দলবদল কথন: ক্লাবের জন্য যারা হতে পারেন গেম চেঞ্জার

ইউরোপিয়ান ফুটবলের দলবদলের মৌসুম শেষ হলো কয়েক দিন আগেই। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে ফুটবল থমকে যাবার পর নতুনভাবে শুরু হলেও তাতে বদলে গেছে বেশ কিছু। খেলার নিয়মে বদল, প্রতিটা লিগের ধারা বদলে যাবার পাশাপাশি মাঠে নেই সমর্থকেরা। বর্তমানে নতুন নিয়মকাননের ভেতর লিগগুলো চালু হলেও, নিয়মিতভাবেই কোনো না কোনো খেলোয়াড় করোনাভাইরাসের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। 

এই সবকিছুর প্রভাব দলবদলের সময়ও দেখা গেছে। প্রতিটা ক্লাব ইচ্ছামত খেলোয়াড় দলে ভেড়াতে পারার অবস্থাতেও ছিল না। আর্থিক ক্ষতি কমাতে রিয়াল মাদ্রিদ এবার কোনো খেলোয়াড় কেনেনি। আবার লা লিগা কর্তৃপক্ষ নিয়ম করে দিয়েছিল, কেনাবেচার সমতা আনার জন্য কোনো পজিশনে খেলোয়াড় না বিক্রি করে নতুন খেলোয়াড় দলে ভেড়ানো যাবে না। 

এরপরও দলবদল প্রক্রিয়া থেমে থাকেনি। ম্যানচেস্টার সিটি যথারীতি ১০০ মিলিয়ন ইউরোর উপরে খরচ করেছে। এবং আগের মৌসুমের মতোই তাদের নগর প্রতিপক্ষ কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের পেছনে শ্রম দিয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে পায়নি। এছাড়াও, বর্তমান পরিস্থিতির সাপেক্ষে অধিকাংশ দলবদলই হয়েছে ধারের চুক্তিতে। তবে ট্রান্সফার কিন্তু কম হয়নি। অনেক ক্লাবই শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছে। কারণ, একাদশে খুঁত নিয়ে কোনো ক্লাবই নতুন মৌসুম শুরু করতে আগ্রহী নয়। এক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট নতুন খেলোয়াড় আসন্ন মৌসুমে ক্লাবের জন্য ফলপ্রসূ হতে পারে, সেটাই এ লেখার মুখ্য বিষয়।

প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসি দিয়ে শুরু করা যাক। গত মৌমুসে ব্লুজদের দায়িত্ব নেবার পর ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড ক্লাবের অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়দের নিয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন। কিন্ত নতুন মৌসুমে দেখা গেলো, তিনিও সেই অর্থের পেছনেই ছুটছেন। চলতি মৌসুমে তারা কিনেছে নতুন পাঁচজন খেলোয়াড়। তবে ক্লাবের জন্য ট্রাম্পকার্ড হতে পারে কাই হার্ভেট্জ‌। কারণ দলে গোল করার জন্য পুলিসিচ, ভার্নার ও ট্যামি আব্রাহামরা থাকলেও মধ্যমাঠ থেকে খেলা গড়ে দেবার মতো খেলোয়াড়ের অভাব ছিল। মিডফিল্ডের আক্রমণাত্মক অংশে খেলা অভ্যস্ত হার্ভেট্জ‌ তাই ব্লুজদের মধ্যমাঠ থেকে আক্রমণ অংশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে পারেন। এতে করে তাদের স্ট্রাইকার বা দুইং উইঙ্গারের গোল করার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। 

