সাড়া জাগানো দল বদলের পর নতুন ক্লাবে যারা নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ ছিলেন

মাঠের ফুটবলের লড়াইয়ের বাইরে রোমাঞ্চকর আরেকটি লড়াই আছে। সেটি খেলোয়াড়দের দল বদল। দল বদলের সম্পূর্ণটা আমাদের সামনে আসে না বলে এই রোমাঞ্চ অনুভব করতে পারি না ঠিকই, কিন্ত ধারণা করাই যেতে পারে। নেইমারের পিএসজিতে যাবার সময় কি কম জল ঘোলা হলো! গত গ্রীষ্মে ১২ সেকেন্ডের জন্য লেস্টার সিটি আন্দ্রিয়ান সিলভার ট্রান্সফার সমাপ্ত করতে পারেনি। অনেক ঘটনার ঘনঘটার পর কৌতিনহোকে নিতে পেরেছিলো বার্সেলোনা। এছাড়াও ডেডিভ ডি হিয়ার রিয়াল মাদ্রিদ যাওয়া ও কেইলর নাভাসের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসার নাটক কিন্তু তরতাজা, আর লুইস ফিগোর গল্প তো অনেকেরই জানা।

এছাড়াও অর্থগত দিক থেকে অনেক মারপ্যাঁচ আছে, যেগুলো মিডিয়ার সামনে তুলে ধরা হয় না। সাধারণভাবে, একজন খেলোয়াড় দল বদল করে নিজের প্রতিভা আরো বিকশিত করে ফুটবল মঞ্চের সামনে তুলে ধরতে চান। তেমনি ক্লাবগুলো বিশাল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে খেলোয়াড় দলে টানে অবশ্যই লাভবান হবার জন্য, ক্লাবের উন্নতির জন্য। কিন্ত বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করে কোনো খেলোয়াড়কে কেনার পর নতুন ক্লাবে যদি তিনি নিজেকে যদি একদমই মেলে ধরতে না পারেন?

পাঠক, এমন কয়েকজন খেলোয়াড়ের কথা আজকের লেখায় তুলে ধরবো, যারা বড় অঙ্কের ট্রান্সফার ফির বিনিময়ে নতুন ক্লাবে গিয়ে নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন

হুয়ান সেবাস্টিয়ান ভেরন

ভেরনকে কিনে কি ফার্গি তার ক্যারিয়ারের সেরা ভুল করেছিলেন; Images Source: Fourfourtwo

স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের কোচিং ক্যারিয়ারে বেশ কিছু দারুণ সাইনিং জ্বলজ্বল করলেও ম্যানইউয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফ্লপ সাইনিংয়ের খেতাবও তার রয়েছে । ২০০১ সালে লাৎসিও থেকে ২৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে এনেছিলেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার ভেরনকে। তখনকার সময়ে সেই দল বদল ছিলো সবথেকে দামি। অথচ ভেরন ইংল্যান্ডে এসে একদমই খাপ খাওয়াতে পারলেন না। ইংল্যান্ডের গতিময় ও শক্তিমত্তার ফুটবলের কাছে বরাবর খাবি খেতে লাগলেন। প্রথম মৌসুম একভাবে কাটানোর পর দ্বিতীয় মৌসুমের শেষের দিকে ভেরন গুরুতর আঘাত পান। এতে করে তার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অধ্যায় শেষ হয়ে যায়। পরের বছর তাকে মাত্র ১৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কিনে নেয় চেলসি। চেলসিতে গিয়েও ভেরন সুবিধা করতে পারেননি। লোনে বাইরে কাটিয়েছেন বেশিরভাগ সময়। আর ৪ বছরের চেলসি অধ্যায়ে খেলেছেন মাত্র ৭ ম্যাচ।

ডিমিত্র চাইরনস্কি

ক্যাম্প ন্যুতে চাইরনস্কি; Image Source: Sportsyou.com

ডিমিত্র চাইরনস্কি বার্সেলোনার সবথেকে অদ্ভুত দল বদলের একটি। ২০০৯ সালে শাখতার দেনেস্ক থেকে অখ্যাত এ সেন্টারব্যাক ডিফেন্ডারকে বার্সেলোনা দলে টানে ২৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। চাইরনস্কি বার্সেলোনার হয়ে খেলেছেন মাত্র এক মৌসুম। তা-ও সব ম্যাচে সুযোগ পাননি। মাঠে নেমেছেন মাত্র ১৪টি ম্যাচে। পরের বছর বার্সেলোনা তাকে আবার শাখতার দেনেস্কের কাছেই বিক্রি করে দেয়। তৎকালীন বার্সেলোনা প্রেসিডেন্ট সান্দ্রো রাসেলের যুক্তি ছিলো, অর্থগত কারণে তাকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। যদিও কোচ পেপ গার্দিওয়ালা চাইরনস্কিকে পরের মৌসুমেও দলে রাখতে চেয়েছিলেন।

