ক্রিকেট বা ফুটবলের মতো টেনিস খেলার সঙ্গে আমাদের শৈশব-কৈশোরের পাড়াতুতো আবেগ জড়িয়ে নেই। বিকেল হতেই অলিতে-গলিতে ছোট্ট একটুখানি পরিসরে টেনিস খেলায় মেতে উঠত না কেউ, ওঠে না এখনো।
শীতকালে ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে তবু শহরে-গ্রামে-মফস্বলে কয়েক মাসের উৎসব আমেজের দেখা মেলে। তেমন সাময়িক কিছুও হয় না টেনিসকে কেন্দ্র করে।
দাবা কিংবা গলফের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দমকা হাওয়ার মতো টেনিসের কোনো সাফল্যের হিমেল পরশও আমাদের ছুঁয়ে যায়নি কখনো। ফলে এই খেলার প্রতি তৈরি হয়নি স্থানিক নৈকট্যের উন্মাদনা।
কিন্তু তারপরও এদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ আজ টেনিসপ্রেমী। টেনিসের মতো একক বা দ্বৈত খেলোয়াড়ের প্রতিযোগিতাকে ঘিরে প্রবল উৎসাহে টগবগ করতে থাকে অনেকের রক্ত। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন দেখতে জানুয়ারির কনকনে ঠান্ডায় ভোরবেলা উঠে টিভি সেটের সামনে বসে কাঁপতে থাকা, কিংবা গভীর রাত অবধি ফ্রেঞ্চ ওপেন দেখার জন্য ঘুমকে দূরে সরিয়ে রেখে একদৃষ্টে পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকা, টেনিসের প্রতি এমন নিবেদন দেখানো বাংলাদেশির সংখ্যাও এখন নেহায়েত কম নয়।
কীভাবে পড়েছে তারা টেনিসের প্রেমে? একেকজনের কাহিনি তো একেকরকম, তাই সাধারণীকরণের উপায় নেই। তবু যদি এই প্রজন্মের সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা বলি, তবে নিশ্চিতভাবেই, তাদের এই টেনিসপ্রেমের কারণ রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল কিংবা নোভাক জোকোভিচ।
এই ‘বিগ থ্রি’ মিলেই তো বিগত প্রায় দুই দশক ধরে শাসন করে চলেছেন টেনিস বিশ্বকে। তিনজনে মিলে তারা জয় করেছেন অবিশ্বাস্য ৬৩টি গ্র্যান্ডস্লাম। আবার এই তিনজনেরই কোনো না কোনো একজন বিশ্ব টেনিস র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানটি দখল করে রেখেছেন মোটমাট ৮৯২ সপ্তাহ, যা ১৭ বছরের সমান। আবার ২০১৬ সাল বাদে, ২০০৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রতি বছরই, বছর-শেষের র্যাংকিংয়ে তাদের মধ্য থেকে একজনই থেকেছেন এক নম্বরের সিংহাসনে।
কিন্তু অবশেষে শেষ হতে চলেছে টেনিস জগতে ‘বিগ থ্রি’র মহাকাব্য। বয়সে যিনি সবার বড়, এবং সম্ভবত বাংলাদেশে যার প্রতি টেনিসপ্রেমীদের শ্রদ্ধা-সম্মান-ভালোবাসার পারদ সবচেয়ে উঁচুতে, সেই রজার ফেদেরারেরই প্রস্থান ঘটতে চলেছে সবার আগে। ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি জানিয়ে দিলেন, অস্তাচলে তার বর্ণোজ্জ্বল ক্যারিয়ার; আসছে সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাওয়া লন্ডনের লেভার কাপই হবে এই ৪১ বছর বয়সির সর্বশেষ এটিপি টুর্নামেন্ট।
প্রতিযোগিতামূলক টেনিসে ২৪ বছর ধরে খেলেছেন এই সুইস তারকা। মোট অংশ নেওয়া ম্যাচের সংখ্যা ১,৫০০-এরও বেশি। এই দীর্ঘ প্রায় সোয়া সিকি শতাব্দীর ক্যারিয়ারে কী না জিতেছেন তিনি! ১০৩টি এটিপি একক শিরোপা, ২০টি গ্র্যান্ডস্লাম চ্যাম্পিয়নশিপ, যার মধ্যে আছে উইম্বলডন ও ইউএস ওপেনে যথাক্রমে রেকর্ড ৮টি ও ৫টি (যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ) শিরোপা। এছাড়াও তিনি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে জিতেছেন ৬ বার, ফ্রেঞ্চ ওপেনে একবার।
১৯৯৮ সালে উইম্বলডনে জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজের আগমনবার্তা দিয়েছিলেন ফেদেরার। আর ২০০৩ সালে, মাত্র ২১ বছর বয়সে, ওই উইম্বলডনেই তিনি জেতেন প্রথম মেজর একক শিরোপা। সে-বছর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি ২৮টি মেজর একক ফাইনালের মধ্যে ২১টিতে জয়লাভ করেন। এই সময়ের মধ্যেই ১৫টি গ্র্যান্ডস্লামও জিতে নেন তিনি, যার মধ্যে উইম্বলডনে ছিল ৬টি, ইউএস ওপেনে ৫টি আর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ৩টি। তাছাড়া ২০০৯ সালেই তিনি প্রথমবারের মতো জিতে নেন এতদিন অধরা থাকা ফ্রেঞ্চ ওপেন, এবং সেই সুবাদে সম্পন্ন করেন ক্যারিয়ার গ্র্যান্ডস্ল্যাম। এর আগে টানা তিন বছর তাকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালের কাছে হারতে হয়েছিল ক্লে কোর্টের ফাইনাল। তাছাড়া ২০০৯ সাল ফেদেরারের জন্য আরো একটি কারণেও স্মরণীয় যে, সে-বছরই তিনি উইম্বলডনে জয়ের মাধ্যমে মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৫ তম গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জিতে ১৪টি গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী পিট সাম্প্রাসকে পেছনে ফেলে দেন।