বেন চিলওয়েল ; Image Source: premierleague

চেলসির অন্য একটি কার্যকর ট্রান্সফার হতে পারে লেস্টার সিটি থেকে বেন চিলওয়েলকে দলে ভেড়ানো। আন্তোনিও কন্তে যখন চেলসির কোচ ছিলেন, তার দর্শন ছিল তিনজনের রক্ষণ। তাই একজন উইংব্যাক হিসেবে মার্কাস আলোন্সো ছিলেন আদর্শ খেলোয়াড়। কিন্ত দলের যখন একজন পরিপূর্ণ লেফটব্যাকের প্রয়োজন, তখন আলোন্সো তার সেরাটা দিতে ব্যর্থ হলেন। তার আক্রমণ যতটা ভালো, রক্ষণে তিনি ততটাই দুর্বল। তাই উভয়দিকে পারদর্শী ও গতিশীল একজন ফুটবলারের দলে প্রয়োজন ছিল, যার জন্য একদম যথাযথ খেলোয়াড় চিলওয়েল। তিনি একাদশে থাকলে যে ব্যবধান গড়ে দিতে সক্ষম, তার নমুনা চিলওয়েলের অভিষেক ম্যাচেই দেখা গেছে।

গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল এবার যে অনেক খেলোয়াড় কিনেছে, তা নয়। একজন ডিফেন্ডার কিনতে না পারায় রক্ষণ সমস্যায় তাদের ভুগতে হতে পারে। বিশেষ করে ভ্যান ডাইকের অনাকাঙ্ক্ষিত ইনজুরির পর সে শূন্যস্থানটা বেশ স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয়েছে। কিন্তু মধ্যমাঠে যে একজন বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডারের প্রয়োজন ছিল, তা তারা মেটাতে পেরেছে। বায়ার্ন মিউনিখ থেকে কেনা স্প্যানিশ মিডফিল্ডার থিয়াগো আলকান্তারার পজিশন সম্পর্কে ধারণা দুর্দান্ত। তার বল কন্ট্রোল ভালো, খেলা গড়ে দিতে পারেন, আবার প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখেও দিতে পারেন। লাইপজিগ থেকে এর আগে এই একই উদ্দেশ্যে ক্লপ নাবি কেইতাকে দলে ভিড়িয়েছিলেন। তবে তিনি প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি। তাই ফ্যাবিনহোকে মধ্যমাঠের নিচে রেখে হেন্ডারসন বা ভাইনালদুমের পাশে থিয়াগো এ মৌসুমের লিভারপুলের মধ্যমাঠে চিত্র বদলে দিতে পারেন।

থিয়াগো এ মৌসুমের লিভারপুলের মধ্যমাঠে চিত্র বদলে দিতে পারেন ; Image Source: Liverpoolfc

যেখানে লিগ জেতা লিভারপুল বেশি খরচ করেনি, সেখানে ম্যানচেস্টার সিটি যথারীতি খরচ করেছে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি। তারা এনেছে উইঙ্গার তোরেস এবং দুই ডিফেন্ডার রুবেন দিয়াস ও নাথান আইককে। প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করা পর্তুগিজ ডিফেন্ডার রুবেন দিয়াস হতে পারেন সিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের একজন। রক্ষণে লাপোর্তের পাশে খেলার মতো ডিফেন্ডার ছিল না গার্দিওলার হাতে; জন স্টোনস ইনজুরি ও অন্যান্য কারণে দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন, আর নতুন কেনা ডিফেন্ডার নাথান আইক বাম পায়ের ফুটবলার। আর গার্দিওলা সবসময় চেয়ে এসেছেন, তার দলের রক্ষণে একজন রাইট-ফুট ডমিন্যান্ট ও অন্যজন লেফট-ফুট ডমিন্যান্ট ডিফেন্ডার রাখতে। তাই লাপোর্তের ডান পাশে রুবেন দিয়াস ও নতুন জুটি সিটিজেনদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারেন।

রুবেন দিয়াস ; Image Source; mancityfc

সিটিজেনদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সারা বছর সানচোর পেছনে ঘুরেও শেষ পর্যন্ত তাকে দলে ভেড়াতে পারেনি। মধ্যমাঠে নতুন সংযোজন দি বিক। তবে তিনি আপাতত বেঞ্চ থেকেই শুরু করবেন।