অ্যালেক্স হেলব

হেলব কখনোই বার্সেলোনার সাথে খাপ খাওয়াতে পারেননি; Images Source: fcbarcelona

বেলারুশের এ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার আর্সেনালে বেশ নাম কুড়িয়েছিলেন। তারই বদৌলতে বার্সেলোনা তাকে ২০০৮ সালের গ্রীষ্মকালীন দল বদলে ১৭ মিলিয়ন ইউরোর বদলে দলে নেয়। তিন মৌসুম জুড়ে ভালো খেলা অ্যালেক্স হেলব ন্যু ক্যাম্পে তার পারফর্মেন্স নিয়ে আসতে পারলেন না। গোল করা ভুলে গেলেন, ফর্ম খুব তাড়াতাড়ি হারিয়ে ফেললেন। ৩৬ ম্যাচ খেলার পরও কোনো উন্নতি না দেখে বার্সেলোনা তাকে লোনে দেবার পরিকল্পনা করে। স্টুর্টগার্ট ও উলফবার্গে লোনে কাটানোর পরও হেলব আর কখনো তার পুরনো ফর্মে ফেরত আসতে পারেননি। এমনকি বার্সেলোনা ছাড়ার পর ভালো পারফর্মেন্সটা আর কখনো ফেরত আসেনি।

রবি কিন

রবি কিন, যার জন্য দুবার দুই ক্লাব বিরাট অঙ্কের অর্থ জলাঞ্জলি দিয়েছিলো; Image Source: Superpowerfootball.com

রবি কিনের ক্যারিয়ারের দুবার বড় ধরনের ফ্লপ তকমা আছে। কভেন্ট্রি সিটিতে নজরকাড়া পারফর্মেন্সে তার জন্য খুলে যায় ইন্টার মিলানের দুয়ার। ২২ মিলিয়ন ডলারে ইন্টারে যোগ দিয়ে এক মৌসুমে খেলে ১৩ ম্যাচে করেন মাত্র ৩ গোল। এরকম হতাশাজনক পারফর্মেন্সে ইন্টার তাকে পরের বছর লোনে দিয়ে দেয়। লিডস ইউনাইটেডে সন্তোষজনক পারফর্মেন্সের পরে টটেনহ্যামে নিজেকে দারুণভাবে প্রমাণ করেন কিন। এর ফলে নজরে পড়ে যান লিভারপুলের।

অলরেডরা কিনকে ৩৩ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে দলে নেয়। লিভারপুলে গিয়ে চিরচেনা রবি কিন তো নয়, যেন ইন্টারের সেই ব্যর্থ খেলোয়াড়ের দেখা মেলে। লিভারপুলে ২৮ ম্যাচ খেলে ৭ গোল করার পর আবারো ফেরত যান টটেনহামে। এবং অবাক করা বিষয় হলো, টটেনহামে গিয়ে তিনি আবারো ফর্ম ফিরে পান। তিনিই সম্ভবত একমাত্র খেলোয়াড়, যাকে কিনে দুই ক্লাব বড় অঙ্কের অর্থ নষ্ট করেছে।

নিকোলাস আনেলকা

রিয়াল মাদ্রিদ অধ্যায় বাদে আনেলকার ক্যারিয়ার ছিলো দর্শনীয়; Image Source: mancity.com

খেলোয়াড় জীবনের শুরুটা হয়েছিলো পিএসজির সাথে। খুব দ্রুত তিনি চলে যান আর্সেনালে। সেখানে নিয়মিতভাবে গোল ও ভালো খেলার দরুণ রিয়াল মাদ্রিদ তাকে নিতে আগ্রহী হয়। প্রায় ৩১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান নিকোলাস আনেলকা।

দুর্বিষহ মুহূর্তের শুরু এখানেই। যে আনেলকা প্রতি ম্যাচে গোল, অ্যাসিস্ট করে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন আর্সেনালে, তিনিই স্পেনে এসে হারিয়ে গেলেন। একটা বছর বার্নাব্যুতে ছিলেন। কোনোভাবেই কোচ ও সমথর্কদের আস্থা পেতে পারেননি। একবছর পর রিয়াল মাদ্রিদ তাকে পুরনো ক্লাব পিএসজির কাছে বিক্রি করে দেয়। পিএসজিতে গিয়ে তিনি নিজেকে ফিরে পেয়েছিলেন, ফিরে পেয়েছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির হয়েও। ৪ বছর ধরে ছিলেন চেলসির নিয়মিত খেলোয়াড়। পরবর্তীতে ক্যারিয়ারে ভালো সময় পার করে অবসর নিলেও নিকোলাস আনেলকায় গায়ে সেঁটে আছে রিয়াল মাদ্রিদ ফ্লপের তকমা।

