলিং গড়ে ৩৪ উইকেট শিকার করেছেন। তার নেতৃত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ঘরে তোলে। ফাইনালে ৭২ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে দলের জয়ের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যান ইমরান খান দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে তার একমাত্র শতকটিও এসেছিল ঐ আসরে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৪৩ রান তুলতেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসেছিল পাকিস্তান। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন ইমরান খান। শহিদ মাহবুবের সাথে ১৪৪ রানের জুটি বেঁধে দলের বিপর্যয় সামাল দেন। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংস খেলে দলকে ২৩৫ রানের পুঁজি এনে দিয়েছিলেন ইমরান খান। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১ রানের জয় পায় পাকিস্তান। পুরো আসরেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন তিনি, সাত ম্যাচে ৭০.৭৫ ব্যাটিং গড়ে ২৮৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন ইমরান খান।
১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে ইমরান খান বল হাতেও দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। ছয় ইনিংস বল করে দুইবার চার উইকেট এবং দুইবার তিন উইকেট শিকার করে মোট ১৭ উইকেট শিকার করেছেন ১৩.০৫ বোলিং গড়ে। ইমরান খান বিশ্বকাপে দুইবার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে একবার এবং ১৯৮৭তে একবার। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শতক হাঁকানোর ম্যাচে ম্যাচ সেরার পুরস্কার না জিতলেও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৪ বলে অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৭ রানের বিনিময়ে চার উইকেট শিকার করে।
কপিল দেব
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে ভারত যে শিরোপা জিতবে, তা টুর্নামেন্টের শুরুতে অকল্পনীয় ছিল। কপিল দেবের ভারত ১৯৮৩ সালের শিরোপা ঘরে তোলে অসাধ্যকে সাধন করে। দলের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন অধিনায়ক কপিল দেব। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অতিমানবীয় এক ইনিংস খেলে শিরোপা জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৭ রানে পাঁচ উইকেট হারায় ভারত। এরপর কপিল দেব অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে ২৬৬ রানের পুঁজি এনে দেন। ভারতীয় বোলাররা জিম্বাবুয়েকে ২৩৫ রানে আটকে রেখে ৩১ রানের জয় এনে দেন।
কপিল দেব ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে আট ম্যাচে ৬০.৬০ ব্যাটিং গড়ে এবং ১০৮.৯৯ স্ট্রাইকরেটে ৩০৩ রান করেছিলেন, যা ঐ টুর্নামেন্টে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। তিনি ২২৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে একটি শতক এবং একবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন। দু’টি কীর্তিই গড়েছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। আসন্ন বিশ্বকাপে সবচেয়ে আলোচিত শব্দ থ্রি-ডাইমেনশনাল ক্রিকেটার। বিশ্বকাপে ভারতের প্রকৃত থ্রি-ডাইমেনশনাল ক্রিকেটার ছিলেন কপিল দেব। তিনি বিশ্বকাপে ২৬ ম্যাচে ৩৭.১৬ ব্যাটিং গড়ে ৬৬৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সর্বোচ্চ ১৭৫* রানের ইনিংস খেলেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বল হাতে ২৮ উইকেট শিকার করেছেন ৩১.৮৫ বোলিং গড়ে। সেরা বোলিং বিশ্লেষণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৩ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট। ঐ ম্যাচে ব্যাট হাতেও মাত্র ২৭ বলে ৪০ রান করেছিলেন তিনি। তারপরও দলের বড় হার এড়াতে পারেননি তিনি।
ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করার পাশাপাশি ফিল্ডার হিসাবেও দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে ১২টি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন কপিল দেব। বিশ্বকাপে তিনি তিনবার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস খেলে প্রথমবারের মতো ম্যাচসেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। এরপর ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৮ বলে অপরাজিত ৭২ রান, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৫ বলে অপরাজিত ৪১ রান এবং দুই উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হলে তিনি হয়তো টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ডও জিততেন।
সনাৎ জয়াসুরিয়া
সনাৎ জয়াসুরিয়া মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার। ব্যাটসম্যান হিসাবেই বেশি পরিচিতি তার। ব্যাট হাতে উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়ার পাশাপাশি বল হাতেও বেশ কার্যকরী ছিলেন এই বিধ্বংসী ক্রিকেটার। তিনি ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার শিরোপা জয়ে এবং ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কাকে ফাইনালে উঠতে বড় ভূমিকা পালন করেন। বিশ্বকাপে মোট ৩৮ ম্যাচ খেলে ৩৪.২৬ ব্যাটিং গড়ে ১,১৬৫ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি, হাঁকিয়েছেন তিনটি শতক। ৩৯.২৫ বোলিং গড়ে উইকেট পেয়েছেন ২৭টি। ১৮টি ক্যাচ তালুবন্দী করে জানান দিয়েছেন, ফিল্ডার হিসাবেও ফেলনা নন।