তবে রেড ডেভিলদের রক্ষণ ও আক্রমণে নতুন স্বাদ এনে দিতে পারেন ব্রাজিলিয়ান ফুলব্যাক অ্যালেক্স টেলাস। পোর্তোর হয়ে টানা নজরকাড়া পারফরম্যান্সের অনেক পরে তিনি বড় কোনো ক্লাবে এলেন। গত মৌসুমে ১১ গোল ও ৮ অ্যাসিস্ট করলেও রক্ষণেও তেলাস বেশ ভালো। কয়েক মৌসুম ধরে এই লেফটব্যাক পজিশনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড খুব বাজেভাবে ভুগেছে। টেলাসের সংযোজন তাদের জন্য সব চেয়ে ভালো খবর। তাই ওলে গানার শ্যুলশারের একাদশ ছন্দে ফিরলে সেখানে তেলাসের ভালো রকম অবদান থাকবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।

প্রিমিয়ার লিগে কম ট্রান্সফার করেও দারুণ একটি দলবদল মৌসুম পার করেছে আর্সেনাল। রক্ষণের সেই প্রাচীন দুর্বলতা কাটাতে প্রয়োজন ছিল নতুন এক জুটিকে। তবে বর্তমান সময়ে নতুন দুইজন ডিফেন্ডার কেনার অবস্থায় নেই ক্লাবটি। তাই বাম পায়ের ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার গ্যাব্রিয়েল মাগালহেসকে দলে টেনেছে তারা। গ্যাব্রিয়েলও নতুন মৌসুমের শুরু থেকেই চমক জাগানো পারফরম্যান্স দিয়ে নজর কেড়ে নিয়েছেন। তার রক্ষণে দক্ষতা, পাসিং, এরিয়াল ডুয়েলের নির্ভরতা গানার্সদের ভঙ্গুর রক্ষণ ইতঃমধ্যে নতুন চেহারা পেয়ে গেছে। 

আর্সেনালের অন্য ট্রাম্পকার্ড হতে পারেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে ডেডলাইন ডে’তে রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করে নিয়ে আসা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার টমাস পার্টে। আরতেতা যে ফুটবল খেলাতে চান, সেখানে ডিফেন্ডারদের একটু উপরে রক্ষণাত্মক মানসিকতার একজন মিডফিল্ডারের প্রয়োজন হয়। তার প্রধান কাজ রক্ষণ দৃঢ় করার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের আক্রমণ মধ্যমাঠেই গুড়িয়ে দেয়া। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই এমন ভূমিকায় খেলে অভ্যস্ত পার্টে। বিপরীতে, আর্সেনালে তোরেইরা ও গৌনদৌজি উভয়ই এই রোলে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। তাই পার্টে এই মৌসুমে গার্নাসদের মধ্যমাঠের চিত্র পাল্টে দিতে পারেন। 

গ্যাব্রিয়েল মাগালহেস ; Image Source: premierleague

জোসে মরিনহোর স্পার্স এবার দারুণ একটা দলবদল মৌসুম কাটিয়েছে। দু’জন নতুন ফুলব্যাক, হ্যারি কেইনের বদলি স্ট্রাইকার ও লোনে গ্যারেথ বেলের মতো উইঙ্গারকে দলে টেনেছে তারা। তবে মরিনহোর একাদশের চিত্র পাল্টে দিতে পারে নতুন আসা দুই উইঙ্গার ম্যাট ডোহার্টি ও সার্জিও রেগুইলন। মরিনহো সবসময় তার রাইটব্যাককে মাঠের ডানপাশে একটু বেশি প্রাধান্য দেন। তার দর্শনে রাইটব্যাক কিছুটা উপরে আক্রমণে বেশি মনোযোগ দেয়, আর প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে থাকা লেফট উইঙ্গার বা স্ট্রাইকার প্রায়ই ক্রস পান রাইটব্যাকের কাছ থেকে। গত দুই মৌসুমে ৮ গোল ও ৯ অ্যাসিস্ট করা ডোহার্টি তাই মরিনহোর একাদশে আদর্শ রাইটব্যাক। দলের রাইটব্যাক আক্রমণে বেশি মনোযোগী হলে লেফটব্যাককে রক্ষণে একটু বেশি জোর দিতে হয়। মাঠের ডান পাশ দিয়ে বিচরণ করা রেগুiলন আক্রমণে অংশ নিলেও তার রক্ষণাত্মক মানসিকতা এবার স্পার্সের উইংজুড়ে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে তুলবে।