জোনাথন উডগেট

রিয়াল মাদ্রিদের ফ্লপ ট্রান্সফারের লিস্টে প্রথমদিকেই উডগেটের নাম থাকবে; Image Source: Thefootballtimes

নিউক্যাসল ইউনাইটেড থেকে রিয়াল মাদ্রিদে জোনাথন উডগেটের ট্রান্সফার বেশ আশাব্যাঞ্জক ছিলো। কিন্ত ভাগ্যে ছিলো ভিন্ন কিছু। ৪ বছর রিয়াল মাদ্রিদে কাটানোর পর তার ভাগ্যে জুটেছিলো একবিংশ শতাব্দীর সেরা ফ্লপ ট্রান্সফারের তকমা। ৪ বছরে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লিগে উডগেট নামতে পেরেছিলেন মাত্র ৮ ম্যাচে।

তার অভিষেক ম্যাচ ছিলো অত্যন্ত বিষাদের, লা লিগাতে অভিষেক ম্যাচে করেছিলেন আত্মঘাতী গোল। তারপর  ভরসা তৈরি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেলেও ইনজুরি যেন তিন বছরের জন্য তাকে ছুটিই দিয়ে দিলো। সম্পূর্ণ ইনজুরি কাটিয়ে উডগেট নিজেকে আবিষ্কার করলেন মিডলসবোরে। প্রায় ১৪ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসা উডগেট দল ছাড়েন ৪ বছর পর। এরপর মিডলসবোর, টটেনহাম হটস্পার, স্টোক সিটিতে খেলে গেলেও কোনো ক্লাবে থিতু হতে পারেননি।

আন্দ্রেই শেভচেঙ্কো

শেভচেঙ্কো ব্যালন ডি অর’ও জিতেছিলেন; Images Source: Getty Images

শেভচেঙ্কো ইউক্রেন ফুটবলের একজন লিজেন্ড- এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। ব্যালন ডি অর জিতেছেন, জিতেছেন ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার। তবে ক্লাব ও জাতীয় ফুটবলে সেরা স্থানে পৌঁছাবার আগে তাকে পার করতে হয়েছিল এক ভয়াবহ সময়। এসি মিলানে দীর্ঘ পাঁচ বছর থেকে যখন শেভচেঙ্কো নিজেকে সেরার কাতারে নিয়ে গেছেন, তখনই চেলসি থেকে বিশাল অঙ্কের প্রস্তাব তার কাছে আসে। শেভচেঙ্কো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি। ২০০৬ সালে প্রায় ৩৯ মিলিয়ন ইউরোর বদলে পাড়ি জমান স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে। নতুন ক্লাবে আসামাত্র শুরু হয় তার ক্যারিয়ারের ভয়াল অধ্যায়। ২০০৬-০৮ পর্যন্ত চেলসিতে মাত্র ৪৮ ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। শেষ বয়সে আরেকবার ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য তার হয়নি। শেষে আবারো এসি মিলানে এক সিজনে লোনে কাটিয়ে ফ্রি ট্রান্সফারে যান শৈশবের ক্লাব ডায়নামো কিয়েভে। এসি মিলানের হয়ে শেভচেঙ্কো ২০৮ ম্যাচে করেছেন ১২৭ গোল। শেষ বয়সে চেলসিতে এসে ক্যারিয়ারের যেন দারুণ একটি সমাপ্তি হারিয়ে ফেললেন।

গাইজকা মেনদিয়েতা

লাৎসিওর মাঠে মেনদিয়েতা; Images Source: Nelson Oliveira

২০০০ সালে মেনদিয়েতা ইউরোপের সেরা মিডফিল্ডার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভ্যালেন্সিয়াকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে তোলার জন্য উয়েফার সেরা মিডফিল্ডারের খেতাব পেয়ে যান। এত উপাধিতে নির্বাচিত হবার কারণে মেনদিয়েতা বহুল আকাঙ্ক্ষিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন। ইউরোপের অনেক দল তাকে দলে টানার প্রচেষ্টা চালালেও লাৎসিও ৪২ মিলিয়নের বিনিময়ে তাকে ছিনিয়ে নেয়। গাইজকা মেনদিয়েতার দল বদল ছিলো তখনকার সময়ে ষষ্ঠ বৃহৎ অঙ্কের ট্রান্সফার।