সনাৎ জয়াসুরিয়া ১৯৯৬ সালে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জয়ের পাশাপাশি বিশ্বকাপে পাঁচবার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে ৩৬.৪৩ ব্যাটিং গড়ে ২২১ রান করার পাশাপাশি সাত উইকেট শিকার করে টুর্নামেন্টসেরা নির্বাচিত হন। ‘৯৬ এর বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৭৬ বলে ৭৯ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। ভারতের দেওয়া ২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা তার ব্যাটে চড়ে জয় তুলে নিয়েছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঝড়ো ব্যাটিং করে তাদেরকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন জয়াসুরিয়া। প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ড আট উইকেটে ২৩৫ রান সংগ্রহ করে। জয়াসুরিয়া ৪৬ রানের বিনিময়ে দুই উইকেট শিকার করেন। এরপর ব্যাট হাতে নেমে শুরু থেকে আক্রমণাত্মকভাবে ব্যাট করতে থাকেন। মাত্র ৪৪ বলে ১৩টি চার এবং তিনটি ছয়ের মারে ৮২ রান করেছিলেন।
সনাৎ জয়াসুরিয়া ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২০ রানের ইনিংস খেলে দলকে জেতানোর পাশাপাশি ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। ২০০৭ সালে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দলকে ফাইনালে উঠতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। আসরে ১১ ম্যাচে দুটি শতক এবং দু’টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪৬.৭০ ব্যাটিং গড়ে ৪৬৭ রান করেছিলেন। শতক হাঁকানো দু’টি ম্যাচেই ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮৭ বলে সাতটি চার এবং সাতটি ছয়ের মারে ১০৯ রান করে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন তিনি। এরপর স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ১১৫ রানের ইনিংস খেলার পর তিন উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
স্টিভ ওয়াহ
স্টিভ ওয়াহ ক্রিকেটার হিসাবে ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ জেতেন। ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। এছাড়া ১৯৯৬ সালে ফাইনাল খেলা অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। দলগতভাবে সাফল্য পাওয়ার পাশাপাশি ক্রিকেটার হিসাবেও বেশ সফল ছিলেন স্টিভ ওয়াহ। তিনি বিশ্বকাপে মোট ৩৩ ম্যাচ খেলে ৪৮.৯০ ব্যাটিং গড়ে ৯৭৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়া ২৭ উইকেট শিকার করেছেন ৩০.১৪ বোলিং গড়ে। ক্যাচ ধরেছেন ১৪টি।
বিশ্বকাপে দলের বহু জয়ে পার্শ্বনায়কের ভূমিকা পালন করা স্টিভ ওয়াহ তিনবার নায়কের রূপে সামনে এসেছিলেন। তিনি বিশ্বকাপে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনবার। সর্বপ্রথম ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ব্যাট হাতে দলের রানের গতি বাড়িয়ে ৪১ বলে তিনটি চার এবং দু’টি ছয়ের মারে ৪৫ রান করে রানআউট হওয়ার পর ছয় ওভার বল করে মাত্র সাত রান খরচ করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন স্টিভ ওয়াহ।
দ্বিতীয়বারও ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ৪৩ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলার পর দুই উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন তিনি। নিজের শেষ বিশ্বকাপ আসরে এসে বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেছিলেন স্টিভ ওয়াহ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁচা-মরার লড়াইয়ে হার্শেল গিবসের হাতে নতুন জীবন পাওয়ার পর দলকে অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়ে সেমিফাইনালের টিকেট এনে দিয়েছিলেন তিনি। তার ১১০ বলে অপরাজিত ১২০ রানের ইনিংসের উপর ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ২৭২ রানের লক্ষ্য টপকে যায় অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতেই আসর শেষ করেছিল তারা।
জ্যাক ক্যালিস
দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস বিশ্বকাপে দলগতভাবে বড় কোনো সফলতা না পেলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে তিনি বেশ উজ্জ্বল ছিলেন। বিশ্বকাপে ৩৬ ম্যাচে একটি শতক এবং নয়টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪৫.৯২ ব্যাটিং গড়ে ১,১৪৮ রান করার পাশাপাশি ২১ উইকেট শিকার করেছেন, ক্যাচ লুফে নিয়েছেন ১৩টি।
জ্যাক ক্যালিস ১৯৯৯ এবং ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ধারাবাহিকভাবে রান করে গিয়েছেন। তিনি ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে আট ম্যাচে ৫২.০০ ব্যাটিং গড়ে ৩১২ রান করেছিলেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ৮০.৮৩ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ৪৮৫ রান। বিশ্বকাপের মঞ্চে একমাত্র শতকটিও হাঁকিয়েছেন ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। ১০৯ বলে ১১টি চার এবং পাঁচটি ছয়ের মারে ১২৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে মোট তিনবার ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা ক্যালিস শতক হাঁকিয়েও ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেননি। এই ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন এক ওভারে ছয়টি ছয় মারা হার্শেল গিবস।
