ইউরো ২০২০: ডার্ক হর্স বৃত্তান্ত || পর্ব ২

নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলকে বিশ্বের সব থেকে দুর্ভাগা দল বললে সম্ভবত খুব একটা ভুল হবে না। টানা তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনালে গিয়েও একবারও তারা বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি ঘরে তুলতে পারেনি। একেক প্রজন্মে তাদের ঘরে এসেছে ফুটবল ‘গ্রেট’রা। এই ডাচদের হাতেই ‘টোটাল ফুটবল’-এর জন্ম। যে ইয়োহান ক্রুয়েফ পুরো ফুটবলের ধারাই পাল্টে দিলেন, তার দেশ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সেভাবে সাফল্যই পায়নি! 

অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া গত দশক থেকে ধাপে ধাপে উন্নতি করেছে। ২০১২ ইউরো ও ২০১৪ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড, ২০১৬ ইউরোতে দ্বিতীয় রাউন্ড, ও রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল সে কথাই বলে। যে দলটি একসময় ছিল খুবই সাধারণ পর্যায়ের, তারাই এখন বাঘা বাঘা দলকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত।

ইউরো ২০২০’কে সামনে রেখে আজ কালো ঘোড়া বৃত্তান্তের দ্বিতীয় পর্ব সাজানো হয়েছে নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়া দলকে নিয়েই।

নেদারল্যান্ডস

Image Credit: Footxero

২০১৬ সালের ইউরো ও ২০১৮ বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে খেলতে না পারার পর নেদারল্যান্ডস দলে বড় পরিবর্তন এসেছিল রোনাল্ড ক্যোমানের হাত ধরে। কিন্তু গত বছর ক্যোমান বার্সেলোনার কোচের আসনে বসলে তাদের অগ্রগতির পথচলাতে ছেদ পড়ে। কোম্যানের স্থলে নতুন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাবেক ডাচ খেলোয়াড় ফ্রাঙ্ক ডি বোরকে। দায়িত্ব নিয়ে তিনি দলে বদলও আনেননি, তেমন কোনো উন্নতিও করতে পারেননি। আদতে তিনি চলছেন কোম্যানের পরিকল্পনামাফিকই।

দায়িত্ব নেবার পর কোম্যান ৪-২-৩-১ এবং ৪-৩-৩ ফর্মেশন ব্যবহার করে ডাচদের পুরনো ‘টোটাল ফুটবল’কে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। কিছু নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের উপর ভরসা রেখে এই কৌশল হল্যান্ডের নতুন তারুণ্যনির্ভর দল বেশ আয়ত্বেও নিয়ে ফেলেছিল। ডি বোরের অধীনে তাদের পাসিং ফুটবল ঠিক প্রদর্শন করতে না পারলেও ঠিকই চেষ্টা করবে টোটাল ফুটবলকে আদর্শ মেনেই খেলার।

কিন্তু এই চিন্তায় ছেদ পড়ছে গোলরক্ষক সিলেসেন ও ডাচদের রক্ষণের অন্যতম কান্ডারি ভার্জিল ভ্যান ডাইকের ইনজুরিতে। টোটাল ফুটবল খেলতে গেলে দলের সবাইকে পাস দেওয়াতে পারদর্শী থাকতে হয়। কারণ, এই ফুটবল দর্শনে আক্রমণ শুরু হয় একদম নিচ থেকে। অর্থাৎ, একদম রক্ষণ ও গোলরক্ষকের কাছ থেকে। এ জন্যই প্রয়োজন হয় বলপ্লেয়িং গোলরক্ষক ও ডিফেন্ডারদের।

ভ্যালেন্সিয়ার গোলরক্ষক ইয়াসপার সিলেসেন ইউরোপের নামকরা গোলরক্ষক না হলেও ক্লাব ও জাতীয় দলের জন্য নির্ভরযোগ্যই বটে। গোলবারের নিচে দক্ষতা ছাড়াও বল পায়ে দারুণ তিনি পারদর্শী। এজন্য তার না থাকাটা দারুণ ভোগাতে পারে ডাচ দলকে।

রক্ষণে থাকছেন না ভ্যান ডাইক; Image Credit: Getty Images

 