এরই মধ্যে ২০০৮ সালে অলিম্পিক ডাবলসে স্বর্ণপদকও জিতে নেন ফেদেরার। অবশ্য সিঙ্গেলসে স্বর্ণপদক জেতা হয়নি তার। ফাইনালে অ্যান্ডি মারের কাছে হেরে ২০১২ সালে রৌপ্য পদক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। তবে তার ক্যারিয়ারের আরো দুটি হাইলাইট হলো ৬টি এন্ড-অভ-সিজন ট্যুর ফাইনাল, এবং ২০১৪ সালে স্তান ভাভরিঙ্কার সঙ্গে মিলে সুইজারল্যান্ডের হয়ে ডেভিস কাপ জয়। পাঁচবার বছর শেষের এক নম্বর স্থান অধিকার করা ছাড়াও, সব মিলিয়ে ৩১০ সপ্তাহ এটিপি ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে এক নম্বরে ছিলেন ফেদেরার, যার মধ্যে ছিল ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত টানা ২৩৭ সপ্তাহ চূড়ায় অবস্থানের অভাবনীয় রেকর্ডও। তার অমন জয়যাত্রায় ছেদ টেনেছিলেন নাদাল।
তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ২০০৯ সালের পর থেকেই ফেদেরারের ক্যারিয়ারে দেখা যায় ভাটার টান। পরের ৯ বছরে, অর্থাৎ ২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিনি মাত্র ৫টি গ্র্যান্ডস্লাম জেতেন। এর মধ্যে ২০১৭ সাল ছিল তার জন্য সবচেয়ে সফল বছর, কেননা সেবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও উইম্বলডন, দুটি শিরোপা জেতেন তিনি। ২০১৭ সালের সাফল্যের ধারা বজায় রাখার ইঙ্গিত তিনি দিয়েছিলেন ২০১৮ সালেও, বছরটা শুরু করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মুকুট মাথায় তুলে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, সেটিই ছিল তার সর্বশেষ গ্র্যান্ডস্লাম। এরপর থেকে মাঝেমধ্যে স্বরূপে ফেরার আভাস দিলেও, মূলত নিজের সোনালি অতীতের ছায়া হয়েই যেন ছিলেন তিনি।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অতিমাত্রায় ইনজুরিপ্রবণ হয়ে পড়েছিল ফেদেরারের শরীর। ফলে নিজের অজান্তেই তাকে খেলে ফেলতে হয়েছে ক্যারিয়ারের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টটি। ২০২১ সালের উইম্বলডনের কোয়ার্টার-ফাইনালে বিদায় নিতে হয় তাকে। সেবার কোর্ট ছাড়ার আগে নিশ্চয়ই জানতেন না, আর কখনো ফেরা হবে না এখানে সক্রিয় খেলোয়াড় হিসেবে! গত বছরের ওই উইম্বলডন থেকেই মূলত টেনিসের বাইরে আছেন ফেদেরার, কেননা এরই মধ্যে একবার সার্জারি করাতে হয়েছে হাঁটুতে।
এই হাঁটুর চোটটা খুব বাজেভাবেই ভুগিয়েছে ফেদেরারকে। গত তিন বছর ধরে তাকে নাজেহাল করে ছেড়েছে। ২০২০ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর থেকে এখন অবধি যে ১১টি গ্র্যান্ডস্লাম অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র তিনটিতে অংশ নিতে পেরেছেন তিনি। ২০২০ সালেই আরো দুবার সার্জারি করিয়েছিলেন তিনি এই হাঁটুতে।
এমন ইনজুরিপ্রবণ শরীরের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই সমাপ্তির সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছে ফেদেরারকে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন,
সম্প্রতি আমার প্রতি আমার শরীরের বার্তাটা পরিষ্কার। আমি ২৪ বছর ধরে দেড় হাজারের বেশি ম্যাচ খেলেছি। এখন আমাকে মেনে নিতেই হবে যে সময় এসেছে আমার প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারে ইতি টানার। টেনিস খেলাকে আমি বলব, আমি তোমাকে ভালোবাসি, কখনোই তোমাকে ছেড়ে যাব না।
টেনিসের প্রতি ফেদেরার যে মনের মধ্যে লালন করেন অকৃত্রিম ও নির্ভেজাল ভালোবাসা, সে-ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। নইলে কি আর এই ‘বুড়ো বয়স’ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যান খেলাটিতে টিকে থাকার, শেষ একবারের মতো একটি স্মরণীয় কামব্যাকের দৃষ্টান্ত স্থাপনের!