প্রিমিয়ার লিগে উল্লেখযোগ্য ক্লাবের ভেতর এভারটনের কথা না বললেই নয়। এবার ট্রান্সফার মার্কেটে তারা ব্যবহার করেছে মোটামুটি ৮০ মিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি। কিন্তু এই অর্থ খরচ করে তারা এমন সব খেলোয়াড় এনেছে, যা ইউরোপের অনেক বড় বড় ক্লাব পারেনি। এভারটনের মধ্যমাঠ বলে এতদিন কিছু ছিল না। সিগুর্ডসন, গোমেজ বা ডেভিসের ভেতর রসায়ন কখনই গড়ে ওঠেনি। আর তারা তিনজন একসাথে মাঠে নামলে মধ্যমাঠ তেমন প্রাণবন্তও হয় না। মিডফিল্ডে প্রাণদান করতে কার্লো আনচেলত্তি আনলেন ডকৌরে ও অ্যালানকে। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যালান মধ্যমাঠের নিচে রক্ষণ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণে পারদর্শী। আর বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার হিসেবে দাপিয়ে বেড়ানো ডকৌরের পাশে আন্দ্রে গোমেজ খেলেন একদম ফ্রি রোলে। আর এদের সাথে যোগ হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদে ব্রাত্য হয়ে পরা প্লেমেকার হামেস রদ্রিগেজ। ক্লাবে নতুন আসা এই তিন ফুটবলার একসাথে পাসিং, বল কন্ট্রোল ও থ্রু বলে পারদর্শী। তাই এদের রসায়ন ও কালভার্ট লুইন এবং রিচার্লিসন যোগ হওয়ায় এভারটন কেমন খেলছে তার নমুনা ইতঃমধ্যে দর্শক পেয়ে গেছে।

এভারটন কেমন খেলছে তার নমুনা ইতঃমধ্যে দর্শক পেয়ে গেছে ; Image Source: premierleague

স্পেনে লা লিগায় প্রধান তিন দল তেমন ট্রান্সফার করেনি বললেই চলে। রিয়াল মাদ্রিদ কোনো খেলোয়াড় কেনেনি, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ সুয়ারেজকে পেলেও হারিয়েছে পার্টেকে। আর বার্সা মৌসুমের অধিকাংশ সময়ে ব্যস্ত ছিল তাদের ক্লাবে ‘বোঝা’ হয়ে পড়া খেলোয়াড়দের বিক্রি করতে। তাই সুয়ারেজ, রাকিটিচ, ভিদাল, রাফিনহা, সেমেদোকে বিক্রি হবার পর তারা শুধুমাত্র কিনেছে নতুন ডাচ ফুলব্যাক সার্জিনিয়ো দেস্তকে।