রক্ষণে ভ্যান ডাইকের মত ডিফেন্ডারের না থাকার ক্ষতি পোষানো সম্ভব নয়। তার না থাকায় যে শুণ্যস্থান তৈরি হয়েছে তা কিছুটা পূরণ কারা গেলেও, ডাচ রক্ষণভাব প্রতিটা মুহুর্তে মিস করবে তার নেতৃত্বকে।

গোলরক্ষক হিসেবে থাকতে পারেন টিম ক্রুল। আর রক্ষণে ডি লিটের সাথে ইন্টারের ডিফেন্ডার ডি ভ্রাই জুটি বাঁধতে পারেন। তবে তিন ডিফেন্ডারের রক্ষণে খেলা ডি ভ্রাই আদৌ ডি লিটের সাথে কতটা কার্যকরী হবেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে এখানে ফ্রাঙ্ক ডি বোরের হাতে বেশ কয়েকটি সুযোগ রয়েছে। তাই ডি লিটের সাথে ডি ভ্রাই মানিয়ে নিতে না পারলে সুযোগ থাকবে নাথান আকে বা ডেলি ব্লিন্ডকে খেলানো।

চারজন ডিফেন্ডারের ফর্মেশনের ডান পাশে খেলানোর মতো নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় নেই ডি বোরের হাতে, আছেন জোয়েল ভেল্টম্যান ও ড্যানজেন ড্রামফাইজ। পুরো রক্ষণের কথা বললে এই রাইটব্যাক নিয়ে ভুগতে হতে পারে ডাচ দলকে। নিয়মিত খেলবেন ড্রামফাইজ, তবে তার উপর সেভাবে ভরসাও করাটা কঠিন। কারণ, নেদারল্যান্ডসের হয়ে নিয়মিত খেললেও বড় ম্যাচে মাঝেমধ্যেই ভুল করে বসেন তিনি। সে তুলনায় ডান পাশ থেকে বাম পাশ নিয়ে এবার ডি বোর স্বস্তিতে থাকবেন। লেফটব্যাকের ভূমিকায় মাঠে নামতে পারেন ওয়েন ওয়াইনদাল। ২১ বছর বয়সী এই তরুণ এবার এজি আলকমারের হয়ে দারুণ এক মৌসুম পার করে নজর কেড়ে নিয়েছেন। ফুলব্যাক হবার কারণে মাঠের বাম পাশ দিয়ে আক্রমণে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকলেও রক্ষণে তার পারফরম্যান্স নেহায়েত মন্দ নয়।

ওয়েন ওয়াইনদাল; Image Credit: Getty Images

 

ডাচ দলে সবথেকে শক্তিশালী জায়গা হচ্ছে তাদের মাঝমাঠ। মধ্যমাঠে দেখা যাবে বার্সেলোনার হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে। মধ্যমাঠে খেলা গড়ে দেওয়া বা চকিতে আক্রমণভাগে ঢুকে যাওয়ার তার জুড়ি মেলা ভার। ডি ইয়ংয়ের পাশে থাকবেন ভাইনালদুম। একজন প্রথাগত বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার হিসেবে খেলা ভাইনালদুম রক্ষণে এনে দেবেন বাড়তি আস্থা, তেমনই মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের আক্রমণ বানচাল করে দেবার পাশাপাশি তাকে আক্রমণভাগেও দেখা যাবে। ম্যাচের ট্যাকটিক্স বুঝে ডি ইয়ং এবং ভাইনালদুমের পাশে দেখা যেতে পারে ক্লাসেন অথবা ডি রুনকে।

মূল একাদশের বাইরে থেকে মাঝমাঠের ডেপথ বাড়িয়ে তোলার কথা ছিলো ভ্যান ডি বিকের। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বেঞ্চে বসে মৌসুম পার করা ডি বিক দলের প্রয়োজনে নিজেকে কতটা মেলে ধরতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এজন্য বেঞ্চ থেকে ম্যাচের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ডাচ সমর্থকরা পাখির চোখ করে রাখবেন গ্রাভেনবার্চ ও কুপমাইনার্সকে।

আক্রমণভাগের ডান পাশের স্থানটি ডিপাইয়ের জন্য। লেফট উইঙ্গার হিসেবে নামলেও ম্যাচে তাকে দেখা যায় বেশ কয়েকটি ভূমিকায়। কখনো নিচে নেমে প্লেমেকিং করেন, অথবা একজন স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেন, ডিপাই সবসময়ই দারুণ কার্যকর। ডি বোরের দলে তাই আক্রমণের মূল ব্যাটন থাকবে ডিপাইয়ের হাতেই। এছাড়াও আক্রমণের ডান অংশে খেলবেন স্টিভেন বার্গউইন।