তবে মনের কোণে তার নিশ্চয়ই সুপ্ত বাসনাও ছিল ওপেন যুগে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডস্লামের রেকর্ডটিকে ফের নিজের করে নেওয়ার। কিন্তু তা আর হলো কই! তাকে থামতে হচ্ছে ২০-এ, যেখানে নাদালের নামের পাশে রয়েছে ২২টি, এবং জোকোভিচের ২১টি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা। অর্থাৎ, টেনিসকে বিদায় বলার আগে শিরোপার হিসেবে একে তো নয়ই, এমনকি দুইয়েও নেই তিনি, আছেন তিনে।
অবশ্য এই আপাত ‘ব্যর্থতা’র জন্য বোধকরি অন্য কাউকে নয়, বরং নিজেকেই দায়ী করবেন ফেদেরার। কারণ সুযোগ তো তার সামনে ভালোভাবেই ছিল। ২২টি শিরোপা জিততে নাদাল যেখানে সেমিফাইনালে পৌঁছেছেন ৩৮বার, সেখানে ফেদেরার তো সেমিফাইনালে খেলেছেন আরো ৮বার বেশি! এমনকি জোকোভিচের চেয়েও তিনবার বেশি সেমিফাইনাল খেলেছেন তিনি। কিন্তু শেষমেশ সেমিফাইনাল থেকে চূড়ান্ত শিরোপা জয়ের পথটা অনেক লম্বা হয়ে দেখা দিয়েছে ফেদেরারের সামনে।
তবে শিরোপার ইঁদুর দৌড়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নাদাল ও জোকোভিচের কাছে হার মানতে হলেও, টেনিসের সর্বকালের সেরা হিসেবে ফেদেরারকেই বেছে নেওয়ার মতো লোকের অভাব নেই। তাদের যুক্তিও কিন্তু ফেলে দেওয়ার মতো না। সংখ্যার নিষ্প্রাণ, রসকষহীন হিসাবনিকাশে যতই ফেদেরার পিছিয়ে থাকুন না কেন; অন্য আরো অনেক প্রসঙ্গই যে বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।
বয়সের ব্যাপারটাই দেখুন। ফেদেরার কিন্তু নাদাল ও জোকোভিচের চেয়ে যথাক্রমে ৬ ও ৫ বছরের বড়। ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে এসে এই বয়সের কাছেই তিনি মার খেয়েছেন, তাকে টপকে এগিয়ে গেছেন অন্যরা। কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে থাকতে যে ‘এককাধিপত্য’ ফেদেরার বিস্তার করেছিলেন, ছড়ি ঘুরিয়েছিলেন গোটা টেনিস বিশ্বের উপর, সেসব তো এক তুড়িতে উড়িয়ে দেওয়ার জো নেই।
বর্তমানে ৩৫ বছর বয়সী অ্যান্ডি মারে সেই কবেই পাদপ্রদীপের আলোর নিচ থেকে হারিয়ে গেছেন। অথচ ফেদেরার কিন্তু ৩৬ বছর বয়সেও ৬টি গ্র্যান্ডস্লামের মধ্যে ৩টি জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ইনজুরির ছোবলে তার দুরন্ত প্রত্যাবর্তনের উচ্ছ্বাস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি বটে, কিন্তু যে অসামান্য মনের জোর তিনি ওই বয়সে, এবং তারপরও সাড়ে চার বছর ধরে, দেখিয়ে গেছেন, তার তো কোনো তুলনা হয় না।
এই যুক্তিকেই ঢাল করে অনেকে আবার ফেদেরারকে শুধু নিজ খেলার সেরাতেই সীমাবদ্ধ রাখছেন না, তার গায়ে সেঁটে দিচ্ছেন ‘নিজ প্রজন্মের সেরা অ্যাথলেট’ তকমাও। ২০১৮ সালে ২০ তম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের পর যেমন ইউএসএ টুডে স্পোর্টসে ক্রিস চেজ লিখেছিলেন,
যদি এখনো ভুলে গিয়ে না থাকেন, তবে এখনই ভুলে যান টম ব্র্যাডির কথা, ভুলে যান লেব্রন জেমসের কথা, ভুলে যান টাইগার উডসের কথা। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ফাইনালে পাঁচ-সেটের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জয় তুলে নিয়েছেন রজার ফেদেরার। এর মাধ্যমে ক্রীড়া ইতিহাসে সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম ‘লেট-ক্যারিয়ার কামব্যাক’-এর দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ফেদেরার পেয়েছেন তার ২০ তম মেজর শিরোপা, এবং সন্দেহাতীতভাবেই নিজের প্রজন্মের গ্রেটেস্ট অ্যাথলেটের জায়গাটি দখল করে নিয়েছেন।