জ্যাক ক্যালিস বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে। ভারতের দেওয়া ২৫৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ক্যালিসের ৯৬ রানের ইনিংসের উপর ভর করে জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। একই আসরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। শেষদিকে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩৬ বলে অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস খেলার পর নিউ জিল্যান্ডের দুই ওপেনারকে সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন তিনি।
যুবরাজ সিং
ভারতের ২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান যুবরাজ সিংয়ের। তিনি ব্যাটে-বলে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ২০১১ সালে টুর্নামেন্ট সেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। এছাড়া ঐ আসরে চারবার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। বাঁহাতি এই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান স্বপ্নের মতো এক বিশ্বকাপ কাটিয়ে শিরোপা জয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন। তিনি ব্যাট হাতে ৯০.৫০ ব্যাটিং গড়ে ৩৬২ রান করার পাশাপাশি ১৫ উইকেট শিকার করেছিলেন নয় ম্যাচে। আসরের প্রথম দুই ম্যাচে উইকেট শূন্য থাকার পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন। এরপরের ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচ ম্যাচে দু’টি করে উইকেট শিকার করেছিলেন যুবরাজ।
যুবরাজ সিং ২০১১ সালে দলের বিপদের সময় কখনও ব্যাট হাতে, আবার কখনও বল হাতে ভূমিকা রেখেছিলেন। ভালো খেলার পুরস্কারস্বরূপ চারবার ম্যাচসেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৫০ রান এবং পাঁচ উইকেট শিকার করে প্রথম ম্যাচসেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। এরপর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি দুই উইকেট শিকার করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১১৩ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি দুই উইকেট শিকার করে এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ৫৭ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি দুই উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
যুবরাজ সিং নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন ২০০৩ সালে। তরুণ যুবরাজ ঐ আসরেই নজর কেড়েছিলেন, ৩৪.২৮ ব্যাটিং গড়ে ২৪০ রান করেছিলেন। ২০০৭ সালে দলের ভরাডুবির পরও ৪৫.৩৩ ব্যাটিং গড়ে ১৩৬ রান করেছিলেন তিনি। যুবরাজ সিং বিশ্বকাপে মোট ২৩ ম্যাচ খেলে ৫২.৭১ ব্যাটিং গড়ে ৭৩৮ রান করার পাশাপাশি ২৩.১০ বোলিং গড়ে ২০ উইকেট শিকার করে বিশ্বকাপে অলরাউন্ডারদের এলিট ক্লাবে নাম লেখিয়েছেন।
সাকিব আল হাসান
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের এবং সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক সাকিব আল হাসান। বিশ্বের আর কোনো ক্রিকেটারেরই নিজ দেশের হয়ে দুই বিভাগেই সবার উপরে থাকার নজির নেই। সাকিব আল হাসান ২০০৭ সালে নিজের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করেন। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে ৫৩ রানের ইনিংস খেলে দলের জয়ে অবদান রাখেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে নয় ম্যাচে দু’টি অর্ধশতকের সাহায্যে ২৮.৮৫ ব্যাটিং গড়ে ২০২ রান সংগ্রহ করার পাশাপাশি সাত উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপের মতো ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ছিল ভারতের বিপক্ষে। এই ম্যাচেও সাকিব আল হাসান অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে তিনি ছয় ম্যাচে একটি অর্ধশতকের সাহায্যে ২৩.৬৬ ব্যাটিং গড়ে ১৪২ রান সংগ্রহ করেছিলেন, উইকেট শিকার করেছিলেন আটটি। নিজের প্রথম দুই বিশ্বকাপ আসরের মতো ২০১৫ সালের বিশ্বকাপও অর্ধশতক হাঁকিয়ে শুরু করেছিলেন সাকিব আল হাসান। আসরের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬৩ রানের ইনিংস খেলার পর দুই উইকেট শিকার করে দলের জয় নিশ্চিত করেছিলেন তিনি।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে। এই আসরে ব্যক্তিগতভাবে সাকিব আল হাসানও বেশ সফল ছিলেন। তিনি ছয় ম্যাচে দু’টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৯.২০ ব্যাটিং গড়ে ১৯৬ রান করার পাশাপাশি আট উইকেট শিকার করেছিলেন। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচ খেলে ৩০.০০ ব্যাটিং গড়ে ৫৪০ রান করেছেন। এছাড়া বল হাতে তার উইকেট সংখ্যা ২৩টি। তিনি এইবারের আসরেও বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে হয়তো ২০২৩ সালের বিশ্বকাপেও তাকে মাঠ মাতাতে দেখা যাবে। এতে করে নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে তার হাতে।
খেলাধুলার চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/
ক্রিকেট নিয়ে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ
১) কাছের ক্রিকেট দূরের ক্রিকেট
২) হৃদয়ের ক্রিকেট হৃদয়হীনতার খেলা
৩) শুধুই ক্রিকেট