Image Credit: Getty Images

 

ডিপাই যদি লেফট উইং থেকে ম্যাচ শুরু করেন, তবে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে দেখা যাবে সেভিয়ার লুক ডি ইয়ংকে। কোচের প্রথম পছন্দ তিনি হলেও সদ্যসমাপ্ত মৌসুমে তার পারফরম্যান্স তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। ডি ইয়ং থেকে ভালো অপশন হতে পারেন ভলফসবুর্গ স্ট্রাইকার ওয়াউট ভেগহর্স্ট। ‘ফক্স ইন দ্য বক্স’ ঘরানার স্ট্রাইকার তিনি। ২০২০-২১ মৌসুমে ভলফসবুর্গের হয়ে করেছেন ২০ গোল ও ৮ অ্যাসিস্ট। তাই বাম অংশে ডিপাইকে রেখে মূল স্ট্রাইকারের দায়িত্ব ভেগহর্স্টের হাতে তুলে দেওয়াটা ‘গেমচেঞ্জিং” সিদ্ধান্ত হতে পারে। আর ডিপাইকে যদি স্ট্রাইকার হিসেবে নামানো হয়, সেক্ষেত্রে একদশে ঢুকতে পারেন দনওয়েল মালেন। 

ডাচদের কোচ হয়ে এসে ডি বোর একমাত্র পরিবর্তন এনেছেন দলের ফর্মেশনে। প্রতিপক্ষ বুঝে ৫-৩-২ কিংবা ৩-৪-৩ ফর্মেশনে খেলতে দেখা গেছে তার দলকে। কিন্তু ফর্মেশন পরিবর্তন করেও দলের দুর্বল দিক ঢাকা যায়নি। তিন ডিফেন্ডার খেলানোর জন্য রক্ষণে দৃঢ়তা এসেছে। ডি ভ্রাই তিনজন ডিফেন্ডার নিয়ে খেলতে অভ্যস্ত, তার পাশে থাকছেন ডি লিট; সাথে থাকতে পারেন আকে বা ব্লিন্ড। এক্ষেত্রে মধ্যমাঠে খেলবেন ডি ইয়ং ও ভাইনালদুম।

কিন্তু ডামফ্রাইজ রাইট-উইংব্যাক হিসেবেও খেলে লাভ হচ্ছে না, কারণ তার আক্রমণাত্মক মনোভাব কম ও আক্রমণভাগে থাকা খেলোয়াড়ের সাথে সম্পর্কও কম তৈরি করতে পারেন। তাই এক্ষেত্রে ডাচরা বেশি আক্রমণ করবে মাঝমাঠ ও মাঠের বামপাশ দিয়ে। ডানপাশে যা গোলসুযোগ তৈরি হবে, তার চেয়ে রক্ষণেই বেশি সহায়তা হবে। এজন্য আক্রমণের দিক থেকে তাদের কৌশল সীমাবদ্ধ। এজন্য প্রতিপক্ষ যখন ডাচদের কৌশলেই তাদের রুখে দেবে, ডি বোর কি পারবেন তৎক্ষণাৎ ট্যাকটিক্স বদল আনতে? ইউরো শুরু আগে ডাচ দলকে নিয়ে এই প্রশ্ন আপাতত তোলাই রইলো।

সম্ভাব্য লাইনআপ

টিম ক্রুল, ড্যানজেল ড্রামফাইজ, ডি লিট, ডি ভ্রাই, ড্যানি ব্লিন্ড, ওয়েন ওয়াইনদাল, ভাইনালদুম, ডি ইয়ং, ডিপাই, ডি ইয়ং

যাদের দিকে নজর রাখবেন

ডি লিট, ডিপাই ও ডি ইয়ং।

ক্রোয়েশিয়া

Image Credit: Footxero

স্লাৎকো দালিচের দলের রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। যদিও ক্রোয়েশিয়ার এই অর্জন অনুমিতই ছিল। কারণ গত দশকের পুরোটা সময়জুড়েই এই দলটি ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করেছে।