সেমেদো বার্সেলোনায় যে প্রত্যাশা নিয়ে এসেছিলেন, সেসব পূরণ তিনি করতে পারেননি। তার গতি প্রচুর, কিন্তু প্রতিপক্ষে ডি-বক্সে পৌঁছে উপযুক্ত পাস দেবার দক্ষতা তার ভেতর কখনোই তৈরি হয়নি। ব্যাকপাসের পসরা বসানোয় একজন ফুলব্যাক হওয়া সত্ত্বেও তার অ্যাসিস্ট সংখ্যা তাই হাতেগোনা। এসব সমস্যা সমাধানের জন্যই সেমেদোকে বিক্রি করে বার্সা এনেছে দেস্তকে। কিছুটা বেশি চাপ ঘাড়ে নিয়ে ক্যাম্প ন্যুতে নতুন অধ্যায় শুরু করা দেস্তের জন্য বেশ কঠিন হতে পারে। তবে তিনি যদি রাইটব্যাক অঞ্চলকে প্রাণ সঞ্চার করতে পারেন, তাহলে বার্সেলোনার জন্য এই একটিমাত্র ট্রান্সফার ভবিষ্যতে আর্শীবাদ হয়ে উঠবে।

সেমেদোকে বিক্রি করে বার্সা এনেছে দেস্তকে; Image Source : fcbarcelona

বুন্দেসলিগায় বরুশিয়া ডর্টমুন্ড এবার ট্রান্সফার উইন্ডোর পুরো সময় চুপিসারেই পার করেছে। বায়ার্ন মিউনিখ প্রায় পুরোটা সময় থিয়াগোকে বিক্রি করা ছাড়া নিশ্চুপই ছিল। তবে ডেডলাইন ডে’তে তারা একের পর এক বোমা ফাটিয়েছে। এবার তাদের সব থেকে সেরা সাইনিং এসপানিওল থেকে মাত্র ১০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কেনা স্প্যানিশ মিডফিল্ডার মার্ক রোকা। এসপানিওলের অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা রোকা ছিলেন লা লিগার অন্যতম উঠতি প্রতিভা। মধ্যমাঠে খেলা এই তরুণের পাসিং সক্ষমতা দুর্দান্ত। প্রয়োজনে রক্ষণাত্মক বা আক্রমণাত্মক মধ্যমাঠের উভয় অঞ্চলে তিনি খেলতে পারদর্শী। থিয়াগোর আদর্শ উত্তরসূরী বর্তমানে হানসি ফ্লিকের একাদশে নিয়মিত না খেললেও একসময় তিনিই হয়ে উঠতে পারেন বাভারিয়ানদের মাঝমাঠের ভরসা।

একসময় রোকা হয়ে উঠতে পারেন বাভারিয়ানদের মাঝমাঠের ভরসা; Image Source : Getty Images

গতবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে খেলা পিএসজির, প্রতিটা ম্যাচে প্রধান দুর্বলতা ছিল মধ্যমাঠে। টমাস টুখেল যেমন মিডফিল্ডার চান, ঠিক তেমন মিডফিল্ডার তার দলে নেই। আন্দ্রে হেরেরা বা ইউলিয়ান ড্রাক্সলার প্রথাগত মিডফিল্ডার নন। আর পারেদেস বা ইদ্রিস গানা সবসময় সব ট্যাকটিক্সের সাথে মানান না। তাই ভেরাত্তির ইনজুরির সময় ডিফেন্ডার মার্কিনিয়োসকে খেলতে হয়েছে মিডফিল্ডে। এজন্য এবার তারা লোনে দলে টেনেছে দানিলো পেরেইরাকে। যিনি পজিশন, এরিয়াল ডুয়েল ও মাঝমাঠ থেকে লং বল প্রদান করতে বেশ পারদর্শী। তাই ভেরাত্তি, ইদ্রিস গানাদের সাথে পেরেইরা পিএসজির মাঝমাঠকে আরও ক্রিয়াশীল করে তুলতে পারেন। 

ইতালিতে আসা যাক। ক্লাবের লিজেন্ডকে কোচ হিসেবে পাবার পর তুরিনোর বুড়ি’রা একটি পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। দল ছেড়ে গেছে একাধিক বর্ষীয়ান খেলোয়াড়। বিপরীতে যোগ হয়েছেন বেশ কয়েকজন তরুণ মুখ। তবে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন আবার পুরনো ক্লাবে ফিরে আসা স্ট্রাইকার আলভিরো মোরাতা। ১৪-১৫ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের পর মোরাতা রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ঘুরে কোথাও থিতু হতে পারেননি। সর্বশেষ নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন এই ইতালিতেই। তাই নিজের পুরনো ফর্ম ফেরত পাবার পাশাপাশি জুভেন্টাসের আক্রমণের নতুন ভরসা হতে পারেন তিনি।