আমেরিকান সাংবাদিকের লেখায় আমেরিকানরাই প্রাধান্য পেয়েছেন। প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ অ্যাথলেটদের তালিকায় আরেক মার্কিন ও সদ্য বিদায়-বলা সেরেনা উইলিয়ামসসহ আমরা যোগ করতে পারি উসাইন বোল্ট, মাইকেল ফেলপস, ফ্লয়েড মেওয়েদার জুনিয়র কিংবা লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের নামও; আর তারপর তাদের সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচার করতে পারি ফেদেরারের।
তবে চাঁদেরও যেমন কলঙ্ক থাকে, ফেদেরারের ক্যারিয়ারেও বেশ অনেকগুলো অপূর্ণতাই রয়েছে, যা কায়মনোবাক্যে সকলের কাছে তাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম হিসেবে মেনে নেওয়ার পথে বাধার পাহাড় সৃষ্টি করছে। নাদাল, জোকোভিচ ছাড়াও পিট সাম্প্রাস, রড লেভার, বিয়ন বর্গ. আন্দ্রে আগাসিদের থেকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে তাকে অনেক বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে।
প্রথম অভিযোগটি হলো, ফেদেরার খেলেছেন একটি ‘অপেক্ষাকৃত দুর্বল’ প্রজন্মে। তা-ই যদি না হবে, তাহলে কেন বেশিরভাগ শিরোপা জিতে নিলেন ওই ‘বিগ থ্রি’-ই, কিংবা মারেকে সহ ‘বিগ ফোর’? দ্বিতীয়ত, কখনো একসঙ্গে চারটি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপাই নিজের দখলে রাখতে পারেননি তিনি। তৃতীয়ত, হেড-টু-হেডে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নাদাল ও জোকোভিচ দুজনের চেয়েই পিছিয়ে ছিলেন তিনি। বিশেষত, গ্র্যান্ডস্লামের মতো বড় আসরে তার ব্যর্থতা একটু বাড়াবাড়ি রকমের দৃষ্টিকটু। চতুর্থত, অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিততে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
তবে পক্ষে-বিপক্ষে যতই ঝাঁঝালো বিতর্ক জারি থাকুক, ফেদেরারের দৃষ্টিনন্দন ব্যাকহ্যান্ড শটগুলোকে কে না মিস করবে! কে ভুলতে পারবে তার চাবুকের মতো ফোরহ্যান্ডের কথা! তার বেজ-লাইন থেকে হাফভলি, স্বতন্ত্র স্কোয়াশ, ওভারহেড লব, ক্যাজুয়াল টুইনার, কিংবা অ্যারাউন্ড-দ্য-নেট শটগুলোর কথা! তার মতো শৈল্পিক সার্ভই বা আর কে করতে পারবে! অমন অসাধারণ অ্যান্টিসিপেশন ও কোর্ট সেন্স থাকবে কার! কার থাকবে তার মতো ঈশ্বরপ্রদত্ত ফুটওয়ার্ক! দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও কে দেখাতে পারবে তার মতো ধ্রুপদী সংযম! টেনিসের মতো একক-আধিপত্যের, চরম ইন্টেন্সিটির একটি খেলায় আদৌ কি আর কেউ পারবে তার মতো করে আনতে সুষমামণ্ডিত সৌন্দর্য, মনোরম মুগ্ধতা কিংবা বিস্ময়াবিষ্ট বিশুদ্ধতা!
ফেদেরার তাই না হোন এক নম্বর, তবু ফেদেরার একজনই। কবি জীবনানন্দ যেমন লিখেছিলেন,
এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর।
উইম্বলডনের দুধে-আর্দ্র পোশাকটিও তাই নিশ্চয়ই আজ গুমরে কাঁদছে, করুণ শঙ্খের মতো!