মানজুকিচ, রাকিটিচ, মদরিচ, কোভাচিচ, সুবাসিচ, ব্রজোভিচ, লভরেনদের নিয়ে এ দলটি গত দুই বছর আগেও দুর্দমনীয় ছিল। বর্তমানে দলে নেই এদের অনেকেই। বিশ্বকাপের পর অবসর নিয়েছেন মানজুকিচ ও রাকিটিচ। এছাড়াও বর্তমান দলে অনেকেই উপেক্ষিত। তবে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা, সে দলটি না পেয়েও ভাবছে না ক্রোয়াটদের কোচ। কারণ নতুন দশকে এ দলটি আবার নতুন রূপে তৈরি হচ্ছে কিছু তরুণ এবং হুট করে ইউরোপের মঞ্চে উঠে আসা কয়েকজন ফুটবলারদের নিয়ে। আর অনেকের ভবিষ্যৎও নির্ভর করছে আসন্ন ইউরোর উপরই।

বর্তমান ক্রোয়েট দলে বেশ কয়েকজন উঠতি খেলোয়াড় আছে। কিন্তু দালিচের চিন্তা অন্য জায়গার। দলে কয়েকটি পজিশনে যে পর্যাপ্ত খেলোয়াড়ই নেই। বিশ্বকাপে যে কয়জন খেলোয়াড়ের উপর ভর করে এই দল পথ হেঁটেছিল, তাদের ভেতর অন্যতম মুখ গোলরক্ষক সুবাসিচ। তবে সুবাসিচ এখন দলে নেই, দালিচ ভরসা করেন ডায়নামো জাগরেবের ২৬ বছর বয়সী গোলরক্ষক দমিনিক লিভাকোভিচের উপর। কাগজে-কলমে সুবাসিচের মত আস্থাবান গোলরক্ষক না হলেও লিভাকোভিচ ক্রোয়াট দলের গোলবার সামলানোর ক্ষমতা তার আছে।

দমিনিক লিভাকোভিচ; Image Credit: Getty Images

 

প্রতিপক্ষ বুঝে দালিচ ৪-২-৩-১, ৪-৩-৩ কিংবা ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে ক্রোয়েশিয়াকে খেলিয়ে থাকেন। তবে একেক সময় একেক একাদশ নামালেও তার চারজনের রক্ষণ কৌশল কখনও পরিবর্তন হয় না। তবে এই রক্ষণই তার চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। রাইটব্যাক পজিশনে দালিচের পছন্দ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাইম ভারসালিকো। তবে ভারসালিকো মাত্রই ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন। প্রস্তুতি ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নামলেও তার বর্তমান ফিটনেস ও ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

সেন্টারব্যাক হিসেবে থাকবেন দেয়ান লভরেন। তার সাথে এবার জুটি গড়বেন মার্শেই’র তরুণ ডিফেন্ডার দ্যুয়ে চালেতা-চার। বাম পাশে থাকবেন বারিসিচ। চালেতা-চারের মতো এই মৌসুমে তিনিও বেশ নাম কামিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের দারুণ সমসত্ত্ব মিশ্রণ থাকার পরও রক্ষণ ঠিক ক্রোয়াটদের পক্ষে কথা বলছে না। প্রত্যেক ম্যাচে গোল হজম করার পাশাপাশি সেটপিসে তাদের দুর্বলতা লক্ষ্য করা গেছে যথেষ্ট।

ক্রোয়াটদের মাঝমাঠ দালিচের কৌশল অনুযায়ী পরিবর্তন হলেও মাঝমাঠে তিনি ভরসা রেখেছেন ৩৫ বছর বয়সী মিডফিন্ডার লুকা মদরিচের উপর। মদরিচের সাথে থাকবেন ইন্টারের ব্রোজোভিচ। বাদেল ও কোভাচিচ বেঞ্চ থেকে মাঝমাঠের গভীরতা আরও বাড়িয়ে তুললেও রাকিটিচের শূন্যতা কিছুটা হলেও বোধ করবে ক্রোয়েশিয়া।

স্লাৎকো দালিচ; Image Credit: Getty Images

 

রাশিয়া বিশ্বকাপেও দালিচ তার দলকে নির্দিষ্ট ছকে খেলেছেন। কিন্তু এরপর অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, উইঙ্গার ও স্ট্রাইকার নিয়ে তিনি একের পর এক পরিবর্তন এনেছেন। কখনও উইঙ্গারকে তিনি খেলিয়েছেন স্ট্রাইকার হিসেবে, আবার কখনও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারকে নামিয়ে দিয়েছেন লেফট উইঙ্গার হিসেবে। 