আরেকজন হচ্ছেন ফ্লোরেন্টিনা থেকে আসা উইঙ্গার ফেদ্রিকো কিয়েসা। ইতালিতে গত তিন মৌসুমে ধারাবাহিকভাবে দুর্দান্ত খেলেছেন তিনি। গোল করার পাশাপাশি, আক্রমণ গড়েও দিতে পারেন। তাই রোনালদো, মোরাতা বা রোনালদো, কুলুসেভস্কির পাশাপাশি কিয়েসা নতুন জুভেন্টাসের ট্রাম্পকার্ড হয়ে উঠতে পারেন। 

উইঙ্গার ফেদ্রিকো কিয়েসা ; Image Source : Gabriele Maltinti/ Getty Images

সিরি-আ’তে ইন্টার মিলান দলে টেনেছে আশরাফ হাকিমিকে। মাঠের ডান পাশে গতির ঝড় তোলা হাকিমি যেন উইংব্যাক পজিশনে খেলার জন্যই জন্ম নিয়েছেন। আর আন্তোনিও কন্তের ইন্টার খেলেও প্রধানত ৩-৫-২ ফর্মেশনে। তাই হাকিমিকে নিয়ে ইন্টার সমর্থকদের প্রত্যাশার পারদ একদম শীর্ষে। হাকিমিও নিশ্চয়ই হতাশ করবেন না!

ইন্টারের নগর প্রতিপক্ষ এসি মিলান ব্রেসিয়া থেকে উড়িয়ে এনেছে বর্তমান ইতালির সব থেকে প্রশংসিত তরুণ মুখ সান্দ্রো তোনালিকে, যার খেলার ধরনকে তুলনা করা হয় আন্দ্রেয়া পিরলোর সাথে। ব্রেসিয়ার হয়ে গত মৌসুমে ৭ অ্যাসিস্ট ও ১ গোল করেছেন তিনি। তবে তার পারফরম্যান্সের উজ্জ্বলতা অন্যখানে। ১১টি গোল সুযোগ তৈরির পাশাপাশি তার সঠিক পাস  ও ড্রিবল করার হার যথাক্রমে ৭৬ ও ৭৮ শতাংশ। রক্ষণেও তার সাফলতার হার নজরকাড়া। স্টেফানো পিওলির নতুন মিলানে বেনেসার ও ফ্রাঙ্ক কেসির উপরের অংশে তোনালি চমকপ্রদ পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারেন।

তোনালির খেলার ধরনকে তুলনা করা হয় আন্দ্রেয়া পিরলোর সাথে ; Image Source; Getty Images

নিয়মিত চ্যাম্পিয়নস লিগা খেলা এই বড় দলগুলো বাদেও দারুণ কিছু খেলোয়াড় কিনেছে নিউক্যাসল ইউনাইটেড ও অ্যাস্টন ভিলা। ক্লাবের রেকর্ড ভেঙে ৭০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে নাপোলি কিনেছে তরুণ স্ট্রাইকার ভিক্টর ওসিমেহেন। কেভিন ভোল্যান্ডের মতো স্ট্রাইকার পেয়েছে ফরাসি ক্লাব মোনাকো। বড় বা নজরকাড়া ট্রান্সফার বাদে এরা নতুন ক্লাবে কতটা প্রত্যাশামাফিক খেলা প্রদান করতে পারেন, তা সময়ই বলে দেবে।

This article is in Bangla language. It is about some of the potentially game-changing transfers in this transfer window. 

Feature Image Source: Liverpool FC

Background Image Source: Skysports

Related Articles

Exit mobile version