গ্রাহাম বেল ফোন আবিষ্কার করার পর নাকি সেই ফোনে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের তিনটে মিস কল পেয়েছিলেন!
এখানেই শেষ নয়!
ইব্রাহিমোভিচ নাকি দৌড়ে আলোকে হারিয়ে দিতে পারেন। পৃথিবীর মানুষের অসাধ্য সব কাজ তিনি করতে পারেন। তিনি চাক নরিস বা রজনীকান্তের মতো অতিমানবীয় সব গল্পের জন্ম দেন।
সব আজব আজব গল্প খুঁজে পাবেন আপনি ইব্রাহিমোভিচকে নিয়ে। তিনি কেবল একজন সাবেক ফুটবলার নন; তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তী। সেটা যত না ফুটবলের কারণে, তার চেয়ে অনেক বেশী তার কথাবার্তার কারণে।
খেলোয়াড়ী জীবনে ইব্রাহিমোভিচ যে শুধু রসিক ছিলেন, তা নয়। নিজের প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড়দের একজন তিনি। আয়াক্স থেকে জুভেন্টাস, ইন্টারমিলান, বার্সেলোনা, এসি মিলান, পিএসজি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবে খেলেছেন। এ বছর যোগ দিয়েছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এলএ গ্যালাক্সিতে।
প্রোফাইলিক এই গোলস্কোরার তার ক্যারিয়ারে বিভিন্ন দলের হয়ে ৩২টি ট্রফি জিতেছেন। খেলেছেন ইউরোপের সব ধরনের ফুটবল সংস্কৃতিতে। সেই সাথে সুইডেন জাতীয় দলেরও ছিলেন অতি প্রয়োজনীয় এক তারকা। জাতীয় দলের হয়ে ১১৬টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
ইব্রাহিমোভিচ গত ইউরোতে সুইডেন যাচ্ছেতাই ফল করার পর অবসর নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে। কিন্তু এখনও মনে করেন, তাকে ছাড়া কোনো আসর জমতে পারে না। বিশেষ করে যে বিশ্বকাপে ইব্রাহিমোভিচ নেই, সেটা নাকি দেখার কোনো অর্থই হয় না।
ইব্রাহিমোভিচ তাই বিশ্বকাপে না থেকেও হাজির হয়েছেন। ফিফার এক স্পন্সর কোম্পানি ভিসার একটি প্রমোশনাল কর্মসূচীর অংশ হিসেবে খেলা দেখবেন মাঠে বসে। ফলে বিশ্বকাপ আবারও পেতে যাচ্ছে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচকে।
এই উপলক্ষে ফিফা ডটকমকে এক মজার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সুইডিশ এই লিজেন্ড।
জ্লাতান, আপনার বিশ্বকাপে উপস্থিত থাকা নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। আপনি কেন ভিসার সাথে পার্টনারশিপে রাশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?
এটা তো পরিষ্কার ছিলো যে, আমি জাতীয় দলের সাথে খেলতে আর রাশিয়ায় যাচ্ছি না। কিন্তু আমি কয়েক বছর আগেও যেমন বলেছি, এখনও তা-ই বলতে চাই আবার- আমাকে ছাড়া ফিফা বিশ্বকাপ দেখার কোনো অর্থ হয় না। আমি এটা সত্যিই বলছি। তবে এখন এটা সম্ভব হয়েছে যে, আমি বিশ্বকাপে উপস্থিত থাকছি এবং খেলাগুলো কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছি। ভিসার একজন পার্টনার হিসেবে আমি খুশী। আমরা ওখানে থাকবো এবং দায়িত্বটা আমরাই কাঁধে তুলে নেবো।
রাশিয়া স্বাগতিক দেশ হিসেবে কেমন করবে?
আমি মনে করি, এটা অসাধারণ হতে যাচ্ছে। এটা বিশাল একটা দেশ, অনেক লোকের দেশ। এরকম একটা দেশে বিশ্বকাপ হওয়াটা দারুণ ব্যাপার। আমার ধারণা, প্রতিটি বিশ্বকাপের মতোই এটা অসাধারণ হতে যাচ্ছে। এটা বিশ্বের বৃহত্তম পার্টি। আমি যেখানেই থাকি, সরাসরি হোক আর টিভিতে, আমি এটা উপভোগ করতে চাই। আমি এটা মিস করতে চাই না।
চূড়ান্ত পর্ব শুরু হচ্ছে ১৪ তারিখ। আপনার অনুভূতিটা এখন কী?
আমি ভিসার লোকজনের সাথে স্টেডিয়ামে ঢোকার ব্যাপারে এবং খেলা দেখার ব্যাপারে এখন থেকেই রোমাঞ্চিত। সেই লোকজন আর সেই পরিবেশ। দেখবেন চারপাশে কেবন পরিবেশ থাকে। ভিসা ও আমি এটা একসাথে করবো। আমি একটি বিশাল পার্টির অপেক্ষায় আছি। আমাদের অনেক কর্মসূচীর পরিকল্পনা আছে। আমি বিশ্বকাপ নিয়ন্ত্রণ করতে আসছি।
আপনার মনে বিশ্বকাপ জেতার জন্য ফেভারিট কারা?