৪-২-৩-১ ছকে দলকে নামালে দালিচ একজন প্রথাগত নাম্বার টেনকে ব্যাবহার করেন। কিন্তু বর্তমান ক্রোয়েশিয়া দলে এমন কোনো খেলোয়াড় নেই যিনি একদম প্রথাগত নাম্বার টেন হিসেবে খেলতে অভ্যস্ত। তাই দালিচ এই পজিশনে ব্যবহার করেন পাসালিচ ও ভ্লাসিচকে। পাসালিচ আটালান্তার হয়ে দারুণ একটি মৌসুম পার করেছেন। ৬ গোলের পাশাপাশি করেছেন ২ অ্যাসিস্ট। তবে ক্লাবের হয়ে তিনি মূলত সেন্টার-মিডফিল্ডার হিসেবে খেলে বেশি সময় পার করেছেন। এক্ষেত্রে ভ্লাসিচের পারফরম্যান্স নজরকাড়া। লেফট-উইং ও রাইট-উইং উভয় পজিশনেই খেলেছেন সিএসকেএ মস্কোর হয়ে। 

আরও আছে দীর্ঘদিনের আক্রমণের সারথী ইভান পেরেসিচ, যাকে দেখা যেতে পারে লেফট-উইং পজিশনেও। এছাড়াও স্ট্রাইকার ও আক্রমণের বামপাশে বদলি হিসেবে নামার সুযোগ থাকবে অরসিচের হাতে। দালিচের আক্রমণভাগের সব থেকে বড় দুর্বলতা ডান পাশ। ভারসালিকোর উপরে খেলার মতো একজন রাইট উইঙ্গার নেই এই দলে। তাই আন্তে রেবিচকে এই পজিশনে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন ক্রোয়াট কোচ।

স্ট্রাইকার হিসেবে আছে অনেকগুলো সুযোগ। হফেনহাইমের হয়ে ২০ গোল করা ক্রামারিচ ও ওসাসুনার হয়ে ১১ গোল করা আন্তে বুদিমির থেকে দালিচের পছন্দ ব্রুনো পেতকোভিচ। পেতকোভিচের খেলার ধরণ অনেকটা মানজুকিচের মতো। বক্সে ওঁত পেতে থাকতে চান, বল হুটহাট পায়ে আসলেও শট নিতে ভুল করেন না। কিন্তু পেতকোভিচ যদি আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে না পারেন, সেক্ষেত্রে দালিচের কৌশলই পাল্টে যেতে পারে। 

৪-৩-১-২ ছকে খেলালে মিডফিল্ডে সুযোগ আসতে পারে কোভাচিচ বা বাদেলের। ম্যাচের অবস্থা বুঝে একজন থাকবেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে। আর আক্রমণের মূল অংশে বুদিমির বা ক্রামারিচের সাথে দেখা যেতে পারে রেবিচ বা পেরিসিচকে।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে দালিচ ৪-৩-৩ ছকেও দলকে খেলিয়েছেন, যেখানে মদরিচ ও ব্রোজোভিচের সাথে মিডফিল্ডে খেলেছেন কোভাচিচ। যদিও ইউরোর মঞ্চে কোভাচিচের একাদশে থাকা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। আর আক্রমণভাগে পেতকোভিচকে একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে আক্রমণের ডান পাশে রেবিচ ও বাম পাশে পেরিসিচকে খেলানো হয়েছে।

সম্ভাব্য লাইনআপ

লিভাকোভিচ, ভারসালিকো, লভরেন, চালেতা-চার, বারিসিচ, মদরিচ, ব্রোজোভিচ, রেবিচ, পাসালিচ, পেরিসিচ, পেতকোভিচ

যাদের দিকে নজর রাখবেন

চালেতা-চার, পেতকোভিচ।

This article is in Bangla language. It is about the two dark horses: Netherlands and Croatia. Netherlands is the football's unfortunate child whereas Croatia has been emerging substantially for the past several years who displayed impressive football in Russia world cup 2019 and went up to the final.

Feature Image: Vladislav Mitic / Alamy Stock Photo

Background Image: UEFA

Related Articles

Exit mobile version