লাৎসিও মেনদিয়েতাকে নিয়েছিলো নেভদেভ ও ভেরনের শূন্যস্থানে। তবে মেনদিয়েতা তা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। লিগে ২০ ম্যাচ খেলে করতে পারেননি একটিও গোল, দেখাতে পারেননি তার কোনো দক্ষতা। ফলে লাৎসিওর ৪২ মিলিয়ন ইউরো পুরোটাই বিফলে যায়। কারণ পরবর্তীতে নানা দলে লোনে দিলেও মেনদিয়েতাকে বিদায় জানাতে হয় ফ্রি ট্রান্সফারে।

আলবের্তো আকুউলানি

আলবের্তো আকুউলানি, যাকে আনা হয়েছিলো জাবি আলোনসোর শূন্যস্থানে; Images Source: Tribuna.com

২০০৮ সালে লিভারপুল কোচ রাফায়েল বেনিতেজ আলবের্তো আকুউলানিকে জাবি আলোনসো উত্তরসূরী মনে করেছিলেন। ফলে ২০০৯ সালে তাকে দলে আনেন ১৭ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। তবে আকুউলানি আলোনসোর মতো কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেননি অলরেডদের মাঝমাঠে। বেনিতেজ বিদায়ের পর রয় হজসনও আকুউলানির ফর্ম ফেরাতে পারেননি। লোনে কয়েক মৌসুম কাটানোর পর ২০১২ সালে ফিওরেন্টিনার কাছে আকুউলানিকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় লিভারপুল। আকুউলানির দলে আসা এবং বেনিতেজের বিদায়ের পরই লিভারপুল মূলত দলগত শক্তি-সামর্থ্যে পিছিয়ে আসতে শুরু করে।

রবিনহো

ইনজুরি বার বার ফিরে না আসলে ম্যান সিটিতে রবিনহো অধ্যায়টা অন্যরকম হতেও পারতো; Image Source: Clive Brunskill

২০০৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে চুক্তি নবায়ন না হবার পর রবিনহো চোখ বাড়ান ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দিকে। চেলসির সাথে নতুন চুক্তি হতে গিয়েও থেমে যায়। রবিনহোকে ৩৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কিনে নেয় ম্যানচেস্টার সিটি। সিটিজেনদের হয়ে তার প্রথম মৌসুম ভালো কেটেছিলো। প্রথম মৌসুমে লিগে সর্বোচ্চ ১৪ গোল করেন রবিনহো। তবে এরপরই সবকিছু যেন বিপরীত দিকে চলতে শুরু করে। পরের মৌসুমে ইনজুরিতে জর্জরিত হয়ে পুরো লিগে খেলেছিলেন ১২ ম্যাচ। গোল করেছিলেন মাত্র একটি। নতুন কোচ রবার্তো মানচিনি আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন রবিনহোর উপর থেকে। ২০১০ সালে রবিনহো ফিরে যান শৈশবের ক্লাব সান্তোসে। এরপর আবারও নিজেকে ফিরে পাবার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তিনি। এসি মিলানে কয়েক মৌসুম ভালোই খেলেছিলেন। কিন্ত তার উপর সেলেসাওদের যেমন আশা ছিল, সেভাবে আর কখনোই জ্বলে উঠতে পারেননি।

অ্যান্ডি ক্যারল

যখন লিভারপুল ছেড়েছিলেন, বয়স হয়েছিলো মাত্র ২৫; Image Source: Action Image

একসময় অ্যান্ডি ক্যারল ছিলেন বিশ্বের সবথেকে দামি ফুটবলারদের একজন। নিউক্যাসল ইউনাইটেডের হয়ে ৮১ ম্যাচে ৩১ লিগ গোল করার পর মূলত লিভারপুলের চোখ পড়ে তার উপর। ২০১১ সালে ৩৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাকে দলে নেয় লিভারপুল। কম বয়সেই অ্যান্ডি ক্যারল প্রথম সারির দলে সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্ত মৌসুমের প্রথমদিকে নিয়মিত গোল পেলেও, শেষের দিকে ক্যারল তেমন কোনো গোল করতে পারেননি। গোলখরায় কেটেছিলো পরের মৌসুমও। একই সময় লুইস সুয়ারেজও যখন ফর্মের তুঙ্গে, নতুন কোচ ব্রেন্ডন রজার্সও তখন চাননি ক্যারলকে ব্যবহার করতে। ৪৪ ম্যাচে মাত্র ৬ গোল করা ক্যারলকে লোনে ওয়েস্ট হ্যামে যেতে হয়। পরের বছর পাকাপাকিভাবে ওয়েস্ট হ্যাম অ্যান্ডি ক্যারলকে কিনে নেয়। বর্তমানে ক্যারলে ওয়েস্ট হ্যামেই খেলছেন। তবে লিভারপুলে যে উজ্জ্বল ভবিষ্যত লক্ষ্য করা গিয়েছিলো, তা আর ফুটে ওঠেনি। লিগে ১১৪ ম্যাচে মাত্র ৩৩ গোল করেছেন ২৯ বছর বয়সী অ্যান্ডি ক্যারল।

রিকার্ডো কাকা

এসি মিলান ছেড়ে করেছিলেন ক্যারিয়ারের সবথেকে বড় ভুল; Images Source: Goal.com

তাকে বলা হয় ফুটবলের বরপুত্র। ক্যারিয়ারকে আরো রাঙিয়ে তুলতে পাড়ি জমিয়েছিলেন স্পেনে। কিন্ত সেটাই যে কাল হয়ে দাঁড়ালো। এসি মিলানের হয়ে ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। একজন মিডফিল্ডার হয়েও ৭০ গোল নজর কেড়েছিলো সবার। তাতে যে রিয়াল মাদ্রিদ সংকল্প বেঁধে বসলো কাকাকে দলে লাগবেই। মিডফিল্ডার হয়েও ব্যালন ডি অর জয়ী কাকাকে রিয়াল মাদ্রিদ কিনলো ৫৬ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে। কিন্তু ইতালি থেকে স্পেনে আসতে গিয়ে ভুলে তার বুট জোড়া ফেলে রেখে আসলেন। স্পেনে মানিয়ে রাখতে না পেরে হয়ে রইলেন নিজের ছায়া হয়ে। রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যমাঠ যেন বেহুলার বাসর হয়ে রইলো। একে একে সব শিরোপা হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছিলো মাদ্রিদের। অগত্যা কাকারও বেশি দিন মাদ্রিদে থাকা হলো না। ৪ বছর মাদ্রিদে নিজের প্রভাব বিস্তার না করতে পেরে যুদ্ধ করতে থাকা কাকা ফিরে গেলেন মিলানে। যাবার আগে করে গেলেন ৮৫ ম্যাচে ২৩ লিগ গোল। মিলানে গিয়েও কাকা নিজেকে ফিরে পাননি। সেই যে হারালেন, মধ্যমাঠ জুড়ে বিস্তার করা কাকা নিজের সেই ক্ষমতা আজ পর্যন্ত খুঁজে পাননি।

ফার্নান্দো তোরেস

ফার্নান্দো তোরেস, সমর্থকদের ‘এল নিনো’; Images Source: Clive Brunskill

লিভারপুলের হয়ে ধারাবাহিক ভালো পারফর্মেন্স করার অনেক আগেই রোমান আব্রাহিমোভিচের নজর কেড়েছিলো ফার্নান্দো তোরেস। কিন্ত প্রথম দুবার চেষ্টা করেও তোরেসকে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে আনতে পারেননি তিনি। লিভারপুলের হয়ে নিজেকে প্রমাণ করার পরেও তোরেস খুশি ছিলেন না। তার শিরোপা জয়ের স্বাদ দরকার। এমন একটা সময় চেলসি থেকে ডাক আসলে তোরেস উপেক্ষা করতে পারেননি। ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তোরেস আসেন চেলসিতে। কিন্ত স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড নিজের দামের সদ্ব্যবহার করতে পারলেন না। চেলসির হয়ে তিনি নিয়মিত বাজে পারফর্ম করতে লাগলেন। লিভারপুলের হয়ে যেসব গোলের সুযোগ কখনোই হারাতেন না, চেলসিতে সেসব ছেলেমানুষী ভুল করতে লাগলেন। ১০৩ ম্যাচে মাত্র ২০টি লিগ গোলই প্রমাণ করে দেয়ে তোরেসের অবনতি। চেলসিতে কাটানো ৪টি বছর লড়েছেন ইনজুরির সাথে, যুদ্ধ করেছেন নিজের হারানো ফর্ম ফিরে পেতে। তবে চেলসিতে এসেছিলেন শিরোপা জিততে, শিরোপা তিনি ঠিকই জিতেছিলেন, তবে তা তার মনঃপুত হয়েছিলো কি?

Related Articles

Exit mobile version