আমি ভিসা টিমকে বেছে নেবো! কারণ আমরা বিশ্বকাপ জেতার জন্য সবচেয়ে বড় ফেবারিট। এরপর আমি আপনাকে আর কয়েকটা দলের নাম বলি, যাদের বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা আছে। তারা হলো ব্রাজিল, স্পেন, জার্মানি এবং অবশ্যই সুইডেন। আর্জেন্টিনাও আছে। যদিও ওরা আজকাল নিজেদের ফেভারিট বলতে চাচ্ছে না। তারপরও ওরা ফেবারিট। আমি দুঃখিত যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে নেই। কারণ ওটা আমার নতুন দেশ। আমি ওদের সমর্থন করি।
সুইডেনের আশাটা আসলে কতটা বাস্তবসম্মত?
তারা বিশ্বকাপে আসার পথে বড় বড় দলকে হারিয়েছে। ফলে দেখাই যাক, কী হয়। এখন সবকিছুই নতুন আর রোমাঞ্চকর। আপনি কখনোই বলতে পারেন না যে, কী হয়। পুরোটা নির্ভর করে ওই মুহুর্তের ওপর। ওই মুহুর্তে যে ভালো খেলবে, সে-ই ভালো করবে।
সুইডেনের খেলা দেখার সময় কী নার্ভাস থাকবেন?
না, না। কখনো না। না, না। মানে, আমি রোমাঞ্চিত, কিন্তু নার্ভাস থাকবো না। আমার কাছে মনে হয়, আমি এখন আরও ক্ষুধার্ত মাঠে নেমে সুইডেনকে জেতাতে সাহায্য করার জন্য।
কোনো নতুন তারকা দেখছেন, যারা প্রভাব ফেলতে পারে?
আমার মনে হয়, পগবা নিশ্চিত। ওর ব্যাপারে সবাই জানে ও গতিশীল এবং স্কিল আছে। এরপর এমবাপ্পে। ও একজন উঠতি তারকা, যার সর্বোচ্চ স্তরে আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে। ও নিশ্চিতভাবেই সেটা করবে। আরও অনেক তারকা আছে, যারা নিশ্চিতভাবেই রোমাঞ্চকর। আবার অনেকে আছে, যাদের নাম বলা হচ্ছে না, তারাও দেখা যাবে প্রভাব ফেলছে।
বড় বড় নামগুলোর ব্যাপারে কী বলবেন?
মনে রাখবেন, এটা কোনো একক খেলা নয়, এটা একটা দলগত খেলা। আমার ধারণা নেইমার ইনজুরি থেকে ফেরার পর খেলার জন্য আরও ক্ষুধার্ত থাকবে এবং দলকে টেনে নিয়ে যাবে। তারাও (ব্রাজিল) ওর জন্য চেষ্টা করবে। মেসির ক্ষেত্রে আমার ধারণা ছবিটা পরিষ্কার, ও সেরা এবং টিমটা ওর পেছনে আছে। রোনালদোর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। দেখা যাক, কী হয়। লম্বা একটা মৌসুম শেষ হলো। খেলোয়াড়রা সবাই ১০-১১ মাস ধরে ফুটবল খেলে এসেছে। এটা একটা চূড়ান্ত লড়াই। দেখা যাক, কে কে শারীরিক ও মানসিকভাবে শতভাগ দিতে পারে। এটাই হবে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কতটা স্কিলফুল, সেটা ব্যাপার নয়; ব্যাপার হলো, আপনি শতভাগ শারীরিকভাবে ঠিক আছেন কি না।
আপনি কি সমর্থক হিসেবে আপনার প্রথম বিশ্বকাপের স্মৃতি মনে করতে পারেন?
আমি মনে করতে পারি, এটা ছিলো ১৯৯৪ বিশ্বকাপ। যখন সুইডেন তৃতীয় হয়েছিলো। ওটা অনেক বড় একটা ব্যাপার ছিলো। সুইডেনের জন্য সে সময় বড় একটা ব্যাপার ছিলো।
ওই ঘটনাটা কি আপনাকে খেলোয়াড় হতে অনুপ্রাণিত করেছে?
আমি তখনই জানতাম, আমি একসময় এই বিশ্বের দায়িত্ব নেবো। সেটা শুধু ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে নয়।
২০০২ ও ২০০৬ বিশ্বকাপ খেলেছেন আপনি। আপনার সেরা স্মৃতিটা কী?
আমার সবচেয়ে পছন্দের ব্যাপার ছিলো সমর্থকরা; যে পরিবেশে আমরা খেলতাম, সেটা। আমার শার্ট ছিলো হলুদ এবং স্টেডিয়ামে এসে যখন ওই হলুদ দেখতাম, আমি সঙ্গে সঙ্গে সেই খুশী খুঁজে পেতাম এবং মনে হতো পার্টি শুরু হয়ে গেছে। যে সমর্থন দল হিসেবে সুইডেন পেয়েছিলো, সেটা আমরা নষ্ট করেছি। তারপরও সমর্থকরাই আমার সবচেয়ে ফেভারিট স্মৃতি। অবশ্যই এর সাথে খেলাটা। তবে খেলা তো খেলাই; হোক খেলাটার মান অনেক বড়। খেলার মধ্যে নতুন কোনো কিছু থাকে না, যা টপ খেলোয়াড় হিসেবে আমি প্রতিদিন দেখিনি। কিন্তু বিশ্বকাপের ওই পরিবেশটাই বিস্ময়কর ছিলো।
শেষ প্রশ্ন, আপনি কেন সমর্থকদের রাশিয়া বিশ্বকাপ দেখার জন্য সুপারিশ করবেন?
আমি সমর্থকদের বলবো, ধৈর্য্য ধরুন, আমি আসছি। আমি রাশিয়াতে